পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামিক ব্যাংক: মুসলমাদের করনীয়।

লিখেছেন লিখেছেন ওরিয়ন ১ ৩০ অক্টোবর, ২০১৬, ০৭:২৪:১৫ সন্ধ্যা

সাম্প্রতিক সময়ে আমরা মুসলিমরা এক দারুণ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। ইসলামের শত্রুরা সর্বশক্তি নিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে মূলত বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধে (সমর যুদ্ধেও অবশ্য) অবতীর্ণ হয়েছে। তাদের ব্যবহৃত একটি কৌশল হল ইসলামের স্বীকৃত বিষয়াবলী বা ইসলামী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার যে কোন প্রচেষ্টার ব্যাপারে মুসলিমদের মাঝে দ্বিধা এবং সংশয়ের সৃষ্টি করা। আমাদের ঈমানের দুর্বলতা ও জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে তারা এ ব্যাপারে শতভাগ সফল হয়েছে বললে অত্যুক্তি করা হবে না। তাই খুব দুঃখজনক হলেও সত্যি যে ক্বুরআন সুন্নাহর আলোকে ইসলাম পালন বা ইসলামকে সম্পূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণের যে কোন প্রচেষ্টা মুসলিমদের দ্বারাই সমালোচিত হয় সবার আগে। ইসলামী ব্যাংকিং এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এই বিষয়টি নিয়ে দ্বিধা, বিভ্রান্তি রয়েছে অনেক একনিষ্ঠভাবে ইসলাম পালনকারীর মাঝেও।

ইসলাম সুনির্দিষ্ট জ্ঞানের ধর্ম। এখানে সন্দেহ, হলেও হতে পারে এই জাতীয় অনুমানের কোন অবকাশ নেই। তাই আমাদের যে স্বভাবটির মাধ্যমে আমরা অজান্তেই ইসলামের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করি, তা হল জ্ঞান ছাড়া ইসলাম নিয়ে কথা বলা। একজন ইঞ্জিনিয়ারের কাছে চিকিৎসা নিতে কেন যাব না সেটা আমরা খুব ভালভাবে বুঝি কিন্তু আলেমের কাছ থেকে সুশৃখংল উপায়ে দ্বীন শিক্ষা না করে থাকলে ইসলাম নিয়ে কেন কথা বলা যাবে না, তা আমাদের অনেকেরই মাথায় ঢোকে না।

ইসলামী ব্যাংকিং – ইতিহাস ও অগ্রযাত্রা:

রাসূলুল্লাহ ﷺ স. শৈশব হতেই আল-আমীন বলে পরিচিত ছিলেন। মানুষ তাঁর কাছে সম্পদ জমা রাখত, এবং প্রয়োজনে উঠিয়ে নিয়ে যেত। রাসূল ﷺ নিজে বিবাহপূর্ব সময়ে উম্মুল মু’মিনীন খাদিজা রা. এঁর সম্পদ মুদারাবার ভিত্তিতে গ্রহণ করেন এবং তা দিয়ে বিশ্বস্ততার সাথে ব্যবসা করে বিপুল মুনাফাসহ মূলধন ফিরিয়ে দেন।

আরবদের মাঝে মুদারাবা ছাড়াও মূলধনভিত্তিক অংশীদারি ব্যবসা প্রচলিত ছিল। রাসূল স. বাইয়ে সালামের অনুমোদন দেন, যা মূলত পণ্য বাকীতে প্রদানের একটি চুক্তি। তো, এ সবকিছুই ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিভিন্ন কার্যাবলীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চর্চা ছিল।

সাহাবীদের যুগে হযরত যুবাইর বিন আওয়াম রা. এঁর কথা উল্লেখযোগ্য। মানুষ তাঁর কাছে অর্থ জমা রাখত। তিনি আমানত হিসেবে সেগুলো না নিয়ে ঋণ হিসেবে নিতেন, ফলে সেগুলো বিনিয়োগের সুযোগ থাকত। আবার প্রয়োজনে জমাকারীরা তা উত্তোলন

করতে পারতেন। ইবনে আব্বাস রা. ও দিরহাম জমা গ্রহণ করে কুফায় তা ভাঙানোর স্বীকারপত্র লিখে দিতেন।

আধুনিককালে ষাটের দশকে মুসলিম দেশগুলোর তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় মুসলিমদের হাতে প্রচুর ধনসম্পদ চলে আসে। তারা তাদের সম্পদ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ইসলামের আলোকে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের কথা ভাবেন। এছাড়া শত শত বছরের উপনিবেশবাদ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর মুসলিম দেশগুলো ইসলামের আলোকে ভিন্ন অর্থনৈতিক চিন্তা শুরু করে। সত্তরের দশক থেকে মোটামুটি ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থা ব্যাপকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে থাকে।বর্তমানে আধুনিক সভ্যতা যেমনি একদিনে গড়ে ওঠেনি, তেমনি আধুনিক ব্যাংক ব্যবস্থাও একদিনের ফসল নয়। কালের স্রোতে, মানুষের নানাবিধ প্রয়োজনে, ব্যবসা-বানিজ্যর ব্যাপকতার ফলে অর্থ নিরাপদে রাখার প্রয়োজনীয়তার সাপেক্ষে ব্যাংক ব্যবসায়ের উৎপত্তি ঘটে।

অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম সমাজে মুসলমানদের কয়েকটি সাধারন কমন প্রশ্ন নীচে তুলে ধরা হলো:

ইসলামী ব্যাংক কত পার্সেন্ট ইসলামিক?

এই প্রশ্নের উওর দেয়ার আগে আমরা প্রত্যেকেই নিজেকে প্রশ্ন করি, ব্যক্তিগত ভাবে আমি নিজে কতটা ইসলামিক? আমার বিগত ২০-২৫ বছর জীবনে আমি কি কবিরা গুনাহ সমূহ এড়িয়ে যেতে পেরেছি? আমি কি গীবত করা, মিথ্যা কথা ও কাজ, হারাম -হালাল বেছে চলা কিংবা সঠিকভাবে পর্দা করি?

হয়ত বলবেন, আরে ভাই, যেহেতু সমাজ টা ইসলামিক না, ইসলামিক শরীয়া মোতাবেক আইন চলে না, সেহেতু এখানে হালাল-হারাম বেছে চলা কিংবা সঠিক ভাবে পর্দা করা সম্ভব না। আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে নামাজের কথা বলুন, আপনি যখন নামাজ পড়েন, তখন তো আপনি ও আল্লাহ ছাড়া মাঝে কেউ থাকে না, আপনি কি আপনার অতীত জীবনের মাএ এক ওয়াক্ত নামাজ এক্কেবারে সহীহ ভাবে, মনের মধ্যে অন্য কোন কিছু উদয় না হয়ে পড়তে পেরেছেন? হয়ত হাতে গনা দুচার জন ছাড়া আমারা সবাই পরি নাই। তাহলে কি দাঁড়াচ্ছে? আমি একজন ব্যক্তি এই সমাজে শত প্রচেস্টার পর ও ১০০% ইসলামিক হতে পারি না, কেউ ২০%, কেউ ৪০% কেউবা ৬০% ইসলামিক। তাহলে একটা ব্যাংক, একটা প্রতিস্ঠান এই অন ইসলামিক বিশ্বে কিভাবে ১০০% ইসলামিক হবে? এটা কি আসলেই সম্ভব? আসুন কেন সম্ভব নয়, সেটা একটু জেনে নেই।

