ইচ্ছে করে জশনে-জুলুছে শরীক হতে... যারা ঈদ-এ মিলাদুন্নবী মানে না তারা বোকা! (বিচার মানি কিন্তু মতবাদ আমার!)

লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ২১ নভেম্বর, ২০১৮, ০১:০০:২১ দুপুর

(ঠান্ডা মাথায় পুরো লেখাটা পড়ে মন্তব্য করুন প্লিজ)



গ্রামের ধনী পরিবারের মেধাবী ছেলেটি মেডিক্যালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দেয়া শুরু করে। গর্বে যেন তার বুকটা এক বিগত ফুলে উঠে, কারণ সে মনে করে মেডিকেলে ভর্তি হয়েই সে ডাক্তার হয়ে গেছে। আসলে তাকে ধারণা দেয়া হয়েছিল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া মানে ডাক্তার হয়ে যাওয়া। সে সূত্রে মূলত তার কোন দোষ ছিল না, তবে যারা বিষয়টি বুঝে তারা আড়ালে মুচকি হাসে। একজন বন্ধু সাহস করে তাকে বলল, তুমি ডাক্তার হলে কখন? তুমি তো সবে মাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছো! ডাক্তার হতে হলে তোমাকে অনেকগুলো সেমিস্টার পাস করতে হবে। অনেক কষ্টসাধ্য, কঠিন সিলেবাস শেষ করতে হবে। রাত দিন, টানা ৬/৭ বছর শুধু পড়েই যেতে হবে। হাতে কলমে শিখতে গিয়ে তোমাকে প্রেকটিক্যাল করতে হবে। সব কিছুতে মেধার পরিচয় দিয়ে চূড়ান্ত পরীক্ষায় পাশ করতে পারলে তুমি ডাক্তার হতে পারবে। এর আগে নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দেয়ার তোমার কোন অধিকার নেই। তবে হ্যাঁ তুমি নিজেকে মেডিকেল কলেজের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিতে পারো।

তিনি ধরার বুকে এসেছিলেন মাহে রবিউল আওয়াল মাসে। মানলাম ১২ই রবিউল আওয়াল তারিখেই এসেছিলেন যদিও তা নিয়ে এখতেলাফ আছে। তাতেই আমরা অনেক খুশি। খুশি হবো না কেন? তিনি এসে বন্ধ করেছিলেন জাহেলিয়াতের অনেক ভয়ংকর ও ক্ষতিকর নিয়ম কানুন। মেয়ে জন্ম নিলে মাটিতে পুতে ফেলার মত জঘন্য ও নিষ্ঠুর নিয়ম কানুন তিনিই তো বন্ধ করেছিলেন। তিনি মানবতার মুক্তির দূত, আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর জন্মের এই শুভ দিনে আমরা খুশিতে জুলুশ বা আনন্দ মিছিল তো করতেই পারি। কারণ আমরা যে তাঁর উম্মত, সুন্নি মুসলমান। হ্যাঁ আমরা মুসলমান।

মেধাবী ছাত্র মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে নিজেকে পরিপূর্ণ ডাক্তার পরিচয় দিলে যেমন অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয় তেমনি রাসূল প্রেমিক বা আশেকে রাসূল(সাঃ) পরিচয় দিয়ে নিজেকে সুন্নি মুসলমান পরিচয় দিলেও সচেতন মনে কিছু প্রশ্নের উদয় হয় বৈকি!

তাঁর জন্মই কি সব?

তাঁর কি কোন মিশন ছিল?

তাঁর কি কোন লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছিল?

তাঁর কি ৬৩ বছর জিন্দেগীতে ২৩ বছর নবুয়তী জীবন ছিল না?

যে কিশোরটি সকলের বিশ্বাসের মডেল হয়ে আল-আমীন উপাদী পেয়েছিলেন তিনি কালেমার দাওয়াত দিতে গিয়ে রাতারাতি সকলের শত্রুতে পরিণত হয়েছিলেন কেন? একবারও ভেবেছেন?

কেন তাঁকে নিজের পরিজন ও সাহাবীদের নিয়ে ৩ বছর নির্বাসনে কাটাতে হল?


