@@@ স্বপ্ন নিয়ে কিছু কথা৷ @@@

লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১০:১০:২০ সকাল

মানুষ স্বপ্ন দেখে, তা ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়৷ কিছু মানুষ আছে যারা জেগে স্বপ্ন দেখে৷ মূলতঃ ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখাকেই প্রকৃত স্বপ্ন বলে৷ বলা হয়েছে শরীরের বিশ্রামের জন্য ঘুমের প্রয়োজন৷ ব্রেণেরও বিশ্রামের প্রয়োজন আছে, তবে অনেক সময় ব্রেণের বিশ্রাম শেষ হলেও শরীরের বিশ্রাম শেষ হয়না, তাই সে ঘুমোতেই থাকে আর এই সময়ই যত স্বপ্নের উদয় হয়৷ কেননা মস্তৃষ্ক তখন সজাগ হয়ে থেকে সে তার কাজ চালাতে থাকে৷ এ সব হল জ্ঞানীদের কথা৷ এখন নিজের কথায় আসি৷ স্বপ্ন অন্যের মত আমিও দেখি তবে সকালে তার তেমন কিছু আর মনে থাকেনা৷ নবী, ওলী আউলিয়া, বুজুর্গ লোকের স্বপ্ন সত্যি হয়৷ আবার কিছু সাধারণ মানুষের স্বপ্নও সত্যি হতে পারে৷

১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারীর প্রথম দিকের ঘটনা৷ এক বছর আগে বিয়ে করেছি আর মাস ছয়েক হবে কনসার্ণে জয়েন করেছি৷ কনসার্ণ একটি আইরিশ এন জি ও৷ তাদের শিক্ষা স্বাস্থ ও ইনকাম জেনারেটিং এ তিন শাখায় কাজ চলত৷ আমি ছিলাম ইনকাম জেনারেটিংএ৷ হত দরিদ্র, দুঃস্থ ভিখারী বা প্রায় তেমন শ্রেনীর মহীলাদের বিভিন্ন হাতের কাজের ট্রেনিং দিয়ে আড়াই বৎসর সময়ের ভিতর কিছু মূলধন দিয়ে স্বাবলম্বী করাই এ শাখার কাজ৷ ট্রেনিংয়ের জন্য ট্রেনার ছিল৷ আমার কাজ ছিল তাদের অগ্রগতি তদারক করা ও তাদের মোটিভেশন করা৷ এই শ্রেণীর মহীলাদের মোটিভেশণ করে কাজ শিখিয়ে স্বাবলম্বী করা আসলেই দূরহ ব্যাপার৷ তবে তাদের মধ্যে অবশ্যই কিছু উৎসাহী মহীলাও ছিল৷ যাই হোক এই বিষয়ে ট্রেনিংয়ের জন্য ঢাকায় যেতে হবে৷ সঙ্গী হল চাকরীতে আমার এক সপ্তাহের সিনিয়ার একজন, বিপুল বাবু৷ উনার আবার বেশ কিছু বিদেশী ট্রেনিং ও অভিজ্ঞতা ছিল৷ ইতি মধ্যে আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব বেশ গাঢ় হয়েও উঠেছে৷ দুজনে ব্যাগ ব্যাগেজ নিয়ে রওয়ানা হলাম৷ তখনও ঢাকা খুলনা যাতায়ত এখনের মত এতটা সুগম হয়ে ওঠেনি৷ অবশ্য পথে নিরাপত্তার অভাব ছিলনা৷ কিন্তু কি কারণে যেন ঢাকা খুলনার পাবলিক কোচ সার্ভীসগুলো বন্ধ ছিল৷ শুধু মাত্র বি আর টিসির একটা বাস ঢাকা খুলনা যাতায়াত করত৷

