মক্কা-মদিনার স্মৃতি : পর্ব-(৮)

লিখেছেন লিখেছেন আবু তাহের মিয়াজী ০৭ মে, ২০১৬, ১১:০৭:০৭ রাত



মসজিদুল হারামে প্রবেশ করে সরাসরি দেখতে পেলাম বাইতুল্লাহ চলে গেলাম বাইতুল্লাহর দিকে। বাইতুল্লাহ দেখা মাত্র তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিলাম। আমি ও হাবিব ভাই এগিয়ে যেতে থাকলাম। আল্লাহর ঘর এবার পূর্ণভাবে খুবই কাছে থেকে দেখছি । আরেকটু পরেই আমরা তাওয়াফ শুরু করব। এ কথা ভেবে ভেবেও আমি ভীষণভাবে পুলকিত হচ্ছিলাম। আল্লাহর দরবারে অজস্র শুকরিয়া জানালাম। জীবনে আল্লাহর ঘর সরাসরি দেখতে পাওয়ার মূহুর্তটিকে ভেবে ভেবে আমি এখনও খুবই ইমোশনাল হয়ে যাই।বাইতুল্লাহর ৪টি কোন রয়েছে। লক্ষ করে দেখি ওই কোনায় মানুষের ভীড়। ছলে গেলাম ঐ কোনে, যেখানে স্থাপিত রয়েছে হাজারে আসওয়াদ বা কালো পাথর।কারণ ওখান থেকেই তাওয়াফ শুরু করতে হয়। আবার প্রতিটি তাওয়াফের শুরুতেই হাজীগন এখানে একবার দাড়িয়ে কাবার দিকে হাত উঁচু করে ধরছেন এবং বিসমিল্লাহি আল্লাহু ওয়া আকবার বলছেন।

প্রিয় পাঠক! হয়তো মনে প্রশ্ন আসতে পারে তাওয়াফ কি? তাওয়াফ মানে চক্কর দেয়া। কোন কিছুকে কেন্দ্র করে তার চতূর্দিকে চক্কর দেয়ার নাম তাওয়াফ। উমরাতে তাওয়াফ মানে বাইতুল্লাহ বা আল্লাহর ঘরকে কেন্দ্র করে চক্কর দেয়া। আর এই তাওয়াফ হলো উমরার দুইটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের একটি। অপরটি পরে আসবে ইন শা আল্লাহ্‌।

ইসলামে সকল আনুষ্ঠানিক ইবাদতের একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। তেমনি উমরার জন্য তাওয়াফেরও একটি নিয়ম আছে। অতএব,সেই নিয়মে তাওয়াফ করার জন্য আমি তৈরী। আমি ইতিমধ্যে হাজারে আসওয়াদের নিকটে পৌছেছি এজন্য যে, আমি জেনেছি-ওখান থেকেই তাওয়াফ শুরু করতে হয়।

 যেহেতু পুরুষ! তাই ইহরামের কাপড় যেটি গায়ে জড়িয়েছি তার মধ্যখান আমার ডান বগলের নিচ দিয়ে উভয় প্রান্ত বাম কাধের উপরে নিয়ে পরিধান করলাম। এই কাজটার নাম ইজতিবা।

 ইজতিবা করে আমরা হাজারে আসওয়াদ বরাবর জায়গা থেকে বাইতুল্লাহকে বামে রেখে হাটা শুরু করলাম। ক্বাবাঘরকে কেন্দ্র করে। ক্বাবার দরজা পেরিয়ে হাতিম পেরিয়ে যখন ক্বাবা ঘরের আরো দুইটি কোন অতিক্রম করলাম, তখন দেখলাম সবাই ক্বাবা ঘরের নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা করছে। ওই জায়গাটি হলো আমরা যে স্থান থেকে

তাওয়াফ শুরু করলাম।এই দোয়াটি পড়েঃ

بسم الله والله أكبر. اللهم إيمانا بك وتصديقا بكتابك ووفاء بعهدك وإتباعا لسنة نبيك محمد صلى الله عليه وسلم.

“আল্লাহর নামে। আল্লাহ মহান। হে আল্লাহ! তোমার উপর ঈমান রেখে, তোমার কিতাবকে সত্যায়ন করে, তোমার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করে এবং তোমার নবী মুহাম্মদ সা. এর আদর্শের অনুসরণ করে (তাওয়াফ আদায় করছি)।”তাওয়াফ শুরু করেছি, ঠিক তার আগের কোন। ক্বাবা ঘরের এই কোনকে বলে ‘রুকনে ইয়ামানী’। আমরা রুকনে ইয়ামানীতে পৌছে দেখতে পেলাম যে, সম্পূর্ণ ক্বাবা ঘরকে গিলাফ দিয়ে ঢাকা হলেও ওখানে সামান্য জায়গাকে খোলা রাখা হয়েছে। আমি হাত দিয়ে সেই জায়গাটাকে স্পর্শ করলাম। ওটা স্পর্শ করা সুন্নাত।

