তুরস্কে ইসলামি আন্দোলনের রোডম্যাপ -১

লিখেছেন লিখেছেন সালাম আজাদী ১৪ মার্চ, ২০১৪, ০৭:৩৯:৩৭ সকাল



তুরস্কে ইসলামি খিলাফাহ ছিলো প্রায় চার শ’ বছর। এর আগেও সেখানে ইসলাম ছিলো, এর পরেও সেখানে ইসলাম আছে। তবে রাস্ট্রীয় ভাবে খিলাফাহ পদ্ধতি সেখানে হয়ত আর নেই, তবে ইসলামের চিরচেনা রূপ কিন্তু সেখানে একে বারে লোপ পায়নি। খিলাফাহ ভেংগে যায় ১৯২৩ সালে। বিদেশীদের ক্রমবর্ধমান চাপ, ষড়যন্ত্র এবং অর্থায়ন তো ছিলোই, এর সাথে যুক্ত ছিলো বিদেশীদের এজেন্ট এবং তাদের বশংবদ তার্কিশ কিছু ধর্ম-নিরপেক্ষ ব্যক্তিত্ব। আমরা এই নিবন্ধে আধুনিক তুরস্কের সার্বিক ইতিহাস নিয়ে আলাপ করার ফুরসাত পাবোনা। তবে আধুনিক তুরস্কের তিনটি মৌলিক বিষয় নিয়ে আলাপ করব।

১। তুর্কী খিলাফাহ ভেঙ্গে দেয়ার পর ইসলাম উৎখাতে এখানে পরিচালিত সার্বিক প্রচেষ্টা।

২। ইসলামি পূনর্জাগরণে উলামা মাশায়েখ গণের অবদান।

৩। কোন দিকে যাচ্ছে তুরস্কের ইসলামী আন্দোলন এবং কী হতে পারে তার ভবিষ্যত।

মুস্তাফা কামাল পাশা তুরস্কে এক অবিসংবাদিত নেতার নাম। ১৯১৯ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কামালের অভ্যুদয় ঘটে। ইংরেজ, ফরাসী, ইটালী ও গ্রীস সেনাবাহিনী কে তাড়িয়ে তুরস্ককে আবার স্বাধীনতা প্রদানে তার শৌর্য বীর্য ছিলো গর্বের বিষয়। আমাদের কবি নজরুলের কামাল পাশা কবিতার ছত্রে ছত্রে সে কথাই কিন্তু ফুটে উঠেছে। তার 'কামাল তু-নে কামাল কিয়া ভাই' তে কিন্তু আবেগের উদ্ভাস ছিলোনা শুধু, সেখানে ইসলামি উত্থানের এক না’রা ধ্বনিও ছিলো।

তার কবিতা মনযোগ দিয়ে পড়লে এই চিত্র টাই ফুটে ওঠেঃ

আজাদ মানুষ বন্দী ক’রে , অধীন ক’রে স্বাধীন দেশ,

কুল্ মুলুকের কুষ্টি ক’রে জোর দেখালে ক’দিন বেশ,

মোদের হাতে তুর্কী-নাচন নাচলে তাধিন্ তাধিন্ শেষ!

হুররো হো!

হুররো হো!

বদ্-নসিবের বরাত খারাব বরাদ্দ তাই ক’রলে কি না আল্লায়,

পিশাচগুলো প’ড়ল এসে পেল্লায় এই পাগলাদেরই পাল্লায়!

এই পাগলাদেরই পাল্লায়!

হুররো হো!