দুজনে বি আর টি সিতে ঢাকা রওয়ানা হলাম৷ পাশের সিটেই বিপুল বাবুর কলেজের এক ম্যাডামও ঢাকায় চলেছেন৷ অত্যন্ত মার্জিত রুচি সম্পন্ন মাঝ বয়সী ভদ্র মহিলা৷ উনিও ঢাকায় চলেছেন৷ পথে দুজনে আলাপ হল৷ ঢাকায় বিপুল বাবুর দু এক জন বন্ধু বান্ধব ছিলেন আর আমার এক ভায়রা ছাড়াও কিছু আত্মীয় ঢাকায় থাকতেন, ভায়রার সাথে বিয়ের সময় দেখা হয়ে ছিল৷ নতুন আত্মীয় হিসাবে তাদের বাসায় ওঠার আমন্ত্রনও ছিল৷ কিন্তু আমাদের হেড অফিস ছিল ঢাকায়৷ সেখানে বহিরাগত স্টাফদের থাকার জন্য হোস্টেল ছিল, তাই আমাদেরও সেখানেই উঠতে হয়েছিল৷ এক সপ্তার ট্রেনিং৷ ট্রেনিং শেষে প্রায় প্রতি দিনই সন্ধায় আমরা দুজন একসাথে বিভিন্ন আত্মীয় ও পরিচিতদের সাথে দেখা করতে যেতাম৷

আমার ভায়রার বাসায় গেলে আমাদের ট্রেনিং শেষে অন্ততঃ একদিন যেন তাদের বাসায় থাকি সে ওয়াদা করে আসতে হল৷ বয়সে আমার চেয়ে অনেকটাই বড়৷ মুরুব্বি, তাই মেনে নিতেই হল৷ শেষদিন সন্ধায় হোষ্টেল ছেড়ে ফরিদাবাদে ভায়রার বাসায় উঠলাম৷ গাড়ির সংকট তাই টিকেট আগে থেকেই কেটে রেখেছিলাম৷ পরেরদিন সকাল সাড়ে আটটায় কমলাপুর থেকে গাড়ি ধরতে হবে৷ যাই হোক রাতে যুতসই খাওয়া দাওয়া ও অনেক রাত পর্যন্ত গল্প হল৷ ভোরে উঠে চা নাস্তা করে সাতটার দিকে ব্যাগ ব্যাগেজ নিয়ে রিক্সায় উঠে বসলাম৷ একটু পরে বিপুল বাবু বললেন যে সে রাতে একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছে৷ কি তা জানতে চাইলাম৷ স্বপ্নটি ছিল আমাদের ঐ রওয়ানাটা নিয়েই, যাতে আমাদের সবকিছু ছিনতাই হয়ে গেছে এমন৷ তখন ঢাকার পথেঘাটে হর হামেশাই রাতে ছিনতাই হয়৷ আমরা যখন রাস্তায় বেরোলাম তখন অন্ধকার গিয়ে আলো আসতে শুরু করেছে৷ শীতের শেষ হলেও তেমন লোকজন রাস্তায় বার হয়নি, তবে দুচার জন এদিক ওদিক নজরে পড়ছে৷ বিপুল বাবু স্বপ্নটিই সবিস্তারে বলে চলেছে৷ ইতি মধ্যে আমরা লোহার পোল পার হয়ে একটা গলি রাস্তার ভিতর দিয়ে বেশ অনেকটা চলে এসেছি৷ স্বপ্ন শেষ হয়েছে মাত্র৷ এমন সময় ৫/৭ জন চাদর গায়ে মস্তান এসে আমাদের রিক্সাটা ঘিরে ধরে সব কিছু দিতে বলল৷ চাদরের ভিতর দিয়ে কিছু জিনিষ উচু করে রেখেছিল,তা চাকু পিস্তলবা কাঠের টুকরাও হতে পারে৷ আমাদের কিছুই দিতে হলনা কষ্ট করে তারাই নিয়ে নিল৷ প্যান্টের পিছনের পকেটের টাকা, সার্টের বুকপকেটে ছিল কিছু কাগজ কলম ও দু চার টাকাও থেকে থাকবে৷ কেননা দেশে আমি মানি ব্যাগ ব্যবহার করতাম না আর টাকা যাই থাকত তা এক সাথে না রেখে বিভিন্ন পকেটে অল্প অল্প রাখতাম৷ হাতে নতুন ঘড়িও ছিল৷ বিপুল বাবুর মানিব্যাগ নিল৷ সুইজার ল্যাণ্ড থেকে কেনা ঘড়ি তারা খুলে নিতে পারছিলনা সেটা খুলে দিতে হল৷ আর তার ছিল সুইজার ল্যাণ্ড থেকে কেনা বেশ সুন্দর ব্রীফ কেস৷ ঐ সময় ব্রীফ কেসের বেশ কদর ছিল৷ যার ভিতর কাপড়, বিদেশী সাবান শ্যাম্পু রেজর সব কিছু ছিল৷ সেটাও নিয়ে গেল৷ আমার কাপড় চোপড় ছিল একটা সাধারণ কিড ব্যাগে, যা তাদের পছন্দ হলনা৷ তাই রক্ষা পেল৷ তো স্বপ্নের হুবহু বাস্তবায়ন চোখের সামনে ঘটে গেল৷ ঠিক যেমনটি বর্ণনা করেছিল৷ পরের বাস্তবটুকু না বললে অধুরা রয়ে যায়৷ এখন সেটাও বলি৷

