শোকাবহ বৃহস্পতি,শুক্র ও শনিবার (২৩,২৪ ও ২৫শে অক্টোবর’১৪)

লিখেছেন লিখেছেন বাংলার সিংহ ২৮ অক্টোবর, ২০১৪, ১১:১১:৩৩ সকাল

বৃহস্প্রতিবার এশার নামাজ পড়ে বাসায় এসে ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম।উদ্দেশ্য ফেসবুকিং।ওপেন করার পর সালমান আল আজমীর একটা পোষ্ট এ নজর গেলো, তার বাবা অধ্যাপক গোলাম আজম সাহেব কে লাইফ সাপোর্ট দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে, সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।সুস্থতা কামনা করে পোষ্ট এর নিচে কমেন্ট করলাম।কিছুক্ষন পর লগ আউট করে ল্যাপটপ বন্ধ করে খাওয়া-দাওয়া করে শুয়ে পরলাম।রাত ১১ টার পর শুয়ে আছি ঘুম আসছিল না হঠাৎ করে সালমান আল আজমীর সেই পোষ্ট এর কথা মনে হলো, তার জন্য দোয়া করার জন্য শোয়া থেকে উঠে বসলাম এবং তৎক্ষনাৎ মাথার ভিতর থেকে কেউ যেন বলে উঠলো আামাদের প্রানপ্রিয় নেতা, বিংশ ও একাবিংশ শতাব্দীর ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম সিপাহসালার এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম আর নেই। অঝোর ধারায় কাঁদলাম। কতক্ষন কেঁদেছি জানিনা, অবচেতন মনে কারও সান্তনা পেয়ে থামলাম, মনে ক্ষীন আশা হয়তো এখনো আছেন।রাতের টিভি নিউজ না দেখাতে তখনো জানতে পারিনি উনি যে আর নেই।বাদ ফজর নিশ্চিত হতে পারলাম।দায়িত্বশীল কে ফোন দিলাম করনীয় সম্পর্কে, উনি ঢাকা মেডিক্যাল এ যেতে বললেন।সাথে সাথেই বেরিয়ে পড়লাম।শুক্রবার সকাল রাস্তাঘাট ফাকাই, পৌছতে বেশীক্ষন সময় লাগল না।একটু সতর্কভাবে চোখ বুলিয়ে ইমার্জেন্সীর গেইট হয়ে ভিতরে ঢুকলাম।আরও কিছু ভাই অপেক্ষা করছে তাদের পিছন পিছন লাশ যেই বিল্ডিং এ আছে সেখানে গেলাম।মিডিয়াগুলো গেটের সামনে ক্যামেরা নিয়ে দাড়িয়ে আছে।আমি অন্যান্য কর্মী ভাইদের সাথে অবস্থান নিলাম।কিছুক্ষন পর খবর এলো লাশ হস্তান্তর হয়েছে। আমাদের মগবাজার কাজী অফিস লেনে চলে যেতে বললো। আরেক ভাই খবর দিলো বিরোধীরা জমায়েত হয়েছে, ঝামেলা করতে পারে, ভার্সিটির হলগুলো যেনো এরিয়ে যায়।তাই একটু সতর্কতার সহিত ঢাকা মেডিকেল এর শহীদ মিনার এর গেইট দিয়ে বের হয়ে টিএসসি,শাহবাগ হয়ে মগবাজার কাজী অফিস লেনে পৌছলাম। কাজী অফিস এ যাওয়ার রাস্তা পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে, কোনো যানবাহন যেতে দিচ্ছে না।