আল্ট্রাসনোগ্রাফ টেস্টের মাধ্যমে মানুষ জরায়ুর ভ্রুনের লিংগ জানতে পারে। তাহলে এটি গায়েব হল কিভাবে? কুরানের এই আয়াতের নির্ভরযোগ্যতা কোথায়

লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ০৮:১৮:০১ রাত

জরায়ুতে (রেহেমে) যা আছে তা গায়েবের অন্তর্ভুক্ত। তাই এটি শুধুমাত্র আল্লাহই জানেন। কিন্তু বর্তমান আধুনিক টেকনোলজিতে আল্ট্রাসনোগ্রাফ টেস্টের মাধ্যমে মানুষ জরায়ুর ভ্রুনের লিংগ জানতে পারে। তাহলে এটি গায়েব হল কিভাবে? কুরানের এই আয়াতের নির্ভরযোগ্যতা কোথায়? গায়েব সম্পর্কে শুধুমাত্র আল্লাহ জানেন এই দাবীটি কতটুকু ঠিক?

মহিলাদের জরায়ুতে অবস্থানরত ভ্রুণের লিংগ সম্পর্কে জানতে পারা একটি বৈজ্ঞানিক সফলতা এবং মহান স্রষ্টার সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা ও গবেষণার নির্দেশের বাস্তবায়নের বহিপ্রকাশ মাত্র। পাশাপাশি এটি স্রষ্টাকে জানার একটি ধাপও বটে। বিজ্ঞানের সঠিক তথ্যের সাথে কুরানের কোন ধরণের সংঘর্ষ নেই। পবিত্র কুরানে আল্লাহ তাআলা বলেন,

{إِنَّ اللَّهَ عِندَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَداً وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ}.

অর্থ: ‎কিয়ামতের জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহর নিকট রয়েছে, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন যা ‎জরায়ুতে আছে। কেউ জানে না আগামী কাল সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে তার ‎মৃত্যু ঘটবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত।‎ (সুরা লোকমান: ৩৪)।

এই আয়াতে ব্যবহৃত (ما) একটি অব্যয়। এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে যা/যাহা। এটি একটি অনিদিষ্ট/নাকিরাহ অব্যয় যা ব্যপকতার/উমূম অর্থ দেয় (ما نكرة تفيد العموم)। অর্থাৎ মা এর অর্থ অনেক ব্যপক ও বহুমাত্রিক। তম্মোধ্যে ছেলে মেয়ে মা উমুমের একটি দিক মাত্র। এছাড়াও এই উমুমের মধ্যে আরো অনেক দিক রয়েছে যেগুলো বিজ্ঞান অদ্যবধি আবিষ্কার করতে পারেনি এবং কিয়ামত পর্যন্ত আবিষ্কার করার কোন সম্ভাবনাও নেই।

১। বিজ্ঞান জানতে পারে নিদিষ্ট একটি সময়ের ভ্রুণের পূর্ণ আকৃতি লাভের পর। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা শুরু থেকেই জানেন সেটা কী?

২। কে বলেছে মা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে শুধুমাত্র লিঙ্গ; ছেলে বা মেয়ে? বরং এর অর্থ বহুমাত্রিক যা একমাত্র আল্লাহই জানেন।

৩। বিজ্ঞান কি জানে জরায়ুতে থাকা বাচ্চাটির দৈর্ঘ কত হবে?

৪। সে মেধাবী না বোকা হবে?

৫। সৌভাগ্যবান হবে না হতভাগা?

৬। সে কত দিন বাঁচবে?

৭। সে ধৈর্যশীল হবে না রাগী হবে?

৮। আল্ট্রাসনোগ্রাফের মাধ্যমে একটি নিদিষ্ট সময়ের পর শুধুমাত্র ভ্রুণের লিংগ জানা গেলেও বিজ্ঞানের এই জানাও অনেক সীমিত। কারণ সকল মহিলা কি ডাক্তারের কাছে যায়? যারা টেস্ট করে না তাদের রেহেমে কি আছে তাও আল্লাহ জানেন।

৯। সব মহিলা কি একই ডাক্তারের কাছে যায় যে একজন ডাক্তার সব রেহেমের ভ্রুনের লিংগ জানবেন। কিন্তু একমাত্র আল্লাহ সকল রেহেমে কী আছে তা জানেন।

