দাওয়াতি কাজ করেও আমরা যেভাবে কুফরিতে লিপ্ত

লিখেছেন লিখেছেন ইহসান আব্দুল্লাহ ০৭ আগস্ট, ২০১৩, ০৮:২২:২২ সকাল



দাওয়াতী কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন দলের ভাইয়েরা ঈমানের দাওয়াতের ক্ষেত্রে তাওহীদের কথা বলেন, আল্লাহর একত্ববাদের কথা বলেন; কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ইবাদাতের তথা নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত প্রভৃতি ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ববাদের উপরই প্রাধান্য দেন, আর সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে মানব রচিত ব্যবস্থা ও মানুষের মনগড়া আইনের আনুগত্য করে চলেন। আল্লাহ্-ই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা (জন্ম-মৃত্যুর মালিক), পালনকর্তা, শৃংখলাবিধানকারী, পূর্ণতাদানকারী ও রিযিকদাতা এটা প্রচার করলেও ‘আল্লাহর জমীনে সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর, মানুষের নয়’ এ সম্পর্কে তারা হয় না জানার, না বুঝার কারণে মৌনতা অবলম্বন করেন কিংবা খন্ডিত ব্যাখ্যা দেন।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী দাওয়াত দিলেন মক্কার লোকদেরকে যার পরিণতিতে সহচরগণ সহকারে তাঁকে প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করতে হয়েছিলো?

“যাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ী থেকে অন্যায়ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে শুধু এই কারণে যে, তারা বলেছিল- রাব্বুনাল্লাহ্ (আল্লাহ্ই আমাদের একমাত্র রব্ব)।…। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করবেন, যারা আল্লাহকে সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পরাক্রমশালী শক্তিধর।” (সূরা আল-হাজ্জ ২২:৪০)

অর্থাৎ তৎকালীন আবু লাহাব, আবু জাহেল গং নিয়ন্ত্রিত জাহেলিয়্যাতের ভিত্তিতে গঠিত সমাজ ব্যবস্থায় আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল মানুষকে মানুষের সার্বভৌমত্বের দাসত্ব থেকে বের হয়ে একমাত্র আল্লাহ্র সার্বভৌমত্বকে মেনে কেবলমাত্র তাঁরই দাসত্ব, তাঁরই আইনের আনুগত্যের অঙ্গীকার করার দাওয়াত দিয়েছিলেন। যার পরিণতিতে উক্ত সমাজের আইন-বিধান প্রণয়ন ও নিরংকুশ কর্তৃত্বের ভিত্তিতে রব্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত আবু লাহাব, আবু জাহেল গং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সহচরদের প্রতি খর্গ হস্ত হয়ে জুলুম-নিপীড়ন ও হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু করে দেয়। মূলতঃ যারাই আল্লাহকে একমাত্র রব্ব বলে স্বীকার করে নিবে এবং এ দাবীর প্রতি দৃঢ়-অটল থাকবে তারাই প্রকৃত ঈমানদার এবং তাদেরকে সুসংবাদ দিয়েই আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীনের পক্ষ থেকে ইরশাদ হচ্ছে-

‘‘নিশ্চয়ই যারা ঘোষণা করেছে- রাব্বুনাল্লাহ্ (আল্লাহ্ই আমাদের একমাত্র রব্ব-সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্বের একমাত্র মালিক), অতঃপর তার উপরে অবিচল থেকেছে, নিশ্চয়ই তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত হবে না। তারাই জান্নাতের অধিকারী! তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আর এটা হচ্ছে তাদের সেই কাজের বিনিময় যা তারা পৃথিবীতে করেছিলো।’’ (সূরা আহক্বাফ ৪৬:১৩,১৪)

সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব বহাল থাকলেই এবং আল্লাহকে সার্বভৌমত্বের একমাত্র মালিক স্বীকার করে একমাত্র নিরংকুশ আইনদাতা মানলেই ইসলামের অস্তিত্ব থাকে। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব বজায় না থাকলে সেখানে ইসলামের অস্তিত্ব এক মুহুর্তও থাকতে পারে না। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, আজকের পৃথিবীতে সমাজ ও রাষ্ট্রে মানব জাতির জন্য কল্যাণকর সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত ব্যবস্থা ইসলাম প্রতিষ্ঠিত না থাকার কারণে, আল্লাহর যমীনে আল্লাহদ্রোহী তাগুতী শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও প্রভুত্বের ওপর ভাগ বসাচ্ছে আর নামাযী, দাড়ী-টুপিওয়ালা, তাসবীহ্ ওয়ালা লোকরা তাদেরকে সমর্থন দেয়া থেকে শুরু করে সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদ গ্রহণ করে তাদের সহায়তা করে বৈষয়িক ফায়দা লুটছে।

এই শাসক শ্রেণী তাদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা নিশ্চিত করছে এবং স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, অর্থনীতি, সমাজ, পরিবার তথা সাধারণ মানুষের জীবন, সহায় সম্পদ ও তাদের মধ্যে বিবাদমান বিষয়ে নিজেদের খেয়ালখুশী মতো বিধি নিষেধ প্রয়োগ করছে। এটাই সেই সমস্যা যার সমাধান, সংশোধন ও মোকাবেলা করার জন্য কুরআন নাযিল হয়েছে এবং সে আইন ও বিধি নিষেধ প্রনয়ণ ও প্রয়োগের ক্ষমতাকে দাসত্ব ও প্রভুত্বের সাথে সম্পৃক্ত করেছে এবং স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছে যে, এর আলোকেই সিদ্ধান্ত আসবে কে মুসলিম? কে অমুসলিম? কে মু’মিন? ও কে কাফির?

কোন মানুষ এই সার্বভৌমত্বের দাবী করতে পারে না এবং কেউ দাবী করলে ঈমানদার মুসলিমরা জীবন গেলেও সেই দাবী মেনে নিবে না। মক্কায় অবস্থান কালে মুসলিমদের মনে যখন এই আক্বিদা দৃঢ়ভাবে বদ্ধমূল হলো, তখন আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীন ঈমানদার মুসলিমদেরকে রাষ্ট্রীয় শাসন ক্ষমতা তথা খিলাফাত দানের মাধ্যমে তা বাস্তবে প্রয়োগের সুযোগ দিলেন মদিনায়।

উপরোক্ত বৈশিষ্ট্য তাদের মধ্যে থাকলে তারা ঈমানদার মুসলিম, নচেৎ তারা কাফির, মুশরিক বা অমুসলিম, চাই তারা যতই নিজেদের মুসলিম বলে দাবী করুক না কেন।

বিষয়: বিবিধ

১৮৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File