একদিন নয়, প্রতিটি দিনই হোক নারীর

লিখেছেন লিখেছেন রফছান খান ০৮ মার্চ, ২০১৫, ০৯:৫৪:২৪ রাত



ঘরে আমার মা আছেন, নারী বলতে আমি তাঁকে বুঝি। আছে ছোট তিনটা বোন, নারী বলতে আমি তাদেরকে বুঝি। বিবাহ করার পর ঘরে নতুন যে আসবে, নারী বলতে আমি তাকেও বুঝবো। আমার মা'য়ের পায়ের নিচে আমার বেহেশত, তিনিই আমার সর্বাধিক প্রিয়, সবচেয়ে বেশী সম্মানিতা। আমার বোনেরা আমার স্নেহের সব চেয়ে কোমলতম স্থান আর আদরভরা ভালবাসার। আমার স্ত্রী আসলে দুজন মিলে হব একে অন্যের পরিপূরক, মিলেমিশে একাকার।

আজ ফেসবুকের টাইমলাইন ভরে উঠেছে নারীর এটা ওটা অধিকার আদায়ের বিষয় নিয়ে। সংবাদ মাধ্যমে যে সকল র‍্যালিগুলোর ছবি আসছে সেখানে দেখছি ব্যানার আর ফেস্টুনে লেখা রয়েছে নারীর এটা ওটার অধিকার দিতে হবে, এটা চাই ওটা চাই। নারী দিবসের সে সকল সম্মেলন/সেমিনারে বক্তাগণ খুব কড়া ভাষায় দাবি জানাচ্ছেন নারীদের অধিকার আদায়ের বিষয়ে।

এ বিষয়গুলো দেখছি আর হতাশ হচ্ছি। আপনারা অধিকার কার কাছে চাচ্ছেন ? পুরুষের কাছে ? নারীর অধিকার কে দেবে - পুরুষ ? পুরুষ কেন একজন নারীকে তার অধিকার দেবে ? নারীওতো পুরুষের মতই একজন মানুষ, তাহলে পুরুষদের কাছ থেকে কেন স্বীকৃতি বা অধিকার পেতে হবে ? মানুষ হয়ে মানুষের কাছে কেন অধিকার আদায়ের জন্য তাগাদা ? পুরুষই বা কিভাবে অধিকার দেওয়ার ক্ষমতা রাখে ?

তার মানে কি আপনারা নিজেরদের মর্যাদা সম্পর্কে যথেষ্ট সজাগ নন ? আপনারা পুরুষের উপর নির্ভর হতে পছন্দ করেন ? পুরুষদের কাছ থেকে স্বীকৃতি পেতে চান !?

আপনারা নারী – বিধাতার অনবদ্য সৃষ্টি। আপনাদের মাঝে পুরুষের জন্ম, আপনাদের ঘিরেই পুরুষের জীবন। তবে আপনারা কেন আপনাদের স্বীকৃতি চান পুরুষের কাছে ! কিসের স্বীকৃতি চান ? মাতৃত্বের স্বীকৃতি, বোনের স্বীকৃতি, জীবন সঙ্গীনির স্বীকৃতি, কন্যা সন্তানের স্বীকৃতি ? সমাজে আপনাদের যে অবদান সেটা সবাই জানে বা বোঝে। নারী ছাড়া কখনো একটা সুস্থ, সুন্দর, সুখের জীবন হতে পারেনা। যুগে যুগে নারী পুরুষের পরিপুরক, নারীর অবদান ছাড়া কখনই সংসার, সমাজ বা পৃথিবী সামনের দিকে এগিয়ে যেত না।

এ পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তা যদি তার সবটুকু সৌন্দর্য দিয়ে যদি কিছু সৃষ্টি করে থাকেন সে একমাত্র নারীকেই। জন্ম থেকেই একজন নারী তার অধিকার নিয়ে জন্মায়। নারী পুরুষ বলে বড় কথা নয়, প্রত্যেক মানুষই জন্ম মাত্রই তার অধিকার নিয়ে আসে। পুরুষ, শুধু পুরুষ কেন ? কোন মানুষই অন্য মানুষকে অধিকার দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না।

