কবিতার শবদাহ

লিখেছেন লিখেছেন আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ ০৫ নভেম্বর, ২০১৪, ০৬:২৫:২১ সন্ধ্যা

পর্ব- ২

এখন শরতের প্রায় শেষ। প্রকৃতির পরতে পরতে ইতোমধ্যেই এসে গেছে হেমন্তের আগমনী বার্তা। তার উপরে এখন রাত। নিশির শিশির ঝরছে খুব। নিয়ন আলোয় এই শিশির কণাগুলোকে অনেকটা রঙিণ দানার মতো মনে হচ্ছে। ঠান্ডা হাওয়ায় একটু একটু শীত অনুভূত হতে লাগলো। এক কাপ চায়ের খুব অভাব অনুভব করলাম। কিন্তু এখানকার চা কিংবা কফি কোনটাই তেমন ভালো না। কি করা যায়? তাছাড়া আমরা দুজনে অদ্ভুদ চা খোর না হলেও মোটামুটি চায়ের প্রতি ভীষণ দূর্বল। তাই তিনটা চায়ের অর্ডার দিলাম। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই চা চলে এলো। চায়ের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে ওনি বলা শুরু করলেন-

‘২০০৭ সালের শেষের দিকে আমি এখানে আসি। দক্ষিণ পতেঙ্গা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়। সহকারী ইংলিশ টিচার হিসেবে এসেছিলাম। এখানে তখন এতটা উন্নত ছিল না। তখনকার এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাশ নিতে গিয়ে, একটা মেয়েকে আমার ভীষণ ভালো লেগে যায়। সবার পরিচয় জানার ছলে আমি তার নামও জেনে নিয়েছিলাম।

নাম নুসরাত নিঝু। মেয়েটির যেমন নাম তেমন রোমান্টি চেহারাও। কালো বোরকা পড়া, একটা সাদা ওড়না গায়ে। কপালে কিছু খোলা চুল। ফ্যানের বাতাসে একটু একটু উড়ছিল। সে বারবার হাত দিয়ে ঠিক করে দিচ্ছিল কিন্তু চুলগুলো তা যেন মানতেই চায়ছে না। আমার ইচ্ছে করছিল চুলগুলোকে ধরে একটা রাবার দিয়ে ঝুটি করে বেঁধে দিতে। কিন্তু তা কি হয়?

নিঝুর চেহারা এতটা মায়াবী যে, যেন মনে হচ্ছে আমার ধ্যান জ্ঞান মুহুর্তেই সব শূন্য করে দিবে। টানা টানা দুটি চোখ। কালো সরু আই ভ্রু চোখ দুটিকে আরো রহস্যময়ী করে তোলছে। ইরানি মেয়েদের মত নাক। ছোট ছোট দুটি ঠোঁট সব মিলিয়ে সে যেন এক ডানা কাটা পরী।’

আমি আর সিহাব মোহাবিষ্ট হয়ে শোনতে থাকলাম। অনেকটা সাহিত্যিকদের মতো কথা বার্তা। চায়ের কাপ থেকে একটু একটু বাষ্প উড়ে যাচ্ছিল তখনো। সে দিকে আমাদের খেয়াল নাই। শুধু মুখ থেকে বের হলো- তারপর?

চায়ের কাপে পর পর দু’তিনটা চুমুক লাগিয়ে ওনি আবার বলা শুরু করলেন-

‘সেদিন থেকে আমি নিঝুর প্রেমে পড়ে যায়। ক্লাশ শেষে রুমে এসে কিছুতেই তাকে ভুলতে পারছিলাম না। তার চেহারাটা বারবার ভেসে উঠতে লাগলো চোখের পর্দায়। তাকে নিয়ে ডায়রী লেখা শুরু করি। তবে এর আগেও আমি ডায়রী লিখতাম। স্কুল জীবন থেকে আমি নিয়মিত ডায়রী লিখি। সেদিন রাতে নিঝুকে নিয়ে প্রায় ৭ পৃষ্টামত লিখেছিলাম।

