লংবীচ টু কেপ ডিসএপয়েন্টমেন্ট

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ০৮:৫৯:৪১ সকাল





=======================

আমি যখন কোনো লেখা লিখি, তখন অন্তত ৯৫% ক্ষেত্রেই লেখা শেষ হলেই পোস্ট করে দেই। দ্বিতীয়বার চেক করিনা। যার কারনে পরে মনে হয়,,,আহ...অমুক অমুক ঘটনা তো উল্লেখই করা হয়নি। আমার প্রায় সব ভ্রমন কাহিনী অত্যন্ত সংক্ষেপে লেখা। অথচ সেখানে অনেক অনেক ঘটনার সমাহার ছিলো। ফেসবুকের পাঠকের ধৈর্য্য কম তাই ঘটনার সারসংক্ষেপ দিতে হয়।

পাহাড়ের পাদদেশে প্রবাহিত হওয়া স্বচ্ছ পানির কলাম্বিয়া নদীর সৌন্দর্য্য বয়ান করতেই পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা দরকার হয়। সেটা এস্টোরিয়াতে এসে অনেক প্রশস্ততা লাভ করেছে। এক পাশে ওয়াশিংটন, অন্যপাশে ওরেগন। এসেআরিয়ার পাশে নদীর উপর রয়েছে নানান সব স্থাপনা। অনেকগুলো পন্টুন রয়েছে,যেখানে বড় ছোট নানান সাইজের জাহাজ নোঙ্গড় করে। আবার প্রাইভেট পোতাশ্রয়ও রয়েছে। রাতে নদীর বুকে থাকা জাহাজ,নদীর ধারে ও নদীর উপর গড়ে ওঠা নানান স্থাপনার আলো দূর থেকে দেখতে খুব ভালো লাগে। সেদিন মেরিন মিউজিয়ামে প্রবেশ করলে বোধহয় ভালো হত। আবার মনে হচ্ছে দেখার তেমন কিছু ছিলোনা। ভেতরে জাহাজের নানান জিনিসপত্র,এ সংক্রান্ত জ্ঞান বিজ্ঞানের ছড়াছড়ি রয়েছে। তবে বাইরে থাকা বিশাল নোঙ্গড়টা আকর্ষন করল। এটা অনেক বিশাল জাহাজের নোঙ্গড়। আমি এর পাশে দাড়ানোর সময় মনে হল ক্ষুদ্র,তুচ্ছ আমি। আরেকটা প্রপেলার ছিলো সেটাও বিশাল। তবে এরচাইতেও বিশাল প্রপেলার দেখেছি আরেক স্থানে। সেটা ছিলো প্রায় ১৫ফুট উঁচু.....।

গত পরশু আসার পর শহরটা ঘুরে দেখার সময় দেখলাম একটি বসনিয়ান রেস্টুরেন্ট। বসনিয়া শব্দটা শোনার সাথে সাথে নানান চিত্র ভেসে উঠলো মনে। তাদের উপর অত্যাচারের কাহিনীগুলো মনে পড়ল। অবশ্য আরাকানের মুসলিমদের উপর বার্মিজ বর্বর আর্মীর অত্যাচারের কাছে সবকিছু হার মেনে যায়, অবশ্য বার্মা কাছে হওয়ায় তাদেরটা আমরা বেশী জানার সুযোগ পেয়েছি। যাইহোক বসনিয়ান রেস্টুরেন্টে খাওয়ার উচ্ছা ছিলো, কিন্তু দেখলাম তা বন্ধ। গতকাল শহরের ভেতর ঘোরার সময় আবারও পরিকল্পনা করলাম সেখানে খাওয়ার কিন্তু বন্ধ। এইমত্র মনে হল সেখানে খাওয়া দরকার,,,,কারন বসনিয়ান মুসলিম বলে কথা ! রেস্টুরেন্টে ঢুকে একটা সালাম দিলেও তো মনটা প্রশান্তিতে ভরে যায়। তবে সেখানকার ভেড়ার গোস্তের আইটেম আমাকে টেনেছে। তারা দারুন ভেড়ার আইটেম করে।

এস্টোরিয়া কলাম দেখার পর মন ছিলো ফুরফুরে। মনে হল অনেক দারুন জিনিস দেখলাম আলহামদুলিল্লাহ। আসলে পৃথিবীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করলে আল্লাহর উপর ঈমান দৃঢ় হওয়ার কথা। আমি যা দেখেছি তার চাইতেও সুন্দর জিনিস পৃথিবীতে অনেক অনেক বেশী আছে, না জানি জান্নাত তিনি কত সুন্দর করে তৈরী করেছেন !

