রেখেছ সুশীল করে মানুষ করনি

লিখেছেন লিখেছেন সাফওয়ানা জেরিন ০৫ নভেম্বর, ২০১৪, ০৬:২০:২৯ সন্ধ্যা



শামসুন্নাহার হলে খুব বেশীদিন থাকা হয়নি। যদিও নিজের হলই। কয়েকটা দুঃসহ শীতের রাত, নাক দিয়ে রক্ত পড়া পরীক্ষার সকাল, গণজাগরণ মঞ্চের কনসার্টে নির্ঘুম রজনী , শিশিরে পা বুলানো, এই সব টুকরো টুকরো স্মৃতিই হল জীবনের অর্জন। আরও কিছু সেকুলার, সমাজতন্ত্রী মানুষের সাথে পরিচয় এবং কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা।

হলে অবসর বিনোদন বা আত্মসাধনার যায়গা হল ৩ টি । টিভি রুম, নামাজ ঘর, আর রিডিং রুম। রিডিং রুমের কথা বলার কিছুই নেই। সবাই এখানে পড়ালেখা করে। বাকি থাকে টিভি রুম এর নামাজ ঘর।

টিভি রুমে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই হিন্দি চ্যানেল চলে, নাহয় স্টার জলসা।

বাংলাদেশে যে কোন চ্যানেল আছে, এটা আপনি বেমালুম ভুলেই যাবেন হলের টিভি রুমে বসলে।

সিনিয়র জুনিয়র মিলে এমন জিনিষ ও দেখা যায়, যা হয়তো স্বামী স্ত্রী ও একসাথে বসে দেখা যায় না। আবার মাঝে মাঝে ক্যান্টিনের ছোট বড় বয়গুলো ও জানালা দিয়ে উঁকি মেরে গোগ্রাসে গিলে রঙ্গলিলার বিভিন্ন দৃশ্য। এখানে অবশ্য কেউ পর্ণগ্রাফির অবাধ প্রচার নিয়ে লেকচার ফলাতে আসেনা।

পলকহীন চোখে সবাই সেসব দেখে বৈ কি! ফাস্ট ইয়ার থেকে মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ার, সবার মধ্যেই একটা ভাব থাকে! " আরে! যথেষ্ট বড় হয়েছি না!"

যাই হোক, এখানে আবার আছে নানা ধরনের রাজনীতি। তারমধ্যে অন্যতম রিমোট রাজনীতি। এখানে নেত্রীর একটা ভাব আছে, চোখের গরম আছে। তাই, সাধারন মেয়েরা এসব নিয়ে মাথাও ঘামায় না।

অপরদিকে নামাজ ঘর। সব ইসলামী বইয়ের জননী পবিত্র কুরআন শরীফই আছে ২০ / ২৫ খানা, এরপর টুকটাক ধর্মীয় পুস্তিকাও আছে। আছে স্বেচ্ছায় দান করা নামাজ পড়ার ওড়না, যায়নামাজ! নামাজ ঘরের দেয়ালে আটকে থাকা মৌলিক কিছু হাদিসের দেয়ালিকা।

গেটআপেই বলে দেয় এটা এর যাই হোক! নাটমঞ্চ নয়, নয় বেহায়াপনার টিভি রুম ও। এখানে একটা ধর্মের ধর্ম প্রাণ কিছু ছাত্রী দিনের যেকোনো সময় স্রষ্টার প্রতি আত্মনিবেদন করবে।

ঠিক যেমন, জগন্নাথ হলের মন্দিরে হিন্দু ছেলেরা পূজা করে, ভজন গায়, কিংবা গিতা পাঠ করে ঠিক তেমনই সংখ্যাগুরু মুসলিমের দেশে এটাই স্বাভাবিক।

সেদিন রুমে গিয়েছিলাম। যোহরের নামাজ পড়া দরকার ছিল। রুমে পড়তে মন চাইছিল না। নামাজ ঘরে যেতে চাইলাম।