কী ছিল সেই জীবনীতে? সেগুলো কি সুন্নি মুসলমানদের মানা উচিত নয়? ঐসব না মেনেই মুসলমান? আশেকে রাসূল!

জীবনী মানেই তো সীরত। যে জীবন মিলাদ বা জন্ম দিয়ে শুরু তা তো সীরাত বা জীবনী দিয়েই শেষ, তাই নয় কি?

তাহলে শুধু মিলাদুন্নবী পালন করে নিজেকে সূন্নি মুসলমান দাবী করলে ঐ মেডিকেলের ছাত্রের মত হয়ে গেল না!

মিলাদে যা শুরু সীরাতে তার পূর্ণতা। মিলাদকে যেমন অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই তোমনি সীরাতকে অবহেলা করলে পরস্পর বিরুধী চরিত্রের প্রকাশ পায়। মূলত যে মিশনের জন্য মিলাদের আয়োজন বা যে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য রাসূলের জন্ম সে পরিকল্পনার ধারাবাহিকতা রক্ষা করার প্রচেষ্টাতেই প্রকৃত সম্মান প্রকাশ পায়। অর্থাৎ মিলাদকে বুকে নিয়ে সীরাতকে সাথে নিয়েই পথ চলতে হবে। চলার পথে সীরাত সঙ্গী না হলে মিলাদকে বুকে নেয়ার কোন অর্থ হয়না।

যার আগমনে ঈদের খুশি, তাঁর আগমনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে অবহেলা করলে প্রকারান্তরে তাঁকেই অবহেলা করা হচ্ছে, তাই নয় কি? হুসে-জ্ঞানে কখনও চিন্তা করে দেখেছেন কি?

সূন্নি মুসলমান হলে রাসূলের পরিপূর্ণ অনুসরণ শতভাগ জরুরী নয় কি? অন্যথায় কিভাবে সূন্নী? শুধু নামেই!

২৩ বছর নবুয়তের জীবনে রাসূল (সাঃ) কি নিজের জন্ম ভূমিতে থাকতে পেরেছিলেন? নাকি কাফেরের অত্যাচারে থাকতে না পেরে হিযরত করেছিলেন?

হিযরত করে তিনি কি ১০ বছর মদিনায় ছিলেন না? তাঁর জীবদ্ধশায় প্রায় ৮৩ টি অভিযান পরিচালিত হয়। তার মধ্যে ২৮ টি সরেজমিন।

উক্ত অভিযান সমূহে ১০০০ প্রাণ হতাহত হয়, তারমধ্যে ২৫০ জন মুসলিম, ৭৫০ জন বিরোধী পক্ষের। তাঁর এই জীবনীকে অস্বীকার করে কেউ কি সূন্নী মুসলমান হতে পারে? সম্ভব?


যার জন্মের জন্য এত আনন্দ তাঁর কর্মজীবনকে আমরা কতটুকু মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছি?

তিনি যে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যুদ্ধে আহত হয়ে মাথার রক্ত গড়িয়ে পায়ের মৌজা পর্যন্ত পৌছেছিল তা কি আমরা জানি?

তাঁর দাঁত শত্রুর আঘাতে পড়ে গিয়েছিল আমরা কি তার খবর রাখি?

তিনি ছিলেন মুক্তির দূত। মানুষের মুক্তির জন্য তিনি কি আজীবন সংগ্রাম করেননি?

তিনি কি ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম করে রাষ্ট্র পরিচালনা করেননি?

আমরা যারা তাঁকে প্রাণের চেয়েও বেশী মহব্বত করি, ভালবাসি তারা কি রাসূলের সীরাত বা জীবনীকে পুরোপুরি গ্রহণ করেছি?

আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এর রং-এ রঞ্জিত হয়েছি?

তিনি যাবার আগে কী কী করতে বলেছেন, কী কী করতে নিষেধ করেছেন তা কি আমরা জানি? তা জেনে সে মোতাবেক চলা কি জরুরী নয়?

মুমিনের দুনিয়াবী জীবন ফুল বিছানো? নাকি কাটা বিছানো? এসব প্রশ্নের উত্তর প্রত্যেকটি সূন্নী মুসলমানের জানা খুবই জরুরী নয় কি?