মানুষ ফুটপাথের পাশ দিয়ে যাতায়াত করছে।আমি এক পাশ দিয়ে গলির ভিতর চলে এলাম।কাজী অফিস লেনের মুখে এসে দেখি পুলিশ U মডেলে অবস্থান নিয়েছে।আমি এক পাশ দিয়ে কাজী অফিস লেনের ভিতর ঢুকে পড়ি।পুরো লেন আমাদের জামাত শিবিরের ভাইদের দ্বারা পরিপূর্ন, সবাই শোক ভারাক্রান্ত মন নিয়ে অবস্থান করছে।মসজিদ ও লেন লোকে লোকারন্য।অনেক মানুষ বাড়ীর গেইটের সামনে দাড়ানো, এক নজর দেখার জন্য।লাশ বাড়ীর গেইটের ভিতর গাড়ীতে রাখা।আামি লেনে ও মসজিদে ওয়ার্ডের দায়িত্বশীলদের সাথে কিছুক্ষন ওনাকে নিয়ে স্মৃতিচারন করলাম।অতপর মসজিদের ভিতর আরও কয়েকজনসহ বসলাম। আমাদের সাথে ছিলেন পাকিস্থান পিরিয়ডের ওনার সাথী মোশারফ ভাই।এক সাথে কাজ করার কিছু স্মৃতিচারন করলেন।যুদ্ধের পর উনি(মোশারফ ভাই) পাকিস্থান চলে গিয়েছিলেন।পরবর্তীতে অধ্যাপক গোলাম আজম সাহেব এর পরামর্শে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।আমরা অল্পক্ষন ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস আলোচনা করলাম।ওখানে ডাঃ আব্দুস সালাম ভাইয়ের সাথে দেখা এবং সালাম বিনিময় হলো।উনি অধ্যাপক গোলাম আজম সাহেব এর আত্বীয়। অনেকদিন পর দেখলাম।আমি যখন জামায়াতে যোগদান করি তখন উনি আমাদের রমনা থানা আমীর।টানা ১৩ বছর রমনা থানার নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমি ওনার পাঠচক্রের ছাত্র ছিলাম।কিছুক্ষন কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করলেন অতপর কর্মীদের সাথে আলোচনারত হলেন।বেলা এগারোটার কিছু আগে লাশের খাটিয়া বের করা হলো জনসম্মুখে। হাজার হাজার কর্মী প্রচন্ড ভীর সবাই দেখতে চায়।কিছু ভাই লাইন করে দাড়াতে বললে তিন চারটি লাইনে কাজী অফিস লেনের শেষ থেকে শুরু পর্যন্ত রাস্তার মধ্যে দাড়িয়ে গেলো।আমি লাইনের পাশে দাড়িয়ে বুঝতে পারলাম এভাবে দাড়িয়ে থেকে এখন হয়তো দেখতে পাবোনা।তাই বিল্ডিং এর পাশ ঘেষে ভীর ঠেলে আমি সামনে যেয়ে এক নজর ওনাকে দেখার সৌভাগ্য অর্জন করলাম।জীবিত অবস্থায় ওনার চেহারার মধ্যে উজ্জল আলো দেখা যেত, মৃত্যুর পর সেই আলো যেন আরো উজ্জল মনে হলো।আমি আমার জীবনে এমন আলোকিত জান্নাতি চেহারার লাশ জীবনে দেখিনি।

