শুধু উপাস থাকা আর তারাবি পড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলেই কি রমজানের বরকত পেয়ে যাবো..? এই মাসে যতবেশি ইবাদত করা যায় ততবেশী লাভ

লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ২৫ মে, ২০১৮, ০৩:৪৬:৩৪ রাত

শুধু কি উপাস থাকা আর তারাবি পড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলেই রমজানের বরকত পেয়ে যাব? আমাদের উচিত ১২ মাসের মধ্যে এই রমজান ১টি মাত্র মাসে বেশী বেশী নেক আমল করে বেশী বেশী সওয়াব কামানো এবং সমস্ত পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা, যেমন বেশী কথা বলা থেকে,গীবত থেকে,তর্ক ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা ।

কত বেশী রাকাত তারাবী নামাজ পড়লাম সেটার চেয়ে ধৈয্য বজায় রেখে ধীরস্থির ভাবে দীর্ঘ সময় ধরে নামাজ পড়াটাই নবীজির(সাঃ) সুন্নত যা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারাবী ৮ রাকাত না কি ২০ রাকাত নাকি ৪০ রাকাত এটা নিয়ে তর্ক করাটাই অর্থহীন।

হাদিস শরিফে কি সুন্দর বর্ণনা এসেছে যে, ইমাম নামায শেষ না করা পর্যন্ত যে ব্যক্তি ইমামের সাথে জামাআতে তারাবীহ পড়ল তার জন্য পূর্ণ রাত নফল পড়ার সাওয়াব লেখা হয়ে গেল। তিরমিযী ৮০৬

তাহলেই হবে এই মাস আমাদের জন্য বরকতপূর্ণ। অন্যথায় ক্ষতিগ্রস্থ হবো আমরাই। কি ভাবে রমজানের আমল সমুহ আমরা আদায় করবো আসুন একটু কেয়াল করে আমল করি সূর্য ডুবা মাত্রই আমরা ইফতার করবো। নবীজি (সাঃ) বলেছেন লোকেরা যতদিন শীঘ্র সূর্যাস্ত হওয়া মাত্রই ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে।(বুখারী, মুসলিম)

ইফতার কি দিয়ে করা উত্তম নবীজি (সাঃ) বলেছেন তোমরা খেজুর দিয়ে ইফতার কর, খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র [আবু দাউদ]

ইফতার শুরু করবেন বিসমিল্লাহ বলে। ইফতার করে নবীজি (সাঃ) যে দোয়াটি পড়তেন ইফতারের সময়

ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ، وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّ

যাহাবাজ্জামাও ওয়া আবতাল্লাতিল ও'রুকু ওয়া সাবাতাল আজরু ইন শা আল্লাহ। অর্থ পিপাসা দূরীভূত হয়েছে, শিরা-উপশিরাগুলো সিক্ত হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ প্রতিদানও নির্ধারিত হয়েছে।

নবীজি (সাঃ) সেহেরী বিলম্বে খেতেন কারণ সেহেরী দেরীতে খাওয়ার মধ্যে অনেক বরকত রয়েছে। মুসনাদে আহমেদ। বিলম্বে অর্তাৎ আযানের প্রায় ২০/৩০ মিনিট আগে থেকেই শুরু করা আযানের আগ পর্যন্ত এর মধ্যে যেন খাওয়া হয়। ইহুদি খৃস্টানেরা তাদের রোজাতে সেহেরী খায় না।

যে ব্যক্তি ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত রাতের সালাত তারাবীহ পড়বে তাকে পুরো রাতের কিয়ামুল লাইলের সাওয়াব দান করা হবে। আবূ দাউদ তাহাজ্জুদ নামাজ যেন মিস না হয়। ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের সালাত অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত (মুসলিম)

কাউকে ইফতার করালে আপনি ঐ রোযাদারের রোযার মতই সমান সওয়াব পাবেন। ১টি খেজুর বা পানি দিয়ে হলে ও ইফতার করাতে পারবেন। ঠিক সময় মত জামায়াতে সালাত আদায় করা। জামায়াতের প্রথম কাতারে শামিল হওয়া।

