পেট্রোল বোমায় নিহত ও পুলিশ-র‌্যাবের পরিকল্পিত হত্যাকান্ড দুটি বিষয়

লিখেছেন লিখেছেন tritiomot ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১১:৩২:৫৩ সকাল





যে কোন মৃত্যুই বেদনাদায়ক। নিয়ন্ত্রণ বর্হিভুত কারনে কিংবা প্রাকৃতিক দুযোর্গে কোন মানুষের মৃত্যু হলে মানুষ সে মৃত্যুকে আল্লাহর ফায়সালা হিসেবে নিয়ে নিজেকে বুঝ দেয়। কিন্তু মনুষ্যসৃষ্ট কোন মৃত্যু কোন মানুষ মেনে নিতে পারেনা।

রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের জন্য সম্প্রতি 20 দলীয় জোটের অবরোধ ও হরতালকে কেন্দ্র করে সাধারন মানুষ হত্যার যে ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করা হয়েছে, তা শুধুমাত্র নমরুদের ঘটনাকেই স্বরণ করায়। নমরুদ যখন কোন অবস্থায় নবী ইবরাহিমের সাথে পেরে উঠছিল না। তখন তাকে অগ্নীকুন্ডে ফেলে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল।

গত 5 ই জানুয়ারীর একতরফা নিবার্চন দেশে এবং বর্হিবিশ্বে কোথাও গ্রহণযোগ্য হয়নি। আওয়ামীলীগ বলেছিল, এটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন । কিন্তু এখন তারা এই নিবার্চনকে বৈধ বলে 2019 সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চায়। এখান থেকে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক সমস্যা।

গত একটি বছর 20 দলীয় জোট সরকারকে সময় দিয়েছিল আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নিবার্চন অনুষ্ঠিত করার। কিন্ ক্ষমতাশীন আওয়ামীলীগ ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে তারা নিবার্চন না দিয়ে বিরোধী মত ও দলকে দমনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শান্তিপ্রিয় কোন মিছিল ও সমাবেশের অধিকার না দিয়ে প্রশাসন ও দলীয় ক্যাডাকে ব্যবহার দেশের সর্বস্তরে ধরপাকড়, হত্য, নির্যাতণের পথ বেছে নিয়েছে।

অগত্য কোন উপায় না দেখে 20 দলীয় জোট অবরোধ ও হরতাল দিয়ে প্রতিবাদের চেষ্টা করছে। এই হরতাল ও অবরোধে ব্যবহার হচ্ছে পেট্রোল বোমা ও ককটেল। অবরোধ ও হরতাল যেহেতু 20 দলীয় কর্মীরা ডেকেছে ,এসব অপকর্মও তাদের দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে বলে সরকার দাবী করছে। কিন্তু এ সব বিষয়ে এখন ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের প্রচেষ্টা হচ্ছে। অনেক জায়গায় সরকারী দলের ক্যাডাররাও এ কাজে জড়িত রয়েছে বলে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে।

কিন্তু সরকার নাশকতার দমনের নামে তার বাহিনী দিয়ে ঠান্ডা মাথায় যে খুনগুলো করছেন, এটোকে কিভাবে মেনে নেয়া যায়। একটি দেশের আইন বিভাগ , বিচার বিভাগ ও রয়েছে। অন্যায়কারী যে হোকনা কেন , তাকে আইনের হাতে তুলে না দিয়ে পুলিশ নিজেরা তাদেরকে হত্যা করছে, রাষ্ট্রীয়ভাবে তার স্বীকৃতিও দেয়া হচ্ছে , এটা কেমন আইনের প্রতি শ্রদ্ধা হলো।

বিরোধী মত ও দলকে দমনের জন্য বাসা থেকে আটক তাদেরকে হত্যা করে হাতে জিহাদী বই, আগ্নেয় অস্ত্র তুলে দিয়ে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে বলে যে প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে, এটি বাংলাদেশের জনগন বিশ্বাস করছে না। শুধু নিহতই নয়, এমন পৈশাচিকভাবে হত্যা করা হচ্ছে , যা দেখলে গায়ের লোম শিহরে ওঠে। এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস কোন অবস্থায় দেশে শান্তি আনতে পারেনা। রাজনৈতিক সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে বিরোধী দলের বৈধ দাবীকে অগ্রাহ্য করে তাদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে নাম দিয়ে দমনের যে প্রচেষ্টা করা হচ্ছে, তা কখনও সমাধান হবেনা।