জুম্মার নামাজ এর সময় হয়ে যাওতে লাশ দেখা বন্ধ করে ঘোষনা করা হলো যে নমাজের পর সকলের দেখার জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হবে।আমি বাসায় এসে নামাজ পরে ৪ টার দিকে গেলাম।আসরের নামাজ পড়ে আবার দেখলাম, এবার লাইনে দাড়িয়ে।ওনার বাড়ীর অপজিটের ছোট গলিতে লাশ রাখার বিশেষ হিমায়িত গাড়ী, গ্লাসের ভিতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে।মনে হচ্ছে আলোকিত চেহারার মানুষটি হাস্যজ্জল মুখে ঘুমিয়ে আছে উনি যে আমাদের মাঝে নেই বিশ্বাষ করতে মন চাইছিল না।প্রথমবার লাশ দেখার জন্য খাটিয়া রাস্তার উপর রাখা হয়েছিল এবার হিমায়িত গাড়ীতে।

ওয়ার্ড সভাপতি মোশারফ ভাই ফোন করে জানালেন রাতে কাজী অফিস লেনে থাকতে হবে।হাটছিলাম আর ভাবছিলাম, রাতে যেহতেু থাকতে হবে বাসা থেকে তাহলে ঘুরে আসি। পথিমধ্যে আই ই এস স্কুলের প্রিন্সিপাল মন্জুরুল হক স্যার এর সাথে দেখা উনি আমার ও আমার ছোট বোনের এবং পিতামতার কুশলাদি জিজ্ঞেস করলেন।স্যার এর অনেক আদরের ছিলাম আমি এবং আমার ছোট বোন। আমরাও স্যারকে অনেক সম্মান করতাম।

বাসায় আর ফিরলাম না।আমাদেরে ওয়ার্ডের রুকন ইমরান ভাই এর সহ কাজী অফিস লেনে হাটাহাটি করছিলাম আর অন্যান্য ভাইদের সাথে সালাম বিনিময় করছিলাম।মাগরিবের সময় হচ্ছে তাই মসজিদে গিয়ে বসলাম। অত্যান্ত সুরেলা কন্ঠে অন্তর মিশিয়ে আন্তরিকতার সহিত মুয়াজ্জিন আজান দিলেন, মনোযোগ সহকারে শুনলাম।এমন আজান শুনে নিঃসন্দেহে মানুষের মন মসজিদে ছুটে আসার জন্য অস্থির হবে।

নামাজ পড়ে মসজিদে বসে আছি, পাশেই এক ভাইয়ের গলার আওয়াজ শুনে মনে হলো উনি চট্টগ্রামের মানুষ, জিজ্ঞেস করাতে জানালেন চট্টগ্রামে ওনার বাড়ী, প্রিয় নেতার মৃত্যুর সংবাদ শুনে বৃহস্পতিবার রাতেই রওনা হয়ে চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে সরাসরি ঢাকা এসেছেন।আবেগে ইমোশনাল হয়ে পড়লাম, বুঝতে পারলাম সকল প্রকারের ভয় ভীতি উপেক্ষা করে মানুষ ঢাকা আসতে শুরু করেছে।ইমরান ভাইয়ের কাছে এমোনি আসার আরও কিছু খবর পেলাম।ভেবেছিলাম ঢাকার কর্মীরাই আসবে কিন্তু প্রিয় নেতার মৃত্যুর সংবাদ শুনে মানুষ প্লাবনের ন্যায় ছুটে আসছে।মসজিদ থেকে বের হয়ে প্রিয় নেতার মুখখানি আবারো দেখলাম, এবার একটু সময় নিয়ে দেখার সুযোগ পেলাম।লেনের মধ্যে হাটছিলাম আর বিভন্ন অঞ্চল থেকে আসা দ্বীনি ভাইদের সাথে সালাম বিনিময় করছিলাম।একটু পর এশারের নামাজ পড়ে নিলাম।তখনো মানুষের লম্বা লাইন।

রাতে কাজী অফিস লেনে অন্যরকম দৃশ্য পুরা রাস্তায় আমাদের জামাত-শিবিরের কর্মী ভাইয়েরা মাদুর, পেপার ইত্যাদি বিছিয়ে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বসে আছে।লাশের গাড়ী বাড়ীর পার্কিং এ রেখে গেইট লাগিয়ে দিয়েছে তারপরও অনেক ভক্ত অনুসারীরা লম্বা লাইনে দাড়ানো এক নজর দেখার জন্য।মসজিদের ২য় তলায় রাতে অবস্থান নিলাম।রমনা থানার রুকন ভাইগন উপস্থিত হয়ে সবাই আলোচনারত হলো।রাতে মহসিন ভাইয়ের(রুকন) সাথে দেখা, ওনাকে এই রাতে এখানে দেখে অবাকই হলাম, উনি ইসলামী ব্যাংক এ কর্মরত,পরের দিন অফিস তারপরও এই রাতে চলে এসেছেন সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করতে।আমরা কয়েকজন আলোচনারত ছিলাম ওনাকে পেয়ে আলোচনা আরো গভীর হলো।অনেক রাত অবধি আমরা আলোচনা করলাম।

