এ জার্নি ফর ফ্রেস মাইন্ড-২

লিখেছেন লিখেছেন মিকি মাউস ৩০ আগস্ট, ২০১৩, ০৮:৪২:০১ রাত



বাবুনগরীর কথা গুলো আমার মনে কেমন যেন একটা দাগ কাটলো। কোন রকমে সেখান থেকে বের হয়ে হেফাজতের কর্মসূচীর সময়ে ঢাকাতে পরিচিত হওয়া কয়েকজন নেতার সাথেও দেখা করলাম। এরপর চলে আসলাম মুরাদপুর এ ভাইয়ার অফিসে।

বিকেল ৫.৩০ মিনিটে এখান থেকে বের হয়ে গেলাম কর্ণফুলী ব্রীজের কাছে। সেখান থেকে নতুন ধরনের এক বাহন পেলাম। যা আগে কখনও দেখিনি আমি।

বাহনটি হলো একটি সিএনজি। প্রথমে রয়েছে চালকের সাথে বসা যায় দু’জন, তারপর মাঝখানে লম্বা একটি সীট যেখানে বসা যায় ৪ জন। তারপর পিছনে আবার দুই পাশে দুটি সীট, যেখানে ৪ জন বসা যায়। দেখে অবাক হলাম। বুদ্ধি আছে বটে চাটগাঁ বাসীর। এক সিএনজিতে ১১জন। চড়ে বসলাম সেই বাহনে।

উদ্দেশ্য পারকি বিচ এ যাওয়া। কর্ণফুলী ব্রীজ থেকে এই অদ্ভুত বাহনে করে গেলাম চৌমুহনী। সেখান থেকে সাধারণ একটি সিএনজি রিজার্ভ করে সোজা গেলাম পারকি বিচ এ।

ভাড়া নেওয়া আগ পর্যন্ত ড্রাইভার আমাদেরকে বলে নাই যে সন্ধ্যার পর ওখানে তেমন একটা লোকজন যায় না। অর্ধেক পথ যাওয়ার পর বলল আপনারা সেখানে কেন যাবেন? বললাম দেখতে। এবার সে বলল, এখন তো রাত নয়টা বেজে গেছে এখন সেখানে গিয়ে কোন লাভ নেই। কিছুই দেখতে পাবেন না।

তারপর ও বললাম ঠিক আছে দেখার দরকার নাই তুমি চলো, যা দেখা যায় তাই দেখবো। কাফকো, সিইউএফএল ফেরিয়ে আমরা পৌছলাম পারকি বীচ এ।

তবে সিএনজি চালক যতটা বলল ততটা নয়, ভালোই দেখলাম পারকি বীচ। লুসাই পার্ক রিসোর্টে অনেকটা সময় ঘোরাফেরা করে ফিরে আসলাম কর্ণফুলী ব্রীজের কাছে। এখানে এসে সৌদিয়া পরিবহনের টিকিট কিনে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

এর মধ্যেই পেট জানান দিল ক্ষিদে লেগেছে, কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানলাম ১৫ মিনিট লেট হবে বাস আসতে। পাশের একটি হোটেলে গিয়ে বসে পড়লাম খেতে।

দু’ভাই খাচ্ছি তো খাচ্ছিই, অন্য কোন চিন্তা মাথায় নেই, অনেক সময় পর খাওয়া শেষ করে মনে পড়লো আমরা কোথাও যাওয়ার জন্য টিকিট কেটেছি।

দ্রুত আসলাম কাউন্টারে, এসে দেখি সৌদিয়া পরিবহনের একটি বাস দাড়িয়ে আছে। ভালো লাগলো যে বাস আমাদের ছেড়ে যায়নি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

বাসে উঠতে যাব কন্টাক্টর বাধা দিয়ে বলল, দেখি আপনাদের টিকিট। বললাম, ভাই আগে তো বাসে উঠি তারপর দেখেন। এবার কন্টাক্টর তাচ্ছিল্য করে বলল, এই কাউন্টারের সকল যাত্রী বাসে উঠে গেছে। আপনারা কোন বাসের টিকিট কেটেছেন দেখি।

হায় হায় বলে কি?

কন্টাক্টর টিকেট দেখে বলল আপনাদের টিকিটের গাড়ী ১৫ মিনিট আগে চলে গেছে। কি করবো ভাবছি এমন সময় কাউন্টারের লোক এসে বলল, আপনারা এই বাসেই চলে যান। একেবারে শেষ দিকের দুটি ছিট খালি আছে। অগত্যা কি আর করবো উঠে পড়লাম বাসে।

রাত ২.০০ মিনিটে কক্সবাজার নামলাম। বাস থেকে নামতেই ১০/১২ জন রিক্সা চালক ছুটে এসে বলল, ‘আসেন স্যার, আসেন, পরিচিত হোটেল আছে, ভালো হোটেল, খরচ কম, সুবিধা ভালো ইত্যাদি।’

তাদেরকে কিছু না বলে পাশের একটি রেষ্টুরেন্টে ঢুকলাম। ফ্রেশ হয়ে দু’ভাই দ’কাপ চা খেলাম। হোটেলের ম্যানেজার এবং বয়দের সাথে অনেক গল্প করলাম। সে সময় একজন পাগলী আসলো হোটেলে। বয়স ৫০/৫৫ এর মধ্যে হবে। দেখতে অনেকটা ভালঘরেরই মনে হলো।

ম্যানেজার এবং স্থানীয়দের মতে, এই পাগলীর বাড়ী সিলেটে এবং এর দুই ছেলে লন্ডনে থাকে। আজ একবছর ধরে এই এলাকায় আছেন তিনি। অনেকে তাকে সিলেটে তার ঠিকানায় পৌঁছে দিতে চাইলেও সঠিক তথ্য না জানার কারণে তা পারছে না।

ভাইয়া পাগলিকে ভাত খাওয়ালো। অনেক মজা করে ভাত খেলো সে। তবে তাকে অতটা ক্ষুদার্ত মনে হলো না। জানলাম এখানকার সবাই তাকে খেতে দেয় এবং সাধ্যমত সাহায্য করে।

এরপর আমরা এখান থেকে সোজা বীচ এ গেলাম। তখন রাত ৩.১৫ বাজে।

সমুদ্রের তীরে বাংলালিংকের দেওয়া খাটিয়ায় শুয়ে সমুদ্র দেখছি, একটি ছেলে এসে আমাদের সাথে সমুদ্র নিয়ে অনেক গল্প শুরু করল। শুনতে ভালোই লাগছিল।

গল্পের ছলে ছেলেটি বলল, ‘সিকান্দার বাদশা জাহাজ নিয়ে ছয় মাস পর্যন্ত সমুদ্রের শেষ দেখতে গিয়েছিল, এরমধ্যে কোন কুল কিনারা খুজে না পেয়ে আবার ফিরে এসেছিল।’

বসে বসে সমুদ্র আর খোলা আকাশ দেখতে খুব ভালোই লাগছিল। দূর থেকে আসা সমুদ্রের ঢেউ গুলো আছড়ে পড়ছে তীরে। রাতের সমুদ্র এতটা ভালো লাগবে, ভাবতেও পারিনি। নিজেকে সত্যিই অনেক ভাগ্যবান মনে হলো। বাকী রাতটা এখানেই কাটিয়ে দিলাম দু’ভাই। চলবে...

বিষয়: বিবিধ

১৮৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File