ইমামগণের মতভেদে হাদীসের ভূমিকা– মুহাম্মাদ আওয়ামাহ(সংগ্রহিত)

লিখেছেন লিখেছেন মদীনার আলো ০৫ জানুয়ারি, ২০১৮, ০১:৩১:৪২ রাত

https://www.reviewofislamicboo

নামঃ ইমামগণের মতভেদে হাদীসের ভূমিকা।

মূলঃ أثر الحديث الشريف في اختلاف الأئمة الفقهاء

লিখকঃ মুহাম্মাদ আওয়ামাহ।

অনুবাদঃ মুফতী ইজহারুল ইসলাম আল কাওসারী।

প্রকাশকঃ আইডিয়া পাবলিকেশন্স।

পরিবেশনায়ঃ কাসেমিয়া লাইব্রেরী, মাকতাবাতুল ইসলাম, হাকীমুল উম্মত প্রকাশনী, নাঈম প্রকাশনী।

পৃষ্ঠাঃ ৩৩৫।

মুদ্রিত মূল্যঃ ২৭০ টাকা।

===========================

বই পরিচিতিঃ

*************

আল্লাহ তায়ালা দ্বীনে ইসলাম পালনের জন্য ওহীর মাধ্যমে আমাদেরকে পথ-প্রদর্শণ করেছেন। এর আগে বেড়ে তার অনুগ্রহ যে, কোরআন এবং সুন্নাহর বিধান পালনের জন্য পদ্ধতি কী হবে, তাও তিনি নির্ধারণ করে দিয়েছেন! যার মধ্যে রয়েছে ন্যায়ানুগ ইখতিলাফের গ্রহণযোগ্যতা, ইজমার আবশ্যকতা, আমলের ক্ষেত্রে উম্মতের প্রতি সহজতা ও সাধ্যাতীত কষ্টের সময় নম্রতা, মুজতাহিদীনের প্রতি পুণ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, ফুকাহায়ে কেরামের ফজীলতকে চাঁদের সাথে তুলনা!

শুধু এই নয়, তার পাশাপাশি পবিত্র শরীয়তে অযাচিত হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রেও রয়েছে কঠিন বিভীষিকাময় শাস্তির ধমকবাণী। মনগড়া তফসীর, মিথ্যা-বানানো হাদীস, অজানা বিষয়ে মন্তব্যকরণ, ভাসাভাসা জ্ঞানের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তগ্রহণ, আহলে হকের ব্যাপারে বিদ্বেষভাব, কথার মধ্যে অসততা-কলুষতা ইত্যাদি, এ সকল বিষয় সে সমস্ত কঠোর বাণীর অন্তর্ভুক্ত।

তবুও নফস আর শয়তানের ধোকা পড়ে এবং জ্ঞানের সঠিক ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হয়ে কিছু মুসলমান ভাই পড়ে যায় সেই অযাচিত কর্মমুখর দলগুলোর মধ্যে। সে সুক্ষতর বিদআতপন্থী দলগুলোর মধ্যেই রয়েছে বর্তমান কথিত “আহলে হাদীস“ নামক দলের মুসলমানেরা।

মাযহাবের ইমামগণ এবং মুকাল্লিদদের ব্যাপারে তাদের বিদ্বেষভাব আজ চরমে। বললেও তারা বিশ্বাস করতে রাজি নয় যে আমরা মাযহাব বলতে পন্থা বুঝাই, ধর্ম নয়…। মিথ্যা যত প্রোপাগাণ্ডা নিয়ে আজ তারা উলামায়ে কেরামের ব্যক্তিত্ব, ইলমী যোগ্যতা, আমলী নির্দোষতায় কালেমা লেপন করতে কোমড় বাঁধা পাহলোয়ান যেন! আমাদের দেশের প্রচলন হিসেবে হানাফী মাযহাব অনুসৃত উম্মতই তাদের প্রধান টার্গেট।