রুমের আপুরা বলল- তুমি বরং রুমেই নামাজ পড়ো! দিনকাল তো ভালো না।

হ্যা! এই আপুগুলো কেউই মাথায় কাপড় দেয় না, হয়তো বছরে একবার কুরআন শরীফ ও ধরেনা, তারপরেও প্রতিটি মেয়ের কাছেই জায়নামাজ আছে, প্রতিটি মেয়েই বুঝতে পারছে যে , প্রার্থনা গৃহে যে কোন সময়ই রোষের শিকার হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।

এই জন্যই নামাজি মেয়েদের সতর্ক করে দেওয়া এই বিষয়ে।

সুশীলরা কি বুঝতে পারেনা, এইসব করে যে তারা একে একে শুধু নামাজি আর হিজাবিই নয়, সাধারণ মানুষের মন থেকেও উঠে যাচ্ছে?

এসব কয়দিন, ২ বছর ৫ বছর কিংবা ১০ বছর? এরপর?

এরপর কোথায় যাবে এরা?

আপনাকে অবশ্যই এটা মনে রাখতে হবে যে- নামাজ ঘর আর টিভি রুম এক জিনিষ নয়। ২ টার ব্যবহারের ২ ভিন্ন লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য আছে। নামাজ ঘরে একটা ছাত্রী যেমন যে কোন সময় যেতে পারে, ঠিক যেমনি জগন্নাথ হলের মন্দিরে একটা ছাত্র যে কোন সময় যেতে পারে।

আর টিভি রুমে পড়া নিয়ে বসলে টিভির শব্দ কমাতে বললে নেত্রি যেমন চোখ রাঙ্গিয়ে বলতেই পারেন- যে এটা পড়ার যায়গা নয়, রিডিং রুমে যান।

ঠিক তেমনি নামাজ ঘরে ইসলামী সাহিত্য পাঠ, কুরআন পড়ার সময় ও কেউ চোখ রাঙ্গাতে পারবেনা এই বলে যে এটা এই কাজের যায়গা নয়।

নামাজ ঘর সোজা বাংলা হলেও এর মানেই কিন্তু মসজিদ! মানে যেখানে সেজদা দেওয়া হয়। হিন্দুদের মন্দিরে ধর্ম চর্চায় বাঁধা দিলে তা যেমন ধর্মীয় নির্যাতন হয়, ঠিক তেমনি নামাজ ঘর তথা মসজিদ তথা সেজদা দেওয়ার স্থানেও স্বেচ্ছাচারিতা করলে, বা আপনি কোন ফিক্সড আচারবিধি ঠিক করে দিলে তা ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বৈ আর কিছুই নয়।

আর ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ মানেই মানবাধিকার লঙ্ঘন।

যতোই দিন যাচ্ছে দেশটাকে খুব অচেনা মনে হচ্ছে, ঠিক যেন অন্য কেন বিভূঁই। এই যে ফ্রান্স কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে সেকুলার সরকার যেমন ভীত হিজাবের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তায়, এই যে ব্রিটেনে ২ দিন পরপর স্কুল পড়ুয়া হিজাবিকে বের করে দেওয়া হয়, তার মাধ্যমে আরও ১০ টা খ্রিস্টান মেয়েও হিজাব পড়ার বায়না না ধরে বসে, সেই ভয়ে আইন করে সেই ছাত্রীকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া।

বাংলাদেশ ও এখন সেই সেকুলার জ্বরে ভুগছে। এই যে তাহাজ্জুদের সময় আটক, এই যে ইসলামী বই পড়ার অপরাধে বহিস্কার এর সাথে ব্রিটেনের ঐ মেয়েটির স্কুল থেকে বিতারনের কোন পার্থক্য কি দেখতে পান? এই কি ভয় যে এদের উন্নত মানসিকতা দেখে আরও ১০ টা সাধারণ মেয়ে ও আকৃষ্ট হয়ে যাবে?