নৃশংসতার একটি সীমা থাকা উচিত। রক্তমাংসের একটি মানুষকে মৃত্যুর আগে তার উপর পুলিশের চালানো নির্যাতনের বিষয়টা এ ছবি থেকে কিছুটা অনুমান করা যায়। মৃতদেহের কথা বলার ক্ষমতা নেই। কিন্তু তার ছবি কথা বলছে। শিয়াল বা কুকুর যেভাবে মৃতদেহ খুবলে খায়, শাহাবুদ্দিনের শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ওভাবে চামড়া মাংস হাড্ডি পর্যন্ত খামচে আঁচিয়ে তুলে নেয়া হয়েছে। ট্রাকের নিচে পড়ে মারা যাওয়া মৃতদেহ দেখেছি। কিন্তু এতটা ভাঙ্গাচোরা হয়ে যায়নি সে মৃতদেহ তার উপর দিয়ে ভারী ট্রাক চলে যাওয়ার পরও।

শাহাবুদ্দিনের হাত পা বেঁকে অস্বাভাবিকভাবে সম্পূর্ণ এলোমেলো হয়ে আছে। মানুষের শরীর হাঁড় গুলো জোড়া থাকার কারণে দৈর্ঘ্যে প্রলম্বিত হয়ে থাকে। শাহাবুদ্দিনের শরীর যেন দুইদিকে ছড়িয়ে গেছে। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে ঘিরে কৃষ্ণপদ রায় এবং উত্তম কুমারদের বিভৎস আনন্দ-উৎসব নিঃসন্দেহে বড় ভয়ংকর ছিলো। তার শরীরের হাড্ডিগুলো ভেঙ্গে ফেলে ইচ্ছামতো মেরে ভেঙ্গে শেষপর্যন্ত মারা যাওয়ার পর চামড়ার আবরণে দলামোচড়া করে তারা ফেলে গেছে হাসপাতালের মর্গে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কনসেনট্রেশন ক্যাম্পগুলোতেও কি নাৎসীরা এতোটা নির্মম নির্যাতন করে মারতো? একাত্তর সালে পাক হানাদার বাহিনীর নির্যাতন কি এতোটা ভয়ংকর ছিলো? অথবা দুনিয়ার যত স্বৈরাচারের নাম শোনা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের ডিটেনশন সেন্টারগুলোতে, টর্চার ক্যাম্পগুলোতে এরকম বিভৎস নির্যাতন হয়? মোটরসাইকেল চালিয়ে যেতে থাকা সুস্থ স্বাভাবিক একজন মানুষের শরীরকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে মাত্র কয়েকঘন্টার ভেতরে এরকম বানিয়ে দেয়া যায়? কোন ছবিতে তো এমন আর দেখা যায়নি। বাংলাদেশের র‍্যাব পুলিশের গর্বিত সদস্যবৃন্দ কতৃক পৃথিবীর সব অমানবিক নির্যাতনের নজিরকে হারিয়ে দিয়ে বিজয়ী হওয়ার চ্যাম্পিয়ন'স ট্রফি শাহাবুদ্দিনের এই ভাঙাচোরা মৃতদেহের ছবি।

গুলি করে মেরে ফেললেই তো হতো। ইন-ফ্যাক্ট প্রতিদিন বহু মানুষকে গুলি করে মারা হচ্ছে। লাশের পরিচয়ও মিলছে না। বেওয়ারিশ। তার সাথে এই নির্যাতন যোগ করার কারণ কি? সম্ভবত তারা মনে করছে এই নির্যাতনের উদাহরণ দেখে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীরা, বিরোধী দলের কর্মীরা ভয়ে পিছু হটবে। আসলেই কি তাই? নির্যাতন চালিয়ে কি মানুষের স্বাধীনতার দাবীকে দমন করা যায়?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা র‍্যাব পুলিশকে বলেছিলেন যা প্রয়োজন তাই করতে, দায়িত্ব তার। শাহাবুদ্দিনের মৃতদেহ দেখে বুঝা যায় প্রয়োজনীয় কাজগুলো কি এবং কেমন। এই ভাঙাচোরা গুড়ো গুড়ো হয়ে যাওয়া এবং পশুর মতো শরীরের এখানে ওখানে খাবলে খেয়ে নেয়া বিকৃত মৃতদেহের দায়িত্ব নিঃসন্দেহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গতকাল এক মন্ত্রীর ফেইসবুক পেইজে তার স্নেহময়ী ছবি দেয়া হয়েছে, সাদা চামড়ার নাতিকে কোলে নিয়ে।

