সানীসাইড পার্ক !

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৭ জুলাই, ২০১৮, ০৯:৩০:১৬ সকাল



==========

আজ সকালে ভাবলাম ঘুরতে যাব, কিন্তু ঘোরার স্থান খুজে পাচ্ছিলাম না। ফলে সুইটহোমের দিকে যাত্রা করলাম। পথে দেখী একটা সাইনবোর্ড "মাত্র ১ ডলারে চেরী বাস্কেট".......লেখা পড়তে পড়তেই তা পার হয়ে আসলাম। কিন্তু মনে ডেকে বলল--ওরে পাগলা, মিস করিসনে...মাত্র ১ ডলারে পাবি ! .....এবার কষ্ট করে ঘুরে উল্টো রাস্তায় আসলাম। দেখী এক কৃষক তার বাগানের ফলমূল বিক্রী করছে তাবু টাঙিয়ে। কাছে গিয়ে আক্কেলগুড়ুম ,,,, দেখী ১ ডলারের বাক্সেটগুলোতে বড়জোর দেড়-দুশ গ্রাম চেরী রয়েছে,,,পাশেই বড় বাস্কেট,সেটার দাম ৫ ডলার, কিন্তু স্টোরের দামের সাথে তেমন কোনো হেরফের পেলাম না, তবে এগুলো খুবই তরতাজা। কালো ও হালকা গোলাপী দু ধরনেরই দেখলাম একই দাম, অথচ স্টোরে হালকা গোলাপী রঙের এই চেরীর দাম প্রতি পাউন্ড ৪/৫ ডলার। কয়েক বাস্কেট কিনলাম, আর ৪ বাস্কেট পিচ কিনলাম, যদিও এটা আমার তেমন পছন্দ না। তবে চেরীগুলো অসম্ভব দারুন।

অসম্ভব সুন্দর রাস্তা ধরে ড্রাইভ আর চুকচুক করে চেরী খেতে থাকা একটা রোমান্টিক ব্যাপার। চলে গেলাম রিভার ব্যান্ড পার্কে। এই পার্ক আমার বাপের তালুক ! যখন তখন ঘুরে ফিরে নে যেন এখানেই আসি ! ভালো লাগে,,, আল্লাহ কত সৌন্দর্য্য যে একে দিয়েছে,তা এখনও সঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারিনি, প্রত্যেকবার পুলকিত,বিচলিত হই। এই পার্কে কয়েক ঘন্টা হাটাহাটি করলাম। পাথুরে খরস্রোতা নদী পার হয়ে ওপারে এক গাছের নীচে বসে কুরআন তিলাওয়াত শুনছিলাম.....এটা ছিলো সূরা নূর। নিরপরাধী,নিষ্কলুষ নারীর উপর কলঙ্ক লেপন করলে তার শাস্তি কি সেটা আল্লাহ জানিয়েছেন,,,,আবার স্বামী স্ত্রী একে অপরের উপর অভিযোগ করলে বিচারিক প্রকৃয়া কেমন হবে সেটাও জানিয়েছেন ! ....আবার মিথ্যা সাক্ষী দিলে তাকে ৮০ বেত মারার শাস্তির কথা আল্লাহ জানিয়েছেন,,,,আবার পরবর্তীতে কোনো বিষয়ে তাদের সাক্ষী গ্রহন করা হবেনা,এমন অপমান জনক শাস্তির কথাও আল্লাহ জানিয়েছেন। ভাবছিলাম, এক কাপ চা বা কিছু পয়সার জন্যে অবলীলায় মানুষ আদালতে অন্যের বিষয়ে মিথ্যা সাক্ষী দেয়,,,এরা কি জানে যে তাদের এই পাপ কত ভয়াবহ ! কোটিবার ব্যভিচার করার চাইতে এই পাপ ভয়াবহ ! এর ভেতর অনেকগুলো পাপ একত্রিত হয়, মিথ্যা অপবাদ দেওয়া,সমাজে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা,অপমানিত করা,সামাজিক,রাজনৈতিক,পারবিারিক,অর্থনৈতিকভাবে তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা,তার উপর যুলুম করা,,ইত্যাদী.....অথচ আমাদের সমাজে নির্দিধায় এসব পাপ চলে। মিথ্যা অভিযোগকারী ও তার ব্যাপারে মিথ্যা সাক্ষদাতা উভয়ে প্রায় সমান অপরাধী।

উঠে আবারো হাটতে শুরু করলাম অমসৃণ পথে, হাতে একটা গাছের ডাল ছিলো হাটার কাজে সহযোগীতায়।

এই পার্ক থেকে বিদায় নিয়ে চলতে শুরু করলাম,,,ভাবছিলাম ওয়াটার লু পার্কে যাব, কিন্তু মত বদলে সানিসাইড পার্কের দিকে যেতে শুরু করলাম। গতবার এই পার্কে আসতে গিয়ে রাস্তা হারিয়ে বিরক্ত হয়ে অন্য পথে বাসায় ফিরেছিলাম। এবার এই পার্কে চলে আসলাম। বিশাল একটা এলাকা জুড়ে ক্যাম্পিং চলছে দেখলাম। শত শত মোটরহোম,তাবুতে মানুষ কিছুদিন এর জন্যে প্রকৃতি উপভোগ করছে। ভাবলাম মানুষের পুরো জীবনটাই আসলে এরকম কিছু কিছু চলমান ক্যাম্পিং এর সমষ্টি। এভাবেই একসময় অবিষ্কার করব বুড়ো হয়ে গেছি,অথবা চলে গেছি ! আজকের বর্ণনার ভেতর আনন্দের বদলে দু:খ ঢুকে পড়ল ,,,, তবে মনে কিন্তু আনন্দ থৈ থৈ....বলছি একটু পরে...