১০। এসকল কিছু শুরু থেকেই একমাত্র আল্লাহই জানেন। তাই মা শুধুমাত্র লিঙ্গের সাথে সীমাবদ্ধ নয়। এভাবেই প্রমানিত হয় যে বিজ্ঞান যত বেশী অগ্রসর হবে স্রষ্টার জ্ঞানের পরিধি তত বেশী অনুধাবন হবে। এভাবেই মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বুঝা যায় এবং আল্লাহ তাআলা যে সর্বজ্ঞ এবং সব বিষয়ে অবহিত তা প্রমানিত হয়।

সুতরাং কুরানের বানী বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সাথে সাংঘর্ষিক নয় বরং কুরানের ব্যপারে মানুষের স্বল্প জ্ঞান ও বুঝের সাথে বিজ্ঞানের বাহ্যিক দ্বন্দ পরিলক্ষিত হয়। আর কুরানের জ্ঞান যথাযথ অর্জিত হলে অনুমেয় এই বাহ্যিক দ্বন্দের নিরসন হয়ে যায়। (এটি শুধুমাত্র তাফসীরে শা'রাভী অবলম্বনে লিখা। অন্যান্য আরো তাফসীরে আরো চমৎকার ব্যাখ্যার অবকাশ রয়েছে)।

বিষয়: বিবিধ

১০৬৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386746
১০ অক্টোবর ২০১৯ সকাল ১০:৫৭
কুয়েত থেকে লিখেছেন : কারীন জিন: আপনার নিত্যসঙ্গী এ ভয়ানক শয়তান সম্পর্কে আপনি কতটা সচেতন?

কারীন ((قرين)) আরবি শব্দ। এর অর্থ হল: সঙ্গী, সাথী ও সহচর।

কুরআন ও সহিহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত যে, প্রতিটি মানুষের নিকট একজন করে জিন-শয়তান নিযুক্ত করা আছে। তার কাজ মানুষকে পথভ্রষ্ট করা, অন্যায়, অশ্লীল ও কুকর্মে প্ররোচিত করা এবং ভালো কাজে নিরুৎসাহিত করা বা বাধা দেয়া। একেই কারীন বা সহচর শয়তান বলা হয়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকটও এই জিন-শয়তান ছিল কিন্তু সে ইসলাম কবুল করেছিলো। যার কারণে সে নবী সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কুমন্ত্রণা দিতে সক্ষম হত না। যেমন:
▪ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
ما مِنكُم مِن أحَدٍ، إلَّا وقدْ وُكِّلَ به قَرِينُهُ مِنَ الجِنِّ قالوا: وإيَّاكَ؟ يا رَسولَ اللهِ، قالَ: وإيَّايَ، إلَّا أنَّ اللَّهَ أعانَنِي عليه فأسْلَمَ، فلا يَأْمُرُنِي إلَّا بخَيْرٍ. غَيْرَ أنَّ في حَديثِ سُفْيانَ وقدْ وُكِّلَ به قَرِينُهُ مِنَ الجِنِّ وقَرِينُهُ مِنَ المَلائِكَةِ.
“তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার সাথে তার সহচর জিন (শয়তান) নিযুক্ত করে দেয়া হয়নি।
সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন: আপনার সাথেও কি হে আল্লাহর রাসূল?
তিনি বললেন: আমার সাথেও তবে আল্লাহ তাআলা তার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করেছেন। ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করেছে ( বা আমার অনুগত হয়ে গেছে)। ফলে সে আমাকে কেবল ভাল কাজেরই পরামর্শ দেয়।”
সুফিয়ানের বর্ণনায় আছে:
وقد وكِّل به قرينُه من الجنِّ وقرينُه من الملائكة
“(তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার সাথে) তার সহচর জিন (শয়তান) এবং সহচর ফেরেশতা নিযুক্ত করে দেয়া হয় নি।” [সহিহ মুসলিম, হা/২৮২৪]

▪ কুরআনেও আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন মানুষের সার্বক্ষণিক সঙ্গী
এই শয়তান এবং মানুষের মাঝে বাক-বিতণ্ডার কথা উল্লেখ করেছেন:
قَالَ قَرِينُهُ رَبَّنَا مَا أَطْغَيْتُهُ وَلَكِنْ كَانَ فِي ضَلَالٍ بَعِيدٍ * قَالَ لَا تَخْتَصِمُوا لَدَيَّ وَقَدْ قَدَّمْتُ إِلَيْكُمْ بِالْوَعِيدِ
“তার কারীন বা সঙ্গী শয়তান বলবে: হে আমাদের পালনকর্তা, আমি তাকে অবাধ্যতায় লিপ্ত করিনি। বস্তুত: সে নিজেই ছিল সুদূর পথভ্রান্তিতে লিপ্ত। আল্লাহ বলবেন: আমার সামনে বাকবিতণ্ডা করো না। আমি তো পূর্বেই তোমাদেরকে আজাব দ্বারা ভয় প্রদর্শন করেছিলাম।” (সূরা ক্বাফ: ২৭ ও ২৮)
ইবনে আব্বাস রা. এর ব্যাখ্যায় বলেন:
هو الشيطان الذي وُكِّل به
”এটাই হল, নিয়োগ কৃত শয়তান।”
ইকরিমা, মুজাহিদ প্রমুখ তাফসীর কারকগণও একই কথা বলেছেন।

