হাজি সাহেবদের হজ্জ পালনে সংক্ষিপ্ত বিবরন জেনে নিন।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২১ আগস্ট, ২০১৪, ০২:৫৯:২৩ দুপুর

প্রত্যেক জীবই মরণশীল। এই কথাটি সকল মানুষের জন্যও প্রযোজ্য। পৃথিবীতে কিছু মানুষ রয়েছেন বা থাকেন যারা কখনও মিথ্যা কথা বলেন না বরং যতটুকু সম্ভব অন্য মানুষের উপকার করেন।আমাদের ধারণা যারা পরকালে বেহেশতবাসী হতে চান তাঁরা জীবনে অন্তত একবার আল্লাহর তৈরী পৃথিবীর প্রথম ঘর কাবা শরীফে যান। সেখানে গিয়ে তারা কাবা ঘর তওয়াফ, হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ, চুমু করে বলেন- ‘‘হে আল্লাহ আপনি একমাত্র ক্ষমাশীল এবং আমার বা আমাদের সকল প্রকার দোষত্রুটি ক্ষমা করুন এবং আমার বা আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবন অত্যন্ত কার্যকর ও ফলপ্রসূ করে নিন। সমস্ত প্রশংসা শুধু আপনারই জন্য। আমার বা আমাদের কোন দোষত্রুটি থাকলে তা আপনি নিজ গুণে ক্ষমা করুন। আমরা সবাই আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থী ও আত্মসমর্পিত। হজব্রত পালনকারী সবাই মদিনাতেও যান এবং হযরত মুহাম্মদ (স.) এর কবর জিয়ারত করেন। সেখানে কয়েক দিন থেকে রসূল (স.) এর সাফায়ত ও মহান আল্লাহর করুণা প্রাপ্তির জন্য নামাজ পড়েন, প্রাণঢালা প্রার্থনা ও মোনাজাত করেন। এ বছর হজযাত্রীদের নিয়ে ২৭ আগস্ট হজ ফ্লাইট শুরু হচ্ছে। এই ফ্লাইট চলবে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। আর ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ৮ অক্টোবর থেকে। গত ৬ আগস্ট বুধবার সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে হজ ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে ধর্মসচিব চৌধুরী মোঃ বাবুল হাসান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এবার মোট ৯৮ হাজার ৭৬২ জন হজে যাচ্ছেন। এর মধ্যে এক হাজার ৬০০ জন যাবেন সরকারি ব্যবস্থাপনায়। অন্যরা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাবেন। সচিব বলেন, ‘এবার সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ব্যবস্থাপনায় কোনো ত্রুটি নেই। যেসব সমস্যা ছিল, তা সমাধান করা হয়েছে। আশা করছি, সফলভাবেই হজ কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।’

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে হজ অনুষ্ঠিত হবে ৪ অক্টোবর। বিমান বা অন্যান্য এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট শিডিউলের কারণে গড়ে ১৫ দিন আগে মক্কা গিয়ে হজ পালনের ৭ থেকে ১০ দিন পর দেশে ফিরে আসতে হয়। যেহেতু হজের অনেক দিন আগেই আপনাকে সৌদি আরব যেতে হবে, তাই হজে যাওয়ার আগেই যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে নিতে হবে

সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ সম্পাদন : আপনি সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে চাইলে নিম্নে বর্ণিত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করুন- ২৯ মের মধ্যে আপনি নিশ্চয় সমুদয় টাকা যে কোনো অনুমোদিত ব্যাংকে একত্রে জমা দিয়েছেন। এবার সরকার কর্তৃক সরবরাহকৃত নির্ধারিত ফরম পূরণ করে তা ঘোষিত তারিখের মধ্যে জমাকৃত টাকার রসিদসহ জেলা প্রশাসকের অফিসে জমা দেবেন। জমা দেয়া টাকার রসিদ ও অন্যান্য কাগজপত্র দেখিয়ে অফিস কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হয়ে হজ ক্যাম্প থেকে বিমানের টিকিট সংগ্রহ করবেন। আপনার জমা দেয়া টাকা যেসব খাতে ব্যয় করা হয় তা নিম্নরূপ-১. বিমান ভাড়া। ২. এম্বারকেশন ফি। ৩. ভ্রমণ কর। ৪. ইন্স্যুরেন্স ও সারচার্জ (ব্যাজ কার্ড, পুস্তিকা, কবজি-বেল্ট, আইটি সার্ভিস ইত্যাদি)। ৫. মুয়াল্লিম ফি। ৬. মক্কা ও মদিনা শরিফের বাড়িভাড়া। ৭. সৌদি আরবে অবস্থানকালীন খাওয়া-দাওয়া ও কোরবানির খরচ, যা হাজীদের বাংলাদেশেই দিয়ে দেয়া হয়।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ সম্পাদন : বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন ক্যাটাগরি রয়েছে। আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী ক্যাটাগরি নির্বাচন করেছেন। সরকার অনুমোদিত যেসব এজেন্সির সুনাম রয়েছে সেগুলোর মধ্যে কোনো একটি বেছে নিয়েছেন। তাদের নির্ধারিত টাকা চুক্তিমতো পরিশোধ করবেন। টাকা পরিশোধ করে পাকা রসিদ নিয়ে নেবেন। কী কী সুবিধা আপনি তাদের কাছ থেকে পাবেন তা নিশ্চিতভাবে জেনে নিন। সরকার কর্তৃক অনুমোদিত নয়, এমন এজেন্সিকে কখনও টাকা দেবেন না। এজেন্সিটি সরকার অনুমোদিত কিনা জেনে নিন।

হজযাত্রীদের করণীয় : স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও মেনিনজাইটিস-ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধক টিকা বাধ্যতামূলক। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকা নিয়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে। জেলা পর্যায়েও হাজী ক্যাম্পের সুষ্ঠু ব্যবস্থা রয়েছে। মেডিকেল সার্টিফিকেট ছাড়া কেউ হজে যেতে পারবেন না। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনেচ্ছুদের জন্য প্রথম পর্যায়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়গুলোতে সুবিধামতো সময়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে হজ যাত্রার তিন দিন আগে হজ ক্যাম্পে অবস্থানকালে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর কোনো কোনোটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে সৌদি আরব গমনের আগেই এক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। এসব প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে মনোযোগের সঙ্গে অংশগ্রহণ করা উচিত। এছাড়াও কোনো কোনো বিজ্ঞ আলেম অথবা মসজিদ কর্তৃপক্ষ হজ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। সেখানেও অংশগ্রহণ করা উচিত।

সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীরা হজ অফিস থেকে পাঠানো অনুমতিপত্রে নির্ধারিত যে তারিখ থাকবে সেদিন পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে হজ ক্যাম্পে গিয়ে রিপোর্ট করবেন। বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীরা এজেন্সির পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। হজ ক্যাম্পে রিপোর্ট করার সময় সরকারি ব্যবস্থাপনার হাজীরা পাসপোর্ট, ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার ডুপ্লিকেট রসিদগুলো, মেডিকেল সার্টিফিকেট ও অন্যান্য কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট এজেন্সির পরামর্শ অনুযায়ী সঙ্গে আনবেন। হজ ক্যাম্প ডরমেটরিতে শুধু হজযাত্রীদের প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। তাই আত্মীয়স্বজন সঙ্গে আনা উচিত নয়। তবে নিচতলায় আত্মীয়স্বজন তাদের হজযাত্রীকে নানাবিধ দাফতরিক কাজে সহায়তা দিতে পারেন। হজ ক্যাম্পে পান খাওয়া বা ধূমপান করা নিষিদ্ধ। প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহের জন্য রয়েছে তিনটি ক্যান্টিন, যা রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। তাই বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসার কোনো প্রয়োজন নেই। টিকিট, পাসপোর্ট, বৈদেশিক মুদ্রা ও অন্যান্য কাগজপত্র খুবই যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করবেন। এগুলো হারিয়ে গেলে হজে যাওয়া সম্ভব হবে না। মালামাল বহনের জন্য যে লাগেজ নেবেন তার গায়ে নাম, পাসপোর্ট নং ও ঠিকানা লিখে নেবেন। কমপক্ষে ২ সেট ইহরামের কাপড়, ২ সেট পায়জামা-পাঞ্জাবি, ২টি লুঙ্গি, ২টি টুপি, ২টি গেঞ্জি, একটি তোয়ালে, ২টি গামছা সঙ্গে নেবেন। শীত মৌসুম হলে দু-একটি গরম কাপড় বিশেষ করে চাদর সঙ্গে নেবেন। মহিলা হজযাত্রীদের জন্য উত্তম হচ্ছে সালোয়ার-কামিজ নেয়া। ছুরি, কাঁচি, সুই ইত্যাদি ধারালো জিনিস হাতব্যাগে বা সঙ্গে নেয়া নিষেধ। তবে লাগেজে নেয়া যাবে। আপনার কোনো অসুখ থেকে থাকলে ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী পর্যাপ্ত ওষুধ সঙ্গে নেবেন। তবে ব্যবস্থাপত্র অবশ্যই সঙ্গে রাখবেন। অন্যথায় জেদ্দা এয়ারপোর্টে সমস্যায় পড়তে পারেন। মনে রাখবেন, বাংলাদেশ হজ মিশন জটিল কোনো রোগের চিকিৎসা দেয় না। সৌদি আরবে ওষুধের দাম প্রচুর। আমাদের হাজি সাহেবরা অনেকে এক মাস আগেই এসে পড়েন।এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে আপনার খাওয়া দাওয়া খেতে হবে স্বাস্হ সম্মত।অল্প খেয়ে স্বাস্হকে ঠিক রেখে যেন হজ্জের প্রস্তুতি নেয়া যায় সেটাই উত্তম।ঝাল জাতীয় খাবার না খাওয়াই উত্তম।অনেকে আবার এসেই অনেক ওমরাহ করে অসুস্হ হয়ে পড়েন।রাসূল সা: এই সব বিদাআতি কাজ করেন নি।তিনি চারবারে চারটি ওমরাহ করেছেন। তবে তওয়াফ করতে পারেন স্বাস্হকে ঠিক রেখে।অনেকে দূর থেকে হেঁটে এসে নামাজ পড়েন ও ক্লান্ত হয়ে পড়েন।এক্ষেত্রে পাশের মসজিদে নামাজ পড়বেন ও মাঝে মাঝে হারামে নামাজ পড়তে আসবেন।

আপনি যদি প্রথমে মক্কা প্রবেশের ইচ্ছা করেন তাহলে বিমানের শিডিউলের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে বিমানে ওঠার আগেই ইহরাম বাঁধার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নেবেন। ইহরামের কাপড় ব্যাগের ভেতর না দিয়ে তা পরে নেবেন। শুধু ইহরামের নিয়তটা বাকি রাখবেন।সুন্নত হচ্ছে মিকাতে পৌঁছে ইহরাম বাঁধা বা ইহরামের নিয়ত করা। বিমান মিকাত অতিক্রম করার সময় বলে দেয়া হয়, তখন নিয়ত করে নেবেন। আপনি যদি প্রথমে মসজিদে নববী জিয়ারতের নিয়ত করে থাকেন এবং নিশ্চিত হন, প্রথমেই আপনি মদিনায় যেতে পারবেন, তাহলে এ সময় ইহরাম বাঁধবেন না। কেননা মদিনা থেকে মক্কায় আসার পথে মদিনাবাসীর যে মিকাত পড়বে, সেখান থেকে ইহরাম বাঁধবেন।