নবীজি(সাঃ) বলেছেন তোমরা যদি জানতে অথবা তারা যদি জানতো যে, সামনের লাইনে দাঁড়ানো কত কল্যাণকর তথা মাহাত্ম; তাহলে তারা এইটা লাভ করার জন্য লটারী করতো দৌড়া দৌড়ি করতো।

মহান আল্লাহ বলেন নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ। সূরা নিসা ১০৩ আয়াত। এ বিষয়ে হাদীস শরিফে এসেছে, কোন আমল জান্নাতের অতি নিকটবর্তী? তিনি বললেন, সময় মত নামায আদায় করা। মুসলিম

বেশী বেশী কুরআন পড়া নিজে কুরআন খতম করা। সহীহভাবে কুরআন শেখা। এবং কুরআন বুঝে অর্থ সহ পড়াই উত্তম।

বেশি বেশি দান-সদাকাহ করা। রমাদানে নবীজি (সাঃ) এর দানশীলতা আরো বেড়ে যেত অধিক হারে সহীহ বুখারী

বেশী বেশী তাওবা করা/ ইসতিগফার ও দোয়া করা/কান্না কাটি করা। নবীজি (সাঃ) যার সব গুনাহ মাফ তিনি দিনে ১০০ বার আস্তাগফিরুল্লাহ পড়তেন। শ্রেষ্ট ইস্তেগফার হল দিনে ১ বার, রাতে ১বার পাঠ করা

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُك وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا َأَنْتَ

অর্থ হে আল্লাহ, তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া প্রকৃত এবাদতের যোগ্য কেউ নাই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছেন , আর আমি তোমার গোলাম আর আমি সাধ্যমত তোমার সাথে কৃত অঙ্গীকারের উপর অবিচল রয়েছি। আমার কৃত-কর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমাকে যত নেয়ামত দিয়েছেন সেগুলোর স্বীকৃতি প্রদান করছি। আমি যত অপরাধ করেছি সেগুলোও স্বীকার করছি। অতপর তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারণ তুমি ছাড়া ক্ষমা করার আর কেউ নেই।

ফযিলাত যে কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দিনের বেলায় এই দুয়াটি সাইয়িদুল ইসতিগফার পাঠ করবে ঐ দিন সন্ধ্যা হওয়ার আগে মৃত্যু বরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে এবং যে কেউ ইয়াকিনের সাথে রাত্রিতে পাঠ করবে ঐ রাত্রিতে সে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে। বুখারী ৬৩০৬

বেশী বেশী যিকির করা। এক ব্যক্তি নবিজি(সাঃ)কে ইসলামের অনেক নির্দেশনা থেকে একটির জন্য পরামর্শ চাইলেন, তিনি বল্লেন জিহবাকে সব সময় জিকিরের সাথে রাখতে।

বেশী বেশী মিসওয়াক করা। নবীজি(সাঃ) উম্মতের কষ্ট হতে পারে মনে করে তা ফরয করেন নাই। তিনি মিসওয়াক এত বেশী পছন্দ করতেন।

সুযোগ থাকলে ফজরের নামাজের পরে মসজিদে বসে থেকে জিকির/তিলাওয়াত করে সূর্যোদয়ের প্রায় বিস মিনিট পরে দুই রাকাত নামাজ পড়লে একটি ওমরা ও একটি হজ্জের সোয়াব পাওয়া যায়।

ই‘তিকাফ করা প্রত্যেক রমাজানেই নবীজি (সাঃ) শেষ ১০ দিন ই‘তিকাফ করতেন। দাওয়াতে দ্বীনের কাজ করা। ভাল কাজের উপদেশ প্রদানকারী ঐ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবেন। তিরমীযি

সামর্থ্য ও সুজোগ থাকলে উমরাহ পালন করা। রমাজান মাসে উমরাহ করা নবীজি (সাঃ) এর সাথে হজ্জ আদায় করার সমান বুখারী

আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নীত করা সালাম বিমিয়ের মাধ্যমে হলেও আত্নীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ। আত্নীয়তার সর্ম্পক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করা। ক্বদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম সূরা কদর। হে আল্লাহ এই রমজানের ফজিলত থেকে আমাদেরকে মাহরুম করবেন না। আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমিন

বিষয়: বিবিধ

১০৪৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385415
২৫ মে ২০১৮ সন্ধ্যা ০৭:১৪
শেখের পোলা লিখেছেন : আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক ভাবে রমজান পালন করার তৌফিক দিন।
২৬ মে ২০১৮ রাত ০১:০১
317719
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আমিন সুমমা আমিন আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ جزاك الله خيرا وشكرا لك و
385566
২০ জুন ২০১৮ বিকাল ০৪:৩৩
কুয়েত থেকে লিখেছেন : চেটে খাওয়ার অনলাইন বিডিনিউজ২৪.কম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারা লিখেছিল "আসছে জাতীয় নির্বাচন, জেনারেল আজিজ সেনাপ্রধান হিসেবেই থাকবেন! এই মিডিয়া বন্ধে শাহবাগীরা চিৎকার শুরু করেছে,গেল বাক স্বাধীনতা গেল! অথচ আমারদেশ,দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি বন্ধে এরাই ফ্যাসিবাদের মুখে খাবার তুলে দিয়েছিল! আজ যখন সেই ফ্যাসিবাদ তার চরিত্র অনুযায়ী নিজের লেজ খাওয়া শুরু করে দিয়েছে তখন এদের চিৎকার শুরু হয়ে গেছে! এটাকে বলে চেতনা! শাহবাগী চেতনা!
জেনারেল আজিজের ভারতপ্রীতি নতুন নয়। তার প্রভু এদেশের জনগন নয় সেটা বিজিবি প্রধান থাকাকালীন হাসিমুখে সীমান্তে লাশগ্রহন এবং শাপলা চত্ত্বরের সময়ের গঠনা। তাকে সেনাপ্রধান করার অর্থ পরিস্কার। এদেশের পুলিশ,র‍্যাব,বিচারবিভাগ বহু আগেই ধ্বংস করা হয়েছে,সেনাবাহিনীকেও করা হচ্ছিল সেটা জনগন প্রকাশ্যে বুঝতে শুরু করতে দেরি করেছে। এই নিয়োগ এবং তারপরবর্তী কর্মকান্ড দিনদিন জনগনের কাছে পরিস্কার হবে, এই সেবাবাহিনী কার?
385582
২৪ জুন ২০১৮ রাত ০৩:১৯
কুয়েত থেকে লিখেছেন : শকুনরা_আছে_ডানা_মেলে

শকূনরা আছে ডানা মেলে
আসতে উড়ে আমার দেশে!
আমার জাতি আছে ঘুমিয়ে
কে বলো আজ,তুলবে জাগিয়ে?।

ক্ষমতার মসনদ হয়েছে হরন
দালালরা তাতে করেছে আরোহণ
দেশের মানচিত্র করবে ভক্ষণ
জাতির মাঝে না জাগে যদি জাগরণ।

জাতি আমার জাগবে কবে?
কবর যখন শ্মশানে যাবে!
মানচিত্র যখন গিলে খাবে!
কি লাভ জেগে,সব হারিয়ে?।

চেতনার বড়ি খাইয়ে দিয়ে
জাতিকে রেখেছে ঘুম পাড়িয়ে
রক্ত পিপাসায় হায়েনারা মেতেছে
লাশের সারি ওলি-গলি খালে বিলে।

তা দেখে শকুনের দল
আঁটছে যত কূটকৌশল
জাতি আমার অলস হীনবল
হারাতে বসেছে সহায় সম্বল।

হায়েনারা যখন খাবে রক্ত চুষে
শকূনরা তখন আসবে উড়ে
লাশের সারি দেখে দেখে
বসবে তখন ঘাপটি মেরে।