চট্টগ্রামে কালকের (২১ নভেম্বর ২০১৮ সাল) জুলুছে লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয়ে দেখা যাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক দরদ ও মোহাব্বত। তাদের চোখে মুখে ভেসে উঠবে ঈমানের জ্যোতি। আমি জানি সূন্নী মুসলমানরা নামাযের প্রতি খুবিই যত্নশীল, তাদের অনেকেই তাহাজ্জুদ নামায বাদ দেন না। তারা বেশীর ভাগই সহজ সরল ও সাদা মনের মানুষ। আমার মনে হয়েছে তাদেরকে যেভাবে ধারণা দেয়া হয়েছে তাঁরা সেভাবেই বিশ্বাস করেছেন। মেধাবী ছাত্রটিকে যেমন ধারণা দেয়া হয়েছিল সে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া মানে ডাক্তার হয়ে যাওয়া ঠিক তেমনি এখানেও কিছু সুবিধাবাদী বিপদগামী নামধারী আলেম(!) সাধারণ মুসলমানদেরকে ধারণা দিয়েছেন ঈদে মিলাদুন্নবীতে আনন্দ কর, মেজবান কর, এতেই তুমি সূন্নী মুসলমান হয়ে যাবে। হয়ে যাবে আশেকে রাসূল!

সত্যকে জানার আন্তরিক ইচ্ছাপূষণ করেন এমন বিবেকবানদের কাছে প্রশ্ন, নির্ভরশীল দলিল ছাড়া ধারণার উপর নির্ভর করে চলা কি ঠিক?

ইসলামে স্বয়ং রাসূল (সাঃ) যা করেননি,

খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে যা করা হয়নি,

ইসলামের স্বর্ণালী যুগ, রূপালী যুগে যা করা হয়নি আর এখন তো তাম্র যুগও নয়।

যতদুর জানি হঠাৎ গজিয়ে উঠা এবাদতের নামে নতুন রসমকেই বেদআত বলে।


শয়তান আল্লাহর সাথে চ্যালেঞ্জ করেছিল মানুষকে ধুকায় ফেলে পথভ্রষ্ট করে জাহান্নাম মুখি করবে। এখানে তার প্রতিফলন আছে কিনা ভেবে দেখবেন কি? ক্যান্সার যেমন একজন মানুষকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দেয় বেদআতও মুসলমানের ঈমানকে সেভাবে ধ্বংস করে দেয়।

বিদআত থেকে বাঁচতে হলে:

একজন ঈমানদার মুমিন মুসলমানের ঈমানকে কোরআন দিয়ে এক্স-রে করতে হবে।

ক্বলবকে সহি হাদিছ দিয়ে ই.সি.জি করতে হবে।

ইজমা কিয়াস দিয়ে সিটি-স্ক্যান করতে হবে।

নিজের বিবেক বুদ্ধি প্রজ্ঞা দিয়ে আলট্রা-সনোগ্রাফী করতে হবে।


এতসব পরীক্ষার রিপোর্ট ওকে(OK) হলেই ঐ মুসলমানের ঈমান সহি।

ইসলামী লেবাস পড়লেই,

নামায-রোজা করলেই পার পাওয়া যাবে না।

আবারও বলছি যারা সত্যটি জেনে, মেনে চলার মন-মানসিকতা রাখেন কেবল তারাই সঠিক পথ খুঁজে পাবেন যদি তারা খুঁজেন। আর যারা বাপ-দাদার কথা বলেন, যারা পীর-মুর্শিদের কথা বলেন যারা আত্ম-মর্যাদার কথা বলেন, যারা পারিবারিক ঐতিহ্যের কথা বলেন তাদের কথা আলাদা। প্রিয় নবীর কলেমার দাওয়াত পেয়েও শত শত মুশরিক ঐ একই কথা বলেছিলেন। আসল কথা হচ্ছে আল্লাহ যাদের কবুল করবেন কেবল তারাই সঠিক পথ খুঁজে পাবেন। আর তারাই পথ পাবেন যারা সঠিক পথ পাবার জন্য চেষ্টা-তদবীর করবেন। আগ্রহী হয়ে সামনে এগুবেন।

