আল-কোরানের কাঠগড়ায় বিভক্তিবাদ -৫

লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৯:০৮:৩৭ সকাল

উম্মাহর সফলকাম শ্রেণি-

﴿وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ﴾ তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক অবশ্যি থাকতে হবে, যারা নেকী ও সৎকর্মশীলতার দিকে আহবান জানাবে, ভালো কাজের নির্দেশ দেবে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে৷ যারা এ দায়িত্ব পালন করবে তারাই সফলকাম হবে ৷ (আল-ইমরান/১০২)

যোগসুত্র ও ব্যাখ্যাঃ- পূর্বের আয়াতে আল্লাহ্‌ তা’লা বিভক্ত না হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার নিদের্শ প্রদান করেছেন। আর ঐক্যের ভিত্তি হবে কোরআন, সবাই কোরআন আঁকড়ে ধরে থাকবে। তাহলে আর ফিরকাবাজি ও বিভক্তির আশংকা থাকবেনা। কিন্ত এরপরেও সম্ভবনা থেকে যায়। কারণ পূর্বের ইহুদী , খৃষ্টান ও অন্যান্য জাতিগুলি অসংখ্য ফিরকায় বিভক্ত হয়েছে। তাছাড়া শয়তান তো পিছনে লেগে আছেই । সে তো ভাল করেই জানে নামায, রোজা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি থেকে বিরত রাখলে মুসলিম জাতির তেমন কোন ক্ষতি হবে না। বরং তাদেরকে বহু ফিরকায় বিভক্ত করতে পারলে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ ধবংস করা যাবে এবং সহজেই শয়তানের খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। যেমন বর্তমানে মুসলিম জাতির বিভক্তি ও কেন্দ্রচ্যুতির কারণে বিশ্বময় দাজ্জালতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এ জন্যই আল্লাহ্‌ তা’লা নির্দেশ দিয়েছেন, তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকবে যারা সর্বদা সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে বাধা প্রদান করতে থাকবে। তবে এ নির্দেশটি যেহেতু ঐক্য ও বিভক্তি সংক্রান্ত আয়াতের পর এসেছে –বিধায় বুঝা যায় এ দলটির প্রধান কাজ হবে উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ রাখা, কোন ভাবেই বিভক্তির সুযোগ না দেয়া। কিন্তু এরপরেও যদি মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি ও হানাহানি দেখা দেয় তখন আল্লাহ্‌র নির্দেশ হচ্ছে--وَإِن طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا ۖ فَإِن بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَىٰ فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّىٰ تَفِيءَ إِلَىٰ أَمْرِ اللَّهِ ۚ فَإِن فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا ۖ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ [٤٩:٩] = আর যদি মুমিনদের দুই দল লড়াই করে তাহলে তাদের উভয়ের মধ্যে শান্তি স্থাপন করো। কিন্তু তাদের একদল যদি অন্যদের বিরুদ্ধে বিবাদ করে তবে তোমরা লড়াই করবে তার সঙ্গে যে বিবাদ করছে, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহ্‌র নির্দেশের প্রতি ফিরে আসে। তারপর যখন তারা ফেরে তখন তাদের উভয়ের মধ্যে শান্তিস্থাপন করো ন্যায়বিচারের সাথে, আর নিরপেক্ষতা অবলন্বন করবে। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ নিরপেক্ষতা-অবলন্বনকারীদের ভালবাসেন।

এ ব্যাপারে হাদিসের নির্দেশ হচ্ছে- «من رأى منكم منكرا فليغره بيده فإن لم يستطع فبلسانه فإن لم يستطع فبقلبه وذلك أضعف الإيمان» وَفِي رِوَايَةٍ: "وَلَيْسَ وَرَاءَ ذَلِكَ مِنَ الإيمَانِ حَبَّةُ خَرْدَلٍ" ‘‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ কোন অসৎকাজ (হতে) দেখবে, সে যেন তাকে তার হাত দ্বারা প্রতিহত করে। তবে যদি সে ঐরূপ করতে অক্ষম হয়, তাহলে কথা দ্বারা যেন তাকে প্রতিহত করে, যদি এরপরও করতে অক্ষম হয়, তাহলে যেন অন্তর দিয়ে তাকে ঘৃণা করে। আর সেটা হবে সবচাইতে দুর্বল ঈমান। অন্য বর্ণনায় এসেছে, এর বাইরে বিন্দুমাত্র ঈমান নাই।

عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: "وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِه لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ولَتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ، أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللهُ أنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْ عِنْدِهِ، ثُمَّ لَتَدْعُنَّهُ فَلا يَسْتَجِيبُ لَكُمْ". রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, যে সত্ত্বার হাতে আমার প্রাণ-তার কসম, তোমরা অবশ্যি অবশ্যি সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে বাধা প্রদান করবে, অন্যথায় খুব শীঘ্রই আল্লাহ তা’লা তোমাদের উপর শাস্তি প্রেরণ করবেন। তারপর তোমরা দোয়া করবে কিন্তু আল্লাহ তোমাদের দোয়া কবুল করবেন না।