সত্য বলতে, এ শুধু হানাফী মাযহাবের দায় নয়, বরং উম্মতে হকের এ হাজারো মসিবতের যুগে নতুন এই ফেতনা মোকাবেলা করা দায়িত্ব এবং ফরীজা। এর যথাযথ মোকাবেলা করতে প্রয়োজন একদল “উলূমুল হাদীস” শাস্ত্রের প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব…।

আলহামদুলিল্লাহ, মহানুভব রব কখনও ইসলামের প্রয়োজনীয়তা অপূর্ণ রাখেন না। আমাদের জন্যে এ সংক্রান্ত ফেতনা মোকাবেলায় দাড় করিয়েছেন বিভিন্ন প্রান্তে একদল হাদীস শাস্ত্রবিদ। জহীর আহসান নিমাবী, যাহেদ কাওসারী, আব্দুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ, আবুল ওয়াফা আফগানী, হাবিবুর রহমান আজমী, আব্দুর রশীদ নুমানী, মুহাম্মাদ আওয়ামাহপ্রমুখ সে দলেরই অগ্রপথিক। আমরা আমাদের রত্ন মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেবকেও সে দলের অন্তর্ভুক্ত মনে করেই আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা আদায় করছি, আলহামদুলিল্লাহ…।

তো শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামাহ ১৩৯৮হিজরীর সফর মাসে “হলবের” ইউনিভার্সিটি “জামেয়াতুর রওজায়” অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে বক্তৃতা রাখেন। যার বিষয়বস্তু ছিল “হাদীসে নববীর উপর ইমামগনের ইখতিলাফ”। অতঃপর তার কিছু বন্ধুজন এ সারগর্ভ লেকচারকে পুস্তকাকারে লিপিবদ্ধ করার অনুরোধ করেন এবং তার প্রয়োজনীয়তার কথা ব্যক্ত করেন। আর এভাবেই মূল বই “আসারুল হাদীসিস শরীফ ফী ইখতিলাফিল আয়িম্মাতিল ফুকাহা” নামক গ্রন্থটি লেকচারের মূল উপজীব্য অবিকৃত থেকে লিপিবদ্ধ হয়ে যায় আলহামদুলিল্লাহ।

গ্রন্থালোচনাঃ

************

আমি এখানে যা বলব, মূল আরবী বইটি সম্বন্ধেই বলব। কেননা অনুবাদ তো ভিন্ন কিছু নয়!

হায় আমার ভাগ্য, এ বইটি সম্বন্ধে আমার বলার কীইবা থাকতে পারে! আব্দুল মালেক সাহেব যেখানে তার সংকলিত বই المدخل إلي علوم الحديث الشريف এ শায়খ আওয়ামার এই পুস্তক আর তারই লিখিত أدب الاختلاف في مسائل الدين (দ্বীনি মাসায়েলে ইখতিলাফের আদব) সম্বন্ধে এই মন্তব্য করেছেন যে, “এ দুটি বই, যা কিনা স্বর্ণের কালিতে লিখে রাখার উপযুক্ত”।

তবুও ভাইদের আগ্রহ পয়দার খাতিরে দু-একটি কথা লিখতে হচ্ছে।

বক্ষমান বইটির মধ্যে শুধু মণিমুক্তোই আর মণিমুক্তো! এ যেন খনি!! ভূমিকা থেকে শুরু করে শেষ পৃষ্ঠা, পুরোটাই এক শ্বাসে পান করে ফেলার মত!!!

