শিশুকে বিচারিক দায়িত্ব দিন

লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর সালেহ মতীন ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০২:৫৭:৪৬ দুপুর



শিশুকে আদর্শবান করে গড়ে তুলতে তাকে সাথে নিয়ে খাওয়া-দাওয়া, পারিবারিক পরামর্শ করা ও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করার প্রাক্টিস হওয়া জরুরি। অতঃপর শিশুর বয়স ৫/৬ বছরে গড়ালেই পরিকল্পিতভাবে তাকে সংসারের বিভিন্ন বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব দেয়ার পাশাপাশি তাকে বিচারিক দায়িত্বও দিতে হবে। এটা তার মানসিক বিকাশ ও মনস্তাত্ত্বিক পূর্ণতায় সহায়তা করবে। তার সিদ্ধান্ত ও বিচারকে গুরুত্ব দিন এবং তার প্রশংসা করুন। আর নিরবে আপনি নির্মোহভাবে পর্যবেক্ষণ করুন যে, তার বিচার ন্যায্যতার মানদন্ডে উত্তীর্ণ হচ্ছে কিনা। না হয়ে থাকলে এ ধরনের ছোট-খাট পারিবারিক বিচারের দৃষ্টান্ত তাকে দেখিয়ে বুঝাতে চেষ্টা করুন এবং তাকে এই বার্তা বদ্ধমূল করুন যে, একজন ন্যায়বিচারক অনেক মর্যাদাবান এবং আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয়।

আমাদের সমাজে বর্তামানে ন্যায়বিচারকের খুবই অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। দল, মত নির্বিশেষে লোভ মোহ সবকিছুর উধ্র্ েথেকে ইনসাফভিত্তিক ন্যায়বিচারক হিসাবে শিশুদের গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা জরুরি। আমরা সন্তানদের ভবিষ্যত লক্ষ্য নির্ধারণ করি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট, ব্যাংকার ইত্যাদি বানাব বলে। কেউ সাধারণত সন্তানকে ন্যায়বিচারক হিসেবে গড়ে তুলব এ প্রতিজ্ঞা করেন না। অথচ ন্যায়বিচারকের অভাব প্রকট হলে সমাজ-সভ্যতা ধ্বংস হওয়া অনিবার্য হয়ে পড়বে। সমাজের প্রয়োজন অনুযায়ীই সন্তানের ভবিষ্যত নির্ধারণের বিষয়টি গুরুত্ব পাওয়া উচিত বলে মনে করি। প্রথমত সৎ ও যোগ্য মানুষ হিসেবে এবং তারপর প্রয়োজনীয় পেশা ধারনের প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন।

আমাদের পুত্র রাতিব রিদওয়ান দুদিন আগে একটি বিচারের সুন্দর রায় দিয়েছে। তার মা ছোট এক কৌটা খেজুরের আচার নিয়ে এসে আমাকে বলল, “দেখো খেজুরেরও আচার হয়, দারুন না ?” তার শ্বশুর বাড়ির এলাকা খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত হওয়ায় এ আচারের প্রতি তার একটু ভিন্ন মাত্রার ভক্তি ও আগ্রহ লক্ষ্য করছিলাম।

আচারটি আমার কাছে এতই ভালো লাগল যে, ওর অজান্তে একবেলার মধ্যেই কৌটার প্রায় ৯০% আচার সাবাড় করে ফেলি। সন্ধ্যায় আচারওয়ালী কৌটা হাতে নিয়ে বিষ্ময়ের সাথে বলল, “হায় হায় ! কৌটা খালি করে ফেলেছ ?” তার উঁচু মাত্রার বিস্ময়ে রাতিবের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় এবং সে পড়ার টেবিল থেকে উঠে গিয়ে মাকে বলে “কী হয়েছে মা ?” মা এবার আচার ভক্ষণকারীর বিরুদ্ধে পুত্রের কাছে বিচার দেয়, “দেখ, তোমার বাবা আচার সব শেষ করে ফেলেছে, বলতো এখন কী করা উচিত?” সাথে সাথে নয়া বিচারক বলল,“হ্যাঁ হ্যাঁ এ আচার বাবাই খেয়েছে আমি জানি।” আসামী বাবা তখন রান্না ঘর থেকে মৃদুকণ্ঠে সবিনয়ে জানতে চাইল, “তুমি কীভাবে নিশ্চিত হলে বাবা ?” পুত্র জবাব দিল- আমার ছোট চামচে তখন আচার লেগে থাকতে দেখেছিলাম- তার মানে তুমিই ঐটা দিয়েই খেয়েছ (আসলেই আমি সেই ছোট্ট চামচ দিয়েই আচার খেয়েছিলাম)। অর্থাৎ অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে, এবার রায়ের পালা।

একটুখানি থেমে বিচারক বাদীকে অর্থাৎ তার মাকে বলছে, “তুমি আরেক কৌটা আচার নিয়ে আসবে এবং সেটা তুমি একা খাবে, বাবাকে দিবে না।” আলহামদুলিল্লাহ রায়টা আমার খুব পছন্দ হলো। পরিকল্পিতভাবে ওর ওপর বিচারের দায়িত্ব দেয়া হয়নি, ঘটনাচক্রে অর্পিত হয়েছিল। কিন্তু বিচারের পর আমার উপলব্ধি হয়- বুদ্ধি বিকাশ ও ন্যায্যতা ধারণের লক্ষ্যে শিশুকে এ প্রকারের দায়িত্ব দেয়া প্রয়োজন। সঠিক ও উপযুক্ত পরিকল্পনা না থাকলে শিশুকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলার স্বপ্ন পূরণ নাও হতে পারে। এ সমাজ আমাদের সবার, এ সমাজের সঙ্কট ও চাহিদার কথা বিবেচনা করে আমাদের পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।

বিষয়: বিবিধ

১০৮০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

359069
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১০:৩৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎতার পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমাদের দেশে বিশেষ করে মা এরা শিশুদের ভাল চিন্তা করতে এতই স্বৈরাচারি হয়ে যাই যে দুধে কতটুক চিনি দেওয়া হবে সেই বিষয়েও সন্তান এর মতামত নেওয়া কে গুনাহ বলে মনে করেন। অথচ শিশু হলেও তার ভিন্ন রুচি ও স্বাদ থাকা স্বাভাবিক। এভাবেই কিন্তু আমরা জাতিগতভাবে দাস মনোবৃত্তির অধিকারি হয়ে উঠছি।
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০২:৫৭
297854
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : সবুজ ভাই, মন্তব্যের জন্য অাপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
359081
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১১:৪০
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : আপনি কি আইবিটিআর এর সালেহ মতিন??
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০২:৫৬
297853
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : আপনি আইবিটিআরএকে কীভাবে চিনেন ?
359304
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ১২:৫২
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : অনেক সুন্দর পর্যালোচনা, আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। রাতিব মনির বিচার ন্যায্য হয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস। Good Luck
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ১০:৪৮
298035
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : বাহার ভাই আপনাকে মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
359327
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৪৭
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ছোট্ট ঘটনা অথচ আছে অনেক শিক্ষা-তাই শিক্ষণীয় এই পোস্টটির জন্য ধন্যবাদ।
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ১০:৪৮
298036
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : মাছুম ভাই মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File