ইতিহাস ও ধর্মের কষ্টিপাথরে পহেলা বৈশাখ (দ্বিতীয় পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ১৪ এপ্রিল, ২০১৭, ০৫:১৪:২৯ বিকাল

ইংরেজি মাস, বারের নামের ইতিহাস যারা জানে তারা এটা খুব ভালোমত জানে যে ইংরেজি মাসের নাম ও বারের নামের উৎস রোমান সভ্যতার বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান কিংবা রোমান দেব-দেবীর নাম। এটা নিয়ে কেউ কোনদিন কোন তর্কযুদ্ধে নামে নি। মোদ্দাকথা হচ্ছে, আপনার ইচ্ছে থাকুক আর নাই থাকুক এই ইংরেজি সনকে আমরা সবাই মেনে চলি। তাহলে বাংলা সনকে কেন বারবার ধর্মের কষ্টিপাথরে তোলা হয়?

৫৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ বরাহমিহির "পঞ্চসিদ্ধান্তিকা" নামে একটি গ্রন্থ লেখেন যার একটি খন্ডের নাম "সূর্যসিদ্ধান্ত"। বাংলা সনের ১২ মাসের নামকরণ করা হয়েছে নক্ষত্রমণ্ডলে চন্দ্রের আবর্তনে বিশেষ তারার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে। এই নাম সমূহ গৃহীত হয়েছে বরাহমিহিরের "সূর্যসিদ্ধান্ত" থেকে।

অন্যদিকে বাংলা বারের নামকরণ করা হয়েছে গ্রহ, নক্ষত্র কিংবা উপগ্রহের নামের উপর। যদিও ধারণা করা হয় রবিবার নামকরণে সূর্য দেবতার আর সোমবার নামকরণে সোম বা শিব দেবতার নাম অনুসরণ করা হয়েছে।

যারা বাংলা সনকে ধর্মের কাঠগড়ায় বারবার তোলে তারা আসলে মূলত জেনে বুঝে কোন অশুভ স্বার্থসিদ্ধির জন্য কিংবা না বুঝে বাংলা সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। বাংলা সংস্কৃতি বুঝতে হলে আগে বাংলার ইতিহাসের বাস্তবতা বুঝতে হবে।

ইতিহাসের বাস্তবতায় বাংলা সংস্কৃতির উপাদানে হিন্দু ধর্মের প্রাধান্য লক্ষণীয়। কেননা, তারা যুগ যুগ ধরে তাদের নিজস্ব ধারায় বাংলা সংস্কৃতি পালন করে চলেছে।

তবে '৪৭ এর পর থেকে এদেশে মুসলমানদের আধিক্য সত্ত্বেও কেন বাংলা সংস্কৃতিতে হিন্দু ধর্মের প্রাধান্য আজ অবধি বেশি এটা খোজ করার চেষ্টা কি কেউ করেছে? নাকি এদেশের মুসলমানদের মুখপাত্ররা অযথা গোয়াল ঘরে পায়চারি করেছে।

আসলে এরা বাংলার মুসলমানদের বাঙালী সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে ইসলামিক সংস্কৃতি থেকেও বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। তাইতো আজও কাজী নজরুলের মত একজন গজল লেখকের আবির্ভাব হলো না। বাংলার আকাশ বাতাস ভাসতে পারল না মানসম্পন্ন ইসলামিক কাব্যে। তৈরি হলো না সারাবিশ্বে গ্রহণযোগ্য বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ। এদেশে যে বাঙালী মুসলিম সংস্কৃতির বিকাশ হবার কথা ছিল তা আজো হয়ে ওঠে নি।

একদিকে এদেশের মুসলমানেরা বাংলা সংস্কৃতিকে নিজের সংস্কৃতি বলে বিবেচনা করে নিজস্ব স্টাইলে এটা পালনের রীতি তৈরি করতে পারে নি। অন্যদিকে বাংলাদেশের সংস্কৃতিমনা মানুষেরা এদেশের মুসলিম সংস্কৃতির সাথে একরোখা আচরণ করে বার বার বলতে চেয়েছে, বাংলার মুসলমানদের সংস্কৃতি বাংলা সংস্কৃতির অংশ নয়।

বর্তমানে বাংলাদেশে সংস্কৃতির একটা সংকট চলছে। এর পিছনে বেশ কিছু কারণ বিদ্যমান। যার ভিতর প্রধান কারণ এই প্রাচীন বাংলা সংস্কৃতি এবং বর্তমান বাঙালী মুসলিম সংস্কৃতির ভিতর একটি মেল বন্ধন না থাকা। আর এই কাজটি কেউ করতে নারাজ। নিজেরা নিজেদের জায়গায় অটল। এতে করে সামনের দিনগুলোতে যে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে তা এখনি স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। সেই বড় সমস্যার দিনগুলো শেষে, কে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা এখনি বোঝা যাচ্ছে না।

তবে এটা জানা কথা, বাংলাভাষী এই দেশে বাংলা বারের নাম থাকবে, থাকবে বাংলা সন কিংবা মাসের অস্তিত্ব। বাঙালীদের পহেলা বৈশাখ উদযাপন চলবে। তবে সময়ের সাথে সাথে উদযাপনের রীতি-নীতির পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে মাত্র।

বিষয়: সাহিত্য

১৩৯৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

382679
১৪ এপ্রিল ২০১৭ রাত ০৯:১৬
হতভাগা লিখেছেন : বাঙ্গালী হিসেবে তো পরকালে আমার বিচার হবে না । তাই সংষ্কৃতির যে যে অংশ আমার ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক সেটা বাদ দেওয়াই উচিত।

382683
১৪ এপ্রিল ২০১৭ রাত ১১:৩৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ধন্যবাদ যুক্তিযুক্ত পোষ্টটির জন্য।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File