ঠুকরে ঠুকরে নিথর দেহ ওরা খাবে
পাশের বাড়িতে হাড্ডি যাবে,
যারা আনছে শকূন ডেকে
পারবে কি তারা সামাল দিতে?
385595
২৭ জুন ২০১৮ দুপুর ০১:২৮
কুয়েত থেকে লিখেছেন : দারসুল কুরআন
সূরা আল বাকারাঃ ১৫৩-১৫৫
ياَيُّهَا الَّذِيْنَ امَنُوْا اسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلوةِ ج اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ 0
وَلاَ تَقُوْلُوْا لِمَنْ يُّقْتَلُ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ اَمْوَاتٌ ج بَلْ اَحْيَاءٌ وَّلكِنْ لاَ تَشْعُرُوْنَ 0
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوْعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الاَمْوَالِ وَالاَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ط وَبَشِّرِ الصَّابِرِيْنَ 0
(সূরা আল বাকারা, আয়াত ১৫৩-১৫৫)
ভাবানুবাদ
১৫৩. ‘ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো, সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবর অবলম্বনকারীদের সঙ্গে আছেন।
১৫৪. আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদেরকে তোমরা ‘মৃত’ বলো না। তারা তো আসলে জীবিত। কিন্তু তোমরা তা অনুধাবন করতে পার না।
১৫৫. এবং আমি অবশ্যই তোমাদেরকে ভীতিপ্রদ পরিস্থিতি, ক্ষুধা-অনাহার এবং অর্থ-সম্পদ, জান ও আয়-উপার্জনের লোকসান ঘটিয়ে পরীক্ষা করবো। এমতাবস্থায় যারা সবর অবলম্বন করবে, তাদেরকে সুসংবাদ দাও।’

শানে-নজুল
নবুওয়াত প্রাপ্তির পর তেরোটি বছর মাক্কায় ইসলামের দাওয়াত পেশ করেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।
সত্য-সন্ধানী কিছু সংখ্যক লোক তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁর নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ হন। কিন্তু মুশরিক নেতাদের দাপটের কারণে মক্কার অধিকাংশ মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেনি। এই দিকে ইয়াসরিবের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের একটি বড়ো অংশ ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁদের প্রচেষ্টায় ইয়াসরিবে ইসলামী দাওয়াতের প্রসার ঘটে।
এমতাবস্থায় আল্লাহ রাব্বুল ‘আল আমীন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর অনুসারীদেরকে ইয়াসরিবে হিজরাত করার নির্দেশ দেন।
৬২২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইয়াসরিব পৌঁছেন। ইয়াসরিবে গড়ে তোলেন ছোট্ট একটি রাষ্ট্র। তখন থেকে ইয়াসরিব হয় আল মাদিনা।
মাদানী যুগের একেবারে গোড়ার দিকে সূরা আল বাকারার বৃহত্তর অংশ নাজিল হয়। সুদ নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত আয়াতগুলো নাজিল হয়েছিলো মাদানী যুগের শেষ দিকে। এই আয়াতগুলোকেও এই সূরায় শামিল করা হয়। আবার, যেই আয়াতগুলো দিয়ে এই সূরাটির সমাপ্তি টানা হয়েছে সেই আয়াতগুলো মাক্কী যুগের শেষভাগে মিরাজের সময় নাজিল হয়েছিলো। বিষয়বস্তুর সামঞ্জস্যের কারণে সেই আয়াতগুলো এই সূরায় সংযুক্ত করা হয়।
হিজরাতের পূর্বে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাওয়াতি তৎপরতা পরিচালিত হয়েছে মুশরিকদের মধ্যে। হিজরাতের পর আরেক শ্রেণীর লোক তাঁর সামনে আসে। এরা ছিলো ইয়াহুদি।
আল মাদীনার উপকণ্ঠে তাদের বিভিন্ন গোত্র বসবাস করতো। এরা আত্তাওরাতের অনুসারী বলে দাবি করতো। আসলে তারা আত্তাওরাতকে বিকৃত করে ফেলেছিলো। আত্তাওরাতে তারা মানুষের কথা মিশিয়ে নিয়েছিলো। আত্তাওরাতের যেই সব আয়াত তখনো অবিকৃত ছিলো সেইগুলোকে তারা নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্যা দ্বারা বিকৃত করে ফেলেছিলো। এরা ছিলো আসলে বিকৃত মুসলিম।
ইসলামী দাওয়াত মাদানী যুগে প্রবেশ করার পর আরেক শ্রেণীর মানুষের আবির্ভাব ঘটতে শুরু করে। এরা ছিলো মুনাফিক।
এদের কেউ কেউ ইসলামের সত্যতা স্বীকার করতো, কিন্তু এর প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে দ্বন্দ্ব-প্রতিদ্বন্দ্বে নিয়োজিত হতে তারা প্রস্তুত ছিলো না।
এদের কেউ কেউ ইসলাম ও জাহিলিয়াতের মাঝে দোদুল্যমান অবস্থায় ছিলো।
এদের কেউ কেউ আসলে ইসলামকে অস্বীকারই করতো, কিন্তু ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মুসলিমদের দলে প্রবেশ করতো।
এদের কেউ কেউ একদিকে মুসলিমদের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতো, অন্যদিকে ভালো সম্পর্ক রাখতো ইসলামের দুশমনদের সাথে। শেষাবধি যারাই বিজয়ী হোক না কেন, এতে যেনো তাদের স্বার্থ হানি না ঘটে সেই বিষয়ে তারা ছিলো খুবই সজাগ।
সূরা আলবাকারা নাজিলের সময় বিভিন্ন ধরনের মুনাফিকের আত্মপ্রকাশ ঘটতে শুরু করেছিলো মাত্র, তাই এই সূরাতে তাদের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য পেশ করা হয়েছে।
সঙ্গে সঙ্গে মুমিনদের চিন্তা-চেতনা, কামনা-বাসনা এবং আমল-আখলাক পরিশীলিত করার জন্য বিভিন্ন সবক দেয়া হয়েছে।