মসজিদের কার্পেটের উপর শুয়েছিলাম, চোখটা একটু লেগে এসেছিল এমন সময় এক ভাই ফজর এর নামাজের সময় হয়েছে বলে ঘোষনা দিলো এবং মুয়াজ্জিনের কন্ঠে আযানের সুমধুর ধ্বনি কানে এলো।আরেক দায়িত্বশীল ভাই জানালেন এই মসজিদে এত মানুষের জায়গা হবে না, তাই আশেপাশের মসজিদে নামাজ পড়ে আসার জন্য বললেন।আমি আর আশ্রাফ ভাই মগবাজার ওয়ারলেস মোড় মসজিদে নামাজ আদায় করলাম।কাজী অফিস লেনে ফিরে এসে ইমরান ভাইকে জানালাম বাসায় যেয়ে ফ্রেস হয়ে আবার আসবো, এই বলে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।তখন আমাদের রমনা থানা আমীর শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজাউল করিম ভাই কে দেখলাম শোক ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কর্মীদের নিয়ে দাড়িয়ে আছেন, কথা বলার আর সাহস পেলাম না।বাসায় চলে আসলাম।কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার বের হলাম।আমাকে আবার ১২টার মধ্যে বায়তুল মোকাররম পৌছাবার নির্দেশ দেয়া ছিল।কাজী অফিস লেনে চলে আসলাম, পথে আমার সাবেক ওয়ার্ড সভাপতি মুসলেহ উদ্দিন ভাইয়ের(রুকন) সাথে বেশ কয়েক বছর দেখা, স্নেহে জরিয়ে ধরলেন।ওনাকে দেখে সত্যিকার অর্থে খুশিই হয়েছি।ওনার মতো দায়িত্বশীল খুব কমই দেখেছি।কর্মীদের প্রতি তার ভালবাসা এবং দায়িত্ববোধ ছিল চোখে পড়ার মতো।ওনাকে সহ প্রানপ্রিয় নেতার মুখখানি শেষবারের মতো আবারো দেখে নিলাম।সংগ্রাম সম্পাদক বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী আবুল আসাদ কেও দেখলাম।আল্লাহ সুবানাহু ওয়া তাআলা তাকে দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য আরো বেশী খেদমত করার তাওফীক দিন এবং দীর্ঘজীবী করুন, আমীন।

