স্বামী-স্ত্রীঃ সুখী ও ভালোবাসাময় দাম্পত্য জীবনের কিছু পাথেয়

লিখেছেন লিখেছেন নুমান আলী খান কালেকশন বাংলা ১৯ মার্চ, ২০১৫, ০৯:১১:৪৮ সকাল

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম



বোন, আপনার স্বামীর সাথে লেগে থাকুন, তাদের প্রতি রাগান্বিত হবেন না, তাদেরকে ভালোবাসুন। বিশ্বাস করুন, আপনার ভালোবাসায় যদি তিনি সুখী হন তবে আপনি প্রকৃতপক্ষেই সুখী হবেন।

আপনি হয়তো ভাববেন, “আমি যেহেতু রাগান্বিত, তাহলে সে সুখে থাকবে কেন? সে আমাকে কেয়ার করে না, আমি কেন তাকে কেয়ার করবো?”

আপনার স্বামীও কিন্তু একই রকম চিন্তা করেন, “আমার স্ত্রী আমার ব্যাপারে কেয়ার নেয় না আমি কেন তার ব্যাপারে কেয়ার নেবো?”

বোন, আপনিই প্রথমে শুরু করুন। তার প্রতি যত্নবান হোন, সুন্দর হোন। তার দিকে তাকিয়ে হাসুন। দেখুন তার আগ্রহ বেড়ে যাবে! তিনি বলবেন, “তুমি হাসছো কেন? কেন হাসছো? সব কিছু ঠিক আছে তো? তোমার মা আসছেন নাকি বাড়িতে?”


আপনিই শুরু করুন। বাইরে যাওয়ার জন্য সাজবেন না, আপনার স্বামীর জন্য সাজুন। আপনার চার-পাঁচজন সন্তান আছে, সেটা কোন ব্যাপার না, তবুও স্বামীর জন্য সাজুন। বাইরে চারপাশে শয়তান আর ফিতনা ছড়িয়ে আছে। আপনার স্বামীর আপনার মাঝেই সৌন্দর্য দেখা উচিৎ, বাইরের কোন কিছুর মাঝে নয়।

আর স্বামীদের উচিৎ স্ত্রীদের কর্মের কৃতিত্ব দেওয়া, প্রশংসা করা, তাদের ভালোবাসার কথা বলা। সব সময় অভিযোগ করবেন না এই বলে যে, “বাচ্চারা কোথায়?”, “খাবার রেডি হয়েছে?”, “এটা করেছো?”, “সেটা করেছো?”... এতো অভিযোগের রেশে স্ত্রী হয়তো বলে বসবেন, “আমি কিছুই করিনি।” আর আপনি সে সুযোগে বলবেন, “তুমি আমার কোন কথাই শুনো না!”


বন্ধ করুন ভাই, এতো অভিযোগ করবেন না, “খাবারে লবণ বেশি কেন?”, “খাবার ঠান্ডা কেন?”, “বেশি গরম কেন?” … বন্ধ করুন ভাই, বন্ধ করুন। স্ত্রীর উদ্দেশ্যে ভালো কিছু বলুন, সুন্দর কিছু বলুন।

আমি জানি আমাদের কালচারে, বিশেষত বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্ডিয়াতে স্ত্রীর উদ্দেশ্যে ভালো কিছু বলাটা খুবই কঠিন, ভালো কিছু বললেই যেন বুকের বামপাশে ব্যাথায় চিনচিন করে উঠে! তাই ভালো কিছু বলার পর সেটাকে ব্যালান্স করার জন্য মন্দ কিছুও যেন বলতে হয় তখন! যেমন খাবার ভালো হলে প্রশংসা করলেন আর বললেন, “খাবার অনেক ভালো হয়েছে। কিন্তু আমি এখনো তোমার মাকে খুব একটা পছন্দ করি না!” যেন ভালো কিছুর সাথে মন্দ কিছুও বলতে হয় ভারসাম্য করার জন্য। না, এরকম করবেন না।