রুকনে ইয়ামানীতে স্পর্শ করার পর দেখতে পেলাম ক্বাবা ঘরের দিকে প্রচন্ড ভীড়। কারণ সামনে হাজারে আসওয়াদ। ওখানে চুমু দেয়ার জন্য লোকজন প্রতিযোগিতা করছে। হাজারে আসওয়াদ যে কোনে অবস্থিত সেখান থেকেই তাওয়াফ শুরু করেছিলাম। আমি রুকনে ইয়ামানী হতে হাজারে আসওয়াদ বরাবর কোনের মাঝে হাটার সময় পড়লামঃ

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ. اللهم إني أسألك العفو والعافية في الدنيا والآخرة.

“হে আমাদের রব! তুমি আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ দান করো এবং জাহান্নামের আযাব হতে মুক্তি দান করো। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ ও নিরাপত্তা ভিক্ষা চাই।”

আর হাজারে আসওয়াদে আসতে গিয়ে থমকে দাড়ালাম।প্রচন্ড ভীড়।কোন টেনশন নেই নাই।পরের চক্করের অপেক্ষায় থাকলাম। ইসলাম আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছে।তাই আমি হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করতে কষ্টকর হবে বলে হাত দিয়ে হাজারে আসওয়াদের দিকে ইশরা করে দ্বিতীয় তাওয়াফ শুরু করলাম।এই দোয়াটি আবার পড়েছিঃ

بسم الله والله أكبر. اللهم إيمانا بك وتصديقا بكتابك ووفاء بعهدك وإتباعا لسنة نبيك محمد صلى الله عليه وسلم.

“আল্লাহর নামে। আল্লাহ মহান। হে আল্লাহ! তোমার উপর ঈমান রেখে, তোমার কিতাবকে সত্যায়ন করে, তোমার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করে এবং তোমার নবী মুহাম্মদ সা. এর আদর্শের অনুসরণ করে (তাওয়াফ আদায় করছি)।”

 আমাদের জানা আছে! হাজারে আসওয়াদে চুমু দিতে গিয়ে ঠেলাঠেলি করা এবং এর মাধ্যমে অন্য মুসলমান ভাইকে কষ্ট দেয়ার সুযোগ নাই।

 তাওয়াফ চলাকালীন সময়ে আমার সংগী হাবিব ভাইকে হারিয়ে ফেলেছি দুঃখ নেই।কারন সাথে থকলে ও কথাবার্তা বলা ঠিক হবেনা এবং চুপ না থেকে বিভিন্ন সুরা কিরাত তেলাওয়াত করেছি। বিভিন্ন দোয়া উচ্চারণ করে পড়েছি। দোয়া করেছি নিজের গুনাহ মাফের জন্য, আমার কাছে বলে দেয়া সকলের জন্য, সকল মুমিন মুসলমানের জন্য, তামাম পৃথিবীর সকল মুসলমানের জন্য, নির্যাতি বিশ্ব মানবতার জন্য, আমার প্রিয় জন্মভূমির জন্য, দেশের ইসলাম আর মুসলমানদের জন্য, আমার স্ত্রী সন্তান আর পরিবারের জন্য। বিশেষ করে আব্বু আর আমু্মর জন্য।

এভাবেই মোট ৭টি চক্কর দিয়েছি। যার শুরু কাবা ঘরের হাজারে আসওয়াদ বরাবর কোন থেকে এবং সকল কোন ঘুরে এসে শেষ করেছি ঠিক ওখানেই। ৭টি চক্করের প্রথম ৩টি চক্কর দিয়েছি ছোট ছোট পায়ে তুলনামূলক ভাবে দ্রুত আর শেষ ৪টি তাওয়াফ করেছি স্বাভাবিক গতিতে।

জ্ঞাতব্যঃ এই লেখাটি "হজ্জ্ব উমরা পদ্ধতি বিষয়ে" আমার আত্মার আত্মীয় পরম আপনজন জনাব নজরুল ভাইয়ের নোট থেকে কিছু সংগ্রহ।

বিষয়: বিবিধ

১১৪১ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

368347
০৭ মে ২০১৬ রাত ১১:৪১
আবু জান্নাত লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খাইর
368350
০৮ মে ২০১৬ রাত ১২:০৪
আফরা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়ের ।

হৃদয় ছোঁয়া লিখাটা পড়ে এত এত ভাল লাগছে আমার এখনি যেতে ইচ্ছে করছে ।

অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
368354
০৮ মে ২০১৬ রাত ০১:২৭
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান অনেক ভালো লাগল
368356
০৮ মে ২০১৬ রাত ০২:১০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
368363
০৮ মে ২০১৬ সকাল ০৫:১৩
শেখের পোলা লিখেছেন : হাঁ এখন আসল যায়গায় এসে গেছেন। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File