_______

মুক্তোসমস্তঃ

***********

বইটির মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে ইমামগণের ইখতিলাফের কারণ বর্ণনা।

তো মূল বইয়ে বিসমিল্লাহ বলার সাথে-সাথেই পেয়ে যাবেন পঞ্চম সংস্করণের কয়েক লাইন ভূমিকা বাদে দ্বিতীয় ও চতুর্থ সংস্করণের সারগর্ভ ভূমিকা। কবিতাগুলোও স্বর্ণের কালিতে লিখে রাখার মতই…। “প্রত্যেক কথাতেই প্রভাবান্বিত হতে যেওনা তুমি,

সমস্ত কাজেই তোমার প্রশংসাকারী আর নিন্দুক থাকবে…”। এ যেন কবিতাকারে জীবনের লক্ষ্যে প্রশান্তি দানকারী এক অমীয় সুধা।

এ ভূমিকাটিতে বিশেষ করে আহলে হাদীসের ন্যায় সম্প্রদায়ের জন্য খোরাক রয়েছে। শায়খ লিখেন, “ইলম, আদব ও সুস্থ পরিবেশের অভাবে যুবক শ্রেণির মনে যেসব ধ্যান-ধারণা ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে তা যাতে সত্যিকার পরিশুদ্ধ বোধে রূপায়ণ হয়, এ গ্রন্থে আমি সে চেষ্টাই করেছি। অন্যভাবে বলা চলে, এটি আমাদের অগ্রজ-অনুজদের পথ ও পদ্ধতি সংরক্ষণের একটি ছোট প্রয়াস। আমার আত্মিক প্রশান্তির জন্য আমি মনে করি এটুকুই যথেষ্ট”।

এতে আরও রয়েছে প্রচলিত আহলে হাদীসের ন্যায় সম্প্রদায়ের প্রকৃত রূপ বর্ণনামূলক কিছু কথা।

এরপরই রয়েছে হযরত যাকারিয়া কান্ধলবী ও শায়খ মুস্তফা আহমাদ আয-যারকা এর মূল্যবান, এবং শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ (রাহিমাহুমুল্লাহ) এর দোয়াপূর্ণ অভিমত।

অতঃপর অবতরণিকার মাধ্যমে মূল বই শুরু হয়। প্রথমেই তিনি মতবিরোধ সংক্রান্ত আলোচনার উপস্থাপনা সূচি পেশ করেন, যথাঃ

১। প্রারম্ভিকা, ইমামগণের নিকট হাদীসের মর্যাদা।

২। ইখতিলাফের প্রথম কারণ, হাদিস কখন আমলযোগ্য হয়।

৩। ২য় কারণ, হাদীসের মর্মোদ্ধারে ভিন্নতা।

৪। ৩য় কারণ, বাহ্যিকভাবে মুখতালাফ হাদীস সমাধানে পদ্ধতিগত ভিন্নতা।

৫। ৪র্থ কারণ, হাদীস অবগত হওয়ার ক্ষেত্রে ভিন্নতা।

অতঃপর তিনি মূল আলোচনা শুরু করেন।

তিনি প্রত্যেকটি অধ্যায়ের আলোচনায় তদসম্পৃক্ত অনুচ্ছেদ এবং তার অধীনের পরিচ্ছেদাকারে আলোচনা করেন।

ইমামগণের ইখতিলাফের ১ম কারণ আলোচিত হয় হাদীস আমলযোগ্য হওয়ার মানদণ্ড নিয়ে।

অতঃপর ১ম অনুচ্ছেদে তিনি আলোচনায় আনেন হাদীস সহীহ হওয়ার ক্ষেত্রে সকলের শর্ত এক ছিল না। অতঃপর মুরসাল হাদীস, “আদালতে রাবী” সংক্রান্ত আলোচনা নিয়ে আসেন।

২য় অনুচ্ছেদে তিনি “যয়ীফ হাদীস” সম্পর্কে মূল্যবান আলোচনা করেন।

৩য় অনুচ্ছেদে রয়েছে “রিওয়ায়াত বিল মা’না” সম্পর্কে আলোচনা।

৪র্থ অনুচ্ছেদে তিনি ভাষাগত কারণে ইখতিলাফের ব্যাপারে আলোচনা করেন।

এ অধ্যায়ে আরও রয়েছে আহলে হাদীসদের একটি অত্যাধিক ব্যবহৃত উক্তি “যখন হাদীস সহীহ হয়, তাই আমার মাযহাব” সম্পর্কে পর্যালোচনা এবং “আমলে মুতাওয়ারাসার” গুরুত্বের ব্যাপারে আলোচনা।