হুররো-

কাজেই কামালের বীরত্ব, দেশপ্রেম, তুরস্কের প্রতি অপ্রগলভ ভালোবাসা তাকে পরবর্তিতে 'আতাতূর্ক' বা তুরস্কের পিতা বানায়ে দিলেও আমরা বিস্মিত হইনি। তাকে সে সময়ের সমস্ত ইসলাম প্রিয় ব্যক্তিরা, এমন কি বড় বড় আলিম উলামারাও কোন মতপার্থক্য ছাড়াই তূর্কী নেতা হিসেবে মেনে নেন। তবে তার উচ্চাভিলাস, সেনা বাহিনীতে তার প্রভাব প্রতিপত্তি, এবং শাসন ব্যবস্থায় তার কর্তৃত্ব এক পর্যায়ে তুরস্কের ভাগ্য পরিবর্তনে তাকে বসিয়ে দেয় মহা পরাক্রমশালী স্বৈরাচার রাজার সিংহাসনে।

কামাল তার প্রথম জীবন থেকেই ধর্মভীরু ছিলেন না, তবে ধর্মের তিনি ছিলেন খুব সুন্দর ব্যবসায়ী। সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের তিনি ছিলেন আস্থা ভাজন, সুলতান অহীদুদ্দীনের ও তিনি খুব বিশ্বস্ত ছিলেন। কিন্তু পরবর্তিতে যখন ক্ষমতার টানা পড়েন শুরু হয় তখন খিলাফাতের বিরোধিতা করলেও কামাল ইসলামের বিরোধিতা করেন নি। খিলাফাতে উসমানীয়ার বিপরীতে অবস্থান নেয়ায় ইস্তাম্বুলের শায়খুল ইসলাম মুস্তাফা সাবরী তাকে ও তার বাহিনী ও সহচর দেরকে ১৯১৯ সালে ইসলাম বিরোধী বলে ফতোয়া দেন। ঐ বছর কামালের প্রচেষ্টায় আঙ্কারার মুফতীর মাধ্যমে তার ও তার মিত্রদেরকে ইসলামের প্রহরী উপাধীতে ভূষিত করিয়ে নেয়, এবং এই ফতোয়াতে ১৫২ জন বড় বড় তথা কথিত উলামাও স্বাক্ষর করেন। কামালের পক্ষে মসজিদে মসজিদে খুতবাহ দেয়াও শুরু হয়, তার পক্ষে শত শত ওয়াজিন ও বের করা হয়।



যাহোক, কামালের উচ্চাভিলাস ধীরে ধীরে খিলাফাত ধ্বংশের পাশাপাশি ইসলামের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত গ্রহনের মুখোমুখি করায়। ১৯২৩ সালের তুর্কী খিলাফাত বাতিলের বিল পাসের পর ১৯২৪ সালে খিলাফাত রহিত করে কামাল তুরস্কের সকল ক্ষমতা এক হাতে নিয়ে আসেন। যে কর্তৃত্ব আগের খলিফারাও দেখাতে পারেননি, সে কর্তৃত্ব তিনি দেখাতে শুরু করলেন। তুরস্কের ইসলামি সংস্কৃতি, সমাজ ও সভ্যতাকে কামাল একেবারেই ধ্বংশ করার সমস্ত কৌশল গ্রহন করেন।

১৯২৪ থেকে একবিংশ শতাব্দীর প্রথম সকাল পর্যন্ত সময়টা কিন্তু কম না। সত্তর বছরের ও বেশি সময় ধরে চলেছে তুরস্ককে ইসলাম বিহীন করার কাজে। সত্তরটা বছর। কী না করেননি কামাল এবং তার বশংবদেরা। তিনটি জেনারেশান ধরে ইসলামের বিরুদ্ধে চলেছে কঠিন শত্রুতা। সে শত্রুতার ব্যপ্তি ছিলো সর্বত্র।