দেখলাম যে ওরা বাসের টিকিটটাও নিয়ে গেছে৷ একটা সাদা মাটা টিকেট যাতে আমার নাম ও দুজনের সিট নং দেওয়া ছিল৷ রিক্সা ওলাকে বললাম ঘুরাও আর ওদের কাছে চল৷ ওরা দিব্বি দল বেঁধে তখনও রাস্তায় পিছনের দিকে চলছে৷ কাছে গিয়ে বললাম ভাই, আমাদের টিকিটটা ফেরত দেন, যা আপনাদের কাজে লাগবেনা আর আমরা বাড়ি যেতে পারব৷ শুনে তারা ফিল্ম স্টাইলে একটু হাঁসা হাঁসী করে আবার হাঁটা শুরু করল৷ অগত্যা আমরাও রিক্সা ঘুরিয়ে সামনে এগুতেই বড় রাস্তায় উঠেই এক দল পুলিশ পেলাম৷৷ ছিনতাই কারীরা তখনও হাঁটছে, দূরে তাদের দেখিয়ে পুলিশদের বললাম যে ওরা আমাদের সব ছিনতাই করে নিয়েছে, সাহায্য করেন৷ পুলিশও বাংলাদেশী পুলিশ স্টাইলে জবাব দিল, ‘ওটা আমাদের এরিয়া নয়’৷ ওরাও যে আমাদের পরণের কাপড় খুলে নেয়নি তাতেই সান্ত্বনা৷ বাস স্টাণ্ডে গিয়ে সে দিনের সেই ম্যাডামকে আবারও পেলাম৷ উনিও খুলনা ফিরছেন৷ ঘটনা জানালে উনি পরামর্শ দিলেন কাউন্টারে যোগাযোগ করতে৷ তাই করলাম৷ কাগজে সিট নং দিয়ে টিকিট না থাকার কারণ লিখে জমাদিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসতে বললেন৷ কপাল ভাল যে সিট নং মনে ছিল৷ আমার প্যান্টের পিছনের অন্য পকেটে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট রক্ষা পেয়েছিল তাই দিয়ে বাকি রাস্তা খরচ চালিয়ে দুজনে বাড়ি ফিরলাম৷৷

বিষয়: বিবিধ

১১৬৬ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

358693
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ১১:৪২
বিবর্ন সন্ধা লিখেছেন : হাসি পাচচে আবার কাননা ও পাচচে Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Big Grin Big Grin Big Grin Time Out Time Out

আর সমবেদনার কোন ভাষা ও পাচছি না Crying Crying Crying
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:০৯
297563
শেখের পোলা লিখেছেন : সব কটার জন্যই ধন্যবাদ৷ তবে হাঁসির কারণটা বুঝলাম না৷ আমাদের পুলিশ আর লুটেরা ভাইয়েরা তখন চেতনার প্রশিক্ষনে ছিল৷ আর এখন পি এইচ ডি করে ফেলেছে৷এই যা৷
358696
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ১২:০৮
জেদ্দাবাসী লিখেছেন : স্বপ্ন বাস্তব হয়ে ওটার গটনা পাঠ করে আমারও কিছু স্বপ্নের কথা মনে পড়ে গেল। দুঃখুজনক এবং সুখের স্বপ্নগুলি আমার জীবনে হুবহুব মিলে গেছে।