হজ্জ আরবি শব্দ অর্থ হলো উদ্দেশ্য করা।শরিয়তের পরিভাষায় হজ্জ বলা হয় বায়তুল্লাহর উদ্দেশ্যে বিশেষ সময়ে বিশেষ কিছু কাজের জন্য উপস্হিত হওয়া।এই উদ্দেশ্যের সাথে মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধা, ক্কাবায় তাওয়াফ,সাফা মারওয়ায় সাঈ,মিনায় অবস্হান,আরাফাতে অবস্হান,মুজদালিফায় অবস্হান।মহান আল্লাহ সূরা বাক্কারার ১৯৭ আয়াতে বলেন,হজ হয় কয়েকটি সুবিখ্যাত মাসে,কাজেই যে কেউ এই সময় হজ করার সংকল্প করে তার জন্য এ সবের মধ্যে স্ত্রী গমন বা দুষ্টামি থাকবেনা বা হজের মধ্যে তর্কাতর্কি চলবেনা।আর ভাল যা কিছু তোমরা কর আল্লাহ তা জানেন।আর পাথেয় সংগ্রহ কর,নি:সন্দেহে শ্রেষ্ঠ পাথেয় হচ্ছে ধর্মপরায়নতা।অতএব আমাকে ভয়শ্রদ্ধা কর হে! জ্গানীরা।'হজের মাসেই হজের নিয়্যাত করতে হবে।শাওয়াল ,জিলক্কাদ ও জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ এই দুই মাস ১০ দিনের মধ্যেই হজের নিয়্যাত করতে হবে।এর আগে বা পরে করলে হজ কবুল হবে না।"লাব্বাইক হজ্জান " বলে নিয়্যাত করতে হবে।আর ওমরাহ যে কোন সময় করা যেতে পারে।আমাদের দেশে মাযহাবকেন্দ্রিক কিতাবে সূন্নত বিরোধী কথা লিখা আছে।বছরে কয়েকদিন নাকি ওমরাহ করা যাবে না।এ ব্যাপারে তাদের কোন দলিল নেই।অনেক হাজি সাহেবানরা দেশীয় এই সব বই পুস্তক খরিদ করেন।আমি অনুরোধ করবো যারা হজ্জে আসবেন তারা সূরা বাক্কারার ১৮৯ - ২০৩ এবং সূরা হজ্জ ও তার সাথে ছহি বোখারি হজের চাপ্টার পড়ে নিবেন।হজ ইসলামের ৫ম রোকন।রাসূল সা: বলেছেন ইসলামের খুঁটি হলো ৫টি।সাক্ষ্যপ্রদান করা আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মাবুদ নেই এবং হযরত মোহাম্মদ সা: আল্লাহর রাসূল।নামাজ কায়েম করা,যাকাত আদায় করা,রমজানের রোজা রাখা ও বায়তুল্লাহর হজ করা।এখানে মুসলিম ভাই বোনদের একটি কথা স্পষ্ট করে স্মরন রাখা দরকার যে আল্লাহ ও রাসূল সা: এর সাক্ষ্য দেয়ার পর স্বর্ত হলো দিনে রাতে ৫ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম করা।যে নামাজ কায়েম করলো না সে কুফরের মধ্যে অবস্হান করলো এবং তার ভাল কোন কাজ আর হিসাবে আসবে না।অনেকে নামাজ কায়েম করে না কিন্তু যাকাত দেয় ,রোজা রাখে ও হজ করে সেই ভাইদের বলছি আখেরাতে কোন লাভ হবে না।রোজ ক্কেয়ামতে প্রথম হিসাব হবে নামাজের।যদি নামাজে উত্তীর্ন হয় তবে বাকি সব সৎ আমল এর সাথে যোগ হবে।আল্লাহ কারো সৎ কর্মকে নষ্ট করেন না বেনামাজিদের সৎ কর্মের ফল আল্লাহ দুনিয়াতে দিয়ে দিবেন।সেজন্য দেখবেন বেনামাজি ,কাফের মুশরিক তারা অনেক ঐশ্বর্যের মালিক,তারা দুনিয়াতে জনকল্যানমুলক কিছু ভাল কাজও করে এগুলো তাদের এ দুনিয়ার প্রতিদান।কিন্তু কোন ঈমানদারকে ভাবলে চলবে না যে তারা আল্লাহর খাটি বান্দাহ।আল্লাহ পাক শ্রেষ্ঠ বিচারক তিনি তার কোন বান্দাহকে ঠকান না।কিন্তু আখেরাতে তারা তাদের বদ আমলের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সূরা আল ইমরানের ৯৬/৯৭ আয়াতে আল্লাহ বলেন,নি:সন্দেহে মানবজাতির জন্য প্রথম যে উপাসনালয় স্হাপন করা হয়েছিল তা হলো বাক্কাতে-অশেষ কল্যানময় আর সব মানব গোষ্ঠীর জন্য পথপ্রদর্শক।এতে আছে স্পষ্ট নিদর্শনাবলী-মাক্কামে ইব্রাহিম আর যে কেউ এখানে প্রবেশ করবে সে হচ্ছে নিরাপদ।আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এই গৃহে হজ করা মানব গোষ্ঠীর জন্য আবশ্যক যারই সেখানকার পাথেয় অর্জনের ক্ষমতা আছে।আর যে অবিশ্বাস পোষন করে তাহলে নি:সন্দেহে আল্লাহ সমস্ত সৃষ্ট জগতের থেকে স্বয়ংসম্পুর্ন।' ছাবিল সম্পর্কে ইবনে মাজায় একটি হাদিস রয়েছে আর তা হলো,রাস্তার খরচ এবং সওয়ারি।' আজকালকার জীবনে যে যেখানে আছে সেখান থেকে বায়তুল্লাহ এসে হজ্জের কাজ সমাপ্ত করে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত যেটুকু খরচ হয় সে সম্বল থাকলে সেই ব্যাক্তিকে হজ্জ করতে হবে।আর এর সাথে আর একটি জিনিস হলো পরিবারের ভরন পোষন দিয়ে যেতে হবে।হজ্জের গুরুত্ব দিতে গিয়ে ওমর রা: তিনি তার খেলাফতকালে ঘোষনা করলেন,আমার ইচ্ছা হচ্ছে বিভিন্ন শহর ও গ্রামে আমার কিছু প্রতিনিধি ছেড়ে দিতে চাই এবং তারা গিয়ে পর্যবেক্ষন করে দেখবে কার হজ্জ করার শক্তি রয়েছে অথচ তারা হজ্জ করেনি।কারন এদের উপর আমি জিজিয়া (টেক্ক্স) লাগিয়ে দিতে চাই।যারা হজ্জের সামর্থ থেকেও হজ্জ করলো না তারা মুসলিম নয়,মুসলিম নয়।' আলী রা: বলেন যে ব্যাক্তির শক্তি সামর্থ রয়েছে অথচ হজ্জ করলো না তাহলে সে ইহুদি হয়ে মরুক বা খৃষ্টান হয়ে মরুক।সৌদি আরবে এসে এমন অসংখ্য লোক রয়েছে যাদের উপর হজ্জ ফরয হয়েছে অথচ তারা হজ্জ করেনি এমনকি ১০/২০ বছর হয়েছে তাও করেনি।দুর্ভাগ্য তাদের আল্লাহই ভাল জানেন কি পরিনতি ভোগ করবে আখেরাতে।আবার বাংলাভাষাভাষি অনেককে হজ্জের কথা জিজ্গেস করলে বলে ওমরাহ হজ্জ করেছি।হজ্জ ও ওমরাহ দুটি আলাদা ইবাদত।হজ্জ ফরয হওয়ার পর তারাতাড়ি করতে হবে।আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রা: থেকে একটি হাদিস বর্নিত হয়েছে নবী করিম সা বলেছেন,তোমরা হজ্জের জন্য তাড়াতাড়ি কর।কারন তোমাদের কেউ জানে না যে আগামিতে তার কি হবে।' এই আগামি বলতে মানুষের মৃত্যু হয়ে যেতে পারে,আর্থিক ক্ষমতা না থাকতে পারে,অসুস্হ হতে পারে ইত্যাদি।মুসলিম শরিফের হাদিসে নবী সা: বলেন,হে মানব সকল! মহান আল্লাহ তোমাদের উপর হজ্জ ফরয করেছেন সুতরাং হজ্জ কর।'নবী সা: দশম হিজরিতে হজ্জ করেছেন।যে বছর হজ্জ ফরয হয় সে বছর মুশরিকরা সমবেত হয়েছিল মক্কার আনাছে কানাছে।আল্লাহ পাক ছাইছিলেন যে রাসূল সা: যখন হজ্জ করবেন তখন কোন মুশরিক থাকবে না বায়তুল্লাহর আশে পাশে।সূরা তওবায় আল্লাহ আয়াত নাজিল করলেন।যার সাথে শির্ক আছে সে নাপাক।সুতরাং এসব নাপাকি অন্তর হজ্জের মাঠে থাকবেনা।যাদের অন্তরে নাপাকি আছে তাদের ছেয়ে বাহ্যিক নাপাকি অনেক ভাল।কারন যার কাপড়ে নাপাকি লেগে থাকে আর ইবাদত করে সে দুর্ভাগা কিন্তু সে কাফের নয়।কিন্তু যে ব্যাক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যকে সেজদা করলো,অন্যকে ফরিয়াদ করলো,অন্যের কাছে দোয়া করলো,অন্যের জন্য খাশি মোরগ জবাই করলো,আল্লাহ ছাড়া অন্যকে বললো ইয়া গাউছুল আজম মদদ,হে গরিব নেওয়াজ আমাকে সন্তান দান কর সে ব্যাক্তি বড় মুশরেক।আল্লাহ এদের জন্য জান্নাত হারাম করেছেন।নবী সা: আবু বকর রা:কে হজ্জের নেতৃত্ব দিলেন এবং আরবদের নিয়ম ছিল যে কোন ঘোষনা যদি কোন দায়িত্বশীলের নিকট থেকে হয় তাহলে তার কোন নিকট আত্মীয়কে এই ঘোষনা পড়ার জন্য যেতে হবে।নবী সা: সূরা তওবার আয়াতগুলো ঘোষনা করে শুনিয়ে দেয়ার জন্য বাছাই করলেন আলি ইবনে আবুতালিবকে আর সূরা তওবার আয়াত গুলো দিয়ে বললেন হজ্জের মৌসুমে মক্কায় ,মিনায়,আরাফাতে,মুজদালিফায়,যেখানে যেখানে জনসমাবেশ সেখানে গিয়ে শুনিয়ে দিবে মুশরিক থেকে আল্লাহ ও তার রাসূল সম্পর্ক ছেদের ঘোষনা করেছেন।এই বছরের পর কোন মুশরিক যেন বায়তুল্লাহ হারামে প্রবেশ না করে।আর কোন ব্যাক্তি যেন উলংগ হয়ে বায়তুল্লাহ তওয়াফ না করে। আগের দিনে এসব মুশরিকরা উলংগ হয়ে তওয়াফ করতো।আর এসব উলংগ পির রয়েছে ভারত বাংলাদেশে। নবম হিজরিতে এ ঘোষনা দিলেন ও দশম হিজরিতে নবী সা: হজ্জ করেন।হজ্জ জীবনে একবার ফরয।বাকি জীবনে হজ্জ করলে তা নফল হিসেবে পরিগনিত হবে আর ফরয হজ্জ না করলে জিজ্গাসিত হবে।