আশা করি শাহাবুদ্দিনের জননী নিজের ছেলের ভাঙাচোরা লাশের ছবিটা না দেখে বরং সেই ভাঙচুরের দায়িত্ব নেয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নাতি কোলে স্নেহময়ী ছবি দেখে শোক ভুলে আছেন। (শেষ অংশ সংগৃহিত)

বিষয়: রাজনীতি

১৫৬৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

303320
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ১১:৫৯
আব্দুল মান্নান মুন্সী লিখেছেন : আওয়ামীলিগ জটিল রাজনিতি করছে আর এসব রাজনিতির সামনে বি এন পি জামায়াত শিশুমাত্র,তবে বি এন পি তথা ২০দল যদি এ আন্দোলনে খড়কুটু আকড়ে ধরেও টিকে যায় তাহলে আওয়ামীলিগের জন্য ফেরাউনের পরিণতি হবে, এটা আওয়ামীলিগও মনে করে,তবে ২০দলের উচিৎ হবেনা আওয়ামীলিগের সাথে আওয়ামিলিগের মতই আচরন না করা,এবং তাদেরকে এই অভয় দেয়া উচিত যে তোমাদের সাথে অগণতান্ত্রিক কোন আচরন করা হবে না, তাই তোমরা নির্মম ইহুদি রাজনিতি পরিহার করে বঙ্গবন্ধুর মতো উদার রাজনিতিতে ফিরে যাও, তবেই বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরিরা রাজনিতির ময়দানে থাকতে পারবে,কারন ইনুরা শেখ হাসিনার কফিনে শেষ পেরেকটা নিশ্চিত করে তারপরই ইউটার্ন নিবে,এটা শেখ হাসিনাও জানে তবে মেডাম মনে করে তিনি ইনুদের জাস্ট ব্যাবহার করছেন...বাট ঘটনা একটা ঘটে গেলেই বুঝা যাবে কে ব্যাবহার করলো আর কে ব্যাবরিত হলো...শিবিরের ছেলেরা শহীদ হবে এটা নতুন কিছু নয় যুগে যুগে ইসলামি আন্দোলনের স্বার্থকতা এমনি এমনি করেই পরিণতির দিকে যায়,দেখে নির্মম মনে হলেও এটাই সফলতা,ধন্যবাদ ভাই এলোমেলো কিছু কথা বললাম ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে নিবেন। Praying
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১২:০৭
245409

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 10348

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 917

"> মুক্তিযুদ্ধের কন্যা লিখেছেন : শিবির, তালেবান, আইসিস, বোকোহারাম, হামাস, ব্রাদারহুদ........... মরে গেলে বড় জোর শহীদ হয়। সভ্য মানুষের কাছে বর্বর ইসলামের কোন দাম আছে নাকি??
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ১২:৩৫
245476
আব্দুল মান্নান মুন্সী লিখেছেন : অজ্ঞ অমুসলিমরা বিদ্ধেস ছড়াবে এটা খুবই স্বাভাবিক....
০৩ মে ২০১৫ দুপুর ০২:৩৪
259128
tritiomot লিখেছেন : বিশ্লেষন চমৎকার। আপনাকে ধন্যবাদ।
০৩ মে ২০১৫ দুপুর ০২:৩৪
259129
tritiomot লিখেছেন : বিশ্লেষন চমৎকার। আপনাকে ধন্যবাদ।
303442
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০৩:৩০
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : ৭৫ ই রক্ষী বাহিনী আর আজকের কুত্তাবাহিনী । যালিমের পতন ঠেকাতে পারবেনা ইনশাল্লাহ। আল্লাহ্‌ হলেন সবচেয়ে বড় পরিকল্পনা কারী। আল্লাহ্‌ দরবারে এদের জবাব দিতে হবে। বাল হল
বাঙ্গালী জাতীর উপর একটা অভিশাপ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File