উপন্যাস: দ্য প্রাইম মিনিস্টার [পর্ব-১০]

লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ২৯ নভেম্বর, ২০১৪, ১০:৪৬:৩৬ সকাল

The-Prime-Minister

‘আমি যখন জন্ম নিয়েছিলাম তখন থেকে আমাদের মধ্যে ভাব ছিলো। সে আমার বড় ভাই। সে আমার সাথে খেলা করতো, মজা করতো। তবে পৃথিবীর নিয়মে আমরা একদিন বড় হলাম। দু’জন দুই ক্ষেত্রে বিখ্যাত হয়ে পড়লাম। সে হলো বিজনেস ম্যাগনেট, আমি হলাম আইনবিদ।’

নাক সিটকে সরফরাজ বলতে থাকে, ‘তবে আইন-আদালত দিয়ে সব সত্য প্রকাশিত হয় না। যে দেশে আইন টাকা খায়, ক্ষমতা খায়; সেদেশে বিচার আশা করা যায় না। সে যাই হোক, তিনি যা করেছেন তা জঘন্য। আমার ফুলের মতো আট বছুরে মেয়েটাকে সে ধর্ষণ করেছে। জেরিনকে পশুটা ধর্ষণ করেছে। তাকে রক্তাক্ত করেছে। আমার ফুটফুটে জেরিন এখন মুমূর্ষু। চিকিৎসক বলেছে মৃত্যু অবধারিত।’

‘কিন্তু তুমি কি চাও?’ শীতল গলায় হান্নাহ বললেন। আমি সটানভাবে দাঁড়িয়ে আছি তার পাশে। সেদিন সন্ধ্যাতেই ব্যরিস্টার সরফরাজ এসেছিলেন। এখন রুমে লুকো, রাসেল আর সিমন চুপ করে বসে আছে। সব কথা মন দিয়ে শুনছে। রাসেল মাঝে মাঝে কি যেনো নোট করে নিচ্ছে।

-আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

-তুমি কি চাও তোমার ভাইয়ের স্ত্রী অথবা কন্যাকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হোক!

-দরকার হলে তাই!

-এটা আরো জঘন্য। এখানে কোনো পশু বসবাস করে না, দুঃখিত কাজটা নিতে পারছি না। আদালত ভালো সিদ্ধান্ত দিতে পারবে, কি বলেন?

-আমি চাই না একটা কলঙ্ক নিয়ে জেরিন দুনিয়া থেকে যাক। তবে এতো বড় নিষ্ঠুরতাকে প্রশ্রয় দেওয়া কি ঠিক! আমি জেনেছি আপনারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কাজ করেন। আমার চোখের জলের কি মূল্য নেই।

-আপনার জন্য আমি একটা পশু জন্ম দিতে পারি না। এখানে যারা আসে তারা অতি ভদ্র এবং ভদ্র সমাধান চেয়ে থাকে।

-ভদ্র সমাধান! এ ঘটনার কি কোনো ভদ্র সমাধান আছে!

-তোমার আপন ভাইকে শুট করা।

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সরফরাজ বলতে থাকে।

-ভাইকে! যে ভাইয়ের সাথে আমার জীবনটা কেটেছে। তাকে শুট করা। হাহ! আইন অন্ধ হান্নাহ! তোমার আইন সত্যিই অন্ধ!

-উপযুক্তের সাথে অতিরিক্ত যা যোগ করা হয় তা অনুপোযুক্ত। সত্যের সাথে অতিরিক্ত যা যুক্ত করা হয় তা মিথ্যা। তবে তোমার ভাইকে হত্যা করে আমার কি লাভ? যা করার কথা বলা হয়েছে, সেটা সমাজের জন্য, তোমার জন্য।

এমন সময় ব্যরিস্টার সরফরাজের মোবাইলে একটা কল আসলো। কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়লো ব্যরিস্টার সরফরাজ। হান্নাহ তার পিঠে হাত বুলিয়ে চেয়ারে বসালেন। দুঃখ আর ক্রোধ একীভূত হয়ে গেলো ব্যরিস্টার সরফরাজের মুখে। কিছুক্ষণ পর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে কান্না বিজরিত কন্ঠে বলে।