প্রতি বছর চট্টগ্রামের জুলুছে আমার মনে হয় ১০লক্ষ+ লোক অংশগ্রহণ করে। গাড়িতে চড়ে, পায়ে হেটে এবং রাস্তার দুই পাশে মহিলা-পুরুষ দাঁড়িয়ে এই বিপুল সংখ্যাক আশেকে রাসূল আনন্দ মিছিলে শরীক হন। মাইক দিয়ে বিশাল বিশাল সাউন্ডবক্স নিয়ে ডাক-ঢোক, গান-বাজনায় ভরপুর এই জুলুছ আমার প্রতিষ্ঠানের সামনে দিয়ে যাওয়ায় আমি খুব কাছ থেকে দেখি আনন্দ মিছিল। জুলুছের লক্ষ সুন্নি মুসলমানের স্বতঃস্পূর্ত উপস্থিতি দেখে আমার বুকটা আনন্দে ভরে উঠে, মনে মনে ইচ্ছা হয় এই আনন্দ মিছিলে আমিও যদি অংশগ্রহণ করতে পারতাম! কিন্তু কিছু প্রশ্ন আমাকে থমকে দেয়!

এতগুলো মুসলমানের একটি মাত্র হুংকারে মায়ানমারে মুসলিম নিধন এক ঘন্টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে। সিরিয়ায় মুসলমানদের উপর অমানবিক অত্যাচার, লেবাননে মুসলমানদের উপর অত্যাচার নিমিশে বন্ধ হয়ে যাবে যদি জুলুছের পক্ষ থেকে হুংকার দিয়ে প্রতিবাদ করা হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিশন ও ভিশন কী ছিল, তার প্রতি অনুরাগ, আন্তরিকতা, সামঞ্জস্য কতটুকু আছে জুলুছকারীদের সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন! মিষ্টি আর মেজবানে নবী প্রেমকে সীমাবদ্ধ না রেখে যে জন্য রাসূল সা: কে আল্লাহপাক দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলেন, উম্মতের প্রতি যে দায়িত্ব হুজুরপাক সা: দিয়ে গেছেন সেটাকে আকড়ে ধরে সামনে এগুবার মধ্যে লুকিয়ে আছে নবী প্রেম। এটা যদি বর্তমানের আলেমরা আমমুসলিমকে বুঝিয়ে সেদিকে পরিচালিত করতেন তাহলে কতই না উত্তম হত!

কিন্তু জুলুছকারীদের এমন কোন কর্মসূচী দেখা যায় না। তারা কেবল নবী (সঃ) এর জন্মদিন পালন নিয়েই খুশি, দায়িত্ব শেষ! আমার অবচেতন মনে জানতে ইচ্ছে করে, আচ্ছা; জুলুছ যেখান থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকে অংশগ্রহণ কারীরা সেখানে হাজিরা দিয়ে যার যার ঘরে ফিরে যায়? নাকি মিছিলে অংশগ্রহণ করে শেষ গন্তব্য পর্যন্ত সাথে থাকে? নিশ্চয় সবাই একবাক্যে বলবেন শেষ গন্তব্য পর্যন্ত সাথে থাকে। তাহলে মিলাদ বা জন্মের মাধ্যমে রাসূল (সাঃ) এর যে জীবনের সূচনা হয়েছিল সে জীবনের শেষ পর্যন্ত অনুসরণ করা হবে না কেন? জন্মের জন্য আনন্দ মিছিল হলে ইন্তেকালের জন্য শোক নয় কেন? নবুয়তী জীবনের সংগ্রামী জীবনধারা উপেক্ষা করে এ কেমন আশেকে রাসূল (সাঃ)! আসুন নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করি! কোন মতবাদের দিকে না ঝুঁকে জিরো টলারেন্ট থেকে জানতে চেষ্টা করি।