নবী সা: বলেছেন,এক ওমরাহ থেকে আর এক ওমরাহের মাঝে যে ছোট গুনাহগুলো হবে তা আল্লাহ মাপ করে দিবেন কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হতে হবে।এখানে হাজি সাহেবদের জন্য একটি বিষয় জরুরি তা হলো এদিক সেদিক বেশি না তাকানো।কারন অনেক মা বোন আছেন যারা তাদের চেহারা খুলে রাখেন,বেপর্দায় থাকেন এবং তাদের শরিয়ত ও পর্দা সম্পর্কে তেমন ধারনা নেই সম্ভব হলে তাদের শরিয়তের ব্যাপারগুলো জানিয়ে দেয়া উচিত।ইহরামের অবস্হায় সব ঢেকে রাখা জরুরি যাতে অন্যের দৃষ্টি আকর্ষন না হয়।অনেক হাজি সাহেব অজ্গতার কারনে হুদুদে বসে ঝগড়া বিবাদ বা পাহেশা কথা ও বলেন যা গুনাহের কাজ।বড় গুনাহগুলো ও মাপ হবে তবে তওবা করতে হবে।আর মকবুল(আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য) হজ্জের প্রতিদান হলো জান্নাত।একজন মু'মিনের প্রত্যকেটি সৎ আমল করার অর্থ হলো জান্নাত লাভের আকাংখ্যা।হজ্জ করার পরে একজন হাজ্জি বুঝতে পারবেন তার পরিবর্তন হয়েছে কিনা।আগে যে পাপের সাথে জড়িত ছিলেন সেগুলো জীবন থেকে আপসারিত হচ্ছে কিনা।না আগের অবস্হানেই আছে।এই ব্যারোমিটারে হাজি সাহেবকে প্রতিনিয়ত পরিমাপ করতে হবে।অনেক হাজি সাহেবদের এখনো দেখছি ৫ ওয়াক্ত নামাজের ইত্তেবা করেন না অথচ হজ্জ করেছেন ৫/৬ বার।রাত টায় যদি নিজের কাজের দরকার হয় জাগতে পারে কিন্তু ফযরের নামাজের সময় জাগতে পারে না।আবার অনেকে ঘরেই নামাজ পড়েন,গীবত করেন,পরের জমির সীমানা অতিক্রম করেন,অফিসে ঘুষ দুর্নীতিতে জড়িত থাকেন।ওমরাহ করে এ্যায়ারপোর্টে লাউন্জে বসে আছেন আর সিগারেট ফুকছেন বা টিকেট কাউন্টারে গিয়ে লাইন ভংগ করছেন।এ কথাগুলো স্মরন করিয়ে দেয়ার অর্থ হলো-এত কষ্ট করে হজ্জ বা ওমরাহ করতে এসে তা থেকে কোন কল্যান নিতে তারা সমর্থ হলো না।এ রকম হজ্জ বা ওমরাহ করে কোন লাভ নেই।আর কেউ যদি হজ্জ বা ওমরাহ করে এসে একেবারে জীবনকে পরিবর্তন করে ফেললো অর্থাৎ আগে যে ফাসেকি কাজগুলো করতো তা ছেড়ে দিল।হজ্জের নেয়ামত গুলোর কথা মানুষকে প্রচার করলো,হারাম হালাল বেচে চললো তাহলে বুঝতে হবে তার পরিবর্তন হয়েছে।রাসূল সা: বলেছেন,যে ব্যাক্তি হজ্জে গিয়ে কোন যৌন সম্পর্কীয় গুনাহ করলোনা ,কোন ফাসেকি করলোনা,ঝগড়া করলোনা সেই ব্যাক্তি তার গুনাহ থেকে এমনভাবে মুক্ত হয়ে আসলো যেদিন তার মা তাকে ভূমিষ্ট করেছে।' হজ্জের কিছু আদব রয়েছে।পরিবার পরিজনকে কিছু অছিয়ত করা। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো,হারাম হালালের ব্যপারগুলো,সামাজিক বৈধ মেলামেশা ও সর্বোপরি আল্লাহ ভীরুতার আছিয়ত।যদি কারো কিছু দেয়ার থাকে বা কোন দায় দেনা থাকে তাহলে পরিশোধ করে দেয়া বা ফিরে না আসলে নিজের সম্পদ থেকে তার ব্যাবস্হা করা।আর যে কাজ গুলো সমাধান হয় নি তা লিখে যাওয়া।কার কাছে কত পাওনা বা দেনা ইত্যাদি সাক্ষীর মাধ্যমে জানিয়ে রাখা।হালাল টাকা পয়সা নিয়ে হজ্জে যেতে হবে।কোন অবস্হায় যেন জীবনের মধ্যে হারাম পয়সা না আসে কারন হারাম খেয়ে পরে কোন ইবাদত করলে তা আল্লাহ কবুল করবেন না।প্রবাসী যুবক এমনকি বয়স্ক অনেকে যারা হজ্জে যায় তাদের হজ্জের মাঠে দেখে মনে হয় ৫/৬দিনে পাগলের মত হয়ে যায়।এখানে ওখানে ঘুরতে থাকে,দলবেঁধে বসে কথা বলতে থাকে,টেলিফোন করতে থাকে,আরাফাতে পাহাড়ে ঘুরতে থাকে বা দুপুরে যে সময় দোয়া কবুল হওয়ার সময় ঘুমের ঘোরে থাকে।কারন হলো হজ্জের আগের দিন গুলো তাদের ছিল মেসে আড্ডা।টিভি ,ভিডিওতে অশ্লিল ছবি দেখা,তাস খেলা,থাইলেন্ডি জুয়া খেলা ইত্যাদি।শরিয়তের বিধি বিধান জানা নেই সেজন্য ওখানে গিয়ে আর মন বসে না।আর হজ্জ থেকে এসেই আগের অবস্হানে জীবনকে চালিত করে।এরাই তাদের জীবন বিপন্ন।

হজের প্রকার : হজ তিন প্রকার, যথা—

এক. হজে ইফরাদ : অর্থাত্ হজের সফর শুরু করার সময় মিকাত থেকে যদি শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বাঁধে এবং হজের সঙ্গে ওমরাহ আদায় না করে, তাহলে এ প্রকার হজকে ‘হজে ইফরাদ’ বলা হয়। এ প্রকার হজ পালনকারীকে ‘মুফরিদ’ বলে।

দুই. হজে কিরান : যদি একইসঙ্গে হজ এবং ওমরাহর নিয়ত করে উভয়টিই পালন করে এবং হজ ও ওমরাহর জন্য একই ইহরাম বাঁধে, তাহলে এ ধরনের হজকে ‘হজে কিরান’ বলা হয়। এ প্রকার হজ পালনকারীকে ‘কারিন’ বলে।