হোটেলে ফিরে একটা বিশ্রাম নিলাম। সকালে ফ্রি নাস্তা সার্ভ করে হোটেল, তবে মাথা পর্যন্ত টানার মত তেমন কিছু নেই, তারপরও কমে ছাড়ার লোক আমি না। কিছু খেয়েছি আর কিছু নিয়ে এসেছি। সেগুলো হোটেল রুমে খাচ্ছিলাম আর পরিকল্পনা করছিলাম। .....ওহ,,,,,এইমাত্র বড় বাক্সে থাকা বাকলাভার হায়াত শেষ হয়ে গেল....ইন্নানলিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহে রাজেউন.......। ....যাইহোক ওয়াশিংটনের দিকে যাত্রা করলাম।

এস্টোরিয়া ব্রিজের উপর উঠলাম। ব্রিজটির ওরেগন অংশটা বিশাল উচু, কারন এদিক দিয়ে বড় বড় জাহাজ ব্রীজের নীচ দিয়ে চলাচল করে। ব্রিজটি ২ লেনের। ব্যপক স্টিল দিয়ে তৈরী হয়েছে এটি। দেখে মনে করেছিলাম এটা তেমন বড় না কিন্তু এটা আসলে সাড়ে ৬ কি:মি: লম্বা। হুবহু একই রকম ব্রিজ আসার পথে কলাম্বিয়া নদীর উপর আরও দুটো দেখেছি, সেগুলোও ওয়াশিংটনের সাথে মিশেছে। ব্রিজটি পার হলাম। ওপাশে নদীর ধারে বড় বড় পাথরখন্ড দ্বারা বাধ তৈরী হয়েছে,যাতে ঢেউ এসে কূলকে ক্ষতিগ্রস্ত না করতে পারে। সে রাস্তা দিয়ে চলার মাঝেও মজা আছে। এপাশের প্রথম শহরটা হল চিনুক। অনেক সুন্দর সুন্দর বাড়ি দেখলাম এখানে। অনেকের নৌযান আছে এখানে। ছোট ছোট এসব নৌযানের কোনো কোনোটার দাম মিলিয়ন ডলার। আর এসব রক্ষনাবেক্ষনে বিরাট টাকা দরকার হয়। একবার একজন পরিচিত লোককে তার বিশাল স্পিডবোটের ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলাম। সে বলল এটা প্রিমিয়াম কোয়ালিটির অকটেনে চলে আর প্রতি গ্যালন(৩.৭৯ লিটার) তেলে মাত্র আড়াই থেকে ৩ মাইল চলে। মানে এক লিটারে ১ মাইলেরও কম। তার সেই স্পিডবোটের চাইতে এসব প্রাইভেট নৌযান অনেক বেশী তেল পুড়ায়। এছাড়া আরও অনেক রকমরে ব্যয় রয়েছে,যা ধনীদের পক্ষে ছাড়া বহন করা সম্ভব নয়। আমি চলতে থাকলাম আনমনে। শহর, বনভূমি পারহয়ে ইলওয়াকো শহরে আসলাম। ২ বছর পূর্বে এদিকে এসেছিলাম , তখন এই শহরের একটা মিউজিয়ামে গিয়েছিলাম,মোটেও ভালো লাগেনি, কারন দেখার তেমন কিছু ছিলোনা। অবশ্য আমার সাথে সকলে একমত হবেনা,,,,,আমি কি দেখলে খুশী হতাম তাও ঠিক বলতে পারছি না।

লংবীচ পেনিনসুলার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। আমার যাত্রা পথে আমাকে ধন্য করেছে বিশেষভাবে রোস্টেড এমন্ড,কফি,বাদাম। এই এমন্ড এতই চমৎকার যা বলে বুঝানো যাচ্ছেনা। কুড়মুড় করে আমি তা খাই। খুব দারুন।মুখ সর্বদা প্রায় চলমান ছিলো........ পেনিনসুলা বা উপদ্বীপের লক্ষন হল, এর ৩ দিকে পানি একদিকে মাটির সাথে সংযুক্ত। ম্যাপে এই অংশটি দেখলে মজা লাগে। এটা ওয়াশিংটন থেকে ছুরির মত লম্বা হয়ে সাগরের মাঝে অবস্থান করছে। দ্বীপটাতে ধনীদের ছড়াছড়ি,তাদের মাঝে নতুন ফকিরের আগমন। ফকির গেল প্রথমে এক মিউজিয়ামে। এটা আসলে সেরকম মিউজিয়াম নয়। এটি একটি ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা ছিলো। বংশ পরম্পরায় এই পরিবার নানান সব পুরোনো জিনিসপত্র সংগ্রহ করত। পরে তারা একটি বিশাল দোকানে এগুলো রাখে প্রদর্শণীর জন্যে। এগুলো তারা বিক্রী করেনা তবে নানান সূভ্যেনীর বিক্রী করে। আমার বারবরই পুরোনো জিনিসপত্র দেখতে ভালো লাগে। এখানে যা কিছু আছে তা সর্বোচ্চ ২/৩ শত বছরের পুরোনো। পুরোনো দিনের অস্ত্র,বাদ্যযন্ত্র,সাজ সরঞ্জামসহ নানান জিনিসপত্র রয়েছে। পুরো দোকানে জিনিসপত্র একেবারে ঠাসা। লোকজন কেনার চাইতে দেখে মজা পাচ্ছে দেখলাম। আমিও ফ্রি মজা নিলাম।