যারা জ্ঞানী, যারা সত্য সন্ধ্যানী, যারা বিদআত থেকে নিজেকে বাঁচাতে চান তাদের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ, আপনারা সরাসরি কোরআন ও সহি হাদিছ থেকে সত্যকে জানুন। কারো সাথে বিতর্কে না জড়িয়ে নিজেই খুঁজে নিন নিজেকে বাঁচাবার পথ। আমি জানি অনেক শিক্ষিত জ্ঞানী লোকেরা এখানে আছেন। তবে এটা নিঃস্বন্দেহে বলা যায় যারা চোখ থাকতে অন্ধ, তাদের কপাল মন্দ। আল্লাহ তাদেরকেই হেদায়েত দেন যারা হেদায়েত পাওয়ার জন্য আন্তরিক।

মানুষ এখনও সেই আগের মতই বোকা থেকে গেছে! এখন কোরআন-হাদিছ নিজ নিজ মাতৃভাষায় বুঝে পড়ার ব্যবস্থা আছে অথচ আমরা সেখানে থেকে জ্ঞান না নিয়ে অর্থলোভী সুবিধাবাদী আলেমদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছি! আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘পড় তোমার প্রভূর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ জানতে হলে পড়তে হবে। আমরা কি সত্য জানার ইচ্ছায় পড়ছি?

সম্প্রতি ইসলামীক স্কলার ড.আবদুস সালাম আজাদী স্যারের ফেসবুকে দেয়া

স্ট্যাটাসটি আমার চিন্তার গভীরতাকে আরো তৃষ্ণার্ত করে দিয়েছে। পাঠকদের সুবিধার্থে ঐ স্ট্যাটাসটি আমি হুবহু এখানে তুলে ধরছি,

‘‘By Dr M Abdus Salam Azadi

বিদআতের প্রতি ভালোবাসা

========

আমার জীবনে মসজিদে নাবাওয়ীর পাশে থাকতে পারা একটা বড় নিয়ামত মনে করি। রিয়াদ ও মাদীনা বিশ্ববিদ্যালয়দ্বয়ে পড়তে যেয়ে সব চেয়ে যে জিনিষ গুলো পেয়েছি, তার মধ্যে অন্যতম হলো, ওখানের আমল গুলোর সাথে হাদীসের যে ৬টা গ্রন্থ বাংলাদেশে পড়ে মুমতাযুল মুহাদ্দিসীনের সার্টিফিকেট নিয়ে গিয়েছিলাম, তার প্রতিটার সাথে দেখা হত। আমি কিন্তু সাধারণ সৌদীদের নিয়ে কথা বলছিনা। আমরা ছাত্র হওয়ায় সাধারণদের সাথে মিশিনি খুব বেশি। আমরা উলামা ও ভালো আমলকারীদের কথা বলছি।

আমি বাংলাদেশে থাকতে অনেক আমলের সাথে পরিচিত ছিলাম। ঐ গুলো আমাদের ইবাদাতের আবশ্যক অংগ মনে হত। মুহাররামের তাযিয়া মিছিল, সফরে ফাতেহা দোয়ায দহম এর ছুটি ও আমল, রবিউল আওয়ালের মীলাদুন্নাবি ও দুয়া অনুষ্ঠান, মিছিল বা জাশনে জুলুস, রাজাবের শবে মি'রাজ ও রাত জাগা, শাবানের ১৫ তারিখের সারা রাত মীলাদ, শিন্নি, ঝাড়বাতি, আগরবাতি, রুটি ও গোশ, ওই রাতে ভাগ্যের খোঁজে ইবাদাতে রোনা জারি, রমাদানে বাজার করার হল্লা, ঈদে বাজারের মচ্ছব, যিল হাজ্জের কুরবানীর গোশ খাওয়া ও গরু ছাগল নিয়ে ব্যস্ততার মাঝেই চলেছে আমার ২২ বছরের বাংলাদেশী জীবন। হাদীস ভিত্তিক ইবাদাতী জীবনও চলেছে আলহামদু লিল্লাহ কিন্তু সে গুলোর সাথে আমাদের মহানবীর (স) কত টুকু সম্পর্ক ছিলো তা জানার চেয়ে আমাদের ইমাম আবু হানিফার (র) সম্পর্ককে বেশি করে দেখেছি।