আজ নারী দিবসের মত দিনগুলো সৃষ্টি হয়েছে কারন নারীরা তাদের অধিকার বিষয়ে সচেতন না। আবার যারা নিজেরাই নিজেদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন নয় তাদেরকে দিবস পালনের মাধ্যমে সচেতন সৃষ্টি করা যাবে কিনা আমি সন্দিহান। নারীরা যদি প্রতিটি দিন নিজের ভেবে নেয় তবে 'নারী দিবস' বলে কিছু থাকার কথা নয়। যেদিন নারীরা ভাববে প্রতিটি দিন তাদের, প্রতিটি মুহূর্ত তাদের, প্রতিটি কাজে তার সম্পৃক্ততা, প্রতিটি ক্ষেত্রে তার সরবতা, প্রতিটি পদক্ষেপে তার অটল, নির্ভিক এবং সোচ্চার অবস্থান। সেদিন কিন্তু 'নারী' শব্দটি আলাদা করে ভাবার অপেক্ষা থাকবে না।

আসলে নারী-পুরুষের এই অদৃশ্য ব্যবধানটুকু ঘুচাতে পারলেই সবাই নিজেদের এক কাতারের 'মানুষ' হিসেবেই দেখবো। 'নারী' কিংবা 'পুরুষ' হিসেবে নয়। আমাদের নিজেদের বিশেষত পুরুষদের এই বৈষম্যগত আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টালেই 'নারী দিবস' এর কোন প্রয়োজন পড়বেনা। যেদিন নারী-পুরুষ ভাবনার সব ভেদাভেদ আর দ্বন্দ্বের অবসান হবে, সেদিন সবাই মানবিক ভাবনায় নারী-পুরুষ থেকে শুধুই "মানুষ" হবে।

বিষয়: বিবিধ

১১৪৬ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

307950
০৯ মার্চ ২০১৫ রাত ১২:৫৬
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
307966
০৯ মার্চ ২০১৫ রাত ০৩:৫৯
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম। ১৪০০ সাল আগেই মহিলাদের সন্মান এবং অধিকার ওয়াহী আকারে এই ধরনীতে নাযিল হয়েছিলো! এই ওয়াহী যথাযথভাবে পালনের জন্য আন্দোলনের দরকার! ওয়াহীর বিপরীত কাজ বন্ধের জন্য আন্দোলন দরকার প্রতিদিন!
অনেক শুকরিয়া Good Luck!
০৯ মার্চ ২০১৫ সকাল ০৯:৫১
249052
হতভাগা লিখেছেন :
ওয়াহীর বিপরীত কাজ বন্ধের জন্য আন্দোলন দরকার প্রতিদিন!


০ আল্লাহর অনুমতি দিয়ে দেওয়া পুরুষদের জন্য ''সামর্থ্য থাকলে ৪ টি পর্যন্ত বিয়ে করার'' এবং একটা বিশেষ পর্যায়ে গিয়ে স্ত্রীকে প্রহারের যে বিধান আছে --- সেগুলোর বিপরীতে ২য় বিয়ে করতে গেলে ১ম স্ত্রীর অনুমতির ও নারী নির্যাতন দমন আইন বিষয়ে যে মনুষ্য বিধান আনা হয়েছে সেটার ব্যাপারে কি চুপ থাকবেন ?
১০ মার্চ ২০১৫ রাত ০৪:০১
249198
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : সেদিন শুনলাম বউকে তালাক দিয়ে আবার কোর্টে গিয়ে বিয়ে করে সংসার করছে! এই জঘন্য সমাজব্যবস্থা আর কোন নর্দমায় নিয়ে যেতে চায়???

চুপ নাই তো! আমাদের ভাই- বোনদের যে ধরে নিয়ে মরে ফেলছে, গুম হচ্ছে সেটাতো দেখছেন! আশাকরি আপনিও চুপ থাকবেন না!Broken Heart

নারী নির্যাতন দমন আইন- একটা বিশেষ শ্রেনীর( উচ্চ বিত্ত) মানুষরাই এটা ভোগ করছে! আর আইনটা তৈরি হয়েছে এজন্যই যে আমাদের দেশের জনগন তাদের নির্বাচিত করেছে!

একটা বিপ্লব দরকার....
307985
০৯ মার্চ ২০১৫ সকাল ১০:০০
হতভাগা লিখেছেন : নারীকে কিছুই খরচ করতে হয় না । সে পায় । প্রতিদিনই পায় ।

তাই প্রতিটা দিনই নারীর ।

ভালোবাসা দিবসে পায় , নারী দিবসে পায় । এ ছাড়া সারা বছর কিছু না কিছু সে পায়ই ।

বিপরীতে কাউকেই তার কিছু দেওয়া লাগে না ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File