নদীতে ‘স্ত্রী বিসর্জনের’ সেই করুণ কাহিনী

লিখেছেন লিখেছেন রিফায়েত বিন কবির ২৫ মার্চ, ২০১৩, ১১:১০:২২ সকাল

ষাটোর্ধ স্বামী-স্ত্রী। দুইজনের মধ্যে প্রচণ্ড ভালবাসাও রয়েছে। স্ত্রীর অদ্ভুত বায়না -‘তুমি আমাকে মেরে ফেল। এ পৃথিবীতে আর বাঁচতে চাই না। প্রয়োজনে ঔষধ খাইয়ে মেরে ফেল।’ স্বামী তাকে অনেক করে বুঝান। বলেন, ‘আমরা মরে গেলে সন্তানদের (৩ জন) কে দেখবে?’ এ সান্তনায় কাটে কিছুদিন। তারপর আবারও স্ত্রীর একই বায়না- ‘তুমি নিজের হাতে আমাকে মেরে ফেল। আমাদেরকে কেউ দেখে না। আমরা বাঁচতে চাই না।’ এক সময় স্বামীর মনেও কিছুটা সায় আসে। স্ত্রীর পূর্ণ সম্মতিতেই একদিন স্বামী তাকে ঠেলে দিলেন না ফেরার দেশে। স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা হল থানায়। তারপর আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ালেন তিনি। অদ্ভুত এ কাহিনী গতকাল উঠে আসল চট্টগ্রামের বিভাগীয় দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে। ওই স্বামীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী গ্রহণকারী বিচারক মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমানের সাক্ষ্যদানকালে এ তথ্য সবার সামনে এসেছে।

জানা গেছে, উপযুক্ত সন্তান থাকার পরও মা-বাবাকে দেখভাল না করায় এক ধরনের বিষন্নতাবোধ কাজ করে সন্দ্বীপের বাসিন্দা সুনীল চন্দ্র মজুমদার (৭০) ও তার স্ত্রী কল্যাণী মজুমদারের (৬৫) মধ্যে। এতে সুনীল কিছুটা ঠিক থাকলেও কল্যাণী মানসিকভাবে অন্যরকম হয়ে যান। এক সময় তিনি স্বামীকে পীড়াপীড়ি শুরু করেন তাকে মেরে ফেলার জন্য। সুনীল জানান, প্রায়ই আমার স্ত্রী আমাকে নিজের হাতে মেরে ফেলার জন্য বলত।

ঘটনার পরে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেয়া ১২ পৃষ্ঠার জবানবন্দীতে সুনীল চন্দ্র জানিয়েছিলেন, ২০১০ সালের ৩০ মার্চ সন্দ্বীপের বাড়ি থেকে বের হয়ে বেড়াতে যান মহেশখালী। সেখানে আদিনাথ পাহাড় ঘুরে দেখেন। সেখান থেকে এসে তারা দুইজনে কাফকোতে এক আত্মীয়ের বাসায় যান। কিন্তু ওই বাসায় কেউ না থাকায় তারা ১৫ নম্বর জেটিঘাটে আসেন। তখন রাত প্রায় ১০ টা। নদীর পানি দেখে কল্যাণী আবার বলতে থাকেন এটা হচ্ছে সুযোগ। তুমি এবার আমাকে পানিতে ভাসিয়ে দাও। কেউ জানবেনা, কেউ দেখবেনা। এক সময় ১৫ নম্বর ঘাটে এসে তারা দুইজনেই পানিতে নামেন। সুনীল হাঁটু পানিতে নামলেও কল্যাণী সামনে এগিয়ে যায়। আস্তে আস্তে পানিতে তলিয়ে যেতে থাকেন। এরই মধ্যে হালকা একটু ধাক্কাও দেন সুনীল। ডুবন্ত কল্যাণী হাত নাড়তে থাকেন। ডুবে যাওয়ার একবারে শেষ মুহূর্তে কেন যেন বাঁচার সামান্য আকুতি। এসময় তিনি বলতে থাকেন, ‘আমাকে একা ঠেলে দিচ্ছ তুমি।’ তখন সুনীল বলেন, ‘তুমি যাও। আমিও আসব। এভাবেই এক সময় হারিয়ে যান কল্যাণী। পরের দিন ১৫ নম্বর ঘাটের আশপাশের এলাকা থেকে কল্যাণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মামলা হয় পতেঙ্গা থানায়। মামলার বাদী সুনীলেরই ছেলে অরুণ চন্দ্র মজুমদার। আসামী একজনই।

পরে একই বছর ২ এপ্রিল উল্লেখিত ঘটনা বর্ণনা করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন সুনীল। জবানবন্দী গ্রহণকারী সেই ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান গতকাল ওই জবানবন্দীর কথা উল্লেখ করে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

তিনি সাক্ষ্যদানকালে বলেছেন, জবানবন্দী গ্রহণ করার সময় আসামী সুনীলের প্রতিফোঁটা অশ্রু ও প্রতিটি দীর্ঘশ্বাসের কথাও লিপিবদ্ধ করেছিলাম। বিষয়টি অত্যন্ত মর্মান্তিক। মা-বাবাকে সন্তানদের অবহেলার পরিণাম কতটুকু ভয়াবহ হতে পারে এটা তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। আশা করছি সবাই এ ব্যাপারে সতর্ক হবে।

দৈনিক আজাদী ইপেপার

বিষয়: বিবিধ

১২৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File