ইসলামে যৌথ পরিবার।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২১ নভেম্বর, ২০১৫, ১২:১৪:০৪ দুপুর

সময়ের বিবর্তনে আবহমানকালের যৌথ পরিবার এখন ভাঙনের মুখে।বৈজ্ঞানিক সভ্যতার উৎকর্ষ সাধন এবং শিল্প বিপ্লবের বিশেষ ছোঁয়া মানুষের জীবনকে বদলে দিলেও পারিবারিক মুল্যবোধ ভেঙে চুরমার হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে।দাদা-দাদি,বাবা-মা,চাচা-চাচি,ভাই-বোন নিয়ে একসাথে থাকার এককালের সেই স্বপ্ন এখন মৃতের একটি কপিনের মত।এককালে যৌথ পরিবারের সদস্যরা একযায়াগায় থাকলেও ছিল শালিনতা এবং ছেলেমেয়েদের থাকার আলাদা পরিবেশ।এক ছাদের নিছে থাকলেও কেউ কাউকে দেখতো না।বর্তমান সভ্যতায় এখন স্বামি - স্ত্রী ও দুটো সন্তান নিয়ে একটি ছোট্ট জীবন নিয়ে সুখী হতে চায় সবাই।বৃদ্ধ বাবা মা এখন হচ্ছেন বৃদ্ধা নিবাসের আশ্রয়প্রার্থী।অতীত জীবনের পারিবারিক সুখ সমৃদ্ধির পতনের পিছনে কারন কি, কেউ খুঁজে দেখছেন না।একটি সময় ছিল প্রায় প্রতিটি পরিবারই ছিল বড়।পারিবারিক মুল্যবোধ ছিল।বাবা-মাকে সবাই সমীহ করতো।পরিবারের চাবিকাঠি থাকতো মায়ের হাতে।বাবা ছেলে মেয়েদের কাজের দায়িত্ব দিয়ে দিতেন।এমন পরিবারও ছিল যাদের ছিল বিশাল এলাকা।কয়েকটি বাড়ি,বিশাল মেঠো জমি,দীঘি পুকুর,ব্যাবসায়।এগুলো নিয়ন্ত্রনের ভার বাবা ভাগ করে দিতেন প্রতিটি সন্তানদের।সন্তানরাও তাদের কাজের জবাবদীহি করতো।মহিলারা একসাথে রান্না করতো রসুই ঘরে আবার একসাথে বসে খেত।বড় পরিবার গুলো দেখে মনে হতো মেহমানদারি চলছে।পুরুষরা বাহিরের বাড়িতে ও মহিলারা বাড়ির ভীতরে।পর্দা প্রথা মেনে চলতো।কেউ হঠাৎ করে ভীতরের বাড়িতে যেতে পারতো না খবর দেয়া ছাড়া।পরিবারে জেষ্ঠ থেকে কনিষ্ঠ পর্যন্ত সবাই নিয়ম নীতির মধ্যে চলতো। পরিবারে ছিল একে অন্যের সাথে হৃদ্যতা।কোন হিংসা বিদ্দেষ ছিলনা।সহমর্মিতা নিয়ে একে অন্যকে সাহায্য করতো।দাদি ও মা'রা সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘরে ডেকে উঠাতেন।নামাজ আদায় করতেন।পুরুষরা মসজিদে নামাজ পড়তে যেতো।সবাই মিলে নাস্তা তৈরি করতো ও একসাথে খেতো।একা কোন কাজ করার সামর্থ কারো ছিল না। ধীরে ধীরে পাশ্চাত্যের ছোঁয়ায় বৃদ্ধি পেল স্বার্থপরতা।প্রত্যেকে নিজের ভবিষ্যত বলে ছুটে যেতে থাকে একাকিত্ব এক জীবন ধারায়।বিলীন হতে থাকলো আমাদের অতীত সংস্কৃতি।একটি পরিবারে একটি সময়ে দাদা-দাদি বা বাবা-মা বয়সের কারনে কর্মহীন হয়ে পড়ে।আবার ভাই বোনদের মধ্যে সবাই যোগ্য হয়ে গড়ে উঠে না।পরিবারে যদি ছয় সাত ভাই বোন থাকে আর যারা অর্জনের দিকে এগিয়ে যায় তাদের উপর সাধারনত অন্যদের নির্ভরতা বেড়ে যায়।বড়দের আয়ে যখন সংসার চলে তখন তাদের কথাবার্তায় অনেক সময় দেখা দেয় অসামন্জস্যতা।স্বভাবত ঘরের বউরা তা মেনে নিতে চায় না।