ওহ আচ্ছা আপনাদের আরেকটা কথা বলা হয়নি। আমি হালকা লেখালেখি করি। আঞ্চলিক এবং জাতীয় পত্রিকায় প্রায় সময় কবিতা এবং প্রবন্ধ লিখি। তবে কবিতার প্রতি আমার একটু দূর্বলতা আছে।’

ওনাকে থামিয়ে দিয়ে সিহাব বলে উঠলো- ‘আপনি তো দেখছি দারুন একটা জিনিস। কিন্তু এই ডায়রীগুলো আপনি পোড়াচ্ছেন কেন তা তো বলবেন?’

বাইরের কোন কিছুর প্রতি আমার তেমন খেয়াল নাই। আমি মুখে হাত দিয়ে শুধু শোনেই চললাম।

ওনিও তখন কেমন একটা আবেশে মজে উঠলেন। নিঝু এবং ওনার ব্যাপারটা আমাদেরকে শোনানোর জন্য ওনি আরো বেশি আগ্রহী হয়ে উঠলেন। ওনি মাঝে মাঝে দীর্ঘ নিঃশ্বাসও ছাড়তে শুরু করলেন। আমরা বুঝতে পারছি ওনি এখন অনেক ইমোশনাল।

ছোট্ট একটা নিরবতা পালনের পর ওনি আবার বলতে শুরু করলেন-

‘জী ভাই বলবো। সব বলবো আপনাদের। কবিতা পোড়ানোর সব কাহিনী আপনাদের বলবো।

আমার এক বান্ধবী বলতো- ‘পরিকল্পনার করে কখনো প্রেম ভালোবাসা হয় না। প্রেম ভালোবাসা একান্ত মনের ব্যাপার। নিজের অজান্তে মনে মনে এটা হয়ে যায়।’

আমিও নিঝুকে আমার সবটা দিয়ে ভালোবাসতে শুরু করি। অজানা প্রেমের মৃদু ঢেউএ ঢেউএ হৃদয় সমুদ্রের সব শংসয় দ্বিধা যেন ভেঙ্গে ভেঙ্গে একটি নতুন দ্বীগ গড়ে উঠতে শুরু করলো। আর এই দ্বীপটা একান্ত প্রেমের। নিঝুর প্রেমের।

এভাবে অনেক দিন কেটে গেল। প্রেমের পলি জমতে জমতে আমার ভিতরে জেগে উঠা গোপন দ্বীপটা আরো বড় হতে লাগলো।কিন্তু যাকে নিয়ে এই দ্বীপের সৃষ্টি তাকে হয়তো এই দ্বীপের কাহিনী আমার কখনোই শোনানো হয়ে উঠবে না। একজন শিক্ষক হয়ে ছাত্রীকে প্রেম অফার করতে যাওয়া - আমার ধ্যান জ্ঞান বিশ্বাস সবটাই যেন এতে বাঁধা হয়ে উঠলো। কি আর করার?

এই গোপন দ্বীপটাকে গোপনে লালন করে করে আমি নিঝুকে নিয়ে পৃষ্টার পর পৃষ্টা লিখতে থাকি। এরই মাঝে নিঝুদের টেস্ট পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। ফাইনাল পরীক্ষার কোচিংও পুরো দমে চলতে থাকে। একদিন সকালে দেখি নিঝু, মিতু, তাহিয়া আমার রুমে।

স্কুলের পাশেই আমার রুম। তিন রুমের টিন শিট ব্যাচেলর বাসা। আমি ওয়াশ রুম থেকে বাথ সেরে বের হতেই দেখি ওরা আমার খাটে বসে আমার ডায়রীটা পড়ছে।

আমি তো শেষ। ওরা হয়তো এতক্ষণে জেনে গেছে আমার গোপন দ্বীপটির কথা। আমাকে দেখে ওরা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। সালাম দিলো। জানতে চাইলাম-

তোমারা আমার রুমে? কি সমস্যা? কেন আসছো?

