উপন্যাস: দ্য প্রাইম মিনিস্টার [পর্ব-৯]

লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ২৮ নভেম্বর, ২০১৪, ১০:১৯:৫৪ সকাল

The-Prime-Minister

‘রিকি? আফতাব আহমদের খবর কি?’, তিনি বললেন।

রিকির বয়স তার বয়সের মতোই। চুলগুলো ঘাড় ছুয়েছে রিকির। তবে শরীরটা চ্যাপ্টা প্রকৃতির। গায়ে যে প্রচুর শক্তি আছে তার দেখেই বোঝা যায়।

‘গুলিটা বুকের একপাশে লেগেছিলো। নিশানা একদম বাজে ছিলো। তবু সকালে শুনেছি শেষ! তার দিন শেষ!’

‘নিশানা সবসময় ঠিক হয় না, তবে একটি বাজে নিশানা তোমার জীবনকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তোমাকে আরো সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে যখন কাউকে হত্যা করার জন্য নিশানা লাগাবে।’

‘আমাদের একজন ভালো আইনজীবী দরকার।’, বয়স্ক গোছের একজন বলে ওঠে।

‘আমাদের সাথে তো সরকার সাহেব আছে। তবে এটা আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুভব করি। একজন দেশসেরা আইনজীবী আমাদের দরকার।’

‘আমাদের নিরাপত্তার জন্য দরকার। সরকার সাহেব আমাদের সব বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারবে না। আরো জটিল পর্যায়ে যেতে চলেছে আমাদের কাজ।’, বয়স্ক লোকটি বলে ওঠে। বয়স্ক লোকটি আরো বলে।

‘তোমার পলিসি মোতাবেক আমাদের এখনো অনেক কাজ বাকি। আমরা সব জেলায় আমাদের বন্ধু সংখ্যা বৃদ্ধি করে চলেছি। আমরা এমন কিছু কাজ করছি যাতে করে বিত্তশালীরা আমাদের দখলে আসে।’

‘ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানে জোর দাও। একজন মানুষ তার ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি বেশি সেনসেটিভ। আমরা যদি একজন ডিসির হারানো সন্তানকে খুঁজে আনতে পারি, তবে তিনি আমাদের কাছে ঋণী থেকে যাবে। আর তোমরা ভালো করেই জানো, ঋণ দিতে আমি ভালোবাসি।’, তিনি বললেন।

‘আমরা কি তাহলে তাদের সন্তানদের হারিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।’, একজন তরুণ বলে ওঠে।

‘সিমন, এটা সময়ক্ষেপণ। তুমি কি মনে করো, আমরা তাদের সন্তানদের গুম করতে পারি না! আইনত পারি না। তবে এদেশে অনেক কিছুই আইনের উপর ভর করে চলছে না। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনও।’

‘এটা অনেকটা টোপ দিয়ে মাছ ধরার মতো।’, সিমন বলে।

‘তবে আমি কিন্তু হিটলার নই।’ কথাটা বলে তিনি উঠে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এর সাথে পরিচিত হও। আমার সেক্রেটারি আজ থেকে।’

তিনি বাইরে চলে গেলেন। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। তারা এমনভাবে তাকিয়ে থাকলো যে আমি কিছুটা ভড়কে গেলাম। নিজেও বুঝতে পারছিলাম না কি বলবো। কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বলতে গেলাম, ‘আমি...’

না আমাকে বলার সুযোগ দিলো না তারা।

‘সুরত! রাফি! সিমন! রিকি! আফজাল! লিকন! সোমান্দ্র! রাসেল! লাবিব! লুকো!’ এতো দ্রুত নামগুলো একজন একজন বললো যেটা ছিলো ছন্দের মতো। আমি বুঝে উঠতে পারলাম না, কোনটা কার নাম। তারা সেটা বুঝতে পেরে আবার একি ভাবে নামগুলো বলতে লাগলো। তারা বারবার নামগুলো বলে একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগলো আর হাঁসতে লাগলো। আমিও শেষ অবধি তাদের হাসির সভায় যোগ দিলাম। এরি মাঝে আমি জেনে গেছি তাদের নাম। সুরত হচ্ছে তরুণ এক লিকলিকে লোক, চোখের পাতাগুলো বেশ বড়ো বড়ো। রাফির চেহারায় নিশ্চুপতা আর বুদ্ধিমত্তার ভাব স্পষ্ট, অতিরিক্ত খাটো সে। সিমন আর দশটা তরুণের মতো কিন্তু তার নাকটায় কালো দাগ, মনে হয় থেঁতলে গিয়েছিলো কোনোভাবে। রিকি স্টাইলিশ তরুণ, গলায় একটা পিতলের চেইন ঝুলানো। আফজাল নামক লোকটির একটা খামদানি গোঁফ আছে। লিকনের চোখে চশমা, দেখে মনে হয় কোনো না কোনো কাজে খুব মনোযোগী। সোমান্দ্রের চুল পাকার কথা ছিলো কিন্তু মজার ব্যাপার হলো তার মাথায় কোনো চুলই নেই। রাসেলের একটা চোখ নেই, সবসময় কালো চশমা এটে থাকে, কিছু চুলে পাক ধরলেও আজো বেশ শক্ত সমর্থ। লাবিবের খোঁচা খোঁচা দাড়ি তাকে ডাকাতের মতো ভয়ংকর করে তুলেছে। লুকো লোকটির বয়স বেশি এবং সাদা চামড়ার মানুষ। তার মানে তার জন্ম এই উপমহাদেশে নয়। তবে অনর্গল বাংলাতে কথা বলতে পারে লোকটি।