যার আয় বেশী তারা চায় না অন্যদের বোঝা বহন করতে।সে কারনে দেখা যায় পারবারিক খরচ নিয়ে কানাঘুষা চলতে থাকে।এক পর্যায়ে আসে বিভক্তি।আলাদা হতে থাকে বাস ভবন থেকে শুরু করে জীবনের সব দিকটা।ঝগড়া বিবাদের উৎপত্তি শুরু হয়।কারনে অ-কারনে খাওয়ার টেবিলে পরিবারের সদস্যরা খাওয়ার মান নেই,এটা ভাল না, ওটা ভাল না বলে নিজেদের মত ব্যাক্ত করে।আবার যারা বেশি খরচ করে তারা বলতে থাকে আর কত ঘানি টানবো? কাউকে বাজার করতে দিলে বলে অন্যকে কাউকে বল আমি ব্যাস্ত। বাজারে জিনিসপত্রের দামের সাথেও আায়ের ব্যালেন্স হয়ে উঠে না।আজকের যুগে বুড়ো বয়সে এ সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হতে হয় বাবা মা'কে।

ইসলামে যৌথ পরিবারে থাকতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই।বিয়ের পূর্বে একজন মহিলা আলাদা বাসস্হান চাইতে পারে এবং এটি পর্দা মেনে চলার জন্য সহায়ক ও উত্তম ব্যাবস্হা।তবে এটি নির্ভর করে অর্থনৈতিক অবস্হার উপর।কিন্তু আজকের আমাদের সমাজে যৌথ পরিবারে অজ্ঞতার কারনে পর্দা মেনে চলা হয় না।যৌথ পরিবারের অবস্হান একটি প্রাচীন পারিবারিক সংস্কৃতি হলেও অতীতে ইসলামের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যেত প্রতিটি পরিবারে বর্তমান সময়ে অনেকে একটি ছাদের নিছে অবস্হান করে যেখানে পর্দার খেলাপ হয়।বিশেষ করে বয়স্করা এটি পছন্দ করে তাদের বৃদ্ধ বয়সের নিরাপত্তার জন্য।কিন্তু প্রশ্ন হলো যৌথ পরিবারে যখন ছেলেদের বিবাহ হয়ে যায় তখন একটি ছাদের নিছে দরজা খুললে অন্য বেগানা পুরুষদের সাথে দেখা হয়ে যায় যা ইসলামে হারাম করা হয়েছে।অবাদ মেলামেশা মানুষকে ব্যাভিচারের দিকে নিয়ে যায়।সমাজে এমন সব ঘটনা ঘটছে যে,ছোট ভাই বিদেশে অবস্হান করছে আর বড় ভাইয়ের সাথে ছোট ভাইয়ের বউ ঘর বেঁধে ফেলেছে।কুরআন ও হাদিসে পর্দার ব্যাপারে বিশেষ ভাবে আলোকপাত করা হয়েছে।সূরা নুরের ২৭ ও ২৮ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' ওহে যারা ঈমান এনেছ! নিজেদের গৃহ ছাড়া তোমরা অন্য গৃহে প্রবেশ করো না যতক্ষন না তোমরা অনুমতি নিয়েছ ও তাদের বাসিন্দাদের সালাম করেছ।এটিই তোমাদের জন্য শ্রেয় যেন তোমরা মনোযোগ দিতে পার।যদি তোমরা কাউকে না পাও তবে তাতে প্রবেশ করো না যতক্ষন না তোমাদের অনুমতি দেয়া হয়,আর যদি তোমাদের বলা হয়,ফিরে যাও তবে ফিরে যেয়ো।এটিই তোমাদের জন্য উত্তম। উবাদা ইবনে আমির রা: থেকে বর্নীত একজন আনসার রাসূল সা;কে জিজ্ঞাসা করলো,'ইয়া রাসূলুল্লাহ দেবর সম্পর্কে পর্দার বিধান কি? রাসূল আ: বললেন,দেবর হলো মৃত্যু।' এই হাদিস থেকে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে যে,একজন বিবাহিত মহিলার পরিপূর্ন পর্দা করা ফরয তার বাবা মা, দাদা দাদি,শশুর শাশুড়ি,ছেলে মেয়ে, স্বামীর স্ত্রী, ভাই বোন ও তাদের ছেলে মেয়ে,দেবর ভাসুরের স্ত্রী ও তাদের ছেলে মেয়ে ইত্যাদি। আমাদের দেশে অধিকাংশ যৌথ পরিবারে ইসলাম থাকলেও ইসলামের অনুশীলন নেই।অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বড় ভাইয়ের বউরা ছোট ভাইদের সাথে অবাদে মেলামেশা করে।মেহমান আসলে জাহেল শাশুড়িরা বউদের দিয়ে খেদমত করান যা ইসলামে হারাম।আবার দেখা যায় দেবররা ভাবীদের দূরবর্তী স্হান থেকে একা আনা নেওয়া করে।এগুলো সবই ইসলামে হারাম করা হয়েছে।সূরা নুরের ৫৮ আয়াতে আরো বলা হয়েছে,'ওহে যারা ঈমান এনেছ!তোমাদের ডান হাত যাদের ধরে রেখেছে এবং তোমাদের মধ্যে যারা সাবালগত্বে পৌঁছায় নি তারা যেন তোমাদের অনুমতি নেয় তিনটি সময়ে-ফযরের নামাজের আগে,মধ্যাহৃে ও ঈশার নামাজের পরে।এই তিন হচ্ছে তোমাদের জন্য গোপনীয়তা রক্ষার সময়।এইসব বাদ দিয়ে তোমাদের জন্য কোন দোষ হবে না তাদের জন্যও নয়।এমনকি নব দম্পতি যারা তাদের সন্তানদের নিয়ে এক ঘরে রাত যাপন করেন তাদেরও সতর্ক থাকতে হবে যৌনতার ক্ষেত্রে।আজ মিডিয়ার যুগে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা টিভি সিরিয়েল থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যৌনতার দিকগুলো জেনে যাচ্ছে।এমন ঘটনা সমাজে ঘটেছে যা শিশুটি সকাল হলে বাবা মা'র গোপনীয়তার কথা বলে দিয়েছে।অনেকে হয়ত মনে করেন শিশুটি ঘুমিয়ে গেছে আসলে সে জাগরিত।সেজন্য সমস্ত মুসলিম স্কলারগনের মত হলো সম্ভব হলে বিয়ের পূর্বেই নব দম্পতিদের আলাদা ঘর হওয়া উচিত যাতে তাদের পর্দার খেলাপ না হয়।বিবাহের চুক্তিতে অন্তত এতটুকু যেমন-ছোট্ট একটি ঘর যাতে থাকবে বাথরুম,রান্নাঘরের সুব্যাবস্হা যাতে স্ত্রীকে দেখা দিতে না হয় বেগানা পুরুষ মহিলাদের সাথে।যদি স্বামি এর চেয়েও ভাল ব্যাবস্হা দিতে পারেন তাহলে আরো কল্যান।আমাদের সংস্কৃতিতে যে যৌথ পরিবার সেটিও সমৃদ্ধি আনতে পারে যদি সবার জন্য আলাদা ব্যাবস্হা থাকে।এর সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো-বয়োজেষ্ঠদের দেখাশুনা যাতে তারা বয়সের কারনে ক্ষতির সম্মুখীন না হন।রাসূল সা: তাঁর প্রতিটি পরিবারের জন্য আলদা ঘরের ব্যাবস্হা করেছিলেন।এমনকি তার অন্তিম সময়ে তাঁকে দেখাশুনা করেছিলেন তাঁর স্ত্রীগন ও সাহাবীগন।এ থেকে আমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে যে,বৃদ্ধ পিতামাতা ও দাদা দাদিদের সেবা যত্ন করার দায়িত্ব সন্তানদের।যৌথ পরিবারে যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। তবে তা নির্ভর করে সে পরিবারের সদস্যদের মন মানুষিকতার উপর।প্রতিটি পরিবারে যদি সন্তানদের ইসলামের অনুশীলনে গড়ে তোলা যায় তাহলে আজো টিকে থাকতে পারে যৌথ পরিবার।

বিষয়: বিবিধ

৩০৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File