'ইস্তেখারা' নিয়ে ব্যবসা ও কিছু কথা

লিখেছেন লিখেছেন তাইছির মাহমুদ ০৩ অক্টোবর, ২০১৬, ১০:০৮:১৭ রাত

মাস কয়েক আগে আমার অফিসে এক 'হুজুরের' পদযুগল পড়লো। তাঁর বাড়ি সিলেটে। লন্ডনের স্থায়ীভাবে বসবাস করেন । বললেন, আমার সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে এসেছেন। কিছুক্ষণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনার পর একসময় বললেন আপনাদের পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন দিতে চাই। বললাম: বিজ্ঞাপন দেবেন? এটা তো খুবই ভালো কথা। আমার কথা শেষ করা আগেই বলে উঠলেন, "বিজ্ঞাপনে আবার তাবিজ-কবজের বিষয় আছে। ছাপাবেন তো?"

তাবিজের কথা বলার সাথে সাথে তাঁর সঙ্গে আমার ছোটো-খাটো একটি বাহাস শুরু হয়ে গেলো। প্রায় বিশ মিনিটের বিতর্কে তিনি যখন তাঁর তাবিজ ব্যবসা আমার কাছে হালাল করতে পরছিলেন না, তখন ক্ষুদ্ধ হয়ে বললেন, "এতো যুক্তি ও হাদীস কুরআন দৌড়াচ্ছেন কিন্তু দাড়ি রাখেন না কেন?" আমি তাঁর প্রশ্নের জবাব দিতে চেষ্টা করি। কিন্তু তিনি আমার কথা না শোনার ভান করে চরম ক্ষোভ নিয়েই অফিস ত্যাগ করলেন।

গত সপ্তাহে দেখলাম সেই 'হুজুরের' বিজ্ঞাপন সহযোগী একটি সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। কেউ ছাপতেই পারেন। এটা তাঁদের ব্যবসার পলিসি হতে পারে । তবে, যেহেতু সংবাদপত্রের কাজ হচ্ছে মানুষকে সঠিক ইনফরমেশন দেয়া, সঠিক পথে পরিচালিত হতে সহযোগিতা করা সবর্োপরি মানুষকে শিক্ষিত করা। তাই আমরা এসব বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে বিরত থাকি। সংবাদপত্র তো মানুষকে প্রতারিত হতে সহযোগিতা করার জন্য নয়।

প্রকাশিত ওই বিজ্ঞাপনে অনেকগুলো বিষয় আছে। এক কথায় একের ভেতরে সব। এগুলোর অধিকাংশই শিরক এবং বড় ধরনের প্রতারণা। সব বিষয় নিয়ে এখানে লেখা সম্ভব হবেনা । আজ শুধু একটি বিষয় নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করতে চাই। তা হচ্ছে "ইস্তেখারা"।

বিজ্ঞাপনে লেখা আছে, হুজুর আপনার পক্ষ থেকে ইস্তেখারা করে আপনার সমস্যা বলে দিতে পারেন। (নাউজুবিল্লাহ)। ইস্তেখারা করে মানুষের কোনো সমস্যা দেখা যায় কিনা সেই বিষয়ে যাওয়ার আগে ইস্তেখারা কী সেই বিষয়ে একটি ধারণা দিতে চাই।

ইস্তেখারা হচ্ছে কোনো কাজ শুরু করার আগে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহ তায়ালার সাহায্য চেয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাওয়া। নামাজ শেষে একটি দোয়া পড়তে হয়। এই দোয়ার সারাংশ হচ্ছে, আল্লাহ তালার কাছে এই বলে সাহায্য চাওয়া যে, "আপনি নিজের ভবিষ্যত সম্পর্কে কিছু জানেন না। যে কাজটি করতে চান তা যেনো আল্লাহ তায়ালা আপনার জন্য কল্যাণকর করে দেন। আর যদি কল্যাণকর না হয়, তা থেকে যেনো আপনাকে বিরত রাখেন।" এরপর আল্লাহর উপর ভরসা করে কাজ শুরু করা। এটাই ইস্তেখারা নামাজের মূল উদ্দেশ্য। আর যেকোনো সিদ্ধান্তের জন্য নিজে নিজের ইস্তেখারা করতে হয়। অন্য কেউ কারো পক্ষ থেকে ইস্তেখারা করতে পারে না।

কিন্তু আমাদের সমাজে একটি ধারণা রয়েছে, ইস্তেখারা করলে বোধহয় কিছু দেখতে হবে। অর্থাৎ, রাতে ইস্তেখারার নামাজ পড়ে ঘুমানোর পর এই বিষয়ে কিছু দেখতে হবে। কিছু না দেখলে ইস্তেখারা হবে না। এটা সম্পুর্ণ ভুল ধারণা।

কেউ রাতে স্বপ্নে কিছু দেখলে দেখতেও পারেন। তা ইস্তেখারার নামাজ পড়লে দেখতে পারে, না পড়লেও দেখতে পারে। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক স্বপ্ন দেখে থাকি । এইসব স্বপ্নের ব্যাখ্যা আমরা জানিনা। অনেক স্বপ্নের সঠিক কোনো অর্থ নেই। কোনো কোনো সময় শয়তানও স্বপ্ন দেখিয়ে থাকে। ইসলামের দৃষ্টিতে স্বপ্ন তিন প্রকার। প্রথমটি ভালো স্বপ্ন, আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে, দ্বিতীয়টি শয়তানের পক্ষ থেকে আর তৃতীয়টি মানুষের কল্পনা থেকে হয়।