২য় অধ্যায়ে মতানৈক্যের ২য় কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন মর্ম অনুধাবনসংক্রান্ত বিভিন্নতা।

১ম অনুচ্ছেদে তিনি উল্লেখ করেন হাদীসের মর্ম অনুধাবনের ক্ষেত্রে মতানৈক্যের ক্ষেত্রে মূল কারণসমূহ।

এছাড়া রয়েছে উলামায়ে কেরামের “যাল্লাতের” ক্ষেত্রে আমাদের মানহাজ কী হবে, সে সংক্রান্ত আলোচনা।

৩নং কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন হাদীসের বিভিন্নতা।

১ম অনুচ্ছেদে তিনি “তায়ারুজে হাদীস” ও সামঞ্জস্যপদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করেন। এরপরের পরিচ্ছেদে “নসখ” এর ব্যাপারে আলোচনা করেন।

তারপর “তারজীহ” দেয়ার পদ্ধতি সংক্রান্ত আলোচনা নিয়ে আসেন।

এ অধ্যায়ে আরও রয়েছে ইমাম বুখারী ও মুসলিম সম্পর্কে এবং হাদীসের কিতাব সংকলনের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসীনের মানহাযসংক্রান্ত আলোচনা।

ইখতিলাফের ৪র্থ নং কারণে তিনি ইমামগণের সব হাদীসের ব্যাপারে অবগতি না থাকার ব্যাপারে আলোচনা করেন।

এগুলো হচ্ছে সূচিপত্রের মূল আলোচনা। এছাড়াও এগুলোর মাঝে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে উলামায়ে কেরামের কতশত চিত্রাকর্ষক ঘটনা, পর্যালোচনা। সত্যি বলতে, দুধের সংজ্ঞা বুঝতে হলে তা খেয়েই দেখতে হবে। নাহয় বক ভাবার সম্ভাবনা আছে।

শেষের দিকে তিনি ৩টি সংশয়ের ব্যাপারে আলোচনা করেছেন, যথাঃ

১। ইমামরা সকল হাদীস জানতেন না, তাই আমাদের উচিৎ নিজেরা জেনে আমল করা।

২। এত হাদীসের কিতাবের উপস্থিতিতে আজ ফিকহ বড়ই সহজ!

৩। ইমামগণ ‘সহীহ’ হাদীস রেখেই ‘যয়ীফ’ হাদীস গ্রহণ করেছেন।

_________

পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ

**************

কিছু বই থাকে, কখন শেষ হবে চিন্তার ব্যগ্রতা নিয়ে পড়া হয়।

আর কিছু! সেগুলো ভালবাসার তৃপ্তিতে আটকা পড়ে যায়। ব্যগ্রতাটি সেখানেও থাকে, কিন্তু সেটা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় নয়, নতুন সব আকর্ষণের আগ্রহে…। আলোচিত বইটি তেমনই এক…। এমন কিতাবের মধ্যে আরও রয়েছে “ফিকহু আহলিল ইরাক ওয়া হাদীসুহুম”, “ইমাম ইবনু মাজাহ ওয়া কিতাবুহুস সুনান”, “আলমাদখাল ইলা উলূমিল হাদীসিস শারীফ” ইত্যাদি।

আল্লাহ তায়ালা লিখককে যথাযথ প্রতিদান দান করুন, এবং তা আরও বাড়িয়ে দিন।

আর সমস্ত প্রশংসাই আল্লাহ তায়ালার জন্য, যিনি এই বইয়ের রিভিউ লিখার তওফীক দিয়ে আমায় ধন্য করেছেন। কিন্তু আমি আর তার হক আদায় করতে পারলাম কৈ!