১। একটি ইসলামিক ব্যাংকে সেই দেশের কেদ্রীয় ব্যাংকের আন্ডারে কিছু মোলিক নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়।এই শর্ত বা বিধি-নিষেধ গুলো ইসলামীক নিয়ম মেতাবেক হয় না, কারন কেদ্রীয় ব্যাংক ইসলামিক ব্যাংক নয়। তাহলে এই ক্ষেতে ইচ্ছা থাকা সত্বেও ব্যাংকিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ইসলামিক ব্যাংক কেদ্রীয় ব্যাংকের অন ইসলামিক নিয়ম মেনে চলার কারনে ১০০% ইসলামিক ভাবে চলতে পারছে না।

২। কেদ্রীয় ব্যাংক আবার বিশ্ব ব্যাংক সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের ব্যাংকের সাথে লেনদেন করে থাকে। এই ক্ষেতে ইসলামিক ব্যাংক বর্হির বিশ্বের ব্যাংকের সাথে লেনদেন করতে গিয়ে বিশ্ব ব্যাংকিং নীতিমালা মেনে চলতে হয়।সো এক্ষেতে ইসলামি ব্যাংক ১০০% ইসলামিক ভাবে চলতে পারছে না।

৩।অন্যান্য সূদী ব্যাংকের ন্যায় ইসলামিক ব্যাংক Call money market ( in case of lack of liquidity) এ অংশ নিতে পারে না। সেজন্য গ্রাহকদের একটা মোটা অংকের টাকা liquid বা ideal money হিসাবে রেখে দিতে হয় investment না করে। একটা ব্যাংকের জন্য এটা একটা ব্ড় চ্যলেন্জ।

তাহলে বলুন, একটি ১০০% সুদ ভিত্তিক অর্থনীতিতে ১০০% শরীয়াহ ভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক আশা করাটা কতটুকু যৌক্তিক হতে পারে? আপনি দৈনন্দিন জীবনের অন্য সব কিছুর সাথে কম্পো্মাইজ করে চলছেন, সেখানে ১০০% খাঁটি এই কথাটা আসছে না, শুধুমাএ ইসলামিক ব্যাংকের বেলায় আসছে কেন? আমরা যদি ২০%, ৪০%, কিংবা ৬০% ইসলামিক হয়ে নিজিকে মুসলমান হিসাবে সমাজে পরিচয় দিতে পারি, তাহলে একটি পুরোপুরি সূদী অর্থনীতেতে চলা বিশ্বে ৬০%, ৮০% কিংবা ৯০% ইসলামী শরীয়া মোতাবেক চলা ব্যাংক ইসলামিক ব্যাংক হিসাবে পরিচয় দিতে অসুবিধা কোথায়?

ইসলামী ব্যাংক কি ঘুরিয়ে সুদ খায়?

ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম শরীয়াহ ভিত্তিক কিনা, তা নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন রয়েছে । কেউ কেউ মনে করেন এটি শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক আবার কেউ মনে করেন ইসলামী ব্যাংক প্রচলিত সুদী ব্যাংকের মত সুদ খায়, তবে সরাসরি না খেয়ে একটু ঘুরিয়ে খায় । তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হল, মন্তব্যকারীদের অধিকাংশই সুদ ও মুনাফার মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা খুবই কম রাখেন । তাই সুদ ও মুনাফার ধারণা পরিষ্কার হলেই বুঝা যাবে বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম শরীয়াহ ভিত্তিক কিনা ? এজন্য প্রথমে সুদ ও মুনাফার সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা পাওয়ার জন্য আলোচনা করা হল –

সুদ হচ্ছে ঋণকৃত অর্থের উপর একটি নির্দিষ্ট সময়ে নিশ্চিত সুনির্দিষ্ট অতিরিক্ত পাওনা । অর্থাৎ সুদের সাথে ‘নিশ্চিত’ এবং ‘সুনির্দিষ্ট’ শব্দ দুটির সম্পর্ক রয়েছে । যেমন আপনি কারো নিকট হতে ২০% সুদে ১০০০ টাকা ঋণ নিলেন । এই ঋণকৃত টাকা

আপনি ব্যবসায় খাটাতে পারেন , আবার শিল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন , আবার ভোগে ব্যয় করতে পারেন । এই ১০০০ টাকা নিয়ে আপনি যাই করেন না কেন , বছর শেষে ঋণ প্রদানকারীকে ২০০ টাকা প্রদান করতে হবে । এক্ষেত্রে ঋণ প্রদানকারী নিশ্চিত জানে যে , বছর শেষে আপনার নিকট হতে সে নির্দিষ্ট ২০০ টাকা পাবে । এখানে ২০০ টাকা হল সুদের পরিমাণ,যা ইসলামে নিষিদ্ধ ।

অন্যদিকে মুনাফা হল ব্যবসা বা শিল্পখাতে বা উৎপাদনশীল কোন খাতে বিনিয়োগকৃত অর্থের উপর একটি নির্দিষ্ট সময়ে অনিশ্চিত অনির্দিষ্ট অতিরিক্ত পাওনা । অর্থাৎ মুনাফার সাথে ‘অনিশ্চিত’ এবং ‘অনির্দিষ্ট’ শব্দ দুটির সম্পর্ক রয়েছে । ‘অনিশ্চিত’ শব্দটি থাকার কারণে অতিরিক্ত পাওনার বিষয়টি নিশ্চিত নয় । অর্থাৎ কোন কোন সময় অতিরিক্ত পাওনার পরিবর্তে ক্ষতি হতে পারে । আবার ‘অনির্দিষ্ট’ শব্দটির কারণে বলা যায় যে , অতিরিক্ত পাওনার পরিমাণটি সুনির্দিষ্ট নয় । যেমন আপনি কারো নিকট হতে ১০০০ টাকা নিয়ে ব্যবসায় খাটাতে পারেন বা শিল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন । এক্ষেত্রে যার নিকট হতে আপনি টাকা নিয়েছেন , তাকে আগাম বলতে পারবেন না যে , আমি আপনাকে ২০০ টাকা মুনাফা দেব ।

নরমাল ব্যাংকের চেয়ে তো ইসলামিক ব্যাংক লাভ বেশী নিচ্ছে। আমরা কেন তাহলে ইসলামী ব্যাংকে যাব? ইসলামিক ব্যাংক তো লাভ আরো কম নেওয়া উচিত।

আপনি ঠিকই বলেছেন, অস্ট্রেলিয়াতে নরমাল ব্যাংকের চেয়ে ইসলামী ব্যাংক/ ক্রেডিট কোম্পানী গুলো লাভ বেশী নিচ্ছে। ( যেমন, MCCA, ICFAL )। কিন্তু এর অনেকগুলো কারন ও আছে। প্রথমত: এখানকার ইসলামিক ইসলামী ব্যাংক/ ক্রেডিট কোম্পানী গুলো আকারে ছোট এবং গ্রাহক সংখ্যা ও কম, আবার establishment cost ও আছে। নতুন হিসাবে ঐ সব ইসলামী ব্যাংক/ ক্রেডিট কোম্পানী গুলোকে বিভিন্ন trial and error মাধ্যমের ভিতর যেতে হয়, তাই হয়তবা সাময়িক ভাবে উনাদের লাভ বেশী নিতে হচ্ছে। আশা করি, অদূর ভবিষ্যৎ এ সেটা থাকবে না। আর আপনি সূদী ব্যাংক থেকে লোন নিবেন নাকি ইসলামিক ব্যাংক থেকে লোন নিবেন, সেটা কিন্তু কে লাভ বেশী নিচ্ছে কিংবা কম নিচ্ছে, সেটার উপর নির্ভর করছে না, সেটা নির্ভর করছে আল্লাহ সুবাহানাতাল্লাহর এই ব্যাপারে কি নির্দেশ সেটার উপর। তবে প্রশ্ন হচ্ছে এই বেশী লাভ নেওয়া ইসলাম অনুমোদন করে কিনা? আসুন জেনে নিই ইসলামে কত পারসেন্ট লাভ নেয়া বৈধ?