ব্যাখ্যা
১৫৩ নাম্বার আয়াত
“ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো, সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। অবশ্যই আল্লাহ সবর অবলম্বনকারীদের সঙ্গে আছেন।”
আল মাদীনা রাষ্ট্রে উত্তরণের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন মুমিনদেরকে নেতৃত্বের আসনে বসিয়ে দেন। এর মাধ্যমে তাঁদেরকে যে বিরাট রকমের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে ইংগিতে সেই কথা তাঁদেরকে জানিয়ে দেন। সমাজ-সভ্যতার ইসলাহ করতে অগ্রসর হলে তাঁদেরকে যে বড়ো রকমের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হবে সেই কথা তাঁদেরকে জানিয়ে দেন। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য তাঁদেরকে সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার আহ্বান জানান।
সবর অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ। মুমিনদেরকে এই গুণে গুণান্বিত হওয়ার জন্য আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বারবার তাকিদ করেছেন। আল হাদিসেও এই বিষয়ে তাকিদ রয়েছে।
রোগ-ব্যাধির কষ্ট বরদাশত করার নাম সবর।
দুঃখ-বেদনায় ভেঙে না পড়ার নাম সবর।
অনভিপ্রেত কথা ও আচরণে উত্তেজিত না হওয়ার নাম সবর।
পাপের পথে গিয়ে লাভবান হওয়ার চেয়ে পুণ্যের পথে থেকে ক্ষতিকে মেনে নেয়ার নাম সবর।
মিথ্যা প্রচারণার মুখে অবিচলিত থাকার নাম সবর।
ভীতিপ্রদ পরিস্থিতিতেও সঠিক পথে দৃঢ়পদ থাকার নাম সবর।
লক্ষ্য হাসিলের জন্য দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার নাম সবর।
লক্ষ্য অর্জন বিলম্বিত হচ্ছে দেখে হতাশ বা নিরাশ না হওয়ার নাম সবর।
বিরোধিতার বীরোচিত মোকাবেলার নাম সবর। ইত্যাদি।
সূরা আল মুদ্দাস্সিরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় আয়াতে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবী হিসেবে তাঁর কর্তব্য কী তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ময়দানে তিনি তখনো নামেননি। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন এই সূরারই সপ্তম আয়াতে এই কথাও তাঁকে অগ্রিম জানিয়ে দিলেন যে এই কর্তব্য পালন করতে গেলে তাঁকে বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হবে। সেই অবস্থার সম্মুখীন হয়ে তাঁকে কর্তব্য কর্মে দৃঢ়পদ থাকতে হবে।
وَلِرَبِّكَ فَاصْبِرْ 0