ইসলামের বিরোধিতা করতে যেয়ে কামাল যেখানে যা পেয়েছেন, রাস্ট্রে তার প্রচলন করেছেন। ১৯২৬ সালে তিনি তুর্কী বিবাহ, তালাক, সন্তান লালন পালন এবং উত্তরাধিকার আইনে ব্যাপক পরিবর্তন আনেন তিনি। শতাব্দী পর শতাব্দী ধরে চলে আসা ইসলামী শারিয়া আইন রদ করে মেয়েদের ব্যাপারে সুইস সিভিল কোড প্রতিস্থাপন করেন। মেয়েদের পুরুষের সমান ওয়ারিসি সম্পত্তির অধিকারী করা হয়। বিয়ে ও তালাকের ব্যাপারে মেয়েদের কে ছেলেদের সমান কর্তৃত্ব দেয়া হয়। মেয়েদের কে রাস্ট্রের বিভিন্ন দ্বায়িত্বে এমন ভাবে নিয়োগ দেয়া হয়, যাতে তারা সমাজের পুরোপুরি অর্ধেক নাকি তারো বেশী গুরুত্বপূর্ণ, তার একটা সহজ সমীকরণ হয়ে যায়। বহু বিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়, সরকারি চাকুরিরত মহিলাদের হিজাব পরিধান নিষিদ্ধ করে ইউরোপীয়ান ড্রেস কোড বাধ্যতা মূলক করা হয়। মেয়েদের অমুসলিম বিয়ে করার স্বাধীনতা দেন তিনি, বালিগা মেয়ে যে কোন ধর্ম গ্রহন করতে পারে বলে তিনি আইন ও করে দেন। (ডঃ তারেক আব্দুল জলিল, পৃ ১৯)

১৯৩০ সালেই প্রথম মহিলাদের ভোটের অধিকার দেয়া হয়, এবং সরকারের অংশ হয়ে কাজ করতে মেয়েদের ব্যাপক ভাবে উৎসাহিত করা হয়। ১৯৩০ সালের এক পরিসংখ্যানে জানা যায় রাস্ট্রের সম্মান জনক পেশা গুলোতে তুর্কী নারীদের সংখ্যা, সে সময়ে সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধ জার্মানের চেয়েও বেশি ছিলো। তাদের কাজের ব্যাপ্তি হাই কোর্ট সুপ্রিম কোর্টের গন্ডি পেরিয়ে ডাক্তার, ইউনিভার্সিটি প্রফেসর, ইঞ্জিনিয়র, সেক্রেটারিয়েট সেনাবাহিনী সহ সর্বস্তরে ছিলো। (বিনায টোপার্ক, পৃ ৫)

ইসলামিক স্কুল (মাদ্রাসা) গুলোকে সীল গালা করে দিয়ে তুরস্কে প্রাথমিক ও সেকেন্ডারি স্কুলে শিক্ষা গ্রহন ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য বাধ্যতা মূলক করা হয়। এবং স্কুল গুলোতে ধর্মীয় শিক্ষাকে একদম হারাম করে দেয়া হয়। প্রতিটি কলেজ ইউনিভার্সিটতে কো-এডুকেশান বাধ্যতা মূলক করে দিয়ে মেয়েদের হিজাব কে ব্যান্ড ই শুধু করা হয়নি, এটাকে শাস্তি যোগ্য অপরাধ হিসেবে গন্য করা হয়। তৈরি হলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তার অধীনে দেয়া হলো সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা মূল পলিসি। যেখানে ধর্মের জন্য কোন যায়গা রাখা হলোনা গোটা সিলেবাস ও কারিকুলামে। ধর্মীয় সমস্ত বিষয় গুলোতে সরকারী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হলো। কামালের তত্বাবধানেই থাকলো ধর্মের সব কিছু। মসজিদের সার্বিক কার্যক্রম সরকারের টাকায় চলা শুরু হলো, এবং সরকারের কথা ছাড়া অন্য কিছু সেখান থেকে বের হওয়া সম্ভব ছিলো না।