এসব হাসাহাসিতে যখন সবাই মত্ত, তখন একটা ফোন আসলো। টেবিলের মাঝের টেলিফোনটা বেজে উঠলো। মুহূর্তে সবাই চুপ হয়ে গেলো। লুকো ফোনটা ধরে বললো ‘নাইন নাইন টু সেভেন ফাইভ থ্রি টু স্পিকিং। হান্নাহ! আমাকে বলতে পারেন আপনি। তাহলে ওকে!’

আমাকে নির্দেশ করে লুকো বললো, ‘হান্নাহকে ডেকে নিয়ে এসো।’

আমি বের হবার আগেই তিনি ঢুকলেন। ফোনটা ধরতে ধরতে তিনি বললেন, ‘আমরা যা চাই, তা আমরা পেয়ে যাই। এটা কোনো এক আইনবিদ হবে! কি বলো লুকো?’

লুকো বলে, ‘ব্যরিস্টার সরফরাজ!’

তিনি ফোনটা ধরলেন যার নাম্বার নাইন নাইন টু সেভেন ফাইভ থ্রি টু! এই নাম্বারটা ভুলার নয়। যখনই কেউ ফোনটা ধরতো তখনি নাম্বারটা একবার আমার কানে বেজে উঠতো। যতো যাই হয়ে যাক না কেনো ওই ফোনটার কল ধরা আমার জন্য নিষেধ ছিলো।

তিনি ফোনটা ধরে বললেন, ‘আমি হান্নাহ! ভূমিকা ছাড়া সমস্যাতে চলে যান...’

মিনিট দশেক চুপ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনলেন সব। রুমে তখন পিন পতন নিরবতা। হঠাৎ জোর গলায় তিনি বললেন, ‘চুপ! আপনি এটা বলতে পারেন না। আপনি এটা করতেও পারেন না। তবে... আপনি আসতে পারেন। কেননা হান্নাহ আপনাকে খালি হাতে ফেরাবে না।’

তিনি ফোনটা কেটে দিলেন।

******************************

বিষয়: সাহিত্য

১০৯০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

289114
২৮ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:৩৯
কাহাফ লিখেছেন :
দীর্ঘ আবয়বে যদিও পঠনে অনিহা চলে আসে! আবার উপন্যাসের এমন খাটোটা বিষয় বুঝতে অসুবিধায় ফেলে দেয়!
Praying Praying Praying
২৮ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৫১
232897
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : দ্য প্রাইম মিনিস্টার অবশ্যই অনেক দীর্ঘ হবে পাঠকের অনিহা আসলেও। এখনো মূল ঘটনায় প্রবেশ করে নি দ্য প্রাইম মিনিস্টার। প্লট অনেক বড়ো করে তৈরি করছি এই উপন্যাসের। লেখা শেষ হলে পাঠকের আর অনিহা আসবে না।
২৮ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৫৪
232900
কাহাফ লিখেছেন :
আমি বলতে চাচ্ছি...... ব্লগে দীর্ঘ পোস্ট পড়তে অনিহা জাগে! কিন্তু উপন্যাস এতো ছোট আকারে পোস্ট দিলে বুঝতে অসুবিধা হয় আমার অন্ততঃ!Praying Praying
২৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৫৯
232989
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : সেটা ঠিক অসুস্থতার জন্য নিয়মিত লিখতে পারছি না।
289143
২৮ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৩৬
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : ভালো লাগলো
২৮ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৫১
232898
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : ধন্যবাদ ইশতিয়াক ভাই
289437
২৯ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:২৮
ফেরারী মন লিখেছেন : অনেক সুন্দর হয়েছে ... ভালো লাগলো। ধন্যবাদ
২৯ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৩৬
233126
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File