মাওলানা হতে যাচ্ছি, কাজেই তাবীজ তুমারও করা শিখেছি তখনঃ চোর ধরার জন্য কুরআন ঘোরানো, জ্বীন তাড়ানোর জন্য আগুন ও তেলের ব্যবহার, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক বাড়ানো তাওয়ীযও দিতে শুরু করেছি, গায়রে মাহরাম মেয়ের গায়ে ফুঁ দেয়ার মত কাজও করেছি চিকিৎসকের মর্যাদা নিয়ে। আমার শায়খ ছিলেন বাংলা-ভারতে সেরা পীরদের একজন, কাজেই এই গুলো ইসলামের ই বিধান জেনে করেছি। তৈরি হয়েছে বিদআতের উপর ভালোবাসা। অথচ সাহীহ হাদীসে রুকইয়ার কত পথ ও পদ্ধতি আছে। সেগুলো সামনেও ধরিনি কোনদিন!!

রিয়াদ ও মদীনাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেয়ে সেখানের আমল গুলোর সাথে যেমন আমার জানা হাদীস গুলোর খুব সুন্দর মিল পেলাম। তেমন পেলাম আমার করা অনেক আমল ও প্রাক্টিসের সাথে ইসলামের ভয়ংকর নিরবতা। এই গুলো সম্পর্কে যখন ই জিজ্ঞেস করি ইসলামের কাছে, ইসলামের মূল সুত্র কুরআন ও হাদীস তখন ই বলে আমি জানিনা। বুঝেছি ঐ গুলোই ছিলো ইসলামের মধ্যে নতূন আমল। আমাদের নবী (সা) করেন নি, সাহাবাগণ দেখেন নি, তাবেয়ীগণ ও বুঝেননি এমন অনেক কাজে আমরা ব্যস্ত হয়ে আমার দুটো ক্ষতি হয়েছে তখনঃ

১। সরাসরি মহানবী (সা) কর্তৃক ইনফ্লুয়েন্সড বা প্রভাবিত না হয়ে অন্য কারো বক্তব্যকে প্রাধান্য দিতে ভালো লাগতো। যে বুখারীর (র) মর্যাদা নিয়ে ওয়াজ করতে করতে মুখ দিয়ে ফেনা বের হত, তার প্রাধান্য দেয়া হাদীস গুলোকে উন্নাসিক ভাবে বাদ দেয়ার মনোভাব তৈরি হয়।

২। জীবনে যত গুলো বিদআহ ঢুকে পড়ে তার চেয়ে অনেক সুন্নাহ জীবন থেকে চলে যেতে থাকে।

মদীনায় যেয়ে কয়েকটা কথা শুনতে পাই। যা আগে শুনিনি, কিংবা শুনলেও বুঝিনি হয়ত।

প্রথমটা হলোঃ আয়েশা সিদ্দীকা আমাদের নবী (সা) থেকে বর্ণনা করেছেনঃ দ্বীনের মধ্যে নেই এমন কিছু যদি কেও নতূন ভাবে নিয়ে এসে দ্বীনের রং দিয়ে দেয় (আহদাসা) তা অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে, ত্যাগ করার উপযুক্ত, পরিতাজ্য (রাদ্দ)।

দ্বিতীয়টা হলো আল্লাহ তাআলার বাণীঃ হে নবী, আপনি বলুন, তোমাদেরকে আমলের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সম্পর্কে সংবাদ দেবো? দুনিয়ার জীবনে ওদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে। ওরা (ঐ সব ব্যর্থ আমল করতে যেয়ে) ধারণা করতো, 'তারা তো ভালো কাজ ই করতেছে'।

তৃতীয়টা হলো ইবনে আব্বাসের বক্তব্য, তিনি বলেছেনঃ

ما أتى على الناس عام إلا أحدثوا فيه بدعة و أماتوا فيه سنة، حتى تحيا البدع و تموت السنن

অর্থ হলো মানুষেরা কোন বছরে যদি একটা বিদআর উদ্ভাবন করে এবং একটা সুন্নাহ উৎপাটন করে, আস্তে আস্তে বিদআহ গুলো জীবন্ত হয়ে যায় আর সুন্নাহ মরে যায়।