কামাল রাজনীতিকেও ইসলাম মূক্ত করার আমরণ চেষ্টা করেছেন। খিলাফার মত বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের প্রতীক কে তুরস্কের মাটিতে নিঃশেষ করে দেয়া হলো ১৯২৪ এ। তিনি কুরআন কে আরবি ভাষায় পড়া পছন্দ করতেন না। ১৯৩২ সালে তিনি সর্ব প্রথম তার্কিশ কুরআনের প্রবর্তন করেন। তুরস্কের রাস্তায় রাস্তায়, এবং রেডিওতে তা প্রচারের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু ব্যাপক ভুল থাকায় ধর্মীয় ব্যক্তিত্বগণ তার অনুবাদ প্রত্যাখ্যান করেন। পরে তিনি তার ধর্মমন্ত্রী মুহাম্মাদ আকিফ এরসই এর তত্বাবধানে আলমালিলি হামদি ইয়াযিরের মাধ্যমে একটি তাফসীর লিখিয়ে তুরস্কে ‘হাক দিনি কুর’আন দিলি’ নামে ছড়িয়ে দেন। এবং তার্কিশ ভাষায় কুরআন চর্চার নির্দেশ দেন।



সুফিদের যিকিরের হালক্বা গুলো বন্ধ করে দিলো সরকার। কবর যিয়ারাত হলো পুরোপুরি নিষিদ্ধ। নামায, রোযা, হাজ্জ, যাকাত ইত্যাদিকে রাখা হলো একদম পার্সোনাল পর্যায়ে। সংঘবদ্ধ হতে হলেই সেখানে সরকারি ছত্রছায়ায় করতে হতো। আযানের শব্দ গুলোকে আরবী থেকে তুরস্ক ভাষায় রূপান্তরিত করা হয় ১৯৩২ সনে। তার সময়ে যে শব্দে আযান দেয়া হত তা হলোঃ

তানরে উলুদুর ৪বার

সপেসিয বিলিরিম, বিলদিরিরিম

তানরে দান বাসকা ইয়্যুকতুর তাপাচাক ২বার

সপেসিয বিলিরিম, বিলদিরিরিম

তানরে’নিন এলচিসিদির মুহাম্মাদ ২বার

হায়দিন নামাযা ২বার

হায়দিন ফেলাহা ২বার

নামায ইয়্যুকুদান হায়িরলিদির ২বার

তানরে উলুদুর ২বার

তানরে দান বাসকা ইয়্যুকুতুর তাপাচাক ১বার

রাজনৈতিক দল, শ্রমিক আন্দোলন, সামাজিক কোন সংগঠন- কোনটাই আর ধর্মের ব্যাবহার চলতে পারবেনা বলে সিদ্ধান্ত হলো। কোন সংগঠনের শাসন তন্ত্রে ধর্ম বা ধর্মীয় কোন বিষয় থাকলে সে সংগঠন কে বলিষ্ঠ ভাবে ব্যান করা হতে থাকলো। কামালের গোটা শাসন আমলে কয়েক ডজন ইসলামি সংগঠনকে বাতিল করা হয়। সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক ছিলো যদি কোন সংগঠন ইসলামি রাস্ট্র ব্যবস্থা কায়েমের চেষ্টা করতো, তাদের নেতা কর্মীদের হত্যা, গুম ও জেল জুলুমের শিকার হতে হতো।

তুর্কি খিলাফাহ আমলে শারিয়াহ আইন চালু ছিলো বিধায় সেখানে বিচারক, আইনজীবি ও শারিয়াহ আইনে বিশেষজ্ঞ লোকের অভাব ছিলোনা। ১৯২৪ সালের এপ্রিলে তিনি শারিয়াহ কোর্ট বাতিল করে দেন। শাইখুল ইসলাম পোস্ট সহ সকল আইন বিভাগের পদ বাতিল করে সেখানে আধুনিক আইন বিভাগ চালু করেন। ফলে উলামায়ে কিরামের বিশাল অংশ চাকুরি বিহীন করে ফেলেন, তাদের কে দেশের তৃতীয় শ্রেনীর নাগরিকের মত জীবন যাপন করতে বাধ্য করেন।