তিন. হজে তামাত্তু : অর্থাত্ হজের সঙ্গে ওমরাহকে এভাবে মেলানো যে ‘মিকাত’ থেকে শুধু ওমরাহর ইহরাম বাঁধা। এই ইহরামে মক্কায় পৌঁছে ওমরাহ পালনের পর ইহরাম ভেঙে ৮ জিলহজ সেখান থেকেই হজের ইহরাম বেঁধে হজ পালন করাকে ‘হজে তামাত্তু’ বলে। এ প্রকারের হজ পালনকারীকে ‘মুতামাত্তি’ বলে।হজ্জে তামাত্তু হলো উত্তম হজ্জ কারন জাহেলি যুগে তারা তামাত্তু হজ্জ করতো না কারন তারা মনে করতো হজ্জের মৌসুমে যাব আবার হালাল হয়ে সত্রীসম্ভোগ করবো এগুলো হলো নোংরা কাজ।আজো অনেক লোক শরিয়ত সম্পর্কে না জানার কারনে এরকম প্রশ্ন করে থাকে।হজ্জ শেষ হয়ে গেছে তার পরও বলে এখন কি আমি সত্রীর সাথে থাকতে পারবো।জাহেলি যুগে এ অবস্হাকে তারা চরম অন্যায় কাজ মনে করতো।কিন্তু উলন্গ হয়ে তাওয়াফ করাকে অন্যায় মনে করতো না।

৫টি মিক্কাত রয়েছে।পূর্বদিক থেকে যারা আসবে তারা ইয়ালামলাম থেকে ইহরাম বাঁধবে।আমাদের ভারত পাকিস্তানের লোকরা পূর্বদিক থেকে আসে সেজন্য ইয়ালামলাম থেকে ইহরাম বাঁধবে। এখনতো সব হাজি সাহেবরা বিমনেই আসেন সেজন্য বিমান থেকেই আগে ইহরামের ঘোষনা দিয়ে দিবে।যারা তামাত্তুর নিয়াতে এসেছে তারা প্রথমে ওমরাহ করে হালাল হয়ে যাবে । ওমরার কাজ তিনটি।ইহরাম বাঁধা,বায়তুল্লাহর তওয়াফ করা এবং মাথা মুন্ডানো বা পুরো মাথার চুল ছাঁটা।

ইহরাম বাঁধার নিয়ম : হজ ও ওমরাহর আমলগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম আমল হলো ইহরাম বাঁধা। ইহরাম বাঁধার নিয়ম হলো—হজ অথবা ওমরাহর নিয়তে সেলাইকৃত কাপড় খুলে সেলাইবিহীন দুটি চাদর পরিধান করে ‘তালবিয়া’ পাঠ করা। শরিয়তের পরিভাষায় একেই ‘ইহরাম’ বলা হয়। ইহরাম বাঁধার উত্তম পদ্ধতি হলো যখন ইহরাম বাঁধার ইচ্ছা করবেন, তখন প্রথমে গোসল অথবা অজু করবে, নখ কাটবে, বগল ও নাভির নিচের চুল পরিষ্কার করবেন এবং মাথা ও দাড়ি চিরুনি করে সব বিষয়ে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করবেন। ইহরামের জন্য দুটি নতুন অথবা ধোলাই করা পরিষ্কার চাদর হওয়া সুন্নত। একটি চাদর দিয়ে লুঙ্গি বানাবেন; অন্যটি দিয়ে চাদর বানাবেন।

মাসনুন তালবিয়ার উচ্চারণ : লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক লাব্বাইকা লাশারিকালাকা লাব্বাইক ইন্নাল হামদা ওয়াননিয়ামাতা লাকা ওয়াল মূলক লাশারিকালাক।

ওমরাহ আদায়ের পদ্ধতি : মক্কা মোকাররমায় আসার পর ওমরাহ আদায় করতে হবে। সুতরাং মসজিদে হারামে প্রবেশ করার পর তাহিয়াতুল মসজিদের দু’রাকয়াত নফল নামাজ পড়বেন না। কারণ এ মসজিদের ‘তাহিয়াহ’ হলো তাওয়াফ। যদি কোনো কারণে তাওয়াফ করা সম্ভব না হয় এবং নামাজের মাকরুহ সময়ও না হয়, তাহলে তাওয়াফের পরিবর্তে তাহিয়াতুল মসজিদের দু’রাকয়াত নফল নামাজ পড়ে নেবেন।

তাওয়াফ : অতঃপর তাওয়াফ করার উদ্দেশ্যে হাজরে আসওয়াতের দিকে এগুতে হবে এবং সেখানে পৌঁছে ইহরামের পরিহিত চাদরকে ডান বগলের নিচ দিয়ে বের করে চাদরের উভয় পাশকে সামনে-পিছে করে বাম কাঁধে ছেড়ে দেবেন এবং ডান কাঁধ খোলা রাখবেন। শরিয়তের পরিভাষায় এ কাজকে ‘ইজতিবা’ বলে। অতঃপর তাওয়াফের নিয়ত করবেন এবং হাজরে আসওয়াদের সামনে এসে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে হাতের তালুদ্বয়কে হাজরে আসওয়াদের দিকে করে দোয়া পাঠ করতে হবে।হাজরে আসওয়াদে চুমু দিতে পারলে চুমু দিবেন আর দূরে হলে তা করবেন না কারন যারা দূরে থেকে চুমু দেয় তা বিদাআত।তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন হাজরে আসওয়াতে খুশবু লাগানো না হয়। আর ইসতিলাম করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন অন্যের বা নিজের কোনো কষ্ট না হয়। ইসতিলাম করতে গিয়ে যদি নিজের বা অন্যের কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়, তাহলে ইসতিলাম করবে না; বরং ইসতিলামের ইশারা করবে। অর্থাত্ উভয় হাতকে এভাবে উঠাবে যে, উভয় হাতের পিঠ স্বীয় চেহারার দিকে থাকবে এবং উভয় হাতের তালু হাজরে আসওয়াদের দিকে এমনভাবে রাখবে যেন মনে হয় যে, উভয় হাত হাজরে আসওয়াদের ওপরই রাখা হয়েছে। অতঃপর তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে ডানদিকে ফিরে তাওয়াফ শুরু করবে। তাওয়াফকালীন ছোট ছোট পায়ে বীরের মতো হেলে-দুলে দ্রুত হাঁটবে। তবে দৌড়াদৌড়ি-লাফালাফি থেকে বিরত থাকবে। এ ধরনের হাঁটাকে ‘রমল’ বলে। এই তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে হাত ওঠানো ছাড়া মনের চাহিদামত যে কোনো দোয়া বা জিকির পাঠ করা সুন্নত। উল্লেখ্য, তাওয়াফের মধ্যে নির্দিষ্ট কোনো দোয়া পাঠ করা আবশ্যক নয়। বরং মনের চাহিদামত যে কোনো দোয়া বা জিকির পাঠ করলেই হবে।