লাভের পরিমাণ : কোন পণ্যে কত লাভ করা যাবে এরূপ কোন নির্দেশনা কুরআন-হাদীছে পাওয়া যায় না। আবার সকল পণ্যে এক রকম লাভ করা যাবে না এরূপ কোন নিষেধাজ্ঞাও নেই। আসলে শরী‘আতে বিষয়টিকে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। কারণ লাভ নির্ণয়ের বিষয়টি নির্ভর করে স্থান-কাল-পাত্র ভেদে পরিস্থিতি-পরিবেশের উপর। তবে লাভের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা সম্পর্কে একটা ধারণা আমরা হাদীছ থেকে লাভ করতে পারি। উরওয়া ইবনে আবিল জাদ আল-বারেকী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট পশুর একটি চালানের সংবাদ আসল। তিনি আমাকে একটি দীনার দিয়ে বললেন, উরওয়া! তুমি চালানটির নিকট যাও এবং আমাদের জন্য একটি বকরী ক্রয় করে নিয়ে আস। তখন আমি চালানটির কাছে গেলাম এবং চালানের মালিকের সাথে দরদাম করে এক দীনার দিয়ে দুইটি বকরী ক্রয় করলাম। বকরী দু’টি নিয়ে আসার পথে এক লোকের সাথে দেখা হয়। লোকটি আমার থেকে বকরী ক্রয় করার জন্য আমার সাথে দরদাম করল। তখন আমি তার নিকট এক দীনারের বিনিময়ে একটি বকরী বিক্রয় করলাম এবং একটি বকরী ও একটি দীনার নিয়ে চলে এলাম। তখন আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এই হচ্ছে আপনার দীনার এবং এই হচ্ছে আপনার বকরী। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, এটা করলে কিভাবে? উরওয়া বলেন, আমি তখন তাঁকে ঘটনাটি বললাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হে আল্লাহ! আপনি তার হাতের লেন-দেনে বরকত দিন

উল্লেখ্য, উক্ত ছাহাবী রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পক্ষে ১০০% লাভ করা সত্ত্বেও রাসূল (ছাঃ) তার জন্য বরকতের দো‘আ করেছেন এবং এ দো‘আর ফলে উক্ত ছাহাবী জীবনে প্রচুর বরকত লাভে ধন্য হয়েছেন। বুখারীর বর্ণনায় এসেছে, উক্ত ছাহাবী মাটি ক্রয় করলেও তাতে লাভ হ’ত। সুতরাং মজুতদারী না করে, প্রতারণার আশ্রয় না নিয়ে ক্রেতার স্বাভাবিক ও স্বেচ্ছা সম্মতির ভিত্তিতে কোন পণ্য বিক্রি করে বিক্রেতা ১০০% লাভ করলেও শরী‘আতে কোন বাধা নেই। তবে এক্ষেত্রে ক্রেতা বা ভোক্তা যেন যুলুমের শিকার না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা যরূরী।

লাভের সর্বনিম্ন সীমা সম্পর্কে ইসলামী চিন্তাবিদগণ বলেছেন, সম্পদ ব্যবসায় বিনিয়োগ করলে কমপক্ষে এতটুকু লাভ করা যায় যাতে ব্যবসায়ীর পরিবারের ভরণ-পোষণ, ব্যবসার কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান ও ২.৫% যাকাত দেয়ার পর মূলধন অক্ষত থাকে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে মানুষের সাথে দয়ার্দ্র, নম্র ও সদ্ব্যবহার পূর্বক ন্যায্য মূল্য গ্রহণ করা অত্যন্ত নেক কাজ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, رَحِمَ اللهُ رَجُلاً سَمْحًا إِذَا بَاعَ، وَإِذَا اشْتَرَى، وَإِذَا اقْتَضَى ‘আল্লাহ ঐ মহানুভব মানুষের প্রতি দয়া করেন, যে ক্রয়-বিক্রয়ে এবং নিজের পাওনা আদায়ে নম্রতা ও সহনশীলতা প্রদর্শন করে’।

ইসলামী ব্যাংকিং এর আদর্শগত ভিত্তিঃ

ইসলামী ব্যাংকিং এর আদর্শগত ভিত্তি ইসলামী অর্থনীতি, যা দ্বীন ইসলামের সাথে সম্পর্কহীণ কিছু নয়, বরং এর একটি অংশ মাত্র। অর্থনীতির তিনটি মৌলিক প্রশ্ন- Whatto Produce, How to produce and For whom to Produce এর উত্তর ইসলামী অর্থনীতি খোঁজে ঐশী নির্দেশনার মাঝে, প্রচলিত অর্থনীতির মত Trial & Error পদ্ধতিতে নয়।

ইসলামী অর্থনৈতিক মতাদর্শের কয়েকটি মূলনীতি উল্লেখ করলেই পার্থক্যটি স্পষ্ট হবে।

প্রচলিত অর্থনীতি হল অসীম চাহিদা সীমিত সম্পদ দিয়ে কার্যকরভাবে মিটানোর উপায়।(Effective Allocation of scarce resources to meet unlimited demand) অন্যদিকে ইসলামী অর্থনীতি অনুযায়ী মানুষের চাহিদা অসীম হলেও সব চাহিদা মিটানোর যোগ্য নয়। সমাজে ফেন্সিডিল বা পর্ণোগ্রাফির বিপুল চাহিদা থাকলেই ইসলামী রাষ্ট্র তা উৎপাদন করা শুরু করবে না। আবার ইসলামী অর্থনৈতিক দর্শন অনুযায়ী সম্পদ সীমিত নয়। আল্লাহ দুনিয়াতে মানুষ পাঠিয়েছেন কিন্তু তাদের ন্যায্য চাহিদা মিটানোর মত সম্পদ দিয়ে দেন নি-এই ধারণা

আল্লাহর প্রজ্ঞা, দয়াশীলতা তথা তাওহীদের দর্শনের সাথে সাংঘর্ষিক। (W.F.O র তথ্যও এই

বক্তব্য সমর্থন করে যে পৃথিবীতে ক্ষুধা সমস্যার কারণ খাদ্যের অভাব নয়) কিন্তু তাহলে এত দারিদ্র্য কেন? কঠিন প্রশ্নের সহজ উত্তর। দুনিয়াতে পরীক্ষাস্বরূপ আল্লাহ সবার হাতে সমান সম্পদ না দিয়ে আমাদের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন কিভাবে সেই সম্পদ ব্যবহার করা যায়। মানুষ যখন সেই নীতিমালা অনুসরণ করবে তখন অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান অনিবার্য।

ইসলামী অর্থনীতির আরেকটি মূলনীতি হল সম্পদের মালিকানা নিয়ে এর দৃষ্টিভঙ্গি। আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের অংশ হিসেবে সম্পদের মালিকানা আসলে আল্লাহর। তাই সম্পদ উপার্জন, বণ্টন, ব্যয় সব ব্যাপারে আমাদের সাবধান থাকতে হবে, জবাবদিহিতার ব্যাপারটি মাথায় রাখতে হবে।

ইসলামী অর্থনীতির তাত্ত্বিক বিষয়গুলো বাস্তবে প্রয়োগ করে ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।যেমন ইসলামী ব্যাংক, ইন্সুরেন্স ইত্যাদি। তাই ইসলামী ব্যাংকের সাথে প্রচলিত ব্যাংকের প্রথম পার্থক্য আদর্শগত-যা থেকে জন্ম নেয় অন্যান্য কার্যপদ্ধতিগত পার্থক্যের।

ইসলামী অর্থনীতির ব্লক সমূহ:

আমরা আগেই বলেছি, প্রচলিত অর্থনীতি হল অসীম চাহিদা সীমিত সম্পদ দিয়ে কার্যকরভাবে মিটানোর উপায়।(Effective Allocation of scarce resources to meet unlimited demand) অন্যদিকে ইসলামী অর্থনীতি অনুযায়ী মানুষের চাহিদা অসীম হলেও সব চাহিদা মিটানোর যোগ্য নয়। আর সেই জন্য ইসলামী অর্থনীতিতে কিছু ব্লক রয়েছে। নীচের চিএ দিয়ে যেটা সুস্পস্ট ভাবে বুঝা যায়। সমাজে প্রচুর পরিমান চাহিদা কিংবা ব্যবসায়ে লাভের সম্ভবনা থাকলেও ইসলামী ব্যাংক অনেক ক্ষেএ বিনিয়োগ করতে পারে না। যেমন: মদ, জুয়া, পর্নোছবি কিংবা সুদের সাথে সম্পর্কীত কোন ব্যবসা। এসব ক্ষেতে ইসলামী শরিয়া যেহেতু অনুমতী দেয় না, অর্থ্যাৎ সেগুলো হারাম, তাই ঐসব ব্যবসা করা যাবে না। নীচের চিএ ইসলামী অর্থনীতির ব্লক সমূহ এক নজরে দেখে নেওয়া যেতে পারে। ইসলামী অর্থনীতির মানদন্ড যেহেতু কোরআন ও হাদীস সেহেতু এর বাহিরে যাওয়ার কোন সুষোগ নাই। আমরা এখানে শুধু রিবা বা সুদ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে সেটা দেখি।



আল্লাহ সুবাহানাতাল্লাহ বলেন,

যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দণ্ডায়মান হবে, যেভাবে দণ্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে: ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লাহ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে। [২:২৭৫] আল্লাহ তা’আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে। [২:২৭৬]

সুদের এই ভয়াবহতা আমাদেরকে সুদ ভিত্তিক অর্থনীতি থেকে দূরে রাখে।

ইসলামী অর্থনীতির ইনভেস্টমেন্টকে আমরা মোটামুটি নীচের চিএ অনুযায়ী তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি।

১। বাই - মেকানিজম

২। শেয়ার মেকানিজম

৩। ইজারা মেকানিজম

প্রথমত বাই মেকানিজম নিয়ে আমরা অলোকপাত করবো:

বাই - মেকানিজম কে আবার আমরা প্রধানত চারভাগে ভাগ করতে পারি:

 বাই মুরাবাহা (সম্মত লাভে বিক্রয়)

 বাই মুয়াজ্জাল (বাকিতে বিক্রয়)

 বাই'সালাম (অগ্রিম ক্রয়)

 ইসতিসনা (আদেশের ভিত্তিতে ক্রয়)



বাই মুরাবাহা (সম্মত লাভে বিক্রয়)



বাই' মুরাবাহা শব্দ দু'টি আরবী বাইয়ুন এবং রিবহুন শব্দদ্বয় থেকে এসেছে। বাইয়ুন শব্দটির অর্থ ক্রয়-বিক্রয় এবং রিবহুন শব্দের অর্থ হল সম্মত মুনাফা। কাজেই বাই' মুরাবাহার অর্থ সম্মত মুনাফায় বিক্রয়।

সংজ্ঞাঃ নগদে অথবা ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোনো সময়ে একসাথে অথবা নির্ধারিত কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের শর্তে বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়ের সম্মতিক্রমে ক্রয়মূল্যের উপর নির্ধারিত মুনাফা ধার্য করে নির্দিষ্ট পরিমাণ শরীয়াহ্ অনুমোদিত পণ্যসামগ্রী বিক্রয় করাকেই বাই' মুরাবাহা বলে।

বৈশিষ্ট্য:

 ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সম্মত নির্ধারিত লাভে বিক্রয়।

 ক্রয়মূল্য ও মুনাফা ক্রেতাকে আলাদাভাবে জানাতে হয়।

 মাল ক্রয় ও পরে বিক্রি করা শর্ত।

 মালের অস্তিত্ব থাকতে হবে এবং ক্রয়যোগ্য হতে হবে।

 রূপান্তরের সুযোগ ও ঝুঁকি থাকার কারণেই এ পদ্ধতি শরীয়াহসম্মত।

 লাভ শতকরা হিসাবে নির্ধারিত করা হলেও শরীয়াতে নিষেধাজ্ঞা নেই।

 চুক্তির পর নির্ধারিত মূল্য বৃদ্ধি করা যায় না।

বাই মুয়াজ্জাল (বাকিতে বিক্রয়)

বাই'মুয়াজ্জাল শব্দ দু'টি আরবী বাই' এবং ‘আজল' শব্দদ্বয় থেকে এসেছে। বাই শব্দটির অর্থ ক্রয়-বিক্রয় এবং আজল শব্দটির অর্থ নির্ধারিত সময়। কাজেই বাই' মুয়াজ্জাল শব্দদ্বয়ের অর্থ ভবিষ্যতে কোনো নির্ধারিত তারিখে অথবা ভবিষ্যতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধের শর্তে বাকি মূল্যে বিক্রি।

সংজ্ঞাঃ ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোনো সময়ে একসাথে অথবা নির্ধারিত কিস্তিতে সম্মতমূল্য পরিশোধের শর্তে নির্দিষ্ট পরিমাণ শরীয়াহ্ অনুমোদিত পণ্যসামগ্রী বিক্রয় করাকে বাই' মুয়াজ্জাল বলে।

বৈশিষ্ট্য:

 ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোন সময়ে নির্ধারিত দাম পরিশোধের শর্তে বাকিতে বিক্রি।

 মাল ক্রয় করে মালিকানা লাভ করার পর বিক্রয় করতে হবে।

 মাল ক্রয় করে অর্থকে মালে রূপান্তর এবং মাল বিক্রি করে মালকে অর্থে রূপান্তর করতে হবে।

 বাই' মুয়াজ্জালের চুক্তি সম্পাদনের সময় মালের অস্তিত্ব থাকতে হবে এবং ক্রয়যোগ্য হতে হবে।

 বাই' মুয়াজ্জালে ব্যাংক ক্রয়মূল্য ও লাভ বিনিয়োগ গ্রাহকের নিকট পেশ করা জরুরী নয়।

 মাল ক্রয়ের পর ক্রেতার/গ্রাহকের কাছে বিক্রি ও হস্তান্তর করার পূর্ব পর্যন্ত ব্যাংককে মালের ঝুঁকি বহন করতে হবে।

 রূপান্তরের সুযোগ ও ঝুঁকি থাকার কারণেই এ পদ্ধতি বৈধ।

বাই'সালাম (অগ্রিম ক্রয়)

বাই' সালাম শব্দ দুটি আরবী বাই এবং ‘সিলমুন' শব্দদ্বয় থেকে এসেছে। বাই' শব্দটির অর্থ ক্রয়-বিক্রয় এবং ‘সিলমুন' শব্দটির অর্থ ‘অগ্রিম'। কাজেই বাই'সালাম শব্দটির অর্থ অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়।

সংজ্ঞাঃ ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোনো সময়ে সরবরাহের শর্তে এবং তাৎণিক সম্মতমূল্য পরিশোধ সাপেে নির্দিষ্ট পরিমাণ শরীয়াহ অনুমোদিত পণ্য সামগ্রী অগ্রিম বিক্রয় করাকে বাই'সালাম বলে।

বৈশিষ্ট্য:

 অগ্রিম ক্রয়,

 অগ্রিম গৃহীত অর্থের দ্বারা মাল তৈরি করে সরবরাহ করা হয় বিধায় দাম আগে নিয়ে মাল পরে দেয়া হয়।