(এবং তোমার রবের খাতিরে সবর অবলম্বন কর।)
সবর অবলম্বনের তাকিদ দিয়ে সূরা আল মুয্যাম্মিলের ১০ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন,
وَاصْبِرْ عَلى مَا يَقُولُوْنَ وَاهْجُرْهُمْ هَجْرًا جَمِيْلاً 0
‘ওরা যেইসব কথা বলে বেড়াচ্ছে তার মোকাবেলায় সবর অবলম্বন কর এবং ভদ্রভাবে তাদেরকে এড়িয়ে চল।’
সূরা আল মা‘আরিজের ৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন,
فَاصْبِرْ صَبْرًا جَمِيْلاً 0
‘অতএব তুমি সবর অবলম্বন কর, সুন্দর সবর।’
সূরা ইউনুসের ১০৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন,
وَاتَّبِعْ مَا يُوْحى إِلَيْكَ وَاصْبِرْ حَتّى يَحْكُمَ اللهُ ج وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِيْنَ0
‘এবং তোমার প্রতি যা ওহি করা হয় তা মেনে চল এবং আল্লাহ ফায়সালা না করে দেয়া পর্যন্ত সবর অবলম্বন কর। আর তিনিই তো সর্বোত্তম ফায়সালাকারী।’
একই রূপ তাকিদ দিয়ে সূরা তা-হা-এর ১৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন,
‘অতএব ওরা যা কিছু বলে বেড়াচ্ছে তার মোকাবেলায় তুমি সবর অবলম্বন কর, আর সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে তোমার রবের প্রশংসাসহ তাসবিহ কর, রাতের বেলায়ও তাসবিহ কর এবং দিনের প্রান্তে। আশা করা যায় তুমি খুশি হবে।
সূরা আল আহকাফের ৩৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন,
فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ أُوْلُوْا الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ وَلاَ تَسْتَعْجِلْ لَّهُمْ 0
এ হচ্ছে সবর অবলম্বনের তাকিদ সংবলিত বহুসংখ্যক আয়াতের মাত্র কয়েকটি।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “সবরের চেয়ে উত্তম ও প্রশস্ত আর কিছু কাউকে দেয়া হয়নি।” (আবু সায়িদ আল খুদরী (রা) সাহীহ মুসলিম, সহীহ আল বুখারী।)
সূরা আয্যুমারের ১০ নম্বর আয়াতে সবর অবলম্বনকারীদের প্রতিদান সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন, “সবর অবলম্বনকারীদেরকে অগণিত পুরস্কার পূর্ণভাবে দেয়া হবে।” এই আয়াতের শেষাংশে-
اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَِ 0
কথাটি জুড়ে দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন সবর নামক গুণটির মাহাত্ম্য তুলে ধরেছেন। অন্য দিকে এই বাক্যাংশের মাধ্যমে তিনি মুমিনদের মনে নিশ্চিন্ততার আমেজ সৃষ্টি করেছেন।
আরেকটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সালাত। এটি এমন এক প্রক্রিয়া যার অনুশীলন মুমিনদের মাঝে অনুপম নৈতিক শক্তি সৃষ্টি করে। সেই জন্য মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নবুওয়াত প্রদানের সঙ্গে সঙ্গেই জিবরিল (আ) কে পাঠিয়ে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন তাঁকে সালাত আদায়ের পদ্ধতি শিখিয়ে দেন। মাক্কী ও মাদানী যুগে নাজিলকৃত বহু আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন সালাতের তাকিদ দিয়েছেন। আলোচ্য আয়াতটিতেও আমরা একই রূপ তাকিদ দেখতে পাই।