ইসলামি সংস্কৃতি ও সভ্যতা ধ্বংশের জন্য কামাল শুক্রবার সরকারী ছুটি বাতিল করে রবিবার দিন সাপ্তাহিক ছুটি নির্ধারণ করেন। ইসলামী চন্দ্র মাসের হিসাব বাতিল করে দিয়ে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার কে অফিসিয়াল পঞ্জিকা হিসাবে গ্রহন করা হয় ১৯২৫ সনে।

ফারসী ও আরবী ভাষার প্রভাব ঋদ্ধ, ও এই দুই ভাষার শব্দ সম্ভারে সমৃদ্ধ তার্কিশ ভাষা কে সেক্যুলারাইজড করার জন্য কামাল যে সব জঘন্য পদক্ষেপ গ্রহন করে তা হলোঃ

১। তার্কিশ ভাষা থেকে আরবী ফার্সী শব্দ ও ভাবধারা কে ঝেটিয়ে বিদায় দেয়ার জন্য দেশ বিদেশের অনেক প্রফেসরদের সমন্বয়ে একটা কমিটি করা হয় ১৯২৬ সনে। সরকারি আনুকুল্যে তৈরী হয় সুন্দর সুন্দর অভিধান, যেখানে আরবী ফারসী শব্দের কোন স্থান দেয়া হয়নি। এভাবে রাতারাতি এই শব্দ গুলোকে এলিয়েন বানানোর চেষ্টা করা হয়।

২। তার্কিশ ভাষার বাক্য রীতি, শব্দ তৈরী ও ফ্রেইজ ও ইডিয়ামস আরবী ভাষার স্টাইলে চলে আসছিলো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। কামাল এই ভাষাকে নিজস্ব একটা স্টাইলে রূপায়িত করার দ্বায়িত্ব দেন নামকরা ভাষা বিজ্ঞানীদেরকে। সরকারের উপচে পড়া সাহায্যে তারা ইউরোপিয়ান ধাঁচে ও পাশ্চত্যের সাহিত্য ধারার সাথে সাযুজ্য রেখে আধুনিক তার্কিশ ভাষাকে নতুন ভাবে নির্মান করেন। এযে কত বড় কঠিন কাজ, তা আমাদের বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয়। আমাদের বাংলা ভাষার যে কাজ ফোর্ট ইউলিয়াম কলেজের মাধ্যমে নতূন ভাষায় বিবর্তন আনা হয়, তার্কিশ ভাষা তার চেয়ে আরো বেশি সেক্যুলার সাহায্য লাভ করে।

৩। সরকারী আনুকুল্যে অনেক গুলো পত্র পত্রিকা বা পুস্তক প্রকাশনা শুরু হলো। কবি সাহিত্যিকদের সাহায্য করা হতে লাগলো। নানা ভাবে তাদের কে এমন প্রণোদনা শুরু হলো যে খুব সময়ের মধ্যে নতুন এক তার্কিশ ভাষার পথ চলা শুরু হয়, যেখানে আরবী ফারসী ভাষার প্রয়োগ কে সেকেলে মনে করা হতো। এমনকি জুমআর খুৎবাহ, কিংবা সরকারি আলিমদের ওয়াজের ভাষাও সরকারী পরিমার্জনার হাত থেকে রেহায় পায়নি।

৪। তার্কিশ ভাষা লেখা হত আরবী বর্ণে। কামাল এটাকে দুইচোখে দেখতে পারলেন না। কয়েক মাসের মধ্যেই তার প্রচেষ্টায় ও আন্তর্জাতিক প্রতিবর্ণায়ন সংস্থা সমূহের সহযোগিতায় তৈরি হলো নতুন তার্কিশ বর্ণমালা। তার্কিশ ভাষা প্রাণ পেল এক নতুন স্রোতের টানে। হয়ে গেলো ধর্মহীন তুরস্কের নতুন সংস্কৃতি প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে।

