১৯৭১ এ মানবতা বিরোধীদের বিচার অবশ্যই হতে হবে

লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ০৯ এপ্রিল, ২০১৩, ১০:৪২:৫৮ সকাল

৭১ এ যে মানবতা বিরোধী কাজ হয়েছে , অবশ্যই তার বিচার হতে হবে । আর এ বিচার ৭২ হতে ৭৫ এর মধ্যে বেশ ভালভাবেই হয়ে গিয়েছে । ৭২ হতে ৭৫ পর্যন্ত বিচার এর দুটি সংজ্ঞা নির্ধারিত হয় ।

একটি হল প্রচলিত আইনে বিচার এবং অপরটি হল ব্যক্তিগত আইনে বিচার । তখন ব্যক্তিগত আইনে বিচার করে অসংখ্য শান্তি কমিটির সদস্য বা রাজাকার, যারা ইসলামপন্থি ছিল তাদেরকে হত্যা করা হয় ।

কাদের সিদ্দিকীর মত ব্যক্তিও ১৯৭১ সালের ১৮ই ডিসেম্বর ঢাকায় জনসমক্ষে বিদেশী সাংবাদিকের সামনে ৪ জন পাকিস্তানপন্থিকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেন , যা সে সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রচারিত হয় , বর্তমানে ইউটিউবে দৃশ্যটি দেখতে পাবেন । (তথ্যসূত্রঃ ‘মূলধারা ৭১’ মঈদুল হাসান , পৃঃ ২২০ , আত্মঘাতী রাজনীতির তিনকাল , ২য় খন্ড , পৃঃ ৫৮৭) ।

বাজারে রাজাকারদের দড়ি দিয়ে বেধে এবং লটকিয়ে হত্যা করা হয় , দৃশ্যটি দেখতে পাবেন “আত্মঘাতী রাজনীতি তিনকাল ” বইয়ের ২য় খন্ডে ।

প্রচলিত আইনেও বিচার করা হয়েছিল । বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালের ২৪শে জানুয়ারী কলাবরেটার্স আইন প্রণয়ন করেন । এ আইনে প্রায় ৩৭,০০০ লোক গ্রেফতার করা হয় । মাওলানা ভাসানী , অলি আহাদ এসমস্ত বিচারের তীব্র বিরোধীতা করেন ।

তিনি বন্দীদের মুক্তি দাবী করেন । দালাল আইন বাতিল করার জন্য শেখ মুজিবকে আল্টিমেটাম দেন । এ তথ্যগুলো পাবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনার স্বামী জনাব ওয়াজেদ মিয়া লিখিত “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ” বই এর ১৬৪ ও ১৬৫ পৃষ্ঠায় ।

পরবর্তীতে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর মাসে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন । কিন্তু চারটি অপরাধ ক্ষমা করেননি । এগুলো হল হত্যা , ধর্ষণ , লুন্ঠণ এবং অগ্নিসংযোজন । সাধারণ ক্ষমায় ৩৭,০০০ হতে প্রায় ২৬,০০০ ছাড়া পেলেন ।

কিন্তু উপরোক্ত চারটি অপরাধের জন্য ১১,০০০ আটকা পরলেন । ১৯৭৪ সালের ভিতরে ১১,০০০ হাজারের মধ্যে ২,৮৪৮ জনের বিচার কার্যক্রম শেষ করা হয় । প্রায় ২১০০ জন নির্দোষ প্রমাণিত হন । ৭৫২ জন দোষী প্রমাণিত হন ।

(‘বাংলাদেশে সিভিল সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম’ মুনতাসীর মামুন , জয়ন্ত কুমার রায় , পৃঃ ৬২)। এদের মধ্যে ৩ জনের ফাঁসীর আদেশ হয় । ২ জন পলাতক ছিলেন । খুলনার রাজাকার চিকন আলীর ফাঁসী কার্যকর হয় । এ বিচারে শহীদুল্লা কায়সারের হত্যা মামলায় জামায়াতের খালেক মজুমদারের কারদন্ড হয়েছিল ।

কিন্তু হাইকোর্টে আপিল করে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হোন । “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ” বই এর ১৪৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে “পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ডাঃ মালিকের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয় ।

” বাকী ৮,০০০ এর বিরুদ্ধে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকায় মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে থাকে এবং প্রেসিডেন্ট সায়েম এর এক আদেশে ১৯৭৫ সালে ৩১ ডিসেম্বর দালাল আইন বাতিল হয়ে যায় । তবে যে সমস্ত মামলা কোর্টে চলছিল, তা বাতিল হয়নি । বরং কোন মামলার রায় ৭৬, ৭৭ সালেও হয়েছিল ।

তাহলে এটিতো পরিষ্কার , ৭২ হতে ৭৫ এর মধ্যে ব্যক্তিগত বিচারে এবং প্রচলিত বিচারে রাজাকারদের হত্যা করা হয়েছে । সেখানে আজকের নিজামী , মুজাহিদ , সাঈদী , কাদের মোল্লা , সাকা চৌধূরী বেঁচে গেলেন কিভাবে ?