আল্লাহ মাফ করুন

নামঃ ইমামগণের মতভেদে হাদীসের ভূমিকা।

মূলঃ أثر الحديث الشريف في اختلاف الأئمة الفقهاء

লিখকঃ মুহাম্মাদ আওয়ামাহ।

অনুবাদঃ মুফতী ইজহারুল ইসলাম আল কাওসারী।

প্রকাশকঃ আইডিয়া পাবলিকেশন্স।

পরিবেশনায়ঃ কাসেমিয়া লাইব্রেরী, মাকতাবাতুল ইসলাম, হাকীমুল উম্মত প্রকাশনী, নাঈম প্রকাশনী।

পৃষ্ঠাঃ ৩৩৫।

মুদ্রিত মূল্যঃ ২৭০ টাকা।

===========================

বই পরিচিতিঃ

*************

আল্লাহ তায়ালা দ্বীনে ইসলাম পালনের জন্য ওহীর মাধ্যমে আমাদেরকে পথ-প্রদর্শণ করেছেন। এর আগে বেড়ে তার অনুগ্রহ যে, কোরআন এবং সুন্নাহর বিধান পালনের জন্য পদ্ধতি কী হবে, তাও তিনি নির্ধারণ করে দিয়েছেন! যার মধ্যে রয়েছে ন্যায়ানুগ ইখতিলাফের গ্রহণযোগ্যতা, ইজমার আবশ্যকতা, আমলের ক্ষেত্রে উম্মতের প্রতি সহজতা ও সাধ্যাতীত কষ্টের সময় নম্রতা, মুজতাহিদীনের প্রতি পুণ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, ফুকাহায়ে কেরামের ফজীলতকে চাঁদের সাথে তুলনা!

শুধু এই নয়, তার পাশাপাশি পবিত্র শরীয়তে অযাচিত হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রেও রয়েছে কঠিন বিভীষিকাময় শাস্তির ধমকবাণী। মনগড়া তফসীর, মিথ্যা-বানানো হাদীস, অজানা বিষয়ে মন্তব্যকরণ, ভাসাভাসা জ্ঞানের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তগ্রহণ, আহলে হকের ব্যাপারে বিদ্বেষভাব, কথার মধ্যে অসততা-কলুষতা ইত্যাদি, এ সকল বিষয় সে সমস্ত কঠোর বাণীর অন্তর্ভুক্ত।

তবুও নফস আর শয়তানের ধোকা পড়ে এবং জ্ঞানের সঠিক ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হয়ে কিছু মুসলমান ভাই পড়ে যায় সেই অযাচিত কর্মমুখর দলগুলোর মধ্যে। সে সুক্ষতর বিদআতপন্থী দলগুলোর মধ্যেই রয়েছে বর্তমান কথিত “আহলে হাদীস“ নামক দলের মুসলমানেরা।

মাযহাবের ইমামগণ এবং মুকাল্লিদদের ব্যাপারে তাদের বিদ্বেষভাব আজ চরমে। বললেও তারা বিশ্বাস করতে রাজি নয় যে আমরা মাযহাব বলতে পন্থা বুঝাই, ধর্ম নয়…। মিথ্যা যত প্রোপাগাণ্ডা নিয়ে আজ তারা উলামায়ে কেরামের ব্যক্তিত্ব, ইলমী যোগ্যতা, আমলী নির্দোষতায় কালেমা লেপন করতে কোমড় বাঁধা পাহলোয়ান যেন! আমাদের দেশের প্রচলন হিসেবে হানাফী মাযহাব অনুসৃত উম্মতই তাদের প্রধান টার্গেট।

সত্য বলতে, এ শুধু হানাফী মাযহাবের দায় নয়, বরং উম্মতে হকের এ হাজারো মসিবতের যুগে নতুন এই ফেতনা মোকাবেলা করা দায়িত্ব এবং ফরীজা। এর যথাযথ মোকাবেলা করতে প্রয়োজন একদল “উলূমুল হাদীস” শাস্ত্রের প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব…।