বায়তুল্লাহর তৃতীয় কিনারাকে ‘রুকনে ইয়ামানি’ বলে। রুকনে ইয়ামানির ওপর উভয় হাত রেখে অতিক্রম করে যাবেন। অতঃপর হাজরে আসওয়াদের সামনে এসে হাজরে আসওয়াতকে চুমু খাবেন অথবা ইশারা করবেন। এভাবে তাওয়াফের একটি চক্কর সম্পন্ন করবে। এরপর ‘রমলে’র সঙ্গে আরও দু’চক্কর সম্পন্ন করার পর পরবর্তী চারটি চক্করে স্বাভাবিক গতিতে তাওয়াফ করবে এবং প্রতি চক্করের পর হাজরে আসওয়াতকে চুম্বন করবেন অথবা চুম্বন করার ইশারা করবেন। যখন তাওয়াফ শেষ হয়ে যাবে, তখন ‘ইজতিবা’ অর্থাত্ তাওয়াফের জন্য পরিহিত চাদরের আদল পরিবর্তন করে আগের ন্যায় চাদরকে উভয় পাশে রেখে দেবে।

মুলতাজিম : তাওয়াফের সাত চক্কর সম্পন্ন করে মুলতাজিমে আসবেন (হাজরে আসওয়াদ ও খানায়ে কাবার দরজার মধ্যবর্তী দেয়ালকে মুলতাজিম বলে) মুলতাজিমে আসার পর মুলতাজিম স্পর্শ করে দোয়া করবেন।

তাওয়াফের ওয়াজিব নামাজ : মুলতাজিমে দোয়া শেষ করে মাকামে ইবরাহিমে এসে এভাবে দাঁড়াবে যেন নিজের দাঁড়ানোর অবস্থান ও খানায়ে কাবার মধ্যবর্তী স্থানে মাকামে ইবরাহিম এসে যায়। অতঃপর যদি নামাজের মাকরুহ ওয়াক্ত না হয়, তাহলে তাওয়াফের দু’রাকয়াত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। আর মাকরুহ ওয়াক্ত হলে তা অতিবাহিত হওয়ার পর আদায় করে নেবেন। যদি নামাজিদের স্থান সঙ্কুলান না হয়, তাহলে হারাম শরিফের যেখানেই স্থান পাওয়া যায়, সেখানেই ওই নামাজ আদায় করে নেবেন। অতঃপর জমজম কূপের কাছে গিয়ে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে তিন শ্বাসে পেট ভরে জমজমের পানি পান করবে এবং বেশি বেশি দোয়া পাঠ করবেন।

সায়ী করার পদ্ধতি : জমজমের পানি পান করার পর সায়ির উদ্দেশ্যে সাফা পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হবেন। সাফা পাহাড়ে আরোহণ করার পর কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে হাত না উঠিয়ে সায়ী করার নিয়ত করবে। অতঃপর দোয়া করার জন্য উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে বেশি করে দোয়া করবে। সাফা থেকে নেমে ধীরে-সুস্থে মারওয়া পাহাড়ের দিকে রওনা করবেন এবং জিকির ও দোয়াতে মশগুল থাকবেন। সবুজ পিলার পর্যন্ত পৌঁছার পর মধ্যম পর্যায়ের দৌড় শুরু করবেন এবং শেষ দূরত্বে যাওয়ার পর দৌড় বন্ধ করবেন। অতঃপর মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছে বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করে সামান্য ডানদিকে সরে গিয়ে এমন জায়গায় দাঁড়াবেন যাতে অন্যের আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা না হয় এবং দোয়া পড়তে থাকবেন। এভাবে সায়ীর এক চক্কর সম্পন্ন হওয়ার পর একইভাবে আরও ছয় চক্কর সম্পন্ন করবে। মারওয়া থেকে সাফা পর্যন্ত গিয়ে দু’চক্কর সম্পন্ন হয়ে যাবে এবং সাফা থেকে মারওয়া পর্যন্ত তিন চক্কর সম্পন্ন হয়ে যাবে। সর্বশেষ সপ্তম চক্কর মারওয়া পাহাড়ে গিয়ে শেষ হবে। সায়ী শেষ হওয়ার পর যদি মাকরুহ ওয়াক্ত না হয়, তাহলে ‘মাতাফের’ কিনারায় অথবা হাজরে আসওয়াদের সামনে বা মসজিদে হারামের যেখানেই সম্ভব হয়, সেখানেই দু’রাকয়াত নফল নামাজ পড়ে নেবেন। সায়ী-পরবর্তী এই দু’রাকয়াত নফল নামাজ পড়া মুস্তাহাব।

মাথার চুল মুণ্ডানো বা ছাঁটা : সায়ী সম্পন্ন হওয়ার পর নিজে বা অন্যকে দিয়ে মাথার চুল মুণ্ডাবেন অথবা মাসজিদের অনতিদূরে চুল কাটার দোকানে গিয়ে চুল কাটাবেন বা মাথা মুন্ডাবে। চুল যদি লম্বা হয়, তাহলে চুল ছোট করে ছেঁটে ফেলবে। তবে মাথা মুণ্ডানোই উত্তম। মাথার চুল মুণ্ডানো বা কাটার পর ইহরাম ছেড়ে হালাল হয়ে যাবেন। এভাবে ওমরাহ পালন সম্পন্ন হবে।