কেন সে সময় তাদের বিরুদ্ধে একটিও মামলা দায়ের করা হল না ? শহীদুল্লাহ কায়সারের পরিবার স্বাধীনতার পর পরই খালেক মজুমদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারল , গভর্ণর মালিকের শাস্তি হল।

গোলাম আযমের নাগরিকত্ব গেল , আর নিজামী , মুজাহিদ , সাঈদী , সাকা চৌধূরীরা অসংখ্য লোকদেরকে হত্যা করল , কিন্তু এই অসংখ্য লোকদের পরিবার তাদের বিরুদ্ধে একটিও মামলা দায়ের করল না !

যদি সে সময় কেউ একটি মামলা দায়ের করত , তবে আজ নতুন করে মামলা আমলে নেয়ার প্রয়োজন ছিল না , পুরাতন মামলাকে জীবিত করলেই চলত । প্রেসিডেন্ট সায়েমের কারণে যে মামলাগুলো বন্ধ হয়ে (প্রকৃত পক্ষে মামলাগুলো কোন মেরিট ছিল না) গিয়েছিল , সেগুলো চালু করলে তো কারো কোন প্রশ্ন থাকত না ।

কিন্তু সমস্যা হল ঐ মামলাগুলোতে গোলাম আযম ,নিজামী , মুজাহিদ , সাঈদী , সাকা চৌধূরী, কাদের মোল্লা, আবুল কালাম আযাদ কারো নাম নেই । তাই ঐগুলো চালু করে নাস্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের কোন লাভ নেই ।

আজ ৪০ বছর পরের তরুণরা সে সময়টি দেখেনি , কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও নাস্তিকতাবাদী বুদ্ধিজীবিদের মিথ্যা প্রচার-প্রপাগান্ডায় তারা বিশ্বাস করে ইসলামপন্থিরা মানবতাবিরোধী কাজে লিপ্ত ছিল ।

আজ যারা যুদ্ধাপরাধের বিচারের কথা বলছেন , তারা সামনে ব্যানার রেখেছেন , ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি’ , প্রকৃত পক্ষে এরা আদর্শের দিক হতে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও নাস্তিকতাবাদী চিন্তার অনুসারী ।

মুনতাসীর-শাহরীয়ারদের নিয়ে চিন্তা করলেই বিষয়টি বেরিয়ে আসবে । আজকে নতুন প্রজন্মকে এরা এমন ধারণা দিচ্ছেন , তৎকালীন পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলাই ছিল যুদ্ধাপরাধ ! তাদের কাছে প্রশ্ন ১৯৪৭ হতে ৭১ পর্যন্ত এ রাষ্ট্রের নাম কী ছিল ?

১৯৪৭ সালের পূর্বে কি পৃথিবীর মানচিত্রে ‘পাকিস্তান’ নামে কোন রাষ্ট্রের অস্থিত্ব ছিল ? বরং ১৯৪৭ সালে শেরে বাংলা , সোহরোয়ার্দী , আবুল হাশিম , নাজিম উদ্দিন , আকরাম খাঁ এবং তৎকালীন নতুন প্রজন্ম অলি আহাদ , শেখ মুজিবুর রহমান , গোলাম আযমদের প্রচেষ্টায় পূর্ব বাংলা , পান্জাব , বেলুচিস্তান , সিন্ধু , উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ নিয়ে হয়েছিল পাকিস্তান ।

সোজা কথা ১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলা (বর্তমান বাংলাদেশ) পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রে যোগ দেয়নি । বরং তৎকালীন পূর্ব বাংলার মানুষ পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল । এমনকি ১৯৭০ সালের নির্বাচন হয়েছিল পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্য নতুন সংবিধার রচনার উদ্দেশ্যে ।

শুধু তাই নয় ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের রাত পর্যন্ত পাকিস্তানের নতুন সংবিধানি কী হবে , তা নিয়ে আওয়ামিলীগের খসড়া পিপলস পার্টি এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহইয়া খান মেনে নিবে বলে শেখ মুজিবের আশা ছিল । আশা ছিল বলেই শেখ মুজিবুর রহমান ,

২৫ শে মার্চ রাত সাড়ে ১০ টার সময় ডঃ কামাল হোসেনের কাছে জানতে চেয়েছিলেন ‘পীরজাদার কোন ফোন এসেছে কিনা ?’ কিন্তু সমঝোতার পরিবর্তে সামরিক সরকার সামরিক আইন জারী করলে প্রশ্ন আসে রাষ্ট্র ভাঙ্গার ।

তখন কেউ নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করলেন এবং পুরাতন রাষ্ট্রিয় কাঠামো পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করলেন । এখন পুরাতন রাষ্ট্রিয় কাঠামো পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করা যদি অপরাধ হয়ে থাকে , তবে পাঠকদের নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে একটু বিবেচনায় আনতে হবে।(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

১৩৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File