আলহামদুলিল্লাহ, মহানুভব রব কখনও ইসলামের প্রয়োজনীয়তা অপূর্ণ রাখেন না। আমাদের জন্যে এ সংক্রান্ত ফেতনা মোকাবেলায় দাড় করিয়েছেন বিভিন্ন প্রান্তে একদল হাদীস শাস্ত্রবিদ। জহীর আহসান নিমাবী, যাহেদ কাওসারী, আব্দুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ, আবুল ওয়াফা আফগানী, হাবিবুর রহমান আজমী, আব্দুর রশীদ নুমানী, মুহাম্মাদ আওয়ামাহপ্রমুখ সে দলেরই অগ্রপথিক। আমরা আমাদের রত্ন মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেবকেও সে দলের অন্তর্ভুক্ত মনে করেই আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা আদায় করছি, আলহামদুলিল্লাহ…।

তো শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামাহ ১৩৯৮হিজরীর সফর মাসে “হলবের” ইউনিভার্সিটি “জামেয়াতুর রওজায়” অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে বক্তৃতা রাখেন। যার বিষয়বস্তু ছিল “হাদীসে নববীর উপর ইমামগনের ইখতিলাফ”। অতঃপর তার কিছু বন্ধুজন এ সারগর্ভ লেকচারকে পুস্তকাকারে লিপিবদ্ধ করার অনুরোধ করেন এবং তার প্রয়োজনীয়তার কথা ব্যক্ত করেন। আর এভাবেই মূল বই “আসারুল হাদীসিস শরীফ ফী ইখতিলাফিল আয়িম্মাতিল ফুকাহা” নামক গ্রন্থটি লেকচারের মূল উপজীব্য অবিকৃত থেকে লিপিবদ্ধ হয়ে যায় আলহামদুলিল্লাহ।

গ্রন্থালোচনাঃ

************

আমি এখানে যা বলব, মূল আরবী বইটি সম্বন্ধেই বলব। কেননা অনুবাদ তো ভিন্ন কিছু নয়!

হায় আমার ভাগ্য, এ বইটি সম্বন্ধে আমার বলার কীইবা থাকতে পারে! আব্দুল মালেক সাহেব যেখানে তার সংকলিত বই المدخل إلي علوم الحديث الشريف এ শায়খ আওয়ামার এই পুস্তক আর তারই লিখিত أدب الاختلاف في مسائل الدين (দ্বীনি মাসায়েলে ইখতিলাফের আদব) সম্বন্ধে এই মন্তব্য করেছেন যে, “এ দুটি বই, যা কিনা স্বর্ণের কালিতে লিখে রাখার উপযুক্ত”।

তবুও ভাইদের আগ্রহ পয়দার খাতিরে দু-একটি কথা লিখতে হচ্ছে।

বক্ষমান বইটির মধ্যে শুধু মণিমুক্তোই আর মণিমুক্তো! এ যেন খনি!! ভূমিকা থেকে শুরু করে শেষ পৃষ্ঠা, পুরোটাই এক শ্বাসে পান করে ফেলার মত!!!

_______

মুক্তোসমস্তঃ

***********

বইটির মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে ইমামগণের ইখতিলাফের কারণ বর্ণনা।

তো মূল বইয়ে বিসমিল্লাহ বলার সাথে-সাথেই পেয়ে যাবেন পঞ্চম সংস্করণের কয়েক লাইন ভূমিকা বাদে দ্বিতীয় ও চতুর্থ সংস্করণের সারগর্ভ ভূমিকা। কবিতাগুলোও স্বর্ণের কালিতে লিখে রাখার মতই…। “প্রত্যেক কথাতেই প্রভাবান্বিত হতে যেওনা তুমি,

সমস্ত কাজেই তোমার প্রশংসাকারী আর নিন্দুক থাকবে…”। এ যেন কবিতাকারে জীবনের লক্ষ্যে প্রশান্তি দানকারী এক অমীয় সুধা।

