আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবির তাকওয়া ও আমাদের অবস্তান

লিখেছেন লিখেছেন মদীনার আলো ২২ মে, ২০১৫, ০৫:৫৫:৩২ বিকাল

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একজন সাহাবা, নাম সালাবা মাত্র ষোল বছর বয়স। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য বার্তাবাহক হিসেবে এখানে সেখানে ছুটোছুটি করে বেড়াতেন তিনি। একদিন উনি মদীনার পথ ধরে চলছেন, এমন সময় একটা বাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তাঁর চোখ পড়ল দরজা খুলে থাকা এক ঘরের মধ্যে। ভিতরে গোসলখানায় একজন মহিলা গোসলরত ছিলেন, এবং বাতাসে সেখানের পর্দা উড়ছিল, তাই সালাবার চোখ ঐ মহিলার উপর যেয়ে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে উনি দৃষ্টি নামিয়ে নিলেন। কিন্তু তাঁর মন এক গভীর অপরাধবোধে ভরে গেল। প্রচন্ড দুঃখ তাঁকে আচ্ছাদন করল। তাঁর নিজেকে মুনাফিক্বের মত লাগছিল। তিনি ভাবলেন, ‘কিভাবে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবা হয়ে এতোটা অপ্রীতিকর কাজ করতে পারি!! মানুষের গোপনীয়তাকে নষ্ট করতে পারি? যেই আমি কিনা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বার্তা বাহক হিসেবে কাজ করি, কেমন করে এই ভীষণ আপত্তিজনক আচরণ তার পক্ষে সম্ভব?’ তাঁর মন আল্লাহর ভয়ে কাতর হয়ে গেল। তিনি ভাবলেন, না জানি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমার এমন আচরণের কথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে প্রকাশ করে দেয়! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে লজ্জায়, তিনি তৎক্ষণাৎ ঐ স্থান থেকে পালিয়ে গেলেন।