৫। কামালের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তৈরী হলো একটা শক্তিশালী সুশীল সমাজ এবং এলিট শ্রেনী যারা সংখ্যায় বেশি না হলেও তুরস্কের সার্বিক দন্ড মুন্ডের মালিকে পরিণত হলো তারা। এরাই হলো অর্থনীতির দিকপাল, এদের হাতে দেয়া হলো সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সার্বিক দ্বায়িত্ব, এরাই হলো আধুনিক তুরস্ক তৈরীর বুদ্ধিজীবি শ্রেনী, যাদের বিরোধিতা করতেও খবর হয়ে যেতো।

ধর্মীয় ব্যক্তিদের কে কামাল দেখতে পারতে না। তারা হয়ে গেল আধুনিক তুরস্কের একেবারে পশ্চাদপদতার প্রতীক। না থাকলো তাদের কোন মূল্য, না তাদের দেয়া হলো সমাজে ভালো ভাবে জীবন যাপনের সামান্য সুযোগ। রাজনীতিতে তাদের কাজ করতে দেয়া হচ্ছিলো না। অর্থনীতিতে তাদের ঢুকতে বাঁধা দেয়া হলো। তাদের কে কামাল সব সময় গোঁড়া এবং অসভ্য বলেই ডাকতো। (বিনায টোপার্ক, পৃ ৬),

ভাগ্যক্রমে হোক, বা দূর্ভাগ্যক্রমে হোক এই সব নিষ্পেষিত মানুষেরদের হাতেই পরবর্তিতে ইসলামী আন্দোলনের সূচনা হয়, এবং ৭০ বছরের সেক্যুলারাইজড তুরস্কে আবার ইসলামি আলোর বন্যা ভাসিয়ে দেয়। এখানে একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চায়নার বিপ্লব সাধনে যে সব রক্তের বন্যা বয়ে গেছে কামাল তার দেশে সেটা করেন নি। তিনি বিদ্রোহ দমনে আইনের মাধ্যমে ইসলামি নেতৃবৃন্দের ফাঁসি দেয়া, নেতাদের টার্গেট করে করে গুপ্ত হত্যা করে শেষ করার যে পন্থা অবলম্বন করেন, তাতে ইসলামি রাজনৈতিক দল গুলো আন্ডার গ্রাউন্ডে যেতে বাধ্য হয়। এবং সেখানে থেকেই তারা ইসলাম কে শুধু বাঁচিয়ে রাখেনি, ইসলাম কে আবার রাস্ট্রীয় শক্তিতে তারা আনতে সক্ষম হয়েছে।

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

বিষয়: বিবিধ

২৬৬০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

192048
১৪ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৮:৩৩
ইমরান ভাই লিখেছেন : সুফিদের যিকিরের হালক্বা গুলো বন্ধ করে দিলো সরকার।
এইটা ভালই ছিল বাকিগুলার চেয়ে।
জাজাকাল্লাহ, অনেক কিছু জানলাম। আরো জানবো সামনে ইনশাআল্লাহ।

কবর যিয়ারাত হলো পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
এখানে কবর জিয়ারত যাদি মৃত্যুকে স্বরন করার জন্য হয় তহলে বন্ধ করা খারাপ ছিল। কিন্তু যাদি কবর পুজা হয় তাহলে ভালই কাজ।

পরের পর্বের আশায় থাকলাম।
১৪ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৮:৪২
142949
ইমরান ভাই লিখেছেন : Sykes-Picot চুক্তি সম্পর্কে আমার একটা ছোট্ট পোস্ট ছিল বেশি তথ্য দিতে পারি নাই তবে কমও না। এখানে দেখুন
192056
১৪ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:০৬
গৃহস্থের কইন্যা লিখেছেন : মুসলিম দেশ গুলোর মাঝে একমাত্র তুরস্ক এবং মালেশিয়া অন্য যে কোন মুসলিম দেশের চেয়ে উন্নত, আধুনিক এবং শান্তিপুর্ণ অবস্থানে আছে। এর কারনও সবার জানা। এ দেশ দুটি মধ্যযূগীয় ইসলাম ধর্মের থাবা মুক্ত। অন্যদিকে যেখানেই ইসলাম সেখানেই মারামারি, হানাহানি, আত্মকলহ, রক্তক্ষয়, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, নারী নির্যাতন এবং বোমাবাজী। আজকের ফাঁকিস্তান, আফগানিস্তান, মিশর, সিরিয়া, মালি, সুদান,নাইজেরিয়া......... ইসলামের করাল গ্রাসে ধ্বংসের মুখোমুখি।