১৫৪ নম্বর আয়াত
“আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদেরকে তোমরা ‘মৃত’ বলো না। তারা তো আসলে জীবিত। কিন্তু তোমরা তা অনুধাবন করতে পার না।”
আল্লাহর পথে নিহত হওয়াকে ইসলামী পরিভাষায় শাহাদাত বলা হয়। যিনি আল্লাহর পথে নিহত হন, তাঁকে বলা হয় শহীদ।
শাহাদাতবরণ মৃত্যু বটে, কিন্তু অসাধারণ মৃত্যু, মহিমান্বিত মৃত্যু। সেই জন্য আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন শহীদদেরকে ‘মৃত’ বলে আখ্যায়িত করতে নিষেধ করেছেন।
সূরা আলে ইমরানের ১৬৯ থেকে ১৭১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন শহীদদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে তোমরা মৃত মনে করো না। বরং তারা জীবিত। তাদের রবের কাছ থেকে তারা রিজিক পাচ্ছে। আল্লাহ তাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা কিছু দিয়েছেন, তাতে তারা খুশি ও তৃপ্ত। আর তারা এই বিষয়েও নিশ্চিত, যেই সব মুমিন তাদের পেছনে এখনো দুনিয়ায় রয়ে গেছে, তাদের জন্য কোন ভয় ও দুঃখের কারণ নেই। তারা আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহ লাভ করে আনন্দিত এবং তারা জানতে পেরেছে, অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের পুরস্কার নষ্ট করেন না।” শহীদের মর্যাদা সম্পর্কে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “জান্নাতে প্রবেশ করার পর দুনিয়ার সমস্ত সামগ্রী তার জন্য নির্ধারিত হলেও কোন ব্যক্তি পৃথিবীতে ফিরে আসতে চাইবে না। কিন্তু শহীদ এর ব্যতিক্রম। তাকে যেই মর্যাদা দেয়া হবে তা দেখে সে দশবার পৃথিবীতে এসে শহীদ হওয়ার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করবে।”
শাহাদাত লাভের পর পরই যাঁরা আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিনের সান্নিধ্যে এমনভাবে সমাদৃত হন, তাঁদেরকে ‘মৃত’ বলা আসলেই শোভনীয় নয়।