এভাবে অনেকদিন চলে গেল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যান্য সাহাবাদের কে সালাবার কথা জিজ্ঞেস করতেই থাকতেন। কিন্তু সবাই জানাল কেউ-ই সালাবা কে দেখেনি। এদিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দুশ্চিন্তা ক্রমেই বাড়ছিল। তিনি উমর রাদ্বিয়ালাহু আনহু, সালমান আল ফারসি রাদ্বিয়ালাহু আনহু সহ আরো কিছু সাহাবাদের পাঠালেন সালাবার খোঁজ আনার জন্য। সমগ্র মদীনা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও সালাবার দেখা মিলল না। পরে মদীনার একেবারে সীমান্তবর্তী একটি স্থানে, মক্কা ও মদীনার মধ্যখানে অবস্থিত পার্বত্য অঞ্চলে পৌঁছে কিছু বেদুঈনের সাথে দেখা হল তাদের। সেখানে এসে তাঁরা সালাবার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে শুরু করলেন। তোমরা কি লম্বা, তরুণ, কম বয়সী একটা ছেলেকে এদিকে আসতে দেখেছ?’ বেদুঈনগুলো মেষ চড়াচ্ছিল। তারা জবাব দিল, সে খবর তারা জানেনা, তবে তারা জিজ্ঞেস করল, তোমরা কি ক্রন্দনরত বালকের সন্ধানে এসেছ?’ একথা শুনে সাহাবীরা আগ্রহী হয়ে উঠলেন এবং তার বর্ণনা জানতে চাইলেন। উত্তরে ওরা বলল, ‘আমরা প্রতিদিন দেখি মাগরিবের সময় এখানে একটা ছেলে আসে, সে দেখতে এতো লম্বা, কিন্তু খুব দুর্বল, সে শুধুই কাঁদতে থাকে। আমরা তাকে খাওয়ার জন্য এক বাটি দুধ দেই, সে দুধের বাটিতে চুমুক দেয়ার সময় তার চোখের পানি টপটপ করে পড়ে মিশে যায় দুধের সাথে, কিন্তু সেদিকে তার হুঁশ থাকেনা!’ তারা জানালো চল্লিশ দিন যাবৎ ছেলেটা এখানে আছে। একটা পর্বতের গুহার মধ্যে সে থাকে, দিনে একবারই সে নেমে আসে, কাঁদতে কাঁদতে; আবার কাঁদতে কাঁদতে, আল্লাহর কাছে সর্বদা ক্ষমা প্রার্থনা করতে করতে উপরে চলে যায়। সাহাবারা বর্ণনা শুনেই বুঝলেন, এ সালাবা না হয়ে আর যায় না। তবে তাঁরা উপরে যেয়ে সালাবাকে ভড়কে দিতে চাচ্ছিলেন না, এজন্য নিচেই অপেক্ষা করতে লাগলেন। যথাসময়ে প্রতিদিনের মত আজও সালাবা ক্রন্দনরত অবস্থায় নেমে আসলেন, তাঁর আর কোনদিকে খেয়াল নাই। কী দুর্বল শরীর হয়ে গেছে তাঁর! বেদুঈনদের কথামত তাঁরা দেখতে পেলেন, সালাবা দুধের বাটি হাতে কাঁদছে, আর তাঁর অশ্রু মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। তাঁর চেহারায় গভীর বিষাদের চিহ্ন স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। সাহাবারা তাকে বললেন, ‘আমাদের সাথে ফিরে চল’; অথচ সালাবা যেতে রাজি হচ্ছিলেন না। তিনি বারবার সাহাবাদেরকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, ‘আল্লাহ কি আমার মুনাফিক্বী বিষয়ক কোন সূরা নাযিল করেছে?’ সাহাবারা উত্তরে বললেন, “না আমাদের জানামতে এমন কোন আয়াত নাযিল হয়নি।“ উমর রাদ্বিয়ালাহু আনহু বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে তোমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। তুমি যদি এখন যেতে রাজি না হও, তাহলে তোমাকে আমরা জোর করে ধরে নিয়ে যাব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথা অমান্য করবেন এমন কোন সাহাবা ছিল না। কিন্তু থা’লাবা এতোটাই লজ্জিত ছিলেন যে ফিরে যেতে চাচ্ছিলেন না। এরপর সাহাবারা তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে মদীনায় নিয়ে আসেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে সালাবা আবারও একই প্রশ্ন করে, “আল্লাহ কি আমাকে মুনাফিক্বদের মধ্যে অন্তর্গত করেছেন অথবা এমন কোন আয়াত নাযিল করেছেন যেখানে বলা আমি মুনাফিক্ব?” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে নিশ্চিত করলেন যে এমন কিছুই নাযিল হয়নি। তিনি সালাবার দুর্বল পরিশ্রান্ত মাথাটা নিজের কোলের উপর রাখলেন। সালাবা কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলেন, “হে আল্লাহর রাসূল, এমন গুনাহগার ব্যক্তির মাথা আপনার কোল থেকে সরিয়ে দিন।“ উনার কাছে মনে হচ্ছিল যেন সে এসব স্নেহের যোগ্য না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে সান্ত্বনা দিতেই থাকলেন। আল্লাহর রহমত আর দয়ার উপর ভরসা করতে বললেন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে বললেন। এমন সময় সালাবা বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল আমার এমন মনে হচ্ছে যেন আমার হাঁড় আর মাংসের মাঝখানে পিঁপড়া হেঁটে বেড়াচ্ছে।“ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “ওটা হল মৃত্যুর ফেরেশতা। তোমার সময় এসেছে সালাবা, শাহাদাহ পড়।“সালাবা শাহাদাহ বলতে থাকলেন, ‘আল্লাহ ছাড়া ইবাদাতের যোগ্য আর কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল” উনি শাহাদাহ বলতে থাকলেন বলতেই থাকলেন। এমনভাবে তাঁর রুহ শরীর থেকে বের হয়ে গেল।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাবাকে গোসল করিয়ে জানাযার পর কবর দিতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। আরো অনেক সাহাবা সালাবাকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পা টিপে টিপে অনেক সাবধানে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। উমর রাদ্বিয়ালাহু আনহু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আপনি এভাবে কেন হাঁটছেন যেন ভিড়ের মাঝে হেঁটে চলেছেন। কতো রাস্তা ফাঁকা পরে আছে, আপনি আরাম করে কেন চলছেন না ইয়া রাসুল?’ উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘হে উমর, আমাকে অনেক সাবধানে চলতে হচ্ছে। সমস্ত রাস্তা ফেরেশতাদের দ্বারা ভরে গেছে। সালাবার জন্য এতো ফেরেশতা এসেছে যে আমি ঠিকমত হাঁটার জায়গা পাচ্ছি না’। সুবহান আল্লাহ ! এই সেই সালাবা যে ভুলক্রমে একটা ভুল করার জন্য এতো প্রায়শ্চিত্য করেছেন। গুনাহ-র কাজ করা তো দূরের কথা, গুনাহ না করেও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে চেয়ে ব্যাকুল হয়েছেন। কত উঁচু ছিলেন তিনি আল্লাহর চোখে যে তাঁকে নেয়ার জন্য ফেরেশতাদের আগমনে রাস্তা ভরে গিয়েছিল! এই সব ফেরেশতারা নেমে এসেছে শুধু থা’লাবার জন্য, তাঁর জন্য দুআ করার জন্য, তাকে নিয়ে যাবার জন্য। আর আমরা সারাদিন জেনে না জেনে এতো ভুল করেও, এতোগুনাহ করেও অনুশোচনা করি না! উলটা আমাদের পছন্দ মত কিছু না হলেই আল্লাহর আদেশের উপর অসন্তোষ প্রকাশ করতে থাকি, জীবন নিয়ে নালিশ করতে থাকি। একটা হাদীস আছে, ‘মু’মিন বান্দার কাছে তার গুনাহগুলো এমন যেন এখনই পাহাড় ভেঙ্গে তার মাথার উপর পড়বে; আর একজন দুর্বৃত্তকারীর কাছে গুনাহ এরকম যে মাছি এসে তার নাকের উপর উড়াউড়ি করছে, আর সে হাত নাড়িয়ে সেটা সরিয়ে দিল’। [বুখারি, বইঃ৭৫, হাদীস নং ৩২০]

