আন্ধার কোঠা বা খেলারাম দাতার বাড়ী।

লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ২২ জানুয়ারি, ২০১৭, ০৩:১৭:১৭ দুপুর

আগে থেকেই জানতাম ঢাকা ট্যুরিষ্ট ক্লাবের সভাপতি মোস্তাফিজ ভাই একটা টিম নিয়ে যাচ্ছেন দোহার-নবাবগঞ্জের দিকে ঘুরতে। আমার সময়-সুযোগ ছিল না। তাই কিছু বলি নাই। কিন্তু হঠাৎ যাওয়ার দিনে সুযোগ পেয়ে গেলাম। খুব ভোরে ঘুম উঠে উত্তরা গিয়ে কাজ সেরে মোস্তাফিজ ভাইকে ফোন দিলাম। ব্যাস যেতে বললেন বিজয় নগর তার অফিসে।



আন্ধার কোঠা।

সকাল বেলা নোয়া মাইক্রো নিয়ে রওয়ানা করলাম আমরা ৯ জন। পথে পুরান ঢাকার বিখ্যাত আব্দুর রাজ্জাক হোটেলে সকালের নাস্তা সেরে নিল সবাই। (কদমতলী----) ব্রীজ পার হয়ে গাড়ী চলতে থাকল দোহার-নবাবগঞ্জের দিকে। শহর পেরিয়ে পড়লাম গ্রামের রাস্তায়। দু'ধারে বিস্তীর্ণ খোলা মাঠ এখনও আছে! আর আছে সবুজের মাঝে হলুদের চাদর হয়ে চমতকার সরিষার ক্ষেত।



আন্ধার কোঠার সামনে পুরা টিম।

ধলেশ্বরী সেতু পার হয়ে আমরা দেখতে দেখতে চলে গেলাম আমাদের প্রথম দর্শনীয় স্থানে এক জমিদার বাড়ীতে। সেটা দেখে আমরা পরবর্তী গন্তব্য আন্ধার কোঠা বা খেলারাম দাতার বাড়ী। ঢাকার নবাবগঞ্জ অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত খেলারামদাতার বাড়ী বা আন্ধার কোঠা। স্থানীয়দের কাছে ভূতের বাড়ী হিসেবেও পরিচিত। অতি পুরোনা জীর্ণ এই দালানকে কেন্দ্র করে অসংখ্য কাহিনী প্রচলিত আছে৷ কেউ কেউ মনে করেন এটি গায়েবি ভবন যা রাতারাতি তৈরি হয়েছে! এর পাশের পুকুর নিয়েও আছে অনেক অলৌকিক কাহিনী! এসব সেই কাহিনী সেই পাঁচশ বছর আগের।



খেলারাম দাতার বাড়ীর সামনে মাহফুজ ভাইয়ের সাথে।

ঢাকা জেলার দক্ষিণ মহকুমার কলাকোপায় এক বনিক পরিবারে জন্মেছিলেন খেলারাম৷ ছোটবেলা থেকেই খেলারাম অন্য দশজন বালকের মতো ছিল না। সে উদাস দৃষ্টি মেলে নদীর পানে তাকিয়ে থাকত। তার জানতে ইচ্ছে করত এই নদী কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে! একদিন সে মায়ের অনুমতি নিয়ে নৌকা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। এভাবে সে হয় মস্ত সওদাগর। কিন্তু স্থানীয়দের কাছে শোনা যায় সে ছিল এক বিখ্যাত জলদস্যু বা নৌ-ডাকাত। তবে সে অন্য সাধারণ জলদস্যুদের মতো ছিল না।



আন্ধার কোঠার দোতলায় ঢাকা ট্যুরিষ্ট ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ও নীলপদ্ম ভাই।

খেলারাম দাতার কাহিনী কিছুটা দস্যু রবিনহুড বা রোমেনা আফাজের উপন্যাসে বর্ণিত দস্যু বনহুর টাইপের। সে ডাকাতি করে আনত দূর-দূরান্তের ধনী বণিকদের নৌকা আর সে ধন-রত্ন নৌকা বোঝাই করে নিয়ে আসত নিজের এই বাড়ী আন্ধার কোঠায় এবং বিলিয়ে দিত এলাকার গরীব-দুঃখীদের মাঝে। এভাবে ডাকাতি করা ধন-সম্পদ অকাতের দান দান করতে করতে তার নাম হয়ে যায় খেলারাম দাতা!