মদীনায় এই তিনটা জিনিষ বুঝার পর বিদআহ কে ঘৃণা করতে শিখেছি। এইজন্য মদীনার জীবন টা আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া বিরাট একটা নিয়ামত। আমি এর শুকরিয়া আদায় করে শেষ করতে পারবোনা।’’

এই ছিল ডক্টর আবদুস সালাম আজাদী স্যার-এর লিখা বক্তব্য। এখানে বিদআতের কিছু জিনিস বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটকে সামনে নিয়ে তুলে ধরা হয়েছে যা অত্যন্ত প্রেকটিক্যাল।

কিছুদিন আগে এলাকার মসজিদের ইমাম সাহেব বললেন, মাইকে ওয়াজীন বলছেন যারা মিলাদুন্নবী অস্বীকার করবে তারা জাহান্নামী’। ইমাম সাহেব বললেন আমরা তো মিলাদুন্নবী অস্বীকার করছি না বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বা তাঁর জন্মকে অস্বীকার করছি না। রাসূলকে অস্বীকার করলে তো কলেমাকে অস্বীকার করা হয়(নাউজুবিল্লাহ)। কিন্তু রাসূল (সাঃ) ধরায় এসে যে জীবনধারা দিয়ে গেছেন সেটাকে আকড়ে ধরা তো বেশী জরুরী।

আমিও বলব যদি কেউ মিলাদুন্নবী বা নবীর জন্মকে অস্বীকার করেন তারা বোকা। আবার যারা নবীর জীবনধারা বা জীবন চরিত থেকে সরে এসে শুধু মিলাদুন্নবী করে বছরে একদিন নবীর মহব্বত জাগিয়ে তুলে সারা বছর নবীর সূন্নতের বিপরীত জীবন-যাপন করেন তারা আরো বেশী বোকা।

আল্লাহপাক আমাদের সকলকে সঠিক জ্ঞান অর্জন করে তা আমল করার তৌফিক দিন, আমিন।

জাঝাকআল্লাহু খায়রান।

লেখক: চাটিগাঁ থেকে বাহার

(এই লেখাটি ২০১৬ সালের ১২ই রবিউল আওয়াল একবার পোষ্ট করেছিলাম। কিছুটা এডিট করে আবার পোষ্ট করলাম। সমাজে বেদআত যতদিন আছে এ জাতীয় লেখা ততদিন দরকারী মনে করি।)

বিষয়: বিবিধ

১১৩৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386149
২১ নভেম্বর ২০১৮ রাত ১০:৫৭
শেখের পোলা লিখেছেন : বাহার ভাই আসসালামু আলাইকুম। লেখাটির জন্য ধন্যবাদ। তবে এখানেই শেষ করলে হবেনা পরিচিতদের বোঝাতেও হবে।সকল বিদাত থেকে বার করে আনতেই হবে। ভাল থাকেন।
২৪ নভেম্বর ২০১৮ দুপুর ০৩:৫৬
318110
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : ওয়ালাইকুম সালাম।
অনেকদিন পর আপনার সাথে ভার্চূয়াল স্বাক্ষাত হলো। বেশ ভাল লাগছে।Good Luck Good Luck
386191
২৮ নভেম্বর ২০১৮ সকাল ১০:২৩
চোরাবালি লিখেছেন : ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেবের একটা বক্তিতায় ইব্রাহিম আঃ এর পরবর্তীরা কিভাবে যুক্তির মাধ্যমে লাইন ছাড়া হয়েছিল তার কিছু বয়ান করেছিলেন। আমাদের অবস্থাও অনেকটা তেমন যুক্তির ফাঁদে বিপথগামী বিদাতী আমরা।
নবীর প্রতি ভালোবাসা কিন্তু নবীর অনুসরণ থেকে আমরা যুক্তির মাধ্যমে দুরে সরে যাচ্ছি আজ।
২৮ নভেম্বর ২০১৮ দুপুর ১২:২২
318121
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : অদ্ভুত আঁধার এক।
বিভীষিকাময় ধুম্রজালের ভিতর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মুসলিম কওম।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File