বিটিআরসি’র নতুন নির্দেশনা- যেনো বাঁচাল হওয়ার ট্রেনিংঃ

লিখেছেন লিখেছেন FM97 ১৯ মার্চ, ২০১৫, ১১:৫২:৪১ সকাল



নতুন কোনো প্রস্তাব বা নির্দেশ তখনই আসে যখন বিদ্যমান পদ্ধতিতে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। কিন্তু হঠাৎ কি প্রয়োজনে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সব মোবাইল অপারেটরদের নিয়ে সিমের মালিকানা বাতিল, নিষ্ক্রিয়করণ কিংবা ব্যালেন্সের মেয়াদ নিয়ে নির্দিষ্ট সময়সীমা দিয়ে দিলেন? বরং আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে সরকার জনগণকে কষ্ট ও ভোগান্তির মধ্যে ফেলে অতিরিক্ত ট্যাক্স আদায় করার জন্যই যেনো এ নতুন নিয়ম করছেন।

প্রথমত, মানুষ প্রয়োজনে ও যোগাযোগ রক্ষার্থে মোবাইল ব্যবহার করে। এদিকে অধিকাংশরা মোবাইলে একটা সিম ব্যবহার করলেও কেউ কেউ বন্ধু-বান্ধবদের সাথে মিলিয়ে একই অপারেটরের সিম নেয় (যাতে কম খরচে কথা বলা যায়) বা কোনো অসুবিধা বা উটকো ঝামেলা এড়াতে ভিন্ন সিম নেয়। তো, সিম একটা হোক কিংবা দুটা ফোন করলেই যেখানে সরকার প্রতি কল বাবদ ট্যাক্স পাচ্ছে, সেখানে দুই বছর বন্ধ থাকুক বা ৯০ দিন- মালিকানা হারানো কিংবা সিম নিষ্ক্রিয় করার কথা আসবে কেনো?



অপরদিকে, নির্দেশনার মধ্যে একটা বিষয় ভালো যে, ‘সেরা’, ‘সর্বোচ্চ’ কিংবা ‘সবচেয়ে ভালো’-এমন লোভনীয় কথা অপারেটররা যাতে না ব্যবহার করে। কিন্তু কি বিবেচনায় রিচার্জকৃত টাকার মেয়াদ নির্ধারণ করা হলো? পৃথিবীর সব মানুষ এক সমান কথা বলে না, কেউ ধীরে কথা বলে, কেউ দ্রুত, কেউ অল্প, কেউ বা বেশি কথা বলে। কারো ৫০ টাকায় এক মাস যায়, কারো বা ৫ দিনেই শেষ হয়ে যায়। তেমনি হিসাব- ১০,২০,৩০ এভাবে ১০০ কিংবা ১০০০ এর ক্ষেত্রেও। সুতরাং, এটা এক এক জনের ব্যক্তি সচেতনতা। অনেকেই আয় বুঝে মোবাইলে কথা বলে। কিন্তু নির্দেশমালায় একেবারে উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে ১০ থেকে ৩০ টাকা ১০ দিনের মধ্যে, ৩১ থেকে ৫০ টাকা ১৫ দিনের মধ্যে, ৫১ থেকে ১০০ টাকা ১ মাসের মধ্যে- এভাবে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এর মানে ১০ দিনে ৩০ টাকার কথা না বললে টাকা কাঁটা পরবে। সুতরাং, এবার তাহলে কথা না থাকলেও কথা বের করতে হবে, কারণ কেউ তো চাইবে না নিজের টাকা কাঁটা পরুক। তাহলে প্রশাসন কি আমাদের বাঁচাল হওয়ার ট্রেনিং দিচ্ছে?

আরেকটি বিষয়ে প্রশাসনের সমালোচনা না করে পারছি না। প্রশাসন ওয়াকিবহাল যে- এখন প্রত্যেক রিচার্জের দোকানিরা এক টাকা মেরে নিচ্ছে। ১০টাকা মোবাইলে ভরতে চাইলে, দিতে হয় ১১ টাকা, তেমনি ২০/৩০ টাকা দিলে ১৯ ও ২৯ টাকা ভরে দেয়। এদিকে ঈদ সামনে করে তো প্রকাশ্যে তারা কিছু টাকা বেশি নেয়া শুরু করে। দোকানে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়- ‘৫০ টাকার জন্য ৫ টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে’, কোথাও আবার ১০০টাকা দিলে মোবাইলে আসে ৯৮ টাকা। তাদের এরূপ হীন কর্মের জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে জানতে পারি- বাংলাদেশ মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসায়ী এসোসিয়েশন এই নিয়ম জারি করেছে। তাদের অভিযোগ প্রত্যেক রিচার্জ প্রতি মোবাইল অপারেটরগুলো তাদেরকে নায্য কমিশন দেয় না। এতো দিন হাজারে ২৭ টাকা দিয়ে আসলেও এতে তাদের পোষায় না। তাই, তারা দাবি করছে হাজারে ১০০টাকা কমিশন দিতে। যেটা অপারেটররা মানছেন না। এ ব্যাপারে বাংলালিংকের এক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়- “দোকানিরা আর কতো চায়?, তারা তো প্রত্যেক নতুন অফার বাবদই কমিশন পায়!”। সুতরাং, বিবদমান দুই পক্ষে কোনো মিমাংসা না হওয়ায় এবার দোকানিরা অতিরিক্ত টাকা আদায় করে নিচ্ছে অসহায় জনগণের কাছ থেকে। তাহলে, অপারেটরদের নিয়ে অহেতুক কোনো নতুন নির্দেশ না দিয়ে প্রশাসনের কি উচিত ছিলো না উপরিল্লেখিত অমিমাংসিত ইস্যুর যাঁতাকল থেকে জনগণকে মুক্ত করা?

সুতরাং, প্রস্তাবিত সকল নির্দেশনা ফিরিয়ে নিয়ে জনগণকে স্বস্তি দিন। আর দয়া করে- রিচার্জকৃত টাকার মেয়াদ অনির্দিষ্টকাল করে এবং রিচার্জের সময় দোকানিরা যাতে অতিরিক্ত টাকা আদায় না করে- এমন ব্যবস্থা ও নির্দেশনা জারি করুন।

বিষয়: বিবিধ

১৫৭১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

309814
১৯ মার্চ ২০১৫ বিকাল ০৪:২৫
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

লাউ কিম্বা বটি- যেটাই উপরে থাকুক, আর যেভাবেই চাপ দেয়া হোক-
সকল অবস্থায় লাউ কাটা পড়বে

বহুজাতিক/সেবা/কোম্পানী ও সরকারের সাথে জনগণের সম্পর্কটা এমনই- কাটা পড়া থেকে বাঁচার পথ নেই জনদরদী ন্যায়পন্থী সরকার ছাড়া!!

আসুন রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্যই আমরা জোরদার চেষ্টা করি
309954
২০ মার্চ ২০১৫ রাত ০৩:১৮
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : রাষ্ট্রের শাসকেরা জনগণে ভালো চাইনা শুধু চেয়ার ধরে বসে থাকতে চাই।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File