অতপর মুসলেহ উদ্দিন ভাই, আজগর ভাই(রুকন)এবং আমি রিক্সা নিয়ে বায়তুল মোকাররম এর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।শনিবারের রাস্তা এমনিতেই ফাকা থাকে কিন্তু সেদিন যেন একটু বেশিই ফাকা।পল্টন মোড়ে এসে রিক্সা আর যেতে চাচ্ছে না, কিছু একটা যেন সমস্যা হয়েছে, বিপূল পুলিশ বায়তুল মোকাররম এর উত্তর গেইটের সামনে দাড়িয়ে আছে।তারপরও আমরা জোর করে সামনে অগ্রসর হলাম, চিন্তাটা এমোনি ছিল গ্রেপ্তার হলে হবো তবুও এগিয়ে যাবো।যাক- পুলিশ আমাদের কিছু বলল না, তবে রাস্তায় ককটেল বিষ্ফোরন এর চিহ্ন দেখলাম।পুলিশের সামনে দিয়েই খোলা গেইট দিয়ে বায়তুল মোকাররম এর উত্তর গেইটের ভিতরে প্রবেশ করলাম।প্রায় পুরা মসজিদ ভরে গেছে অপেক্ষারত মানুষ দ্বারা।আমি দুই অজুখানার মাঝে টিনের ছাউনির নিচে মুসলেহ উদ্দিন ভাই সহ বসে পড়লাম।আযান হওয়ার সাথে সাথে অজু করার জন্য উঠে এসে আগের জায়গায় আর বসতে পারলাম না।চতুর্দিকে শুধু মানুষ আর মানুষ।এক ভাই ডাক দিলো তার পাশে একটু জায়গা খালি ছিল বসে পড়লাম।যোহর নামাজ শেষে জানাজার পূর্বে কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মুজিবর রহমান ভাই এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অবঃ)আব্দুল্লাহিল আমান আজমী সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখলেন।মানুষ কাঁদছে, গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে আমার চোখ দুটো ভিজে এলো।জানাজা পড়ানোর সময় ৩য় তাকবীরের পর দোয়া পড়ার সময় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অবঃ)আব্দুল্লাহিল আমান আজমী কাঁদলেন, মাইকে শোনা যাচ্ছিল, শেষ হলে ঢাকা মহানগরী সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ভাই নির্দেশ দিলেন আপনারা শান্তিপূর্নভাবে মগবাজারে লাশের গাড়ীর সাথে শোক মিছিল নিয়ে যান।তখন বায়তুল মোকাররম এর ভিতর এবং বাইরের অবস্থা বলে বুঝানো যাবে না,লক্ষ লক্ষ মানুষ, আমি কোনভাবে দাড়ালাম লাশ যেখান দিয়ে বের হবে সেখান দিয়ে। ভাবলাম মোবাইলে ছবি বা ভিডিও তুলবো কিন্তু পারলামনা। শুধু দেখলাম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অবঃ)আব্দুল্লাহিল আমান আজমী আরো কয়েকজনসহ খাটিয়ার সামনের বাম পাশ কাঁধে নিয়ে হেটে যাচ্ছে, আর দেখতে পারলাম না প্রচন্ড ধাক্কা খেয়ে পিছনে সরে আসতে বাধ্য হলাম। দ্রুত বের হওয়ার চেষ্টা করলাম,কোনমতে রাস্তায় আসলাম।সেন্ডেল পড়ার আর সুযোগ পেলাম না হাতে নিয়েই শোক মিছিল এর সাথে হাটতে থাকলাম,হাট ছিলাম বললে ভূল হবে সবাই একের সাথে অন্যের শরীর লেগে ছিল, বলা যায় অটোমেটিক সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার ইউনিটের কর্মী আব্দুল্লাহ ভাই ফোন করে জানালেন উনি হোন্ডা নিয়ে আমার জন্য আজাদ প্রডাক্সের সামনে অপেক্ষা করছেন। মানুষের এত ভীর যে আমি কোনভাবেই রাস্তা পার হয়ে আজাদ প্রডাক্সের সামনে যেতে পারলাম না।মিছিলের সাথে দ্রুত সামনে আগাতে থাকলাম যাতে কাজী অফিস লেনে লাশের গাড়ীর পূর্বেই পৌছাতে পারি।লাশের গাড়ী পার হওয়ার সময় ঢাকা মহানগরী সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ভাই কে দেখলাম হোন্ডায় করে আসছেন। আব্দুল্লাহ ভাই আবার ফোন করে জানালেন উনি কাকরাইল আছেন, অবশেষে ওনাকে পেলাম, বাকী পথটুকু হোন্ডায় করে মিছিলে অশগ্রহন করলাম।অন্যরকম অভূতপূর্ব মিছিল কারো মুখে কোন শ্লোগান নেই আছে শুধুই কালেমায়ে শাহাদাত আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ।

আমার পাশের হোন্ডায় ছিলেন আমাদের সাবেক এমপি তাহের ভাই, আরেকটাতে জাহিদ ভাই এবং আরো কয়েকটা।মিছিলের অনেক সামনে ছিলাম , তারপরও শুরু দেখতে পাইনি আর শেষের কথা কি বলব মানুষ শুধু আসছে তো আসছেই এর যেন শেষ নেই। মগবাজার ওয়ারলেস যখন পৌছালাম এত মানুষ যে ঢুকতেই পারছিলাম না, নেতৃবৃন্দের সাথে না থাকলে হয়তো কাজী অফিসের গলিতে ঢুকতেই পারতাম না।কিন্তু বাড়ীর সামনে তো দুরের কথা লেনের আবাসিক গেইটের ভিতরেও যেতে পারিনি।কিছুক্ষন পর লাশ বহনকরী গাড়ী পৌছালে লেনের আবাসিক গেইট বন্ধ করে দেয়া হয়।মানুষ যাওয়ার মতো আর জায়গা ছিলনা। অনেকের মতো আমিও প্রিয় নেতার কবরে মাটি দিতে পারলাম না।বাইরে বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করে ৪টার দিকে বাসায় এসে টেলিভিশনের নিউজে ওনাকে কবরস্থ করার দৃশ্য দেখলাম।ওনার পুত্রের কান্নার দৃশ্য দেখে আমিও অশ্র সিক্ত হলাম।