-এই মহান বিচারের জন্য কতো টাকা চাও তুমি? তুমি শুধু ওকে খুন করো! পশুটাকে খুন করো। গুলি করো ওকে। যা চাও তাই দিতে রাজি।

-বন্ধুত্ব! বন্ধুত্ব চাই আমি।

-এটা খুবই সস্তা মূল্য হবে। তুমি আরো কিছু চাইলেও আমি দিতে প্রস্তুত আছি।

লুকোকে উদ্দেশ্য করে হান্নাহ বলেন।

-লুকো, কাজটা রুদ্রকে দিয়ে দাও।

তারপর তিনি ব্যরিস্টার সরফরাজকে আরো বলেন।

-এ ঘটনার জন্য আমি দুঃখিত। মেয়েকে স্রষ্টার কাছে ভালোমতো দিয়ে এসো। সমাধানের পর একটা ফোন করা হবে আপনাকে।

ব্যরিস্টার সরফরাজ চলে গেলে মুখ খুললো লুকো, ‘রুদ্র কেনো? রুদ্র চন্দ্র রায় তো আজো খুন করে নি কাউকে। ওই ভদ্রলোক খুন করতে পারবে না।’

-পারবে, তার চোখের আক্রোশ তুমি দেখো নি লুকো। সাপের মতো চোখ তার। তার উপকার আমরা করেছিলাম। এবার সে তার প্রতিদান দেবে। রুদ্র চন্দ্রের বাসা থেকে বেশি দূরে নয় সালমান সরফরাজের বাসা। সে সূত্রে তার সাথে পরিচয় থাকতে পারে। রুদ্রের সাথে দেখা করবে এবং কাজটা বুঝিয়ে দিবে। শুট করার ট্রেনিংটা তার ভালোই আছে আমার জানা মতে।

-ওকে, ঠিক আছে।

এভাবেই আমি ধীরে ধীরে চিনতে লাগলাম তাঁকে। ব্যরিস্টার সরফরাজকে ফোনে আপনি বললেও মুখোমুখি তার রাজত্বে তিনি তুমি বলে সম্বোধন করলেন। এই আপনি থেকে তুমির ভিতর কি কোনো তাৎপর্য ছিলো না! তিনি স্পষ্ট করে কথা বলছিলেন, তার প্রতিটি কথা যেনো মনের ভিতর একটা ঝঙ্কার সৃষ্টি করছিলো।

বাইরে টিপটিপে বৃষ্টি হচ্ছে, আব্দুলকে বললাম ছাতাটা এনে দিতে। ছাতা মাথায় দিয়ে বাংলোর বাগানে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। অনেকদিন পর পা স্পর্শ করালাম মাটিতে। নিজেকে বড্ড মানুষ মানুষ মনে হতে লাগলো আজ।

******************************

বিষয়: সাহিত্য

১১২২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

289420
২৯ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:১৬
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : খুব সুন্দর লিখা ,পড়ে ভালো লাগলো
২৯ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৩৬
233127
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : শুভেচ্ছা আপনাকে
289426
২৯ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:১৮
কাহাফ লিখেছেন :
আজকের পর্ব কোন অসুবিধা সৃষ্টি করেনি বুঝার ক্ষেত্রে!
সাবলীলতা ভাল লাগল অনেক!
(শব্দনীড়ের মতই মন্তব্য করলাম!)
অনেক অনেক ধন্যবাদ Big Hug Big Hug
২৯ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৩৬
233128
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : Happy Happy Happy
289494
২৯ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৫১
ভিশু লিখেছেন : ভালো।
বই বের করুন।
কালেকশনে রাখবো, ইনশাআল্লাহ। এগিয়ে চলুন জেরী... Loser Praying
Happy Good Luck Rose
২৯ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৪
233287
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : ভিশু ভাই ইজ ব্যাক!!!!!!Happy Happy Happy <:-P <:-P <:-P

শুদ্র দ্য গংরিড বের হচ্ছে সামনে বই মেলায়। এটির জন্য হয়তো ২০১৬ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। দীর্ঘ উপন্যাস হতে চলেছে এটি।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File