 মালামালের সম্পূর্ণ দাম চুক্তির সময়ই দিতে হয়।

 দ্রব্য সামগ্রীর অস্তিত্ব ছাড়াই ক্রয়-বিক্রয় বৈধ।

 দ্রব্য-সামগ্রীর অস্তিত্ব থাকলে বাই'সালাম হবে না। সেেেত্র বাই'মুয়াজ্জাল বা বাই' মুরাবাহা প্রযোজ্য।

 পণ্যের দাম, বিবরণ, পরিমাণ, গুণাগুণ, আকার, এককপ্রতি দাম, মোট দাম ইত্যাদি সুস্পষ্টভাবে চুক্তিতে থাকতে হবে।

ইসতিসনা (আদেশের ভিত্তিতে ক্রয়)



ইসতিসনা' শব্দটি আরবী সানাআ শব্দ থেকে এসেছে। সানাআ শব্দের অর্থ শিল্প। সুতরাং ইসতিসনা শব্দের অর্থ কোনো উৎপাদনকারীর কাছে থেকে সুনির্দিষ্ট পণ্যসামগ্রী ক্রেতার ফরমায়েশ অনুযায়ী তৈরি করে বিক্রি করা।

সংজ্ঞাঃ অগ্রিম অথবা ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোনো সময়ে নির্ধারিত কিস্তিতে সম্মতমূল্য পরিশোধের শর্তে ক্রেতার ফরমায়েশ অনুযায়ী শরীয়াহ, অনুমোদিত পণ্য সামগ্রী তৈরি করে বিক্রয় করাকে ইসতিসনা' বলে।

বৈশিষ্ট্য:

 মালের দাম অগ্রিম/এককালীন/কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য।

 অর্ডার দিয়ে মাল তৈরি করানো ও পরে দাম দেয়া বৈধ।

 বাই'সালামের ন্যায় ইসতিসনা' পদ্ধতিতে মালের অস্তিত্ব ছাড়াই বেচা-কেনা সংঘটিত হওয়া শরীয়াহ সম্মত।



শেয়ার মেকানিজমের প্রধানত দুইটি ভাগ রয়েছে:

১।মুদারাবা (উদ্যোক্তার মাধ্যমে বিনিয়োগ)

২।মুশারাকা (অংশীদারিত্ব ভিত্তিক বিনিয়োগ)



আরবী ‘দারবুন' শব্দ থেকে ‘মুদারাবা' শব্দের উৎপত্তি। মুদারাবা শব্দের অর্থসমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে ভ্রমণ। তাই ইসলামী চিন্তাবিদগণ আল্লাহর অনুগ্রহ অনে¦ষণে ব্যবসার উদ্দেশ্যে ভ্রমণকে মুদারাবার মৌলিক বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

সংজ্ঞাঃ যে কারবার এক প মূলধন যোগান দেয় এবং দ্বিতীয় প শ্রম, মেধা ও সময় ব্যয় করে এবং চুক্তি অনুযায়ী লাভ নেয় অথবা দ্বিতীয় পরে অবহেলাজনিত কারণ ছাড়া সমুদয় আর্থিক মূলধন যোগানদাতা বহন করে তাকে মুদারাবা বলে।

বৈশিষ্ট্য:

০ মুলধন যোগানদাতাকে ‘সাহিব-আলমাল' এবং উদ্যোক্তাকে ‘মুদারিব' বলা হয়।

০ এক পরে পুঁজি আর এক পরে শ্রম।

০ লাভ হলে চুক্তি সম্মত হারে ভাগ করে নেয়।

০ লোকসান পুঁজির মালিকের।

০ পুঁজির মালিক, অংশীদার হিসেবে পুঁজি দিয়ে বিনিয়োগ করে।

০ সাহিব-আল-মাল পুঁজির ঝুঁকি নেয়।

মুশারাকা (অংশীদারিত্ব ভিত্তিক বিনিয়োগ)

আরবী শব্দ ‘শিরকাত' অথবা ‘শরীকাত' (শিরক) থেকে মুশারাকা শব্দের উৎপত্তি। তাই শাব্দিক দিক দিয়ে মুশারাকা অর্থ অংশীদারিত্ব। সমসাময়িক অর্থনীতিবিদগণ ও ব্যাংকারদের মধ্যে মুশারাকা শব্দটি ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেছে।

সংজ্ঞাঃ যে কারবারে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি মুলধন যোগান দেয়, সকলে অথবা কেউ কেউ কারবার ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় অংশ নিয়ে চুক্তি অনুযায়ী লাভ নেয় এবং লোকসান হলে মুলধন অনুপাতে বহন করে তাকে মুশারাকা বলে।

বৈশিষ্ট্য:

 দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে পুঁজি যোগান দেয়।

 সকলেরই কারবার পরিচালনার অধিকার থাকে।

 লাভ হলে সম্মত হারে ভাগ করে নেয়।

 লোকসান হলে পুঁজির আনুপাতিক হারে সকলেই বহন করে।

 পুঁজি রূপান্তরের ও ঝুঁকি সকলেই বহন করে।

বিনিয়োগের অপর মেকানিজম হলো " হায়ার পারচের্জ আন্ডার শিরকাতুল মুলক"

এই মেকানিজমকে বুজতে গিয়ে আমরা প্রথমে জানবো লিজিং বা ইজারা কি? সাথে সাথে জানতে হবে হায়ার পারচের্জ বলটে আমরা আসলে কি বুঝি।

লিজিং বা ইজারা

ইজারা শব্দটি আরবী। এটি আজর বা উজরাত থেকে এসেছে। এর অর্থ প্রতিদান, আয়, মজুরি, ভাড়া ইত্যাদি। ইজারা এমন এক ধরনের চুক্তি, যেখানে ভাড়া গ্রহীতা নির্দিষ্ট ভাড়া প্রদানপূর্বক ভাড়া গ্রহীতার নিকট থেকে ভাড়াদাতার মালিকানাধীন সম্পদ থেকে সেবা/সুবিধা ভোগ করে।

সংজ্ঞাঃ যে বিনিয়োগ পদ্ধতিতে স্থায়ী প্রকৃতির সম্পদ ক্রয় অথবা তৈরি করে নির্ধারিত ভাড়ার বিনিময়ে অন্যকে ব্যবহার করতে দেয়া হয় তাকে ইজারা বলে।

বৈশিষ্ট্য:

 স্থায়ী সম্পদ কিনে ভাড়া দেয়া এবং মেয়াদ শেষে মাল ফেরত নেয়া।

 রূপান্তর আছে।

 ঝুঁকি আছে।

হায়ার পার্চেজ (ক্রয়ের চুক্তিতে ভাড়া/ইজারা বিল বাই')

যে বিনিয়োগ পদ্ধতিতে এক প সমুদয় যোগান দিয়ে কোনো স্থায়ী প্রকৃতির সম্পত্তির মালিকানা অর্জনপূর্বক তা নির্ধারিত ভাড়ায় ও আসল অর্থ নির্ধারিত কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে অন্য পরে নিকট ভাড়া দেয় বা বিক্রি করে তাকে হায়ার পার্চেজ ও ইজারা বিল বাই' বলে।

বৈশিষ্ট্য:

 পুঁজি দ্বারা মাল ক্রয় বা তৈরি করে মালের মালিক হওয়া।

 হস্তান্তর যোগ্য মালের ঝুঁকি বহন করা।

 দাম সম্পূর্ণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত মালিক থাকা।

হায়ার পার্চেজ আন্ডার শিরকাতুল মিল্ক (মালিকানায় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ভাড়ায় ক্রয়)