পার্কের ভেতর এসে মুগ্ধ,,,এর ভেতর ভুল করে আরেক প্রান্তে গিয়ে লজ্জায় পড়লাম। সেখানে শত শত লোক তাবু টাঙিয়ে রয়েছে,,আমি তাদের সামনে ওয়ান ওয়ে এক রাস্তায় উল্টোপথে ডুকে লজ্জিত হলাম,,,তারাও বুঝলো। তারা আমাকে বের হওয়ার রাস্তা দেখালো। এখানে গতি সীমা মাত্র ৫ মাইল,,,জোরে চালালে কখনও পুলিশ ধরে। আমি সঠিক রাস্তায় প্রবেশ করতেই দেখী সামনে পুলিশ ! পুলিশ দেখলেই আমি বিনয়ী হয়ে আইন মানতে তৎপর হই,,, কারন এদের জরিমানা পিড়াদায়ক। এবার পার্কের অন্য প্রান্তে এসে দেখী এটাই সঠিক স্থান। এখানে লেকে সাতার কাটা বা বোট নিয়ে নামার জন্যে লাইফ জ্যাকেট আছে ফ্রি। এসব আমি নেইনা।

কিন্তু অসাধারন সবুজ রঙের স্বচ্ছ পানি দেখে লোক সামলাতে পারলাম না। বিশাল লেকে অনেক দামী দামী নৌযান নিয়ে এসেছে লোকে। এগুলো একটা ট্রেইলারে করে এরা আনে, তারপর নির্দিষ্ট ডক আছে, সেখান থেকে পানিতে নিরাপদে চলে যায়, ওঠার সময়ও এরকম দারুন ব্যবস্থা রয়েছে। অনেকে পাম্প করা নৌকা চালাচ্ছে। কেউ কেউ মাছ ধরছে। কেউ বিশাল স্পিড বোট নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আবার কেউ কেউ সাতার কাটছে।

আমি আমেরিকাতে কোনো লেকে এখনও গোসল করিনি। বড়জোর হাটু পানিতে হেটে বেড়াই। কিন্তু সুগভির এই দারুন লেক দেখে সহ্য করতে পারলাম না। নেমে পড়লাম। সাতারে মত্ত হলাম। বিশাল গভীর এই লেক,,,একেবারে খাড়া ধরনের। দেড় ঘন্টা কাটালাম এই লেকে, তারপর ভাবলাম এই পার্কটাকেই পৈত্রিক পার্ক বানাবো,,,, পাশাপাশি রিভার ব্যান্ডটাও থাকল.....মানুষের স্বভাবই এমন,,,,এরা খাইখাই স্বভাবের ! এ কারনে রসূল(সাঃ)বলেন-আদম সন্তান এক পাহাড় পরিমান স্বর্ণ পেলে আরেক পাহাড় পরিমান স্বর্ণ পেতে চায়, কোনো কিছুই এদের পেটকে ভরাতে পারেনা, কবরের মাটি ব্যতিত....

বাসায় ফিরে ভাত খেয়ে যেইনা ঘুম দিতে গেছি, অমনি একজন প্রফেসরের ফোন,,, অত্যন্ত বিনয়ের সাথে উনার বাসার একটা কাজে আমার শ্রম চাইলেন। তাকে বলেছিলাম দিনে-রাতে যেকোনো সময় যে কোনো প্রয়োজনে ডাকবেন, সওয়াব কামানোর নিয়তে কাজ করে দেব। উনাকে আমি বেশ পছন্দ করি,উনিও আমাকে পছন্দ করেন। বললাম-আমি কি এক্ষুনি আসব ! উনি বললেন না,,আগামী সপ্তাহে....কিন্তু আমিই জোর করে উনাকে দ্রুত কাজটা করতে বললাম আগামী কাল......। সওয়াবের নিয়তে অন্য লোকের কাজ করে দেওয়া মানে আল্লাহকে খুশী করার একটা বিরাট প্রতিবন্দকতা পার হওয়া। আল্লাহ আমাদের সকলের অতি ক্ষুদ্র ,সাধারন আমলকে অতি বিশাল হিসেবে গ্রহন করে,তাকেই নাজাতের ওছিলা বানিয়ে নিক ! তার কাছে এই কোনো ব্যাপারই না !

বিষয়: বিবিধ

৮৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File