অপরাজেয় বীরের কথা

লিখেছেন লিখেছেন তিতুমীর সাফকাত ১৭ আগস্ট, ২০১৩, ০২:২৩:২৬ দুপুর

ছোটকাল থেকেই অ্যালেকজান্ডার, নেপোলিয়ন, তইমুর লং, চেঙ্গিশ-কুবলাই-হালাকু খান, চার্লস, ব্রুস, গ্যারিব্যাল্ডি, জুলিয়াস সিজার, স্পারটাকাস কিংবা কল্পিত পৌরাণিক বীর একিলিস, ইলিয়াড, থর, রাম, ভীম, অর্জুন, জাল, শাম, সোহরাব-রুস্তম দের শুনে পড়ে আসছি । পাঠ্যবইয়ের গল্পেও এদের কথা পড়েছি, টিভিতে এদের নিয়ে তৈরি মুভি দেখেছি । কিন্তু তারা কতটুকু বড় বীর ছিল ? আদৌ কি তারা বীর ছিলো ?

- হ্যাঁ, তারা আসলেই বীর ছিল । কিন্তু জীবনে একবার হলেও তারা পরাজিত হয়েছে, বন্দি হয়েছে, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়েছে, বিজয়ী হয়েও পরাজিত হয়েছে নীতির কাছে, গনহত্যা করে রক্তবন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছে বিজিত অঞ্চল, মানুষ ঘৃনা করেছে মন থেকে ।এছারাও সরবোপরি তাদের বিজয় ছিলো সাময়িক । তাদের জয়কে তারা অমরত্ব দিতে পারে নি, কারন তাদের উদ্দেশ্যে গলদ ছিল ।

আজ এমন এক বীরের কথা বলবো যে কোনদিন হারে নি । পরাজয় কি জিনিস সে জানে না । তার বিজিত অঞ্চলে দ্বের সহস্র বৎসর পর আজো উড়ে তার বিজয়ের নিশান । কে এই ব্যাক্তি ? কে এই সামরিক প্রতিভা যার আগমনের কথা শুনে শত্রুপক্ষ পালাবার পথ খুজে পেত না, বিনা যুদ্ধেই পরাজয় স্বীকার করতো অনেকে ?কে এই বীর যার নামে গোটা রোমান সাম্রাজ্য কেঁপে উঠেছিলো পতন হয়েছিলো প্রবল পরাক্রমশালী পারস্য সাম্রাজ্যেরর ? কে এই বীর যার বিজয় নিশান উড়ছে তিন মহাদেশ জুড়ে ?

- তিনি হলেন মহাবীর খালিন ইবন ওয়ালিদ (রাঃ), রাসুল (সাঃ) যাকে বলতেন সাইফুল্লাহ (আল্লাহ এর তরবারি) । রোমান সম্রাট কয়সর (কন্সটানটাইন) এর দুঃস্বপ্নের কারন, রোমান সেনাপতি ফিতির (পিটার) এর সৈন্যবাহিনী সমেত মৃত্যুর কারন, প্রবল পরাক্রমশালী পারসিক যোদ্ধা রুস্তমের পতনের কারন । ইনিই সেই খালিদ যিনি যুদ্ধে কখনো পরাজিত হন নি, মুসলিম হওয়ার আগেও না পরেও না । অহুদের যুদ্ধে মুসলমানদের নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া যোদ্ধাও এই খালিদ আবার বহু যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর জন্য বিজয়ও ছিনিয়ে আনেন ।

আরেকজন বীর অবশ্য আছেন যিনি কখন পরাজীত হন নি তবে বেশি যুদ্ধও তিনি করেন নি । ইতিহাসে এক বিরাট রহস্য হয়েই তিনি আছেন । তিনি হলে বাঙ্গালী বীর কালাপাহাড় । তার ইতিহাসে তেমন বর্ণনা পাওয়া যায় না তবে যা পাওয়া যায় তা প্রলয়ঙ্করী ও ভয়ঙ্কর । তিনি ব্রাহ্মন থেকে মুসলিম হওয়ার পর নানা কারনে প্রচন্ড হিন্দু বিদ্বেষী হোন । পৃথিবী থেকে হিন্দু নামটাই মুছে ফেলার ইচ্ছে ছিলো তার । তার চলার পথে কোন মন্দির পরলে তার ধ্বংস ছিল অনিবারয । বিশবছর ধরে চলা বিজয়নগরের যুদ্ধ মাত্র কয়েকদিনে শেষ করে ফেরার পথে মন্দিরনগরী কাশীকে ধ্বংসস্তুপে পরিনত করেন । রক্তে ভাসিয়ে দেন গঙ্গা নদী, এরপর থেকেই খুব সম্ভব ‘রক্তগঙ্গা’ শব্দটির জন্ম । এরপর তার আর কোন খোজ পাওয়া যায় নি । এর বিশদ বিবরন অন্য লেখায় আছে । বিহারের ইতিহাসে আজো প্রলয়ঙ্করী ত্রাশ হিসেবে আছেন এই বীর