হায়ার পার্চেজ আন্ডার শিরকাতুল মিল্ক একটি বিশেষ ধরনের চুক্তি। প্রকৃতপে এর মধ্যে শিরকাত, ইজারা এবং বিক্রয় এ তিনটি পদ্ধতির সমন¦য় ঘটেছে। শিরকাত শব্দের অর্থ অংশীদারিত্ব। শিরকাতুল মিল্ক এর অর্থ মালিকানায় অংশীদারিত্ব। যখন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ হয়ে যৌথ মালিকানা অর্জনের নিমিত্তে মূলধন বিনিয়োগ করে কোনো সম্পদ অর্জন করে তখন এ ধরনের কারবারে সম্পত্তি থেকে অর্জিত আয় পগণের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী বণ্টিত হয় এবং লোকসান হলে তা তারা মুলধন অনুপাতে বহন করে।

সংজ্ঞাঃ যে পদ্ধতিতে দুটি প সম অথবা অসম অনুপাতে মূলধন যোগান দিয়ে কোনো সম্পত্তির মালিকানা অর্জনপূর্বক পরস্পর সম্মতিক্রমে ভাড়া ও বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে নির্ধারিত কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে এক পরে অংশ অন্য পরে নিকট ভাড়া দেয় ও বিক্রয় করে তাকে হায়ার পার্চেজ আন্ডার শিরকাতুল মিল্ক বলে।

এ ধরনের বিনিয়োগে ভাড়া , ক্রয় এবং অংশীদারিত্ব এই তিনটি পদ্ধতির সমন্বয় হয়েছে । সাধারণত বাড়ী বা গাড়ীর ক্ষেত্রে এ ধরনের বিনিয়োগ করা হয় । যেমন আপনি ১ লক্ষ টাকা এবং ইসলামী ব্যাংক ৪ লক্ষ টাকা মোট ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি বাড়ী ক্রয় বা নির্মাণ করা হল । এক্ষেত্রে আপনি বাড়ীর ২০% এবং ইসলামী ব্যাংক ৮০% এর (মূলধন বিনিয়োগ অনুযায়ী) মালিক । এক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক বাড়ীর ৮০% অংশ আপনার নিকট ইজারা বা ভাড়া দিবে । যদি বাড়ীর বাৎসরিক ভাড়া ৭৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয় , তবে ইসলামী ব্যাংক এর ৮০% অর্থাৎ ৬০ হাজার টাকা পাবে । আপনি যদি বাৎসরিক ভাড়া ৬০ হাজার দেয়ার পরও আরও অতিরিক্ত ১ লক্ষ টাকা দেন , তবে বছর শেষে বাড়ীর মালিকানা আপনার ২০% হতে বৃদ্ধি পেয়ে ৪০% এবং ইসলামী ব্যাংকের হ্রাস পেয়ে ৬০% হবে । এভাবে ভাড়া প্রদানের সাথে সাথে ব্যাংকের বিনিয়োগকৃত ৪ লক্ষ টাকা ক্রমান্বয়ে পরিশোধ করতে থাকলে বাড়ীর মালিকানায় আপনার অংশ বাড়তে থাকেবে এবং ইসলামী ব্যাংকের অংশ কমতে থাকবে এবং এক সময় আপনি বাড়ীর সম্পূর্ণ অংশের মালিক হয়ে যেতে পারবেন

বিভিন্ন বিনিয়োগ ম্যাকানিজমে শরীয়াহর ভিত্তি

মুদারাবা বিনিয়োগ পদ্ধতির বৈধতা কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা সম্পর্কিত

“কুরআন মাজীদে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যারা জমিনে পরিভ্রমণ করে আল্লাহর দয়া/রিযক লাভের প্রত্যাশায়” এ আয়াতে ব্যবহৃত ‘দারাবা' (পরিভ্রমণ করা) শব্দ থেকেই মুদারাবা শব্দটি এসেছে। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ঐসব পরিভ্রমণকারীদের কথা বলা হয়েছে, যারা বৈধ পন্থায় ব্যবসা বা হালাল আয়ের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয় এবং অর্জিত রিযক দ্বারা নিজের ও পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করে থাকে। হাদীসের একটি বর্ণনা মতে, হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা) মুদারাবা পদ্ধতিতে মূলধন বিনিয়োগ করতেন এবং মুদারিবের উপর নিুবর্ণিত শর্তাদি আরোপ করতেন, যেমন- মুদারিব সাগর পথে পরিভ্রমণ করবেন না, উপত্যকা পাড়ি দেবেন না এবং গবাদি পশু কেনা-বেচার ব্যবসা করবেন না। এসব শর্ত লঙ্ঘন করে কারবার করলে এবং তাতে তি হলে মুদারিব সেজন্য দায়ী হবেন। এ শর্তগুলো মহানবী (স) কে শোনানো হলে তিনি অনুমোদন দিয়েছেন। এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, সাহিব আল-মাল শর্ত আরোপ করার অধিকার রাখেন।

আরেকটি হাদীস থেকে জানা যায়, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) এক ইয়াতিমের টাকা জনৈক ব্যক্তিকে মুদারাবা পদ্ধতিতে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে দিয়েছেন এবং তিনি ঐ মুদারাবা ফান্ড দিয়ে ইরাকে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। মহানবী (স) নিজেই হযরত খাদিজা (রা)-এর মূলধন দিয়ে মুদারাবা কারবার পরিচালনা করেছেন। এটি প্রাক-ইসলামী যুগের ঘটনা। ইসলামী সমাজে এ পদ্ধতিকেই গ্রহণ করা হয়। ইবনুল মুনযির উল্লেখ করেছেন, ফকীহদের মধ্যে মুদারাবা পদ্ধতির কারবারের ব্যাপারে ঐকমত্য রয়েছে।

মুশারাকা/শিরকত বিনিয়োগ পদ্ধতির বৈধতা একাধারে কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা' দ্বারা সমর্থিত ও প্রতিষ্ঠিত। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা অংশীদার হবে এক তৃতীয়াংশের' (সূরা নিসা: ১২) পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘শরীকদের অনেকেই একে অপরের প্রতি জুলুম করে থাকে; (জুলুম) করে না কেবল সেসব লোকেরা, যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ও সৎকর্ম সম্পাদনকারী। অবশ্য এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। (সূরা সোয়াদ: ২৪)

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) মহানবী (স)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, “আল্লাহ তাআলা বলেন, দু'জন অংশীদারের সাথে আমি তৃতীয় জন হয়ে থাকি; যতণ না তাদের একজন তার অপর সাথী (অংশীদার)-এর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। আর যখনই কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করে তখন

সেখান থেকে বের হয়ে আসি। দু'জন অংশীদারের উপর আল্লাহর হাত (সাহায্য) অব্যাহত থাকে, যতণ না তারা পরস্পর বিশ্বাসঘাতকতা করে।” (আবু দাউদ)

হযরত যায়েদ (রা) বলেন, “আমি ও বারা (রা) দু'জন শরীক।” (বুখারী) ইবনুল মুনযির (রা) বর্ণনা করেছেন, শিরকাত পদ্ধতির পে সকল যুগের আইনবেত্তাগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

বাই' ম্যাকানিজমসমূহের শরীয়াহ্র ভিত্তি

বাই' ম্যাকানিজসমূহের বৈধতা কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা' দ্বারা প্রমাণিত। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, “আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন।” (সূরা বাকারা: ২৭৫)” “হে মু'মিনগণ! তোমরা একে অন্যের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে আÍসাৎ করো না; তবে তোমাদের পরস্পরের সম্মতিতে ব্যবসা করা বৈধ। (সূরা নিসা: ২৯)।