এ ভূমিকাটিতে বিশেষ করে আহলে হাদীসের ন্যায় সম্প্রদায়ের জন্য খোরাক রয়েছে। শায়খ লিখেন, “ইলম, আদব ও সুস্থ পরিবেশের অভাবে যুবক শ্রেণির মনে যেসব ধ্যান-ধারণা ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে তা যাতে সত্যিকার পরিশুদ্ধ বোধে রূপায়ণ হয়, এ গ্রন্থে আমি সে চেষ্টাই করেছি। অন্যভাবে বলা চলে, এটি আমাদের অগ্রজ-অনুজদের পথ ও পদ্ধতি সংরক্ষণের একটি ছোট প্রয়াস। আমার আত্মিক প্রশান্তির জন্য আমি মনে করি এটুকুই যথেষ্ট”।

এতে আরও রয়েছে প্রচলিত আহলে হাদীসের ন্যায় সম্প্রদায়ের প্রকৃত রূপ বর্ণনামূলক কিছু কথা।

এরপরই রয়েছে হযরত যাকারিয়া কান্ধলবী ও শায়খ মুস্তফা আহমাদ আয-যারকা এর মূল্যবান, এবং শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ (রাহিমাহুমুল্লাহ) এর দোয়াপূর্ণ অভিমত।

অতঃপর অবতরণিকার মাধ্যমে মূল বই শুরু হয়। প্রথমেই তিনি মতবিরোধ সংক্রান্ত আলোচনার উপস্থাপনা সূচি পেশ করেন, যথাঃ

১। প্রারম্ভিকা, ইমামগণের নিকট হাদীসের মর্যাদা।

২। ইখতিলাফের প্রথম কারণ, হাদিস কখন আমলযোগ্য হয়।

৩। ২য় কারণ, হাদীসের মর্মোদ্ধারে ভিন্নতা।

৪। ৩য় কারণ, বাহ্যিকভাবে মুখতালাফ হাদীস সমাধানে পদ্ধতিগত ভিন্নতা।

৫। ৪র্থ কারণ, হাদীস অবগত হওয়ার ক্ষেত্রে ভিন্নতা।

অতঃপর তিনি মূল আলোচনা শুরু করেন।

তিনি প্রত্যেকটি অধ্যায়ের আলোচনায় তদসম্পৃক্ত অনুচ্ছেদ এবং তার অধীনের পরিচ্ছেদাকারে আলোচনা করেন।

ইমামগণের ইখতিলাফের ১ম কারণ আলোচিত হয় হাদীস আমলযোগ্য হওয়ার মানদণ্ড নিয়ে।

অতঃপর ১ম অনুচ্ছেদে তিনি আলোচনায় আনেন হাদীস সহীহ হওয়ার ক্ষেত্রে সকলের শর্ত এক ছিল না। অতঃপর মুরসাল হাদীস, “আদালতে রাবী” সংক্রান্ত আলোচনা নিয়ে আসেন।

২য় অনুচ্ছেদে তিনি “যয়ীফ হাদীস” সম্পর্কে মূল্যবান আলোচনা করেন।

৩য় অনুচ্ছেদে রয়েছে “রিওয়ায়াত বিল মা’না” সম্পর্কে আলোচনা।

৪র্থ অনুচ্ছেদে তিনি ভাষাগত কারণে ইখতিলাফের ব্যাপারে আলোচনা করেন।

এ অধ্যায়ে আরও রয়েছে আহলে হাদীসদের একটি অত্যাধিক ব্যবহৃত উক্তি “যখন হাদীস সহীহ হয়, তাই আমার মাযহাব” সম্পর্কে পর্যালোচনা এবং “আমলে মুতাওয়ারাসার” গুরুত্বের ব্যাপারে আলোচনা।