শহরটার রাস্তায় বেশ কিছুক্ষন হাটাহাটি করলাম। এরকম শহরে হাটলে যে কোনো মানুষেরই ভালো লাগবে। এখানে সেখানে কাঠের কারুকাজ। নতুন,পুরোনো নানান দোকানপাট। সুন্দর পরিপাটি পরিবেশ। খুবই পরিচ্ছন্ন। লোকজন সহাস্যে এখানে সেখানে গমন করছে। দেখে মনে হচ্ছে এটা সুখ নগর। আমিও সুখের নগরের আগন্তুক হিসেবে হাটাহাটি করলাম। আজ রৌদ্র ঝলমল করছে আর তাপমাত্রা মোটের শীতের মত নয়। মনে হচ্ছে বসন্তের দিন।

খানিক পর লংবীচে প্রবেশ করলাম। পুরো দ্বীপে এরকম বীচ পয়েন্ট আছে বহু সংখ্যক। সাগরের তীরে নানান সব পার্ক তৈরী হয়েছে। অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও তৈরী করেছে। আমি সাগরের তীরে হাটলাম। বিশাল বিশাল ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছে। শত শত সিগাল উড়ছে। এরা ভয় বোঝেনা, তাই মানুষের কাছাকাছি ঘেসে থাকে। বেশ খানিক হাটাহাটি করে পুরো দ্বীপটা দেখতে চাইলাম। দ্বীপের ভেতর দুটি হাইওয়ে আছে, যা দ্বীপের দুদিকে রয়েছে। প্রথমটা ধরে চললাম। চারিপাশে সৌন্দর্য্যের সমারোহ। অনেকে এমন সব বাড়ি তৈরী করেছে যে, তা না দেখে মরতে মন চায়না। ধনীরা বিনোদনের যে কত সব কান্ড করে, না দেখলে বিশ্বাস হয়না। দ্বীপটার শেষে গেলাম। এই লংবীচ লম্বায় ৪৫ কি:মি:। আমি শেষে গিয়ে অন্য রাস্তা ধরে দ্বীপের প্রথমের দিকে ফিরলাম। ফেরার পথে দারুন একটা পার্কে গেলাম। সেখানে আছে সুন্দর স্বচ্ছ টলমলে পানির লেক। সেখানে অবস্থান করে মনে খুব প্রশান্তি পাচ্ছিলাম। কিন্তু মন চাচ্ছিলো এস্টোরিয়ার বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট মস এ বসে মাছ খাই। তাই দ্রুত ধাবমান হলাম সেদিকে। কিন্তু খানিক পর গন্তব্য করলাম কেপ ডিসএপয়েন্টমেন্ট.....সে এক দারুন জায়গা !!

বিষয়: বিবিধ

৬৩৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384637
০৪ জানুয়ারি ২০১৮ রাত ০১:৫১
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : চমৎকার
ভেড়ার গোস্ত টানতে পারলেন না, আমি
থাকলে ,দুজন মিলে টানতাম। দরকার
আপনার আশে পাশে থাকা। থাকি সেই দক্ষিনে। আপনার ওখানে বরফ পড়ার কথা। তাই না।
০৫ জানুয়ারি ২০১৮ সকাল ১১:২০
317256
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ধুর ওরেগন সম্পর্কে আপনার ধারনা নেই। এইখানে শীত বেশী না। পাহাড়ী অঞ্চলে কিছু তুষারপাত হয় কিন্তু ততটা শীত না। আর এখানে খামার আছে অনেক। এটা গ্রীন এলাকা Happy আসেন এখানে থাকেন,,,তাইলে দুজনে ভেড়া খাব Happy মেইল করেন

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File