অনুষ্ঠান হওয়ার আগে শুধু "আক্বদ" দিয়ে কি বিয়ে হয়?? এমতাবস্থায় পাত্রীর সাথে একান্তে গল্পগুজব করা যাবে কিনা?

লিখেছেন লিখেছেন ইসমাইল একেবি ২৭ জানুয়ারি, ২০১৩, ০১:২০:৪৩ দুপুর

মাঝে মাঝে একটা প্রশ্ন মানুষের কাছ থেকে পেয়ে থাকি। আর তাহল- আমার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহ হয়নি; শুধু আক্বদ তথা ইজাব কবুল হয়েছে। এখন আমার প্রস্তাবিত পাত্রীর সাথে নির্জনে গল্প-গুজব করা কিংবা তার সাথে দূরে কোথাও সময় কাটানো যাবে কিনা? কেননা, অন্য কোন মহিলার সাথে নির্জনে থাকলে তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান।

জর্ডানে থাকাকালীন সময়ে মাঝে মাঝেই বিভিন্নজনের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রশ্ন পেতাম। বিভিন্ন বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভংগী জানার জন্য তারা প্রশ্ন করত। আর কেউ প্রশ্ন করলে আমি খুশি হই। কারণ, তারা প্রশ্ন করে থাকে ইসলাম সম্বন্ধে জানার আগ্রহ নিয়ে। ইসলাম অনুযায়ী নিজের জীবন গঠন করার প্রতি স্পৃহা তাদের মনে বর্তমান থাকে বলেই তারা প্রশ্ন করে থাকে। অন্যথায় তারা এমন প্রশ্ন করার কথা নয়। এজন্য তাদেরকে আমি জানাই অভিনন্দন!! অন্যদিকে আমি তাদের প্রশ্ন থেকে উপকৃত হয়ে থাকি। মানুষের কোন বিষয়টা জানার প্রতি আগ্রহ রয়েছে সে ব্যাপারে একটা ধারণা পাওয়া ছাড়াও সেটার জবাব তাৎক্ষনিকভাবে আমার জানা না থাকলে সেটা জেনে নেয়ার সুযোগ পেয়ে থাকি। এজন্য তাদের প্রতি আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ!!!

জর্ডান ত্যাগ করার কিছুদিন আগে একটা গাড়ীতে করে গন্তব্যে যাওয়ার সময় পরিচিত এক যুবক প্রশ্ন করল-ভাই!! আমার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহ হয়নি। শুধুমাত্র লেখালেখি কমপ্লিট হয়েছে। আমি এখন পাত্রীর সাথে একান্তে গল্প-গুজব, চুম্বন কিংবা দূরে কোথাও সময় কাটাতে পারব কিনা? এটা ইসলামের দৃষ্টিতে কতটুকু বৈধ?

বিষয়টা ছিল গুরুত্বপূর্ণ, বিধায় গভীরভাবে বাস্তবতা উপলব্ধি করেই আমাকে প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের একজন টিচার বলেছিলেন- তোমরা যখন ফাতওয়া দেবে তখন প্রশ্নটি ভালভাবে শুনে কল্পনায় সেটার একটা ছক তৈরি করে নেবে। এরপর সেটাকে ইসলামের কোন দলীল কিংবা সুত্রের সাথে মিলে যায় তা দেখবে। এরপরেই সেটার ব্যাপারে কোন মতামত কিংবা ইসলামের দৃষ্টিভংগীর আঙ্গিকে মতামত দিয়ে দেবে।

তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার বিবাহের আক্বদ তথা দুইজন সাক্ষীর সম্মুখে ইজাব কবুল (ইজাব অর্থ প্রস্তাব এবং কবুল অর্থ গ্রহণ) হয়েছে কিনা? তিনি জানালেন, তার গার্জিয়ান এবং পাত্রীর গার্জিয়ান সবার উপস্থিতিতে পাত্র পাত্রীর ইজাব কবুল হয়েছে। সেখানে সরকার অনুমোদিত লোক দিয়ে বিবাহের রেজিস্ট্রেশনও সম্পন্ন হয়েছে।

বললাম, বাস্তবে বিয়ে হল- প্রাপ্ত বয়স্ক দুইজন পুরুষ কিংবা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলার সামনে পাত্র-পাত্রীর "আমি আপনাকে বিবাহ করলাম এবং অপরজনের আমি কবুল করলাম" বলা। এর মাধ্যমেই বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যায়। যেহেতু, এটা আপনাদের মাঝে সম্পন্ন হয়ে গেছে; তাই, আপনাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন স্বামী স্ত্রী হিসেবে বসবাস করতে আপনাদের কোন বাধা নেই। আপনি অনুষ্ঠান করবেন কি করবেন না সেটা দেখার বিষয় না।