বাই' মুরাবাহা

বাই' যেহেতু বৈধ, তাই বাই' মুরাবাহাও বৈধ। কারণ, আল্লাহ তাআলা ক্রয়-বিক্রয়কে বৈধ করেছেন। কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী আল্লাহর করুণা প্রত্যাশা করা দোষের নয়।” মুফাসসিরীন কেরাম ‘করুণা' বলতে লাভ বুঝিয়েছেন। মুরাবাহা ‘তাওলিয়াহ' নামক একই ধরনের বেচা-কেনার অনুরূপ, যেখানে বিক্রেতা তার নিজের জন্য কোনো মুনাফা ধার্য না করে কেবল ক্রয়মূল্যে পণ্য বিক্রয় করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একবার মহানবী (স) হযরত আবু বকর (রা)-এর নিকট থেকে মাদি উট ক্রয় করেছেন, যাদ্বারা তিনি মদীনা গমন করেছেন। হযরত আবু বকর (রা) চেয়েছিলেন উটটিকে এমনি এমনি দিয়ে দিতে, কিন্তু মহানবী (স) এতে অসম্মত হলেন এবং বললেন “বরং আমি একটি নির্ধারিত মূল্যে নেব।” অধিকাংশ ফকীহ বাই' মুরাবাহার বৈধতা হিসেবে একেই নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক-এর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ব্যাপকভাবে বাই' মুরাবাহা পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে।

বাই-ই-সালাম

বাই' সালাম পদ্ধতির বৈধতা কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা' দ্বারা প্রমাণিত। কুরআন মাজীদে ইরশাদ করা হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য লেনদেন কর তখন তা লিখে নাও।” (সূরা বাকারা: ২৮১)। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, উপরিউক্ত আয়াতে বাই, সালামকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ দ্রব্যের মূল্য অগ্রিম পরিশোধের মাধ্যমে চুক্তিতে ক্রয় হচ্ছে বাই' সালাম। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, মহানবী

(সঃ) বলেন, “যে বা যারা খেজুরের জন্য আগাম মূল্য পরিশোধ করবে তা তারা করবে নির্দিষ্ট আকার বা ওজনের ভিত্তিতে।” আরেক হাদীসে এসেছে, “নির্দিষ্ট আকার, ওজন ও সরবরাহের তারিখের ভিত্তিতে।”

ইমাম বুখারী ও মুসলিম (রহ.) বর্ণনা করেছেন, “মহানবী (সঃ) যখন হিজরত করে মদীনায় এসেছেন তখন সেখানকার অধিবাসীগণ ফলের জন্য এক বছর ও দু বছর মেয়াদের জন্য বাই' সালাম করছিল। মহানবী (সঃ) এরশাদ করলেন, “যে কেউ বাই' সালাম করবে সে যেন সুনির্দিষ্ট বাটখারা পরিমাপ করে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য তা করে। সকল ফকীহ বাই' সালাম চুক্তির বৈধতার ব্যাপারে সর্বসম্মতভাবে একমত। ইবনুল মুনযির (রাঃ) বলেন, সকলের মতামতে সালাম চুক্তি এমন একটি চুক্তি, যেখানে একজন আরেক জনের কাছে কোনো বস্তু নির্দিষ্ট আকার, ওজন ও সরবরাহের তারিখের ভিত্তিতে বিক্রয় করে যা অনুমোদিত।

বাই' ইসতিসনা

মহানবী (সঃ)-এর একটি অনুরোধের ঘটনায় বাই' ইসতিসনা পদ্ধতি বৈধতা লাভ করেছে। একবার মহানবী (সঃ) একটি মিম্বার ও সীলমোহর (মোহরাঙ্কিত আংটি) তাঁর জন্য বানিয়ে দিতে কারিগরকে অনুরোধ করেছিলেন। অর্ডার দিয়ে মাল তৈরি করিয়ে বা বানিয়ে নিয়ে পরে দাম দেয়া বৈধ। ইসতিসনা একটি বাধ্যতামূলক চুক্তি। এটা শুধু প্রতিশ্র“তি নয় ওআইসি ফিকাহ্ একাডেমি বাই' ইসতিসনাকে বৈধ বিনিয়োগ পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

ইজারা

কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা' দ্বারা ইজারার বৈধতা প্রমাণিত। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, “তাদের একজন বললঃ হে পিতা! আপনি তাকে ভাড়ার শর্তে নিযুক্ত করুন। নিশ্চয়ই শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিকেই ইজারায় খাটানো উত্তম।” (সূরা কাসাস: ২৬)

হাদীসে আছে, মহানবী (সঃ) বলেছেন, “যে বা যারা একজন শ্রমিক খাটাল, অবশ্যই তাকে তার মজুরী সম্পর্কে জানাতে হবে।”

একজন সাধারন মুসলিম হিসাবে আমাদের করনীয়:

ইসলামী অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা প্রতিটি মুসলিমের ঈমানের দাবী। আর ঈমান বাঁচানোর কাজ উলামায়ে কিরামই বেশি করে থাকেন। তাই এ সেক্টরে উলামায়ে কিরামের সবচেয়ে অগ্রগামী হওয়া সময়ের দাবী। মসজিদের খুতবায়, দৈনিক-সাপ্তাহিক বা মাসিক পত্রিকায় লেখনীতে, বিভিন্ন বয়ানে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। অনুরূপভাবে সাধারণ মানুষের জন্যও আধুনিক মুয়ামালাত বুঝার কোর্স চালু করা যেতে পারে। শরীয়াহ বোর্ডের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজন দক্ষ উলামায়ে কিরাম। এ জায়গাটায় বর্তমানে যোগ্য লোকের প্রচণ্ড অভাব। ফলে শরীয়াহ লঙ্ঘন হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার।

আজকাল ব্যাংকের সাথে লেনদেন করার ব্যাপারটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে, আর আমাদের ইচ্ছা অনিচ্ছার অধীন নেই। যাদের জীবিকা অর্জনের মূল উৎস ব্যবসা নয় তারা হয়তবা চাইলে ব্যাংকের সাথে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে লেনদেন না করেও চলতে পারেন, কিন্তু যারা ব্যবসা করেন, তাদের ক্ষেত্রে এটা সত্যি নয়। তাই একটি আধুনিক সমাজে ব্যাংকের অবস্থানের ব্যাপারে কথা বলার সময় শুধু নিজের কথা চিন্তা না করে একটি সামষ্টিক অর্থনীতির কথা চিন্তা করতে হবে, বিবেচনায় আনতে হবে সমাজের সকল স্তরের মানুষের কথা।

বিষয়: বিবিধ

২৬৮৬ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

379288
৩০ অক্টোবর ২০১৬ রাত ০৯:৫০
স্বপন২ লিখেছেন : ভালো লাগলো / অনেক ধন্যবাদ
খন্ড আকারে প্রকাশ করলে ভাল হতো।