এই আয়াতে বলা হয়েছে,
“হে আল্লাহ, আমাদের জন্য আমাদের স্বামী/স্ত্রী ও সন্তানদেরকে চক্ষুশীতলকারী করে দিন।” [সূরা আল-ফুরকান, ২৫ঃ ৭৪]


আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের স্বামী, স্ত্রী এবং সন্তান থেকে এতোটা সুখ চাচ্ছি যেন এটা আমাদেরকে আনন্দের কান্নায় বইয়ে দেয়। এটা কীভাবে সম্ভব যে আপনি এতো কিছু পাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করবেন কিন্তু আপনি নিজে কোন কাজই করবেন না সেটা পাবার জন্য? না, এভাবে হবে না। আপনি দু’আ করবেন, “হে আল্লাহ, আমাকে সালাত প্রতিষ্ঠাকারী বানিয়ে দাও (রাব্বি জায়ালনি মুকিমাসসালাতি)” আর ঐদিকে আযান দিচ্ছে অথচ আপনি চেয়ারে হেলান দিয়ে দু’আ করেই যাচ্ছেন। আল্লাহ তো আপনার জন্য ফেরেশতা পাঠাবে না যে তারা আপনাকে শূন্যে ভাসিয়ে সালাতে নিয়ে যাবে, আপনাকে রুকু-সিজদা করিয়ে দেবে! বরং আপনি দু’আ করুন আর তার সাথে চেষ্টা করতে থাকুন।

তদ্রুপ আপনি দু’আ করবেন আর তাৎক্ষণিকভাবে আপনার স্ত্রী আপনাকে ভালোবাসবে এমনটা কাজে দেবে না। আপনাকেও তার প্রতি ভালোবাসা দেখাতে হবে ভাই। তাকে ভালোবাসুন। এটাই হবে গুরুত্বপূর্ণ কাজ এই উম্মাহর জন্য, মুসলিম পরিবারগুলোর বন্ধনকে দৃঢ় করা।

কারণ যেখানে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া হয়, সেখানে সন্তানরা ঠিকমত বেড়ে উঠতে পারে না। মা এর সাথে যদি সন্তানের কোনো সমস্যা হয় সে বাবার কাছে যায়। বাবার সাথে কিছু হলে সন্তান মায়ের কাছে যায়। দু’জনের ঝগড়ার মাঝে সন্তানরা মানুষ হতে পারে না, ঠিকমত বেড়ে উঠতে পারে না।

“হে আল্লাহ, আমাদের স্বামী/স্ত্রী ও সন্তানদেরকে আমাদের জন্য চক্ষুশীতলকারী করে দিন।” [২৫ঃ৭৪]

আমাদের কেনোউচিৎ একটি ভালো পরিবার তৈরি করা? কারণ আপনি যখন একজন ভালো স্বামী হবেন, আপনার ছেলেও তার দাম্পত্য জীবনে ভালো স্বামী হবে। আপনি যখন একজন গুণবতী স্ত্রী হবেন, আপনার মেয়েও সংসারজীবনে ভালো স্ত্রী হবে। আর যদি আপনারা ভালো না হোন, তাহলে আপনারাই তাদেরকে ভবিষ্যতের মন্দ পরিবার হিসেবে গড়ে তুলবেন আর এটা হবে আপনারই ভুলের জন্য; আপনিই এর জন্য দায়ী থাকবেন। এজন্যই আমরা বলি, “আর আমাদেরকে মুত্তাকিদের ইমাম বানিয়ে দিন।” এর মানে প্রত্যেকটা পরিবারের ইমাম থাকেন, আর পরিবারের প্রধান হিসেবে আপনাকেই তাকওয়াশীল একটি পরিবার গড়ে তুলতে হবে। আপনাকে হতে হবে সেই তাকওয়াশীল পরিবারের ইমাম; কারণ আপনার পরিবারেরইমাম তথা নেতা তো স্বয়ং আপনি-ই।