আল্লাহ সুবানাহু ওয়া তাআলা আামাদের প্রানপ্রিয় নেতা, বিংশ ও একাবিংশ শতাব্দীর ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম সিপাহসালার এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম কে জান্নাতুল ফেরদৌস প্রদান করুক এবং তার পরিবার পরিজন ও ইসলামী আন্দোলনের কর্মী ভাইদের ধৈর্য ধরে শোক কে শক্তিতে পরিনত করে দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য ময়দানে হেকমতের সহিত ঝাপিয়ে পড়ার তাওফীক দিন, আমীন।

বিষয়: বিবিধ

১৩২৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

278927
২৮ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:১২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ সুন্দর বিবরনটির জন্য।
তথাকথিত জুতা মারা এত ভিড়ে কি আসলেই সম্ভব ছিল???
২৮ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩০
222741
বাংলার সিংহ লিখেছেন : লাশের গাড়ী যখন আসে তখন আমি মসজিদের ভিতরে। লাশের গাড়ী তার কয়েক লক্ষ ভক্ত সমর্থক দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। ঐ অবস্থায় গুটিকয়েক শাহবাগীর পক্ষে তার কফিনে জুতা নিক্ষেপ করা সম্ভব ছিল না। আর করলেও মুহুর্তের মধ্যেই নিক্ষেপকাড়ীর হাড্ডি-মাংস এক হয়ে যাওয়ার কথা। তাছাড়া টিভি চ্যানেলগুলো জানাযা সম্প্রচার না করলেও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশায় প্রত্যেকটা চ্যানেলের ক্যামেরা সার্বক্ষণিকভাবে গোলাম আযমের কফিনের দিকে তাক করা ছিল। জুতা নিক্ষেপের কোন ঘটনা ঘটলে অবশ্যই সেটার ভিডিও ফুটেজ থাকতো। অর্থ্যাৎ পুরো ব্যাপারটি সম্পুর্ণ মিথ্যা কিন্তু দালাল মিডিয়া সত্য প্রচার না করে একটা সাজানো মিথ্যা জোরেসোরে প্রচার করতে শুরু করলো।মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
279015
২৮ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪০
বাংলার সিংহ লিখেছেন : লাশের গাড়ী যখন আসে তখন আমি মসজিদের ভিতরে। লাশের গাড়ী তার কয়েক লক্ষ ভক্ত সমর্থক দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। ঐ অবস্থায় গুটিকয়েক শাহবাগীর পক্ষে তার কফিনে জুতা নিক্ষেপ করা সম্ভব ছিল না। আর করলেও মুহুর্তের মধ্যেই নিক্ষেপকাড়ীর হাড্ডি-মাংস এক হয়ে যাওয়ার কথা। তাছাড়া টিভি চ্যানেলগুলো জানাযা সম্প্রচার না করলেও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশায় প্রত্যেকটা চ্যানেলের ক্যামেরা সার্বক্ষণিকভাবে গোলাম আযমের কফিনের দিকে তাক করা ছিল। জুতা নিক্ষেপের কোন ঘটনা ঘটলে অবশ্যই সেটার ভিডিও ফুটেজ থাকতো। অর্থ্যাৎ পুরো ব্যাপারটি সম্পুর্ণ মিথ্যা কিন্তু দালাল মিডিয়া সত্য প্রচার না করে একটা সাজানো মিথ্যা জোরেসোরে প্রচার করতে শুরু করলো।মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File