৩১ অক্টোবর ২০১৬ রাত ০৩:২২
314083
ওরিয়ন ১ লিখেছেন : খন্ড আকারে প্রকাশ করলে অবশ্যই ভালো হতো। এতবড় লিখা অনেকেই ধর্ষ্য ধরে পড়বে না জানি। কিন্তু আমি নিজে ও ব্লগে রেগুলার না। ভাবলাম একসাথেই দিয়ে দিই, যাদের প্রয়োজন সংগ্রহে রাখবেন, পরে না হয় আস্তে ধীরে পড়বেন।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
৩১ অক্টোবর ২০১৬ রাত ০৩:২২
314084
ওরিয়ন ১ লিখেছেন : খন্ড আকারে প্রকাশ করলে অবশ্যই ভালো হতো। এতবড় লিখা অনেকেই ধর্ষ্য ধরে পড়বে না জানি। কিন্তু আমি নিজে ও ব্লগে রেগুলার না। ভাবলাম একসাথেই দিয়ে দিই, যাদের প্রয়োজন সংগ্রহে রাখবেন, পরে না হয় আস্তে ধীরে পড়বেন।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
379295
৩১ অক্টোবর ২০১৬ দুপুর ১২:৫৭
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : দারুণ পোস্ট। অনেক প্রশ্ন এবং অনেক অহেতুক প্রশ্নেরও জবাব মিলবে। জাযাকাল্লাহ খাইরান। পোস্টটি ফেসবুকে শেয়ার দিলাম ও সংরক্ষণ করলাম।
০১ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ০৫:২১
314089
ওরিয়ন ১ লিখেছেন : ঝাঝাকুমুল্লাহ খায়ের। আল্লাহ আপনাকে জান্নাত বাসী করুক, আমীন।
379325
০১ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ০৮:০০
তিমির মুস্তাফা লিখেছেন : আপনার ইসলামী ব্যাংকিং এর উপর বিস্তারিত আলোচনা ভাল লেগেছে! তবে একটা যুক্তি হয়তো যুক্তির খাতিরে লিখেছেন, কিন্তু সে যুক্তি ইসলামের পরিপন্থী! হারাম হালালের বিষয়ে শতকরা পাঁচ বা দশ ভাগ হালাল বা হারাম বলে শরিয়তে কোন কিছুই গ্রহণ যোগ্য হবে না! কেউ যদি বলে আমার এই পণ্য ৯৯ ভাগ হালাল, তাহলে কি সেটা হালাল হবে? ১ ফোটা হারাম আর এক বোতল হারাম পণ্যের মধ্যে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন পার্থক্য নেই- দুটোই হারাম।
প্রথম দিকে ঠিকই বলেছেন, সন্দেহ রয়েছে এমন বিষয় থেকে আপনাকে আমাকে দূরে থাকতেই হবে! সুদী ব্যাংকের বিপরীতে যারা ইসলামী ব্যাংকিং এর ব্যবস্থা করেছেন, তাদের উপর আমাদের আস্থা না রাখলে চলবে কেন? আর যদি সন্দেহ থাকে- তবে এ ব্যাংক আমার জন্য নয়!
সূদী ব্যাংকের সাথে ইসলামী ব্যাংকের তুলনা হয় কিভাবে? আপেল এর তুলনা হবে আপেলের সাথে, কমলার সাথে কমলার। কাজেই যারা এমনটা তুলনা করে অতিরিক্ত লাভের জন্য সুদী ব্যাংকের সাথে লেনদেন করছে, বা ইসলামী ব্যাঙ্কের ক্রুটি বের করার চেষ্টা করছে, তাদেরকে বুঝাতে গিয়ে আপনার সময়ের অপচয় করার প্রয়োজন নেই! তারা বুঝবে না!
ধন্যবাদ আপনাকে কষ্ট করে এত বিস্তারিত লেখার জন্য! জাজাকাল্লাহু খায়ের!
০২ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ০৬:০৬
314103
ওরিয়ন ১ লিখেছেন : যাযাকুমুল্লাহ খায়ের বিস্তরিত কমেন্টের জন্য। আপনি আমার লিখার মূল উদ্দেশ্য মনে হয় ধরতে পারেন নি।
লিখার মূল বিষয়টা হচ্ছে, একটা ইসলামিক ব্যাংক, কিংবা একটা ইসলামিক প্রতিস্ঠান এই অন ইসলামিক বিশ্বে ( সূদী বিশ্বে) কিভাবে ১০০% ইসলামিক হবে? এটা কি আসলেই সম্ভব? আপনি, আমি কেন সেটা আশা করছি? ওকে, ধরুন কিছু মুসলিম পরিপূর্নভাবে ইসলাম পালন করেন না। নামাজ পড়েন, রোষা রাখেন আবার সূদ, ঘুষ, গীবত, চোগলখুরী সহ হারাম কিংবা কবিরা গুনাহ করেন, এখন আমারা কি ঐ সব মুসলিমদের বলবো, তোমরা যেহেতু পরিপূর্নভাবে ইসলাম পালন করো না, তাহলে তোমরা নিজেদেরকে মুসলিম দাবী করো না। নাকি ঐ সব ভাইদের পরিপূর্নভাবে ইসলাম পালন করার জন্য পদক্ষেপ নিবো? বিশ্বটা যদি ইসলামিক হয় তাহলে ইসলামিক প্রতিস্ঠান সহজেই প্রতিস্ঠা করা যাবে। কিন্তু আমরা কি ঐ আশায় বসে থাকবো, ফেরেস্তেরা এসে বিশ্বকে ইসলামাইজড্ করে দিয়ে যাবে। ভাই খুব দুঃখজনক হলেও সত্যি যে ক্বুরআন সুন্নাহর আলোকে ইসলাম পালন বা ইসলামকে সম্পূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণের যে কোন প্রচেষ্টা মুসলিমদের দ্বারাই সমালোচিত হয় সবার আগে। ইসলামী ব্যাংকিং এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বিশ্ব সূদী অর্থনীতির কারনে ইসলামিক ব্যাংক সমূহ ১০০% ইসলামিক হতে পারছে না। কিন্তু সচেতন মানুষ হিসাবে আমাদের কি উচিত নয় সূদী অর্থনীতির কুফল গুলো মানুষের সামনে তুলে ধরে ইসলামিক ব্যাংকের ব্যাপকতা আর প্রসারতার জন্য প্রচেস্টা করা? আমাদের চিন্তার প্রসারতা আরো গভীর হউক।
379334
০১ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ১২:৪২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০২ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ০৬:০৭
314104
ওরিয়ন ১ লিখেছেন : ঝাঝাকুমুল্লাহ খায়ের।
379372
০২ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ১১:৪৭
নকীব আরসালান২ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৩ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ০৮:১৬
314136
ওরিয়ন ১ লিখেছেন : ঝাঝাকুমুল্লাহ খায়ের
379700
১৪ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ০৭:২৬
তিমির মুস্তাফা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু খায়ের!
আপনিও বোধ হয় আমার ভাবনা ধরতে পারেন নি! যারা এই বিষয় নিয়ে ডিল করছেন – তাদের উপরে আমাদের আস্থা রাখতে হবে! আর আপনার বাক্য প্রয়োগে আপনিই যুক্তি দিয়েছেন- সন্দেহ থাকা যাবে না-! যখন আমি আমল করছি, তখন নিঃসন্দেহ হয়েই আমাকে আপনাকে আমল করতে হবে!
পরিস্থিতি সাপেক্ষে – অনেক নিষিদ্ধ বিষয় – সিদ্ধ হয়ে যায়, জীবন বাঁচাতে হারাম মাংস ভক্ষন করার নজির রয়েছে! নেই? তবে তা জীবন বাঁচার বা টিকে থাকার জন্য – হতে হবে! আমি যদি সন্দেহে ভুগি কোন বস্তু ১০০% হালাল নয়, আমার জন্য সেটা ব্যবহার করা যাবে না! আর আমি যদি জানি – আমি নিরুপায়- সেক্ষেত্রে আল্লাহ সব জানেন!আশা করছি আপনি বুঝতে পারছেন এবার !
আপনার মত আমিও একই জ্বালায় জ্বলছি ! সামনে কোন উদাহরণ নেই যা দেখে আপনি আমি পথ চলতে পারি! ঠেলা ধাক্কা মেরে সামনে এগিয়ে পথ নেই দেখে আবার পিছিয়ে এসে পথ খুঁজে নিতে হচ্ছে! অনেকেই আছে যারা কিতাব মাথায় দিয়ে শুয়ে থাকতে বেশী পছন্দ করে- । সাধারণ বিবেক না খাটিয়ে – সমস্যার সমাধানের পথ না বাতলে প্রচলিত জীবন ধারায় কাটিয়ে যাচ্ছে দিন- যেন এটা সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব আমার নয়, অন্য কেউ এ সমাধান করে দেবে!
সবাই যদি ঐ ‘রাস্তা অনুসরণ করে- তাহলে- আপনার কথাই বলতে হয়, আসমান থেকে ফেরেশতা এসে আমাদের সমস্যা সমাধান করবে না!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File