▪ আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ يُصَلِّي فَلاَ يَدَعْ أَحَدًا يَمُرُّ بَيْنَ يَدَيْهِ فَإِنْ أَبَى فَلْيُقَاتِلْهُ فَإِنَّ مَعَهُ الْقَرِينَ
“তোমাদের কেউ যখন সালাত পড়ে, তখন সে যেন তার সামনে দিয়ে কাউকে অতিক্রম করতে না দেয়। যদি সে অস্বীকার করে (বাধা মানতে না চায়) তবে সে যেন তার সাথে লড়াই করে। কেননা তার সাথে তার সঙ্গী শয়তান রয়েছে।” (সহিহ মুসলিম, হা/৫০৬)

386763
০২ নভেম্বর ২০১৯ দুপুর ০৩:২০
কুয়েত থেকে লিখেছেন : নাজাতের জন্যে গতানুগতিক ধারার ইসলাম পালনই যথেষ্ট নয়ঃ-
বন্ধুরা,
আপনারা যদি বর্তমান মুসলিম উম্মাহর হাল চরিত্র নিয়ে পর্যালোচনা করেন, তাহলে দেখতে পাবেন কেউ ইসলামের নামটা কেবল ধারণ করে আছেন,কেউ আংশিক ইসলাম পালন করে যাচ্ছেন আবার কেউ পোশাকী ইসলামী ইউনিফর্ম নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন। কমপ্লিট ইসলাম প্রাকটিস করনে ওয়ালা লোকজনের সংখ্যা খুবই নগণ্য। অথচ নাজাতের জন্যে পূর্ণাঙ্গ ইসলাম প্রাকটিস করা ফরজ। সূরা আল বাকারার-২০৮।

বুখারী শরীফের হাদীস,বাবু হুসনি ইসলামীল মারয়ি-৪১,রাবী হচ্ছেন আবু সাঈদ খুদরী রা।
রাসুল সা বলেছেন, যে ব‍্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে তার দাবি সমূহ যথারীতি প্রাকটিস করে চলে, আল্লাহ পাক তার পিছনের যাবতীয় গুনাহ খাত্বা ক্ষমা করে দিবেন শুধু ক্ষমাই করবেন না বরং তার গুনাহ গুলো নেক দ্বারা বদলিয়ে দিবেন সোবহানাল্লাহ!

বক্ষমান হাদীস থেকে বুঝা যায় কেবল গতানুগতিক ধারার ইসলাম পালনই যথেষ্ট নয় বরং ইসলামকে সুন্দর করতে হবে অর্থাৎ ইসলামের যে দাবি আমাদের ব‍্যক্তি, পরিবার, সমাজ, অর্থ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে রয়েছে,তা পুরোপুরি একনিষ্ঠ হয়ে প্রাকটিস করতে হবে।

ইসলাম প্রাকটিস করার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। এক. ইসলামের যাবতীয় হুকুম আহকাম আন্তরিক ভাবে পালন করতে হবে। দুই. দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করতে হবে। তিন. জীবন বাজি রেখে ইসলামের কালজয়ী আদর্শকে বিশ্ব লোকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে মাঠে ময়দানে জানে মালে বাস্তব সাক্ষী দিতে হবে।

শুধু সালাত তাহাজ্জুদ ও দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করে যদি মুক্তি পাওয়া যেতো, কখনোই জীবনের রিস্ক নিয়ে ইক্বামতে দ্বীনের আন্দোলনে শরিক হতাম না।

মানুষ মনে করে মুসলমান হওয়া একেবারে সহজ, মুসলমান হওয়া এতো সহজ নয়। খাঁটি মুসলমান হওয়া মানে গোটা বিশ্ব জাহিলিয়াতের স্রোতধারার বিপরীত নিজে ইস্পাত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়া।
আল্লাহ,
আমাদের সবাইকে ইসলামের সঠিক জ্ঞান আমল দান করুন আমিন সুমমা আমিন ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File