আপনাদের মনে হয় ওদের গা নামাজ পড়ায় জ্বলছে? উহু! মোটেও না। এটা হল জ্বরের উপসর্গ মাত্র।

মূল ভয় হল- নারী জাতির নেতৃত্ব গাঁজাখোরদের হাতে আর থাকছেনা, চলে যাচ্ছে হিজাবিদের হাতে।

কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে- হিজাবি সংখ্যা দিনদিন বাড়তে দেখে পাগল প্রায় সুশীলরা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। তাই পাগলের মতো ঝড়ে বক মারার চেষ্টা চালাচ্ছে গুটিকয় ছাত্রীকে মেরে পিটিয়ে বহিষ্কার করে।

আপনাদের জন্য ভালো পরামর্শ- পারলে আদর্শ প্রচার করে এদের মোকাবিলা করে দেখুন। মনুষ্যত্বের যায়গাটা ঠিক রেখে । আমাদের কোন আপত্তি থাকবেনা। কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘন করলে আমরা একবার না একশ বার এটাই বলবো-

শত শত সুশীলের হে হায়না জননী

রেখেছ সুশীল করে মানুষ করনি

বিষয়: বিবিধ

১৫৮৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

281528
০৫ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
এর আগে চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজে নামাজ ঘর বন্ধ করা হয়েছে। ছাত্রিদের হিজাব পড়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারন নামাজ আর হিজাব কেই এই সরকার ভয় করে।
281530
০৫ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪০
আমি মুসাফির লিখেছেন : এরা যদি মানুষ হতো তাহলে এমন অবিচার হতো না। সুতরাং এরা যে পশুর চেয়ে খারাপ তা নিশ্চিত করে বলা যায়।
281534
০৫ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৮
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : আপু, চমৎকার লেখা। সারা বিশ্বে ডি ইসলামাজেশন চলছে। এর মধ্যে প্রকৃত ইসলাম
টিকে যাবে। যেমন আমেরিকার ৯/১১ ছিল
দুঃখ জনক। তারপর অনেকেই কোরান পড়ে
মুসলিম হয়ে যায়।
281540
০৫ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৫
রিদওয়ান বিন ফয়েজ লিখেছেন :
যতোই দিন যাচ্ছে দেশটাকে খুব অচেনা মনে হচ্ছে, ঠিক যেন অন্য কেন বিভূঁই।

চমৎকার লিখা। ধন্যবাদ
281545
০৫ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৪
এস এম আবু নাছের লিখেছেন : কিছু আগে আপনার ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে লেখাটি পড়লাম। ধন্যবাদ।
281552
০৫ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৩৪
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ খুব ভালো লাগলো লিখাটি
281560
০৫ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:১১
হতভাগা লিখেছেন :
''মূল ভয় হল- নারী জাতির নেতৃত্ব গাঁজাখোরদের হাতে আর থাকছেনা, চলে যাচ্ছে হিজাবিদের হাতে।''


০ তাই নাকি ?!
281584
০৫ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১১:২৫
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : যে ঢা.বি একসময় ছিলো দূর্দান্ত মেধাবীদের ঠিকানা, যেখান থেকে দেশপ্রেম আর আদর্শবোধের শিক্ষা নিয়ে তরুন-তরুনীরা ঝাঁপিয়ে পড়তো দেশের স্বার্থে, যেখান থেকে উঠেছিলো রাষ্ট্র ভাষার সংগ্রামের অদমনীয় দাবি, আজ এক নষ্ট চক্রের হাতে পড়ে চরম ইসলামবিদ্বেষীদের আখাড়ায় পরিণত হয়েছে।
এ দায় কার? কে নেবে দেশের ভবিষ্যৎ মেধাকে এভাবে নষ্ট করার দায়ভার?
এক সময় গর্ব ভরে বলতাম, আমি এমন এক শিক্ষায়তনে পড়ি যেখানে শিক্ষার্থীরা শুধু কিতাবী জ্ঞানই শেখে না, ন্যায়ের পথে আন্দোলন করতেও শেখে। কিন্তু এখন নিজেকে ঐখানকার ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিতেও লজ্জা লাগে। মনে মনে ভাবি, কি কুক্ষনে যে অন্য ভার্সিটির আমন্ত্রন প্রত্যাখ্যান করে ওখানে ভর্তি হতে গিয়েছিলাম.........

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File