আন্ধার কোঠার বাইরের প্রবেশ পথ।

কালের স্রোতে ক্ষয়ে গেছে খেলারাম দাতার বাড়ী বা আন্ধার কোঠা। প্রচলিত মিথ হল পাশের পুকুরে ডুবে মারা যায় খেলারাম দাতা। তার মা মৃত্যুদেহ দেখে ডুকরে কেঁদে উঠেন। গভীর রাতে এই পথ দিয়ে চলতে গিয়ে পথিক নাকি আজও শুনতে পায় তার মায়ের গুমরে ওঠা কান্নার শব্দ৷ স্থানীয়দের ভাষ্যমতে এক রাতে এই বিশাল ভবনটি মাটি ভেদ করে উঠতে থাকে। হটাৎ কেউ একজন দেখে ফেলায় এটার ওঠা বন্ধ হয়ে যায় এবং কালের বিবর্তনে আস্তে আস্তে পুনরায় মাটির নিচে ডেবে যেতে থাকে। এটি যখন উঠেছিল তখন পাঁচ তলা ছিল বলে স্থানীয়রা জানান বর্তমানে এটি দ্বিতল ভবন। শোনা যায় মাটির নিচে আরো তলা রয়েছে!



মাটির নিচে যাওয়ার সেই প্রবেশ পথ।

সরু সিড়ি বেয়ে নিচের দিকে নামলে একটা মাঝখানে গেলে ডানদিকে সরু একটা পথ দালানের নিচের দিকে গেছে দেখা যাবে। আমি যেতে চাইলাম কেউ কেউ বাঁধা দিল। কিন্তু সেখানকার কেয়ার টেকার মতিউর ভাই একটা লাইটের ব্যবস্থা করে দিলেন আর বললেন যেতে পারেন। কোন ভয় নাই। সাহস করে আমি সামনে আর পিছনে নীলপদ্ম ভাই মিলে নিচে সরুপথ দিয়ে চলতে থাকলাম। কেউ কেউ বললেন ভাই অন্ধকারে সাপটাপ থাকতে পারে! আমিও একটু ভয় পেলাম! অনেক আগে কয়েকজন ভবনের নিচে যাওয়ার চেষ্টা করেও যেতে পারেননি বলে কথা প্রচলিত আছে। এমনকি এরও আগে কয়েকজন নিচে গিয়ে আর নাকি ফেরত আসেনি!!!



মাটির নিচের পথের শেষ মাথায় গিয়ে কি পরিমাণ ভয় পাইছি চোখ দেখলেই বুঝবেন!

কিন্তু এখন আর সে ভয় নাই! কারণ কিছু দূর গিয়ে দেখবেন রাস্তা বন্ধ! প্রচলিত বিভিন্ন ভীতিকর কথার কারণে কর্তৃপক্ষ সেই রাস্তা সামান্য সামনে গিয়ে ইট-সিমেন্ট দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। তবে সাপ-খোপ না থাকলেও সেই অন্ধকার পথে আছে ব্যাপক মশার ভনভনানি। আপনার নাকে-মুখে মশা ঢুকে নাস্তানাবুদ করে দিবে! এখানে ভেতরের দিকে অন্ধকার এতই ঘন যে অতি উজ্জল আলোও এখানে স্তিমিত হয়ে যায়। এর জন্যই এই ভবনকে আন্ধার কোঠা বলা হয়ে থাকে। তবে যাই হোক এর নির্মাণশৈলী দেখার মতো। কোন ইঞ্জিনিয়ার এর ডিজাইন করেছিল আল্লাহ ভাল জানেন!



পিছনের অংশ।

বিষয়: বিবিধ

২০০৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

381388
২২ জানুয়ারি ২০১৭ রাত ১০:২৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভুতগুলি সব মশা হয়ে গেছে!!! কয়েকদিন আগে ভারতের এক মন্দির সম্পর্কে জানলাম তার নিচের নাকি ছয়টি ভল্ট রয়েছে যার ৩ টি খোলার পর প্রায় হাজার কোটি ডলার মুল্যের স্বর্ন ও মুল্যবাদ সম্পদ পাওয়া গেছে। তেমন কিছু এখানে ও রয়ে যেতে পারে।
১৬ মার্চ ২০১৭ সকাল ০৯:৪৫
316016
নেহায়েৎ লিখেছেন : গুপ্তধন থাকা এখানেও থাকা অসম্ভব না। থাকাটাই স্বাভাবিক বলে মনে হয় দেখে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File