সুতরাং সভ্য ভব্য শান্ত আধুনিক উন্নত তুরস্কের গায়ে ইসলামের বিষ লেপন করে সেটির সর্বনাস করার কোন দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। ধন্যবাদ।
192075
১৪ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:২৮
গেরিলা লিখেছেন : তুরস্কে এরদোগান শেষ
192084
১৪ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:৩৪
চোথাবাজ লিখেছেন : গেরিলা লিখেছেন : তুরস্কে এরদোগান শেষ
192126
১৪ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ধন্যবাদ তথ্যপুর্ন পোষ্টটির জন্য।
তুরস্ক প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পুর্ব বিশ্বে সামরিক,রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক যে প্রভাব রাখত বিশ্বযুদ্ধের কারনে তা কমে গেলেও তা পুরাপুরি ধ্বংস হয় কামাল আতাতুর্ক এর সময়। কারন আধুনিকায়ন এর নামে তিনি তুরুস্কের প্রতিষ্ঠিত অর্থনিতি ভেঙ্গে দেন এবং বিদেশি বিনিয়োগ এর নামে সম্পদ লুট করতে তথাকথিত বহুজাতিক কোম্পানি গুলিকে সুযোগ দেন। নারী স্বাধিনতার নামেও যোগ্যতাহিন অনেক নারীকে উচ্চপদ দেন যারা স্রেফ শো পিস ছিল। আমির নিজের অভিজ্হতাতে দেখেছি আমাদের দেশেও এখন অনেক মহিলাকে বিভিন্ন পদে দেয়া হচ্ছে কেবলমাত্র মহিলা কোটা পুরন করতে। আমার মনে আছে আমাদের এসএসসি এর সিলেবাসে একটি কম্প্রিহেনসন প্যাসেজ ছিল এরকম যে কামাল পাশার আগে নাকি তুরুস্ক ছিল অর্ধেক জাতি কারন তাদের নাকি শুধু পুরুষ মানুষেরা কাজ করত। কিধরনের অযোক্তিক মিথ্যা ছিল এই কথাগুলি জানতে পারি অনেক পরে। কবি নজরুল এর একটি সম্পাদকিয় আছে" তুর্কি রমনীর ঘোমটা খোলা" নামে। এই প্রবন্ধে তিনি কোন বৃটিশ সাংবাদিক এর লিখা তুরুস্কের নারী স্বাধিনতা কে ঘোমটা খোলা বলার প্রতিবাদ করেছিলেন।
কিন্তু ধর্মিয় শিক্ষাকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেও তিনি পারেননি মানুষের মন থেকে বিশ্বাসকে উপড়ে ফেলতে।
192201
১৪ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৫
আহমদ মুসা লিখেছেন : মোস্তফা কামাল পাশা আতাতুর্ককে হয়তো কোন একদিন কবর থেকে তুলে তার কঙ্কালকে ফাসিতে ঝুলিতে তার যাবতীয় নাফরমানির চলমান সিলসিলার যবনিপাত করা হতে পারে। তার মত নরাদম কুলাঙ্গার বোধ হয় ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় কোন শয়তানের নাম পাওয়া যাবে না।
192647
১৫ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৮
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আগে পড়েছি। কিন্তু এভাবে গোছানো এবং সংক্ষিপ্ত ভাবে সুন্দর উপস্থাপনা পড়েনি। আপনাকে ধন্যবাদ। সাথে থাকবো ইনশাআল্রাহ।
যেহেতু ধারাবাহিক তাই তুলনা করে লিখলে উপকৃত হত সবাই। আমি বলছি বাংলাদেশের কথা।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File