এন জি ও গুলিকে আমরা নৈতিবাচক ভাবেই দেখি। লেখাতে একটা বিষয় জানা গেল ভাল এনজিও আছে।

জাযাকাল্লাহ খায়ের

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:১২
297564
শেখের পোলা লিখেছেন : অবশ্যই ভাল এন জি ও আছে৷ বরং ধর্ম নিয়ে অনেকেই মাথা ঘামায়না৷ প্রকৃতই জনগনের সেবা করে৷ আমি নয় বৎসর এদের সাথে ছিলাম৷ পদস্থও ছিলাম৷ ধন্যবাদ৷
358699
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ১২:৫৬
দ্য স্লেভ লিখেছেন : শালার পুলিশ তখনও কি বেজাতই ছিলো ????...চাচাভাই ব্যপক বুদ্ধিমান..টাকা অনেক পকেটে রাখেন। আমার ধারনা এরপর থেকে এখনও তাই করেন HappyHappy
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:১৬
297565
শেখের পোলা লিখেছেন : তখনও চেতনায় পাকা হতে পারেনি৷ নয়ত পরণের কাপড়টিই হয়ত খুলে নিত কিংবা থানায় নিয়ে ইয়াবার কেস দিয়ে দিত৷
বুদ্ধিমান কিনা জানিনা৷ তবে এখনও দেশে গেলে ওয়ালেট সাথে রাখিনা৷ ধন্যবাদ চাচা৷
358713
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০৩:৩২
আফরা লিখেছেন : আমি অনেক কম ঘুমাই তাই কখনো স্বপ্ন দেখি না ।
স্বপ্ন যে সাথে সাথেই বাস্তব হয়ে যায় জানা ছিল না । ধন্যবাদ চাচাজান ।
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:১৮
297566
শেখের পোলা লিখেছেন : আমিও বিশ্বাস করতামনা৷ ঐ ঘটনা আমার বিশ্বাস বদলে দিয়েছে৷ আর ঘটনা সবটাই সত্য৷ শুভেচ্ছা নিও৷
358789
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৯:৩৯
শরীফুল ইসলাম শরীফ লিখেছেন : বাংলাদেশী পুলিশ স্টাইলের জবাবটা ফাটাফাটি Worried Worried Liar
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:১২
297631
শেখের পোলা লিখেছেন : হাঁ ভাই, বাংলাদেশী পুলিশ বলে কথা৷ এরা চিরকালই আলাদা৷ধন্যবাদ৷
358830
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৪:২৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কিছু সপ্ন সত্যি হয় বা ভবিষ্যতের ইঙ্গিত থাকে। আপনাদের জন্য শুধু দুর্ভাগ্যজনক ছিল!!
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:১৪
297632
শেখের পোলা লিখেছেন : হয়তোবা ইঙ্গীতও ছিল৷ আমাদের সাবধান হবার আগেই ঘটে গেল৷ ধন্যবাদ৷
359128
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:০৯
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : শেখ সাহেবের পোলা ভাই দারুন অনুভুতি প্রকাশ করলেন সত্যি ৮০র দশকের চলাফিরা এবং এখনকার চলা ফিরার মধ্যে আকাশ জমিন তফাত
তারপরও আপনার এই দুর্ঘটনাটি সত্যি আপনি হয়তো অনেক দিন স্মরন রাখবেন
ধন্যবাদ
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:৪৮
297803
শেখের পোলা লিখেছেন : তাইতো আজও ঠিক ঠিক মনে আছে৷ তখনও পুলিশদের কিছু বলতে সাহস হত আর এখন সবাই এড়িয়ে চলে৷ ধন্যববাদ আপনাকে৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File