আমাদের দেশেও অনেককে দেখা যায়, ঘরোয়া পরিবেশে দুই পক্ষের লোকদের উপস্থিতিতে পাত্র পাত্রীর বিবাহ হয়ে থাকে। এর কয়েকদিন কিংবা কয়েকমাস পর বড় ধরণের কোন অনুষ্ঠান করা হয়ে থাকে। অনুষ্ঠানের দিনটিকেই তারা বিবাহের দিন হিসেবে মনে করে থাকে। অথচ, এটা নিছক সামাজিক প্রক্রিয়া; বিয়ে তো ঐ ইজাব কবুলের মাধ্যমে অনেক আগেই হয়ে গেছে।

কয়েক বছর আগের ঘটনা। তখন আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টাডি করছিলাম। আমি এবং আমার এক বাংলাদেশী ফ্রেন্ড তার রুমেই বসেছিলাম। এমতাবস্থায় একটা চায়নিজ ছেলে রুমে ঢুকল। সে ছিল আমাদের ক্লাসমেট; আমাদের সাথে একই সাবজেক্টে পড়ত!! সে মিশরে বসবাস করত স্বস্ত্রীক। ইন্টারন্যাশনাল ছাত্রাবাসে একটা সিট থাকলেও বাইরে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সে স্বস্ত্রীক বসবাস করত।

কথার ফাকে সে বলল, আমি বিবাহ করেছি কয়েক বছর হয়েছে। আক্বদ তথা ইজাব কবুল সবই সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু, আনুষ্ঠানিকভাবে (সামাজিকভাবে ধুমধাম করে) এখনও আমাদের বিবাহ হয়নি। একটা রেওয়াজ হয়ে গেছে যে, এরকম অনুষ্ঠান হওয়ার আগে পরস্পর স্বামী স্ত্রী হিসেবে বসবাস করা হয় না। এখন আমরা যদি পরস্পর স্বামী স্ত্রী হিসেবে বসবাস করি তাহলে তা বৈধ হবে কিনা? আমরা একই বাসায় বসবাস করলেও আমাদের দাম্পত্য জীবন শুরু হয়নি।

আমার বন্ধু তাকে বিস্তারিত বুঝিয়ে দিল যে, বিবাহ যেহেতু হয়ে গেছে তাই, তোমাদের দাম্পত্য জীবনের স্বামী স্ত্রী হিসেবে বসবাস করার ক্ষেত্রে আর কোন বাধা নেই। অতএব, তোমরা স্বামী স্ত্রী হিসেবে দাম্পত্য জীবনযাপন শুরু করতে পারো।

কয়েকদিন আগে একজন লোকের কথা শুনলাম। তার বিয়ের আক্বদ অনেক আগেই হয়ে গেছে কিন্তু, অনুষ্ঠান না হওয়ায় মানুষকে সে বলছে, আমার অর্ধেক বিবাহ হয়েছে। অথচ, ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধরণের অনুষ্ঠানের কোন গুরুত্ব কিংবা বাধ্যবাধকতা নেই। বিবাহ পূর্ণাংগ হতে ইসলাম কোন অনুষ্ঠানের শর্তারোপ করে দেয়নি। বরং, দুইজন সাক্ষীর সামনে ইজাব কবুল হলেই বিবাহ হয়ে যায়। বাদবাকি যা কিছু আছে এগুলো সবই সামাজিকতা।

আসলে ইসলাম অনেক জিনিসকে অত্যন্ত সহজ করে দিলেও আমরা সামাজিকতার নাম দিয়ে সেগুলোকে কঠিন করে দিয়েছি। যার ফলে, সমাজে অনেক অনাকাংখিত সমস্যা জন্ম নিচ্ছে। এজন্য আমাদের উচিত, ইসলামকে সামাজিকতার নাম দিয়ে কঠিন না করে দিয়ে ইসলামকে ইসলামের মত করেই সহজভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপন করা। তবেই ইসলামের দিকে মানুষ আগ্রহী হয়ে উঠবে।

রাসুল (সাঃ) বলেছেন:

إِنَّ الدِّينَ يُسْرٌ، وَلَنْ يُشَادَّ الدِّينَ أَحَدٌ إِلَّا غَلَبَهُ،

অর্থাৎ, নিশ্চয় দ্বীন (ইসলাম) সহজ; কেউ তাকে কঠিন করতে গেলে দ্বীন তাকে পরাজিত করবে। (বুখারী-৩৯)

বিষয়: বিবিধ

২৫৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File