স্বপ্নে কোনো কিছু সরাসরি দেখানো হয়না। এজন্য স্বপ্নের তাবির বা ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয়। স্বপ্নের ব্যাখা করা একটি বিশেষ জ্ঞানের বিষয়। এই জ্ঞানে যারা জ্ঞানী তারাই স্বপ্নের ব্যাখা করে দিতে পারেন। তবে তাঁদের ব্যাখ্যাও শতভাগ সঠিক হয়না। স্বপ্নের প্রকৃত অর্থ আল্লাহ তায়ালা ছাড়া শতভাগ নিশ্চয়তার সাথে কেউই বলতে পারবেন না।

সুতরাং এটা পরিস্কার, স্বপ্নে কিছু দেখার উদ্দেশ্যে ইস্তেখারা নয়, ইস্তেখারা হতে হবে কোন কাজ শুরু করার আগে দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহ তায়ালার সহযোগিতা চেয়ে শুরু করা।

যে ব্যক্তি অন্যের পক্ষ থেকে অর্থের বিনিময়ে ইস্তেখারা করেন, তিনি একজন প্রতারক ছাড়া কিছুই নয়। আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ায় এমন কাউকে খলিফা নিযুক্ত করেননি, যিনি মানুষের নাম-ঠিকানা জেনে তার পক্ষ থেকে ইস্তেখারা করবেন, আর তিনি সকলের সমস্যা, সুবিধা-অসুবিধা, সমাধান- বাতলিয়ে দেবেন। অন্যের পক্ষে ইস্তেখারা করে কিছু জানা বা দেখা দূরে থাক, তিনি নিজের সমস্যা সমাধানের জন্য ইস্তেখারা করেও সরাসরি কিছু জানতে পারবেন না। কারণ, প্রথমত ইস্তেখারার অর্থ নয় স্বপ্লে এর সমধান পাওয়া। দ্বিতীয়ত: স্বপ্নে যেহেতু কোনো কিছু সরাসরি দেখা যায়না তাই তিনি যদি কোনো স্বপ্ন দেখেও থাকেন, তাহলে তিনি তার মক্কেলকে নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না, ওই কাজ করলে ভালো বা মন্দ হবে।

সুতরাং, যারা অন্যের পক্ষ থেকে অর্থের বিনিময়ে ইস্তেখারা করে তারা ভন্ড ও প্রতারক। এদের থেকে আমরা যেনো দূরে থাকতে পারি।

তাইসির মাহমুদ

৩ অক্টোবর ২০১৬

ক্যানারী ওয়ার্ফ

লন্ডন, যুক্তরাজ্য

বিষয়: বিবিধ

১২০০ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

378253
০৩ অক্টোবর ২০১৬ রাত ১০:২১
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।


বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে সতর্কতামূলক সুন্দর লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
০৩ অক্টোবর ২০১৬ রাত ১১:৩০
313466
তাইছির মাহমুদ লিখেছেন : পড়ার জন্য ধন্যবাদ
378254
০৩ অক্টোবর ২০১৬ রাত ১০:৫১
গোলাম মাওলা লিখেছেন : আসসালামু আলাইক, এই সব হাবি জাবি দিয়ে টিভিতে রাতে বেশ জম জমাট বিংাপন দিচ্ছে।

পাহার ত লি, অমুক তমুক
০৩ অক্টোবর ২০১৬ রাত ১১:৩০
313467
তাইছির মাহমুদ লিখেছেন : ইয়েস। আমাদের এসবের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন গড়ে তোলা উচিত
378255
০৪ অক্টোবর ২০১৬ রাত ০৩:০৮
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : চমৎকার লেখা, চালিয়ে যান।


378262
০৪ অক্টোবর ২০১৬ সকাল ১১:১৮
নেহায়েৎ লিখেছেন : যে ব্যক্তি অন্যের পক্ষ থেকে অর্থের বিনিময়ে ইস্তেখারা করেন, তিনি একজন প্রতারক ছাড়া কিছুই নয়। আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ায় এমন কাউকে খলিফা নিযুক্ত করেননি, যিনি মানুষের নাম-ঠিকানা জেনে তার পক্ষ থেকে ইস্তেখারা করবেন, আর তিনি সকলের সমস্যা, সুবিধা-অসুবিধা, সমাধান- বাতলিয়ে দেবেন।
১৭ অক্টোবর ২০১৬ রাত ০৮:৫৪
313734
তাইছির মাহমুদ লিখেছেন : thanks
378268
০৪ অক্টোবর ২০১৬ দুপুর ০৩:১৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এই ব্যবসা দেশেও চলছে। অনেকে আবার মনে করেন ইস্তেখারা হুজুর রা্ই শুধু করতে পারেন।
378273
০৪ অক্টোবর ২০১৬ বিকাল ০৪:০২
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : ভালো কাজ করেছেন ফিরিয়ে দিয়ে।
378275
০৪ অক্টোবর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:০৬
শফিউর রহমান লিখেছেন : সুন্দর।
ধন্যবাদ বিভ্রান্তী তৈরী হতে পারে এমন বিষয় না ছাপানোর আপনাদের পত্রিকার পলিসির জন্য। ধন্যবাদ এই লেখার জন্যও।
378318
০৫ অক্টোবর ২০১৬ দুপুর ১২:৪৭
কাহাফ লিখেছেন : ধান্ধাবাজী ছড়িয়ে পড়েছে সর্ব জায়গায়!
সতর্কমুলক পোস্টে ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহ!!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File