৮ তারিখে হজ্জের উদ্দেশ্যে যে যেখানে থাকবে সেখান থেকে ইহরাম বাঁধবে।কেউ মক্কা থাকলে হোটেল থেকে,কেউ মিনা থাকলে সেখান থেকে গোসল করে ইহরামের কাপড় পরে ইহরাম বাঁধবে ও নিয়্যাত করবে "লাব্বাইকা হাজ্জান' বলে আর ওমরার নিয়্যাত "লাব্বাইকা ওমরাতান" বলে।তার পর তালবিয়া " লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক লাব্বাইকা লাশারিকালাকা লাব্বাইক ইন্নাল হামদা ওয়াননিয়ামাতা লাকা ওয়াল মূলক লাশারিকালাক।" পড়তে থাকতে হবে।যারা হজ্জে কিরান করবে তারা মিকাত থেকে হজ্জ ও ওমরার নিয়্যাত করবে এভাবে " লাব্বাইকা ওমরাতান ওয়া হাজ্জান" মিকাতে গোসল,সুগন্ধি লাগানো মোস্তাহাব।তবে খেয়াল রাখতে হবে সুগন্ধি যেন কাপড়ে না লাগে।মা আয়শা রা: রাসূল সা:কে গোসল করার পর সুগন্ধি লাগিয়ে দিয়েছেন।আর নিয়্যাত করতে হবে সওয়ারিতে যখন ছাড়ে এ সময়।নবী সা: যখন যুলহুলাইফায় সওয়ারিতে ছাপলেন এবং চলতে শুরু করলো তখন তিনি নিয়্যাত করেছিলেন।এটিই হলো উত্তম কারন ছহি হাদিসে এসেছে।কিরানকে কিরান কেন বলা হয় কারন হলো ওমরাহ ও হজ্জকে একসাথে মিশিয়ে দেয়া হয় এজন্য।তামাত্তিকে তামাত্তু বলা হয় এইজন্য হজ্জের আগে ওমরাহ করে হালাল হয়ে যা এর আগে নিষিদ্ধ ছিল সেগুলো ভোগ করার হয় এজন্য। ইফরাদ আর কিরানে পার্থক্য হলো কিরানে হজ্জ ও ওমরার একসাথে নিয়্যাত করা হয় আর ইফরাদে শুধু হজ্জের নিয়্যাত করা হয়।আর একটি পার্থক্য হলো ইফরাদে কোরবানি ওয়াজিব নয় কিন্তু কিরানে কোরবানি করতে হবে।কুরবানি ওয়াজিব কেন কারন হজ্জের মৌসুমে ওমরাহ ও হজ্জ করা হয় এজন্য।এখানে মনে রাখতে হবে কিরান ও ইফরাদে একটি সাঈ যথেষ্ঠ যা অনেকে জানে না।মিকাত থেকে নিয়্যাত করে এসে বায়তুল্লাহর তওয়াফ করতে হবে।সাফা মারোয়ার সাঈ এসময় করে নিলে এই সাঈ-ই যথেষ্ঠ পরে আর করতে হবে না।আর যদি এ সময় সাঈ না করা হয় তাহলে তোয়াফে ইফাদার পরে সাঈ করতে হবে।কিরানে ও ইফরাদে একটি সাঈ-ই যথেষ্ঠ অনেকেই জানে না ও ভুলটি করে থাকে।অনেকে ভাবে আমি একসাথে ওমরাহ ও হজ্জ একসাথে করলাম সেজন্য আমাকে দুটি সাঈ করতে হবে।তামাত্তুতে ওমরাহ ও হজ্জ আলাদা বলে দুটো সাঈ আলদা করতে হয়।ওমরাহ এর সাথে একটি আর হজ্জের তওয়াফে ইফাদার পর একটি।আর একটি বিষয় হলো যে কোন মসজিদে সূন্নত হলো মসজিদের ঢুকে 'তাহিয়্যাতুল মসজিদ' দুই রাকাত নামাজ পড়তে হয় কিন্তু বায়তুল্লায় ঢুকে সূন্নত হলো তওয়াফ করা এবং এর পরে মাকামে ইব্রাহিমে দুই রাকাত নামাজ পড়া।যারা দূর থেকে আসবে তাদের জন্য তামাত্তু উত্তম।কারন অনেকে একমাস পূর্বেই আসেন সেজন্য প্রথমে ওমরাহের নিয়্যাতে আসলে ওমরাহ করে হালাল হয়ে যাবে।এতে দীর্ঘ সময় তাদের কষ্ট করতে হয় না।কিন্তু কিরান ইফরাদ কারিকে ইহরামের অবস্হায় থেকে যেতে হবে।৮তারিখে সবার জন্যই সমান নিয়ম কিন্তু তামাত্তুকারিকে নতুন করে গোসল ও কাপড় পরে যেখানে থাকবে সেখান থেকে হজ্জের নিয়্যাত করে মিনায় চলে যেতে হবে।আর কিরান ও ইফরাদ কারিতো নিয়্যাতের অবস্হায়ই আছে তারাও মিনায় চলে যাবে।হজ্জের মুল কাজ এখন শুরু হলো।৮ তারিখ জোহর ,আছর ,মাগরিব , ইশা ও ফযর এই ৫ ওয়াক্ত নামাজ মিনাতে পড়তে হবে এবং সেখানে রাত্রীযাপন করতে হবে।চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজকে কচর করে দু'রাকাত পড়তে হবে।

দ্বীতিয় দিন ৯ ই জিলহজ্জ।মিনায় ফযর পড়ে সূর্য উদিত হলে আরাফার দিকে রওয়ানা করতে হবে। ফজরের নামাজ মিনায় আদায় করে তাকবিরে তাশরিক এবং তালবিয়া পাঠ করে আরাফার দিকে ধীরে-সুস্থে যাত্রা শুরু করবে। রাসূল সা: বলেছেন,হজ্জ হলো আরাফা।জোহরের আগে আগে পৌঁছে যেতে হবে। রাস্তায় জিকির, ইস্তিগফার, দুরুদ শরিফ ও দোয়া পাঠ করবে এবং অধিক পরিমাণে তালবিয়া পাঠ করবে। আরাফার ময়দানে (উকুফে আরাফাহ) অবস্থানের সময় হলো ‘যাওয়াল’ অর্থাত্ সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত। এজন্য যাওয়ালের পর থেকেই অবস্থান শুরু করবে। বিনয় ও নম্রতার সঙ্গে উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করবে।এখানে জোহর ও আছরের নামাজ আলাদাভাবে এক আজান ও দুই তাকবিরে পড়ে নিয়ে ঘুরা ফিরা না করে গুনাহ মাপের জন্য রোনাজারির মাধ্যমে তওবা ইস্তিগফার করবে এবং নিজের সব গোনাহ মাফের জন্য অন্তর থেকে দোয়া করবে।বাংলাদেশ থেকে মাযহাবপন্থি কিছু লোক আছে তারা বলে মক্কায় এসে ১৫ থাকার পর মুকিম হয়ে গেছে সেজন্য চার রাকাতই পড়বে।রাসূল সা: এর সময় ১২৪,০০০ সাহাবি হজ্জ করেছেন তারা কসর করলেন আর এরা রাসূল সা: এর নাফরমানি করছে।এরা স্পষ্ট বিদায়াতি। এভাবে সূর্য অস্ত যাওয়ার আগ পর্যন্ত খুশুখুজুর সঙ্গে জিকির ও দোয়ার মধ্যে মশগুল থাকবে।নবী সা: বলেছেন আল্লাহ পাক এই দিনে আরাফাবাসিদের অতি নিকটে এবং ফেরস্তাদের মাঝে গৌরব প্রকাশ করেন, দেখ আমার বান্দাদের কি একাকার হয়ে আমার ইবাদতে মশগুল হয়ে আছে তোমরা সাক্ষি থাক আমি তাদের মাপ করে দিলাম।এই সময়টা ঘুরা ফেরা না করে দোয়ায় কাজে লাগাতে হবে।আজকালকার মুসলমানদের কিছু মনে হয় ওখানে পিকনিক করতে যাচ্ছে।কেউ খাবার খুজছে,কেউ আড্ডা দিচ্ছে,কেউ জাবাল পাহাড়ে যাচ্ছে,কেউ বা দিল এক ঘুম যাতে সন্ধা হয়ে গেল।এখানে সন্ধা পর্যন্ত ইবাদতে মশগুল থাকতে হবে।জীবনের সমস্ত গুনাহের জন্য তওবা করতে হবে।আরবি দোয়া মুখস্ত থাকলে ও বুঝলে ভাল সেভাবে দোয়া করতে হবে।তানাহলে নিজের ভাষায় অনুনয় বিনয় করে কৃত গুনাহের জন্য মাপ চাইতে হবে।অনেকে বলে দোয়া করতে গিয়ে চোখে পানি আসে না।কোন জিনিস যদি না বুঝে করা হয় তা তেমন কল্যানকর হয় না।নিজের ভাষায় বুঝে দোয়া করলে নিশ্চয়ই আচর হবে ও অন্তর কাঁদবে।মাগরেবের সময় হয়ে গেলে মুজদালিফার দিকে বেরিয়ে যেতে হবে।

আরাফার ময়দানে সূর্য অস্ত যাওয়ার পর সেখানে অথবা রাস্তায় মাগরিব ও ইশার নামাজ না পড়ে মুজদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও ইশার নামাজ একসঙ্গে আদায় করবে।