প্রিয় মুসলিম ভাই বোন আপানাদের কে বিনয়ের সাথে অনুরোধ করছি এই অতি মুল্যবান পোষ্টি শেয়ার করার জন্য ৷

[সংগৃহিত

বিষয়: বিবিধ

১৭৯৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

321855
২২ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৩
শেখের পোলা লিখেছেন : সংগ্রহের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ৷ আল্লাহ আমাদের এ থেকে শিক্ষা নেবার তৌফিক দিন৷
321856
২২ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৬
আবু জান্নাত লিখেছেন : http://www.monitorbd.net/blog/blogdetail/detail/2662/sottolikhon/63226#.VV8yS_mqrBE

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ আপামনি।
মাশা-আল্লাহ, ঈমান জাগানিয়া হৃদয় স্পর্শী কাহিনী। অনেক ভালো লাগলো আপুনি। এই হাদিসটির সুত্রটি যদি উল্লেখ করতেন অনেক উপকার হতো। আপনার লিখাটির গ্রহনযোগ্যতাও বৃদ্ধি পেত। জাযাকিল্লাহ খাইর।

মুহাদ্দিসীনে কেরাম এই কাহিনীটিকে জাল হাসিদ বা বানানো হাদিস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এজন্য আপনার থেকে সূত্র জানতে চেয়ে ছিলুম। ধন্যবাদ।

মোঃ মাসুম সরকার আযহারী লিখেছেন : আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। ঘটনাটি একটি জাল হাদিসে এসেছে। তাই মানুষকে ইসলামের শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য এ ধরণের জাল হাদিস বর্ণনা করা ইসলামে জায়েজ নেই।
321858
২২ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৬

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File