১৫৫ নম্বর আয়াত
“এবং আমি অবশ্যই ভীতিপ্রদ পরিস্থিতি, ক্ষুধা-অনাহার এবং অর্থ-সম্পদ, জান ও আয়-উপার্জনের লোকসান ঘটিয়ে তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো। এমতাবস্থায় যারা সবর অবলম্বন করবে, তাদেরকে সুসংবাদ দাও।”
এই আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন তাঁর একটি শাশ্বত বিধানের কথা মুমিনদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আর সেটি হচ্ছে : যাঁরা আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিনের প্রতি নিখাদ ঈমান আনার ঘোষণা দেবেন, তাঁদেরকে তিনি অবশ্যই পরীক্ষার সম্মুখীন করবেন। সূরা আল ‘আনকাবুতের ২ ও ৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন,
اَحَسِبَ النَّاسُ اَنْ يُّتْرَكُوْآ اَنْ يَّقُوْلُوْآ امَنَّا وَهُمْ لاَ يُفْتَنُوْنَ 0 وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِيْنَ0
‘লোকেরা কি মনে করেছে যে ‘আমরা ঈমান এনেছি’ এই কথা বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? অথচ তাদের পূর্ববর্তীদেরকে আমি পরীক্ষা করেছি। আল্লাহকে তো জানতে হবে ঈমানের দাবিতে কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী।’ পরবর্তীকালে অবতীর্ণ সূরা মুহাম্মাদের ৩১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন, “আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো যাতে আমি জেনে নিতে পারি তোমাদের মধ্যে কারা ‘মুজাহিদীন’ এবং কারা ‘সাবেরিন’।” সূরা আলে ইমরানের ১৪২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন, “তোমরা কি ভেবেছো এমনিতেই জান্নাতে চলে যাবে, অথচ আল্লাহ এখনো দেখেননি তোমাদের মধ্য থেকে কারা জিহাদ করে এবং কারা সবর অবলম্বনকারী?” সূরা আত্ তাওবা-র ১৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন,
اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تُتْرَكُوْا وَلَمَّا يَعْلَمَ اللهُ الَّذِيْنَ جهَدُوْا مِِنْكُمْ وَلَمْ يَتَّخِذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ وَلاَ رَسُوْلِه وَلاَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَلِيْجَةٌ ج وَاللهُ خَبِِيْرٌم بِمَا تَعْمَلُوْنَ 0
‘তোমরা কি ভেবেছো যে তোমাদেরকে এমনিতেই ছেড়ে দেয়া হবে অথচ আল্লাহ এখনো দেখেননি যে তোমাদের মধ্য থেকে কারা জিহাদে নিবেদিত হয় এবং আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনদেরকে ছাড়া আর কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেন না। আর তোমরা যা কিছু কর সেই সম্পর্কে আল্লাহ খবর রাখেন।’
সূরা আল বাকারার ২১৪ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন, “তোমরা কি ভেবেছো যে এমনিতেই তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ এখনো তোমাদের ঐরূপ অবস্থা আসেনি যেমনটি এসেছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর।”
তাদের ওপর কঠিন অবস্থা আপতিত হয়েছে, মুসিবত এসেছে এবং তাদেরকে কাঁপিয়ে দেয়া হয়েছে যেই পর্যন্ত না রাসূল ও তাঁর সঙ্গীরা বলে উঠেছে, ‘কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য!’ তখন তাদেরকে বলা হয়েছে, ‘ওহে, আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটেই।’ সূরা আলে ইমরানের ১৪৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন বলেন, “কত নবী গত হয়ে গেছে যারা লড়াই করেছে, তাদের সাথে মিলে লড়াই করেছে বহু আল্লাহওয়ালা লোক। আল্লাহর পথে যতো মুসিবাতই তাদের ওপর আপতিত হয়েছে তারা হতাশ হয়নি, দুর্বলতা দেখায়নি এবং বাতিলের নিকট মাথা নত করেনি। এমন সবর অবলম্বনকারীদেরকেই আল্লাহ ভালোবাসেন।”
ঈমানের দাবি হচ্ছে, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিবেদিত হওয়া এবং এই সংগ্রাম চালাতে গিয়ে যত প্রকারের বাধাই আসুক না কেন তার মোকাবেলায় দৃঢ়পদ থাকা।
এই সংগ্রাম চালাতে গিয়ে মুমিনদেরকে অনিবার্যভাবে ভীতিপ্রদ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে, কখনো কখনো অবস্থা এমন সঙ্গিন হতে পারে যে অনাহারে থাকতে হবে, কখনো কখনো বাগ-বাগিচা, ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠান, ঘরদোরের ওপর হামলা হতে পারে, কখনো কখনো ইসলাম বিদ্বেষীদের হাতে আপনজন ও সহকর্মীদের কেউ কেউ প্রাণ হারাতে পারেন এবং কখনো কখনো আয়-উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এমন সব কঠিন পরিস্থিতিতেও যাঁরা সবর অবলম্বন করতে পারবেন, তাঁদেরকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছেন।

শিক্ষা
১. সমাজ ও সভ্যতার ইসলাহ বা পরিশুদ্ধি করতে গেলে মুমিনদেরকে অবশ্যই বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হবে। এমতাবস্থায় তাঁদেরকে সবর ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাইতে থাকতে হবে।
২. আল্লাহর পথে যাঁরা শহীদ হন তাঁদেরকে ‘মৃত’ বলে আখ্যায়িত করা যাবে না।
৩. আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন ভীতিপ্রদ পরিস্থিতি, ক্ষুধা-অনাহার এবং অর্থ-সম্পদ, জান ও আয়-উপার্জনের লোকসান ঘটিয়ে মুমিনদেরকে পরীক্ষা করবেন। এমতাবস্থায় যাঁরা দৃঢ়তা-অটলতা-অবিচলতা অবলম্বন করবেন, তাঁদের জন্যই রয়েছে আল্লাহর বিপুল অনুগ্রহ ও রাহমাত।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File