২য় অধ্যায়ে মতানৈক্যের ২য় কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন মর্ম অনুধাবনসংক্রান্ত বিভিন্নতা।

১ম অনুচ্ছেদে তিনি উল্লেখ করেন হাদীসের মর্ম অনুধাবনের ক্ষেত্রে মতানৈক্যের ক্ষেত্রে মূল কারণসমূহ।

এছাড়া রয়েছে উলামায়ে কেরামের “যাল্লাতের” ক্ষেত্রে আমাদের মানহাজ কী হবে, সে সংক্রান্ত আলোচনা।

৩নং কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন হাদীসের বিভিন্নতা।

১ম অনুচ্ছেদে তিনি “তায়ারুজে হাদীস” ও সামঞ্জস্যপদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করেন। এরপরের পরিচ্ছেদে “নসখ” এর ব্যাপারে আলোচনা করেন।

তারপর “তারজীহ” দেয়ার পদ্ধতি সংক্রান্ত আলোচনা নিয়ে আসেন।

এ অধ্যায়ে আরও রয়েছে ইমাম বুখারী ও মুসলিম সম্পর্কে এবং হাদীসের কিতাব সংকলনের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসীনের মানহাযসংক্রান্ত আলোচনা।

ইখতিলাফের ৪র্থ নং কারণে তিনি ইমামগণের সব হাদীসের ব্যাপারে অবগতি না থাকার ব্যাপারে আলোচনা করেন।

এগুলো হচ্ছে সূচিপত্রের মূল আলোচনা। এছাড়াও এগুলোর মাঝে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে উলামায়ে কেরামের কতশত চিত্রাকর্ষক ঘটনা, পর্যালোচনা। সত্যি বলতে, দুধের সংজ্ঞা বুঝতে হলে তা খেয়েই দেখতে হবে। নাহয় বক ভাবার সম্ভাবনা আছে।

শেষের দিকে তিনি ৩টি সংশয়ের ব্যাপারে আলোচনা করেছেন, যথাঃ

১। ইমামরা সকল হাদীস জানতেন না, তাই আমাদের উচিৎ নিজেরা জেনে আমল করা।

২। এত হাদীসের কিতাবের উপস্থিতিতে আজ ফিকহ বড়ই সহজ!

৩। ইমামগণ ‘সহীহ’ হাদীস রেখেই ‘যয়ীফ’ হাদীস গ্রহণ করেছেন।

_________

পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ

**************

কিছু বই থাকে, কখন শেষ হবে চিন্তার ব্যগ্রতা নিয়ে পড়া হয়।

আর কিছু! সেগুলো ভালবাসার তৃপ্তিতে আটকা পড়ে যায়। ব্যগ্রতাটি সেখানেও থাকে, কিন্তু সেটা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় নয়, নতুন সব আকর্ষণের আগ্রহে…। আলোচিত বইটি তেমনই এক…। এমন কিতাবের মধ্যে আরও রয়েছে “ফিকহু আহলিল ইরাক ওয়া হাদীসুহুম”, “ইমাম ইবনু মাজাহ ওয়া কিতাবুহুস সুনান”, “আলমাদখাল ইলা উলূমিল হাদীসিস শারীফ” ইত্যাদি।

আল্লাহ তায়ালা লিখককে যথাযথ প্রতিদান দান করুন, এবং তা আরও বাড়িয়ে দিন।

আর সমস্ত প্রশংসাই আল্লাহ তায়ালার জন্য, যিনি এই বইয়ের রিভিউ লিখার তওফীক দিয়ে আমায় ধন্য করেছেন। কিন্তু আমি আর তার হক আদায় করতে পারলাম কৈ!

আল্লাহ মাফ করুন

বিষয়: বিবিধ

১২৭৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384655
০৬ জানুয়ারি ২০১৮ রাত ০৮:৩৬
চেতনাবিলাস লিখেছেন : আর একবার কপি হলে খুবই ভালো হতো। যা বোঝার বুঝে নিলাম।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File