তার সম্পর্কে বিস্তারিত

কিন্তু এক্ষেত্রে খালিদ ব্যাতিক্রম । তিনি যুদ্ধজয়ের পর বিজিত অঞ্চলের ভালবাসাও জয় করে নিয়ে আসতেন ।কেউ বলতে পারবে না তিনি অন্যায় হত্যা বা যুলুম চালিয়েছেন । খালিদ আর বিজয় যেন সমার্থক শব্দ । রোমান সম্রাটের তিন লক্ষ সৈন্যের বিরুদ্ধে যে মাত্র বারহাজার সৈন্য নিয়ে বিজয় অর্জন করতে পারে তাকে কি ছোট খাট বীর বলা যায় ? অথচ আমাদের অতি আধুনিক মা রা তাদের সন্তানদের এই বীরের গল্প শুনান না । নাট্যকারগন এই বীরের বীরত্বগাথা লিখেন না । আমি অবাক হয়ে যাই যখন মুসলিম মা রা তাদের সন্তানদের রামায়ন মহাভারতের কাল্পনিক গল্প শুনায় নিরলসভাবে অথচ খালিদ-উমার-আলী-সালাহুদ্দিন দের কাহিনী শুনাতে তাদের যত অনীহা ।

আরেকজন বীর অবস্য আছেন জিনি কখনো হারেন নি । মুসলিম পূর্ব ভারতের ত্রাস, সতেরবার ভারত আক্রমন কারী সেই বিস্ময়কর প্রতিভা গজনভী সুলতান মাহমুদ ।তিনি কোন যুদ্ধে পরাজয়তো দুরের কথা বিপর্যয়ের সম্মুখীনও হন নি ।এর কারন ও অবস্য আছে, তিনি তার পক্ষে যা অর্জন সম্ভব নয় তা পাওয়ার চেষ্টা করতেন না ।ধীর স্থির বুদ্ধির সাহায্যেই সমর পরিচালনা করতেন । নীতির ব্যাপারে তিনি ছিলিন আপসহীন, প্রলোভন কখনোতাকে নীতিচ্যুত করতে পারেন নি, সোমনাথ অভযানই তার প্রমান । শত সহস্র স্বর্ণমুদ্রা আর রত্নসম্ভার দিয়ে মন্দিররক্ষক রাজারা তাকে মূর্তি ধ্বংস নাকরতে বললে তিনি বলেছিলেন, “ইতিহাসে আমি মূর্তি বিক্রেতা নই মূর্তি ধ্বংসকারী হিসেবে পরিচয় পেতে চাই । কিন্তু এতো বিযয়ের পর তিনি তার বিজয়কে অমরত্ম দুরের কথা স্থায়িত্বও দিতে পারেন নাই । সেক্ষেত্রে খালিদ ব্যাতিক্রম । তার বিজয় আজো অমর অক্ষয় । খালিদ (রাঃ) এর জীবনে একটাই আক্ষেপ ছিলো তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ হতে পারেন নি ।মৃত্যুর পূর্বে আক্ষেপ করে বলেছেন, “হায় শত শত যুদ্ধজয়ী খালিদ আজ অসহায়ের মত বিছানায় শুয়ে মারা যাচ্ছে, জিহাদের ময়দানে শাহাদাত যার কাম্য ছিলো ।”

খালিদের সাথে আর মাত্র একজনেরই সামান্য তুলনা চলে । আর তিনি হলেন গাযী সালাহুদ্দিন আইয়ুবী । তার গল্প আগে আমরা পরতাম, চার্লস আর তার বিস্ময়কর কাহিনী শুনে খ্রিস্টান রাও অবাক হয়ে যেত । আর আজ কালকার বাচ্চারা তার নামই জানে না ! হায় আফসুস ! সারাটা জীবন আইয়ুবী কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করে গেছেন মুসলমানদের সম্মান সম্মান রক্ষা করতে, সবকয়টা জিহাদই জিতেছেন আপন মেধা বলে অথচ আজ মুসলমানের বাচ্চারা কাফেরদের বীরত্ব গাথা পড়ে বড় হচ্ছে, ভুলে যাচ্ছে মুসলিম বীরদের, নিজেদের ভিতরের বিরত্ব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে । এ যেন ঘুমন্ত সিংহ কে বিড়ালের ভয় দেখিয়ে ঘুমন্ত রাখা হচ্ছে ।

বিষয়: বিবিধ

৪০৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File