পথে অধিক পরিমাণে দুরুদ শরিফ, আল্লাহর জিকির ও তালবিয়া পাঠ করতে থাকবে। মুজদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও ইশা দু’ওয়াক্তের নামাজ ইশার ওয়াক্তে একইসঙ্গে আদায় করবে। উভয় নামাজের জন্য এক আজান এবং এক ইকামত বলবে। নামাজ থেকে ফারেগ হওয়ার পর রাত্রি যাপন করাই এখানকার ইবাদত।কেউ যদি ঝিকির আজকার করতে চায় করতে পারে। জামারার পাথর অনেকে মুজদালিফা থেকে সংগ্রহ করে থাকে।এ রকম না করে মিনার পথ থেকে সংগ্রহ করাই উত্তম। যখন সুবহে সাদিক হয়ে যাবে, তখন অন্ধকারের মধ্যেই ফজরের সুন্নত নামাজ পড়ে ফজরের ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করবে। সুবহে সাদিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুজদালিফায় অবস্থান শুরু হয়ে যায়। মুজদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। উকুফে মুজদালিফার সময় হলো সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত। অতএব ফজরের নামাজ আদায়ের পর থেকে জিকির ও দোয়ায় মশগুল থাকবে।রাসূল সা: এখানে বেশি বেশি দোয়া করেছেন। সূর্যোদয়ের পূর্বক্ষণে মুজদালিফা থেকে মিনায় যাত্রা শুরু করবে।তবে মহিলা শিশু এবং দুর্বল থাকলে এর আগে বের হওয়া যাবে এবং নবী সা: অনুমতি দিয়েছিলেন। দেরি করে মিনার দিকে যাত্রা করা সুন্নতের খেলাফ।মুজদালিফা থেকে মিনায় ফেরার পথে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় মন-প্রাণ দিয়ে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ ও একাগ্র হবে। এভাবে পথ চলে মিনায় পৌঁছবে।

হজের তৃতীয় দিন ১০ জিলহজ এবং এ দিনে চারটি কাজ। মিনায় পৌঁছার পর সর্বপ্রথম ‘জামরায়ে আকাবায়’ কঙ্কর নিক্ষেপ করবে। কঙ্কর নিক্ষেপের পদ্ধতি হলো—ডান হাতের বৃদ্ধ ও শাহাদাত আঙুল দিয়ে একটি কঙ্কর ধরে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবে। এখানে আর কোন বিদাআতি কাজ করা যাবে না।অনেকে শয়তানকে গালি দেয়,জুতো-লাঠি নিক্ষেপ করে এসব করা যাবে না।

কোরবানি : জামরাতুল আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপের পর কোরবানি করবে।তবে এখন আগেই বেংকে কোরবানির টাকা জমা দিলে এ কাজটি আদায় হয়ে যায়। জিলহজের ১০ তারিখেই কোরবানি করা উত্তম; তবে ১০ থেকে ১২ জিলহজের সূর্যাস্ত পর্যন্ত রাত বা দিনের যে কোনো সময় কোরবানি করা যাবে।

হলক ও কসর (মাথা মুণ্ডানো ও চুল কাটা) : কোরবানি থেকে ফারেগ হওয়ার পর পুরুষ হাজীরা তাদের মাথা মুণ্ডাবে কিংবা মাথার চুল ছোট করে ছেঁটে ফেলবে। মাথা মুণ্ডানোকে ‘হলক’ এবং চুল ছোট করে কাটাকে ‘কসর’ বলে।রমি, কোরবানি এবং মাথার চুল মুণ্ডানো বা ছাঁটার পর তাওয়াফে জিয়ারত করবে। তাওয়াফে জিয়ারতের পর সায়ী করবে; অর্থাত্ সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে সাতবার দৌড়াবে।হলক বা কসর করার পর ইহরামের পূর্ববর্তী কানুনগুলো পালন শেষ হয়ে যাবে, অর্থাত্ প্রাথমিক হালাল হয়ে যাবে। তবে ‘তাওয়াফে জিয়ারত’ করা পর্যন্ত স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা হালাল হবে না।

স্মরণ রাখতে হবে যে, তাওয়াফে জিয়ারত হজের রুকন বা ফরজ। কোনো অবস্থাতেই তাওয়াফে জিয়ারত ছাড়া যাবে না এবং তাওয়াফে জিয়ারতের পরিবর্তে এর বদলা করাও যাবে না; বরং শেষ জীবন পর্যন্ত তাওয়াফে জিয়ারত ফরজ হিসেবেই থেকে যাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা হারাম থেকে যাবে।

সুতরাং যে কোনো অবস্থায় তাওয়াফে জিয়ারত সম্পন্ন করেই দেশে ফিরতে হবে। এ ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। কোনো অবস্থাতেই যেন তাওয়াফে জিয়ারত ছুটে না যায়।

হজের চতুর্থ দিন ১১ জিলহজ : ১১ জিলহজ জাওয়ালের পর তিন জামরাতেই সাতটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করবে। অর্থাত্ প্রথমে জামরায়ে উলাতে সাতটি কঙ্কর, অতঃপর জামরায়ে উস্তায় সাতটি কঙ্কর এবং সর্বশেষ জামরায়ে আকাবায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করবে।

হজের পঞ্চম দিন ১২ জিলহজ : ১২ জিলহজের দিন বিশেষ কাজ হলো জাওয়ালের পর তিন জামরাতে ১১ তারিখের ন্যায় সাতটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করা। এদিন রমি করার পর ইচ্ছা হলে মিনায় থাকবে বা মক্কায় ফিরেও আসতে পারবে। যদি মক্কায় ফিরে আসার ইচ্ছা করে, তাহলে সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই মিনার সীমানা থেকে বের হয়ে যাবে।আর যদি বিলম্ব হয়ে যায় তাহলে ১৩ তারিখে আগের ন্যায় ২১ টি পাথর মারতে হবে।নবী সা: ১৩ তারিখ পর্যন্ত থেকেছেন এবং উত্তম হজ্জ করেছেন। এভাবেই পবিত্র হজ সম্পন্ন হবে।

মিনা থেকে ফেরার পর যতদিন মক্কায় অবস্থান করবে, ততদিনের এই অবস্থানকে গনিমত ও মূল্যবান মনে করতে হবে এবং যতটুকু সম্ভব তাওয়াফ, নামাজ, রোজা, দান-খয়রাত এবং জিকির ও তিলাওয়াতে নিজেকে মশগুল রাখবে। এছাড়া অন্যান্য নেক কাজ ও আমল বেশি বেশি করে পালন করতে থাকবে।

হজ থেকে প্রত্যাবর্তন এবং তাওয়াফে বিদা : হজ সম্পন্ন হওয়ার পর যখন মক্কা থেকে নিজ দেশে ফেরার ইচ্ছা করবেন, তখন বিদায়ী তাওয়াফ করতে হবে এবং এটা ওয়াজিব। এভাবেই ইসলামের একটি অন্যতম রুকন পবিত্র হজের দীর্ঘ সফর ও আমলের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটবে। অধিকাংশ হাজ্জি সাহেবানরা দেশে গিয়ে আবার আগের অবস্হায় জীবন যাপন করেন।বিদায় হজ্জের ১২ টি পয়েন্ট বুঝার চেষ্টা করেন না।দেশে গিয়ে মানুষকে হজ্জের এই নিয়ামত সম্পর্কে জানানো তাদের দায়িত্ব।মুসলিমরা যদি এই বারটি পয়েন্টকে জীবন সংগি করতো তাহলে দুনিয়া সুন্দর হয়ে যেতো।আল্লাহ আমাদের এ বিষয়গুলো বুঝার তাওফিক দান করুন ও মহান হজ্জকে কবুল করুন।আমিন-

বিষয়: বিবিধ

২৮৪৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

256743
২১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০৩:০৪
কাহাফ লিখেছেন : পোস্টের জন্যে জাযাকল্লাহ.....। আমার আব্বার জন্যে হাজ্জ্বে মাবরুরের দোয়া চাই সবার কাছে.......।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File