ব্যখ্যাঃ- আমরা অহর্নিশ নিজের জন্য,পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য দোয়া করছি, কিন্তু বুঝা যাচ্ছে আমাদের দোয়া কবুল হচ্ছে না। বিশেষত পৃথিবীর কোটি কোটি মসজিদে দৈনিক পাঁচবার, জুমা , ঈদ , রমজান ইত্যাদি গুরুত্বপুর্ণ সময় গুলিতে মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করছি, ফিলিস্তিন, আরাকান, কাশ্মির, জিংজিয়াং ইত্যাদিতে নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য দোয়া করছি। কিন্তু দোয়া তো কবুল হচ্ছেই না বরং আল্লাহ যেন আরো ক্রোধান্বিত হয়ে গযবের ভাণ্ড উপুড় করে ঢেলে দিচ্ছেন। বিধর্মী কতৃক মুসলিম নির্যাতনের হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সেই সাথে নতুন নতুন জঙ্গি সংগঠন জন্ম নিচ্ছে আর দস্তুরমত মুসলিম হত্যা করে চলছে। কাজেই বুঝা যাচ্ছে আমরা পুর্নাংগ রুপে উক্ত হাদীসের মেসদাক হয়ে গেছি। কিন্তু কেন? উম্মাহর মধ্যে এমন কোন দল নাই যারা আমরে বিল-মা’রুফ এর দায়িত্ব পালন করছে না। প্রত্যেক ফেরকা নিজ নিজ পরিমণ্ডলে আমরে বিল মারুফ নেহি আনিল মুনকারের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এরপরেও কেন আমরা আল্লাহর গযবে নিপতিত হলাম? বাস্তব ভিত্তিক এর দুটি উত্তর হতে পারে। একঃ কোরআন হাদীসের নির্দেশনা মাফিক বুঝা যায়, আমরে বিল মারুফ ও নেহি আনিল মুনকার এর আওতায় প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ রাখা, ফিরকাবাজির সুযোগ না দেয়া। কিন্তু কেউ এ দায়িত্ব পালন করছে না বিধায় উম্মাহর মধ্যে শত শত ফিরকার জন্ম হয়ে গেছে এবং ধবংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ অসংখ্য হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন জামাত জামাত ঐক্য ঐক্য। রাসূল সাঃ বলেন, আমার পরে তোমরা কুফুরীতে ফিরে যাবে এমন আশংকা করি না কিন্তু আমার আশংকা তোমরা একে অন্যের গর্দান মারবে। তিনি আরো বলেন, আমি এবং সাহাবাগণ যার উপর আছি তাই হক , তাই জামাত। এখন প্রশ্ন হলো রাসূল (সাঃ) এবং সাহাবায়ে কেরাম এমন কোন বিষয়ের উপর ছিলেন- যার উপর আমরা নাই। তাওহীদ, নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত ও অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে তো শিয়া সুন্নী নির্বিশেষে সবাই তো তাদেরই অনুসরণ করছে। তাহলে বাদ গেল কোনটি? হ্যাঁ সেই বর্জিত বিষয়টি হলো জামাত বা ঐক্য। রাসূল

(সাঃ) কখনো সাহাবাগণের মাঝে বিভক্তি বা দলাদলির সুযোগ দেননি। কোথাও সমস্যা হলে তিনি মিটিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমান মুসলমানরা রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশ বর্জন করে ফিরকাবাজিতে লিপ্ত হয়ে গেছে বিধায় তাদের নামাজ রোযা ও দোয়া কবুল হচ্ছে না।

দুইঃ- প্রত্যেক ফিরকা নিজ নিজ ফিরকার চিন্তা ও দর্শন অনুযায়ি যা মারুফ তার আদেশ করছে আর যা মুনকার তার নিষেধ করছে। কিন্তু তারা ইসলামের প্রকৃত আমরে বিল মারুফ ওয়া নেহি আনিল মুনকার এর দায়িত্ব পালন করে না, করলে উম্মাহর মধ্যে এত শত ফেরকার জন্ম হতে পারত না।অনন্তর যারা আমরে বিল-মা’রুফের দায়িত্ব পালন করবে অর্থাৎ উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা করবে তাদের সম্পর্কে রাসূল (সা.) ৭২ ফিরকার হাদীসে সুসংবাদ দিয়েছেন।যেমন- كُلُّهَا فِي النَّار إِلَّا وَاحِدَةٌ، وَهِيَ الْجَمَاعَةُ، (ধারাবাহিক)

বিষয়: রাজনীতি

১৩৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File