কেনো আমাকে মুত্তাকী পরিবার গড়ে তুলতে হবে? কারণ ইমাম হিসেবে হাশরের ময়দানে আপনার পরিবার আপনার সাথে থাকবে, তারা যদি আপনার কারণে কোন ভুল করে তবে এর দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে পরিবারের ইমাম হিসেবে। আপনাকে তাদের সাথে বাধা হবে, কারণ আপনি তাদের ইমাম হিসেবে তাদের প্রতি দায়িত্বে আবদ্ধ। কিন্তু আপনার সন্তানেরা যদি ভালো হয়, ভালো কাজ করে, আল্লাহর দ্বীনের সেবা করে, তবে তাদেরকে আল্লাহ উপরে তুলবেন, সম্মানিত করবেন। সাথে আপনাকেও আল্লাহ তাদের সঙ্গে সম্মানিত করবেন, উপরে তুলবেন। কারণ আপনি তাদের সাথেই বন্ধনে আবদ্ধ রয়েছেন, আপনি তাদের ইমাম। আপনার একার সাওয়াব হয়তো আপনার জান্নাতে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে আর সে জন্য আমরা আমার সন্তান, তাদের সন্তান, তাদের সন্তান এভাবে বংশধরদের থেকে আল্লাহর কাছে চাই।

আল্লাহ আমাদের মুত্তাকিদের ইমাম হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।

