ক্ষুধাময় রাত দিন, অন্যরকম এক ভালোবাসার গল্প

লিখেছেন লিখেছেন তিতুমীর সাফকাত ০৮ জুন, ২০১৪, ১১:০১:১৮ রাত

রিও ডি জেনিরোর ঘিঞ্জি এক বস্তিতে জন্ম নিয়েছিল পাবলো মাজিনহো। তার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের কাছে যদিও সে পাভো নামেই পরিচিত। ১২ বছরের এই কৃষাঙ্গ কিশোর আর আট দশটা ব্রাজিলিয়ান ছেলের মতই ফুটবল নিয়ে দিন কাটায়। জন্মের পর থেকেই পাভো জেনে এসেছে, ব্রাজিল মানেই ফুটবল আর ফুটবল মানেই ব্রাজিল। পেটে ভাত না জুটুক, গায়ে এক টুকরা কাপড় না উঠুক, স্কুলে যাবার টাকা না থাকুক কিংবা না থাকুক চিকিৎসার সুযোগ, দিনশেষে এই ফুটবল দিয়েই সব দুঃখ ভুলে যেতে হবে; এটাই ব্রাজিলিয়ান নীতি। ফুটবলে লাথি মারা মানে শুধু খেলা নয়, যেন দারিদ্রকে লাথি মারা।

পাভোর শহর এবার রঙ্গীন হয়েছে বিশ্বকাপের রঙ্গে। শেষবার ব্রাজিলে বিশ্বকাপ বসেছিল ৫০ এ। সেবারের সেই "মারাকানা ট্রাজেডি" কেউ ভুলতে পারে নি, পারবেও না। নিজ শহরের স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার সামর্থ্য পাভোর নেই। সে সামর্থ্য পাভোর বস্তিবাসীর নেই। বস্তিবাসীর বাস্তবিকপক্ষে বিশ্বকাপ নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। এই বিশ্বকাপ ব্রাজিলকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে। দেশের মানুষের নিদারুণ দারিদ্রে নিমজ্জিত হওয়া নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই।

পাভো আর তার বস্তিবাসী বন্ধুরা মিলে কিছু টাকা যোগাড় করেছে। সেটা দিয়ে টিভি কিনতে হবে। পাভোকে তার বন্ধুরা বিনা বাধায় নেতা মানে। পাভো তাই সবাইকে নিয়ে শহরের পুরোনো এক জীর্ন মার্কেটে গেল। খুঁজে বের করল পুরোনো ইলেক্ট্রনিকস মেরামতের দোকান। উপরে বড় করে লেখা আছে, "গুস্তাভো রিপেয়ারিংস"। নামের নিচে দোকান প্রতিষ্ঠার সাল দেওয়া আছে, ১৯৬৩। পুরোনো দোকান। পাভো দোকানের বুড়ো লোকটার সাথে কথা বলল। একটি ছোট্ট ছেলে এসে পাভোকে দোকানের পেছনে এক ছোট খুপরি ঘরে নিয়ে গেল। সেখানে অনেক পুরোনো টিভি স্তুপ করে রাখা আছে। মেরামত করে সারানো হয়েছে। কম দামে গরীব লোকেরা এসব টিভি কিনে। পাভো দোকানদারের সাথে কথা বলল। অবশেষে পাভো ও তার বন্ধুরা একটি টিভি সাথে নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এল। ৫০ রিয়াল দিয়ে এরচেয়ে ভাল টিভি কেনা অসম্ভব।

সারা বিকেল পাভো ও তার বন্ধুরা মিলে টিভি সেট করল। বস্তির পাশেই টিভি ক্যাবল অপারেটরের দোকানে চাকরি করে নাসিমেন্তো। নাসিমেন্তো এসে টিভি কানেকশন লাগিয়ে দিল। পাভো ও তার বন্ধুরা হৈ হৈ করে উঠল। নাসিমেন্তো কোন টাকা নেয় নি। পাভোকে সে বিশ্বাস করে। জানে, পাভো পরে টাকাটা ঠিকই দিয়ে দেবে।

রাতে একবার রান্নাঘরে ঢূঁ মারে পাভো। আজ হাড়ি শূন্য। তারমানে বাবা আজো কিছুই রোজগার করতে পারেন নি। ঘর বাহির খুঁজাখুঁজি করেও পাভো তার মা ও ষোড়ষী বোনকে পায় না। এই রাতে ওরা দুজনেই বেরিয়ে গেছে। অভুক্ত পেটে খাবার যোগাতে, পরিবারকে বাঁচাতে অনেক ব্রাজিলিয়ান মেয়েকে রাতে বেরিয়ে যেতে হয়।

পাভো বেরিয়ে আসে বাড়ির বাইরে। আজকের চাঁদটা অনেক সুন্দর। বাড়ি থেকে সামান্য দূরে তৈরি হওয়া বিশ্বকাপ স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইটের আলো শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে। দুদিন পর সেখানে ব্রাজিল নামবে ম্যাচ খেলতে। পাভোর এসবে খেয়াল নেই। নিজের ছেড়া ফুটবল পায়ে সে রাস্তায় দৌড় মারে।

আজ আরেকটি অভুক্ত রাতের বেদনা এই ফুটবল দিয়েই ভুলে থাকতে হবে।

লেখক আমার বন্ধু ঃ মুমতাহীন প্রমিথ

বিষয়: বিবিধ

১৮৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File