মিতু বলে উঠলো- ‘স্যার আমরা আজকে আপনার কোচিং ক্লাশটা করবো না। একটা কাজে তাসফিদের বাসায় যাবো।’

আমার ভিতর তখন কিছুটা নার্ভাসনেস কাজ করছিল। আমিও তাড়াহুড়া করে বলে দিলাম। ওকে যাও।

সেদিন রাতে আমি নিঝুকে খুব ফিল করেছিলাম। রাত জেগে ওকে নিয়ে একটা কবিতাও লিখেছিলাম।’

‘তোমার হরিণী চোখের মায়াবি চাহনী

কোন এক অবুঝ ভাষায় আমাকে ডেকে যায়,

যেন বলে- ‘তুমি তৃষ্ণার্ত। হে পথিক এসো শান্ত এ সরোবর থেকে

অমিয় প্রেমের সুধা পিয়ে যাও!’

তোমার রাঙা ঠোঁটের বাঁকা মুচকি হাসি

কোন এক কোমল স্পর্শ হয়ে আমাকে ছোঁয়ে যায়,

যেন চঞ্চল হাওয়া হয়ে

হৃদয়ের সূপ্ত প্রেমের দেশে এক অব্যক্ত তোলপাড় তোলে যায়!

তোমার আদুরী মুখের মিষ্টি কথাগুলো

কোন এক জাদুকরী তীর হয়ে পাজরে বিঁধে যায়,

যেন সারাটা হৃদয় ব্যাকুল হয়ে তোমাকে খুঁজে ফিরে,

তনুমনে অজানা প্রেমের শিহরণ বয়ে যায়!’


২২.১০.২০১৪

৩য় পর্ব আসবে অন্য কোনদিন, ততদিন...

আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ

বিষয়: সাহিত্য

১৪৭২ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

281526
০৫ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৪
মামুন লিখেছেন : সাবলীল লিখাটির সাথে সাথে অনুপম কবিতাটিও অনেক ভালো লাগলো। মুগ্ধতা রেখে গেলাম।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। Thumbs Up Bee Bee
০৫ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৬
225128
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালোবাসাসহGood Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck ৩য় পর্ব আসবে অন্য কোন দিন। অগ্রীম আমন্ত্রণ রইলো
281532
০৫ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪২
০৬ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৭
225340
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : সবুজ ভাই এ রকম নির্বাক হয়ে গেলেন কেন?
281570
০৫ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৩৪
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up
০৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৫৬
225377
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ আপনাকেGood Luck Good Luck Good Luck Good Luck
281586
০৫ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১১:৪০
আফরা লিখেছেন : গল্প তো ভাল লাগল কিন্তু একটা প্রশ্ন বোরখা পরা মেয়ের আবার চুল উড়ে কিভাবে এটা বুঝলাম না ।
০৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৫৯
225381
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : বাংলাদেশে আসলে বুঝবা বোরখা পড়া মেয়ের চুল কিভাবে দেখা যায়। গায়ে বোরকা মাথায় কাপড় নাই...
281625
০৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০২:৩৭
এস এম আবু নাছের লিখেছেন : ভাই, ৩য় পর্বের জন্য কতদিন অপেক্ষা করতে হবে? তিনদিন নাকি আরও বেশি। তর সইছেনা। বেশ ভালো লাগলো। Good Luck Rose
০৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১০:০১
225382
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : কয়েকদিন অপেক্ষা করলে হবে। অনেক ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্যGood Luck Good Luck Good Luck Good Luck
281645
০৬ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৭:০৮
শেখের পোলা লিখেছেন : দেখি কি হয়৷ অপেক্ষায় থাকলাম৷
০৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১০:০১
225383
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : অপেক্ষায় থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদGood Luck Good Luck Good Luck Good Luck
282602
০৯ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৯
আবু নাইম লিখেছেন : ভালো লাগলো অপেক্ষায় থাকলাম৷
২৮ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৪৬
232832
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : ভালো লাগার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। অপেক্ষায় আছেন জেনে আমারও ভালো লাগছে...ইনশাআল্লাহ একদিন পোস্ট দিবো বাকি পর্ব
287084
২৩ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:০২
পারভেজ লিখেছেন : অনেক দিন পর আসলাম। সুন্দর লিখা। গল্পটি পড়তে পড়তে আমার মনে একটা প্রশ্ন উদিত হলো- গল্পের নায়ক- নায়িকা শুধু কাল্পনিক, না এটা আপনার কোন ঘটে যাওয়া ঘটনা? জানাবেন কিন্তু। অপেক্ষায় থাকলাম। সামনের পর্বের জন্যও অপেক্ষায় থাকলাম। আমন্ত্রণ জানাতে ভুলবেন যেন।
২৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৪৯
232175
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : এই গল্পটা ফেবুতে অনেক আগে দিয়েছি। আমার পরিচিতরা জিঙ্গেস করেছে করেছে, ফেবুর অনেক পাঠকরাও জিঙ্গেস করেছে গল্পটা কি সত্যি? আমি আপনাকে বলবো এটা আমার মনের সাজানো একটা কাহিনী ছাড়া আর কিছু না। বাস্তবে এর কোন ভিত্তি নাই! অনেক ধন্যবাদ আপনাকেGood Luck Good Luck Good Luck Good Luck
288034
২৫ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১১:০২
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : খুব সুন্দর লিখা ,পড়ে ভালো লাগলো
২৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৫৫
232198
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : ভালো লাগার জন্য অনেক ধন্যবাদ
১০
289477
২৯ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:০৫
আবু নাইম লিখেছেন : অপেক্ষায় থাকব ভাই......অবসান কবে হবে..
০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:০৯
235055
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : অপেক্ষায় থাকার জন্য ধন্যবাদ, শীঘ্রই হবে ভাই...
১১
293157
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৪৭
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : দক্ষিণ পতেঙ্গা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়। আচ্ছা পতেঙ্গা স্কুলের কাহিনী। ভালোই ! এই গল্পের জন্য এই স্কুলটাই উপযুক্ত। বিদ্যালয় না বলে এটাকে প্রেমালয় বলাই ভাল!!!!
"ইরানি মেয়েদের মত নাক।" খাইছে মোরে । বাঙ্গালী মেয়ের ইরানী নাক !! ভাই ইরানী মেয়েদের নাক দেখতে কেমন? Rose Rose
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১১:১৬
236818
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : দক্ষিণ পতেঙ্গা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়। বলে পৃথিবীর মানচিত্রে কোন বিদ্যালয় আছে কিনা জানি না। মামুন স্যার নামে কোন স্যার আছে কিনাও জানি! এসব আমার শুধুই কল্পনা! সবটাই অল্প না!
ইরানী মেয়েরা লম্বা হয়, তাদের নাকও লম্বা সরু, দেখতে...
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১১:৩০
236825
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : আমি বলেছি" আচ্ছা পতেঙ্গা স্কুলের কাহিনী "
পতেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় নামে একটি স্কুল আছে। ষ্টীল মিল এলাকায়।
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১১:৪৪
236828
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : নারে ভাই কোন স্কুলের কাহিনী না! শুধুই কল্পনা আমার! প্রায় সময় নেভাল সীবীচে যাওয়া হয়। সেই জায়গাগুলোকে একটু অন্যভাবে উপস্থাপন করলাম। যারা আমার সাথে প্রায় সময় থাকে তারাও এটা বিশ্বাস করছে না! এটা আমার একটা কাল্পনিক নির্মাণ ছাড়া আর কিছু না! অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
১১ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:০৭
236961
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : এটাই একজন লেখকের Credit.Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File