------------------------------------------------------

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে দেখুন এই অসাধারণ লেকচারটি

The Coolness of Eye – Ustadh Nouman Ali Khan

প্রয়োজনীয় লিংকসমূহ


----------------------------

ফেইসবুক - https://www.facebook.com/NAKBangla

ইউটিউবঃ YouTube.com/NAKBangla

আর্টিকেলঃ FB.com/NAKBangla/notes

অডিওঃ soundcloud.com/NAKBangla

ভিমিওঃ vimeo.com/NAKBangla

অন্যান্যঃ

উস্তাদ নুমান আলী খানের ইংরেজী লেকচারসমূহঃYouTube.com/NAKcollection

উস্তাদ নুমান আলী খানের তাফসীরের অনুপ্রেরণায় বাংলায় সাইটঃ quranerkotha.com

বিষয়: বিবিধ

১৩০৮ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

309784
১৯ মার্চ ২০১৫ সকাল ০৯:২৬
FM97 লিখেছেন : সর্বোপরি লেখা চমৎকার! তবে, রাগ থামানোর কথা শুরুতে শুধু মেয়েদের উদ্দেশ্যেই বলা হল_ //আপনি আগে শুরু করুন//-কিন্তু আমি মনে করি- দুই দিক দিয়েই এই প্রবণতা থাকা উচিত। যে আগে করবে- "সে অধিক নেকি পাবে"- এই মানসিকতা নিজের মধ্যে জন্মানো ভালো।
১৯ মার্চ ২০১৫ সকাল ১১:০২
250854
নুমান আলী খান কালেকশন বাংলা লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ সুন্দর একটা কমেন্ট করার জন্য। আপনার সাথে একমত। আমরা কেবল উস্তাদের লেকচার থেকে অনুদিত করে সুন্দর উপস্থাপন করেছি। তবে উস্তাদের কথার দিকে তাকালে বুঝতে পারি যে উস্তাদ নারীদের ভালোবাসা ও কোমলতার শক্তিকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, এতে কিন্তু নারীদেরকে অবমাননা করা হয়নি! উপরোক্ত এ পাওয়ারের কথা একটা হাদিসেও পাওয়া যায় যেখানে একজন সাধারণ নারীও একজন জ্ঞানী ব্যক্তিকে নিজের করায়ত্বে রাখতে পারে তার এ শক্তি দিয়ে। আর পুরুষদেরকে কিন্তু রাগ না করা, কমপ্লেইন করতে নিষেধ করা হয়েছে। আদতে যেন কোন রাগের ঘটনাই পুরুষদের থেকে না আসে সে উপদেশ দিয়েই দেওয়া হয়েছে!!
309797
১৯ মার্চ ২০১৫ দুপুর ১২:৩০
হতভাগা লিখেছেন : অরন্যে রোদন
309819
১৯ মার্চ ২০১৫ বিকাল ০৫:১০
নিরবে লিখেছেন : নুমান আলি খানের বাংলা কালেকশন গ্রুপকে অনেক অনেক ধন্যবাদ । প্রথমত ওনার কথাগুলো বাংলাভাষীদের কাছে পৌছে দেবার জন্য, আর আরো ভালো হত যদি পিস টিভিতে এগুলা প্রচার করা যেত। সর্বোপরি আপনারা যে কাজটা করেছেন সেটার উত্তম পুরস্কার আল্লাহ দিন।আমিন।
১৯ মার্চ ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৩
250900
নুমান আলী খান কালেকশন বাংলা লিখেছেন : ্জাজাকাল্লাহ আপনার সুন্দর আগ্রহী কমেন্টের জন্য। আমাদের সাধ্যমত এটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি আর আশা করি আপনারাও আপনাদের কাজ সেটা পিসটিভি বাংলাই হোক বা অন্যটা হোক চালিয়ে যাবেন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন আল্লাহ আমাদেরকে আরো কাজ করার তাওফিক দেন।
309929
২০ মার্চ ২০১৫ রাত ০২:১০
মুফতি যুবায়ের খান রাহমানী। লিখেছেন : অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ভালো লাগলো
২০ মার্চ ২০১৫ সকাল ০৯:১০
251007
নুমান আলী খান কালেকশন বাংলা লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
309955
২০ মার্চ ২০১৫ রাত ০৩:২৬
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আপনি যা বললেন তা হলে সংসারটা কিসুড়ি হয়ে যাবে মাঝেমধ্যে একটু রাগারাগি না হলে মজা জমেনা...!
তবে ধৈর্যসিমা আবশ্যিক!
২০ মার্চ ২০১৫ সকাল ০৯:১২
251008
নুমান আলী খান কালেকশন বাংলা লিখেছেন : সেটা ঠিক আছে, তবে আগে তো ধৈর্যের সুফল, কীভাবে ধরতে হবে সেগুলো জানা চাই। না জানলে হিতে কিন্তু বিপরীত হতে পারে। ভালোবাসাময় রাগারাগি চললে তো আরো বেশি আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি হবে। জাজাকাল্লা ভাই অ্যান্ড আপু।
310000
২০ মার্চ ২০১৫ সকাল ১০:৫১
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম আপনি চার মাসের ব্লগিংয়ে একটি মন্তব্যও. অন্য কারো ব্লগে করেন নি!!!!!! ব্লগের জন্য যা লজ্জার!!



২০ মার্চ ২০১৫ রাত ১০:৫৭
251123
নুমান আলী খান কালেকশন বাংলা লিখেছেন : আপু এন্ড ভাইয়া, এটা উস্তাদ নুমান আলী খানের অনুবাদ ও কাজের প্রচারের জন্য করা হয়েছে কেবল। আমরা যদি অন্য কোথাও কমেন্ট করি, দ্বিমত করি, বহুমত করি, সেগুলোতে অনেক সময় ব্যবহারিক দিকগুলো ইসলামের সীমার বাইরে চলে যায়,জ্ঞান না থাকার কারণে, বা আদবের অভা্বে। সেজন্য আমরা অন্য কোথাও কমেন্ট করি না। আমাদের দরকার ভালো কিছু অন্যদের কাছে ছড়িয়ে দেওয়া আর সেটাই দায়িত্ব, অন্য কোথাও কমেন্ট করার দায়িত্ব এখানে নেই না আমরা - দায়িত্বটুকু কেবল পালন করছি, আল্লাহর কথাওগুলোকে সুন্দর উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রচার-প্রসার। জাজাকাল্লাহু।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File