মধু ও মৌমাছির জীবন! আল্লাহর এক অপূর্ব সৃষ্টি! (এক পিকুলিয়ার মানুষ - পর্ব-৩১)

লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ২৩ অক্টোবর, ২০১৪, ০৪:৪৮:৪৬ বিকাল



সৃষ্টিকুলে মৌমাছি একমাত্র পতঙ্গ যার বানানো খাদ্য মানুষ খেতে পারে। মৌমাছির মাধ্যমে ফুলের পরাগায়ন হয় সবচেয়ে বেশী, যার ফলে কৃষক ও কৃষির উৎকৃষ্ট বন্ধু হল, সুন্দর পাখাযুক্ত ক্ষুদ্র মৌমাছি। বর্ষাকাল কিংবা ফল-ফুলের অভাবের দিনে কি খেয়ে বাঁচবে? এই দুশ্চিন্তায় তাড়িত হয় বলেই শ্রমিক মৌমাছি অহর্নিশি পরিশ্রমের মাধ্যমে মধু সঞ্চয় করে! মধু যাতে পচে না যায়, চুরি না হয়, সে জন্য সতর্কতার সহিত, দুর্ভেদ্য প্রকোষ্ঠে গুদামজাত করে। বড় পরিতাপের বিষয় হল, একটি শ্রমিক মৌমাছির ৪২ দিনের ক্ষণিকের ছোট্ট জীবনে নিজেদের সঞ্চিত মধু পান করার সৌভাগ্য খুব কমই জোটে! ভাগ্য বিড়ম্বিত এসব পতঙ্গের মজুত করা মধু বিভিন্ন প্রাণী চুরি করে খায়। আর মানবজাতি লুণ্ঠিত মধু উপভোগ করে, চির যৌবনের লাভের আশায়!

পবিত্র কোরআনে মৌমাছির জীবন ও তার সৃষ্ট উৎপাদনকে মানুষের জন্য উপকারী দৃষ্টান্ত বানিয়েছেন। কোরআনে মৌমাছির নামে একটি সুরা তথা চ্যাপ্টার রয়েছে। মৌমাছি সম্পর্কে কোরআনে এভাবে বলা হয়েছে, ‘আর দেখো তোমার রব মৌমাছিদের কে অহীর মাধ্যমে একথা বলে দিয়েছেন যে, তোমরা পাহাড়-পর্বত, গাছপালা ও মাচার ওপর ছড়ানো লতাগুল্মে নিজেদের চাক নির্মাণ করো। তারপর সব রকমের ফলের রস চুষো এবং নিজের রবের তৈরি করা পথে চলতে থাকো। এই মাছির ভেতর থেকে একটি বিচিত্র রঙ্গের শরবত বের হয়, যার মধ্যে রয়েছে, মানুষের জন্য নিরাময়। অবশ্য এর মধ্যেও একটি নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য’। সুরা নাহল-৬৮, ৬৯

মৌমাছির কৌতূহল উদ্দীপক জীবন নিয়ে পবিত্র কোরআনেই বলা হয়েছে। শেষে বলা হয়েছে, সেখানে রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত, যারা নিজেদের বিবেক বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে চায়। সে জন্য মৌমাছিকে বুঝতে হলে আগে জানতে হবে মৌমাছির জীবন ধারা। মৌমাছির জীবন নিয়ে অনেক বই বাজারে আছে, এগুলো তাত্ত্বিক বই। আজকের এই প্রবন্ধে থাকবে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতার মানদণ্ডে এসবের বিশ্লেষণ। সে জন্য অবশ্যই এই লিখাটি তাত্ত্বিক লিখার মত হবেনা একটু ভিন্ন আঙ্গিকের হবে আশা করা যায় উৎসাহীরা আকর্ষণ পাবেন।

মৌমাছির জাতি তিন শ্রেণীতে বিভক্ত। পুরুষ, কর্মী ও রাণী। এদের প্রত্যেকের কাজ ও দায়িত্ব ভিন্ন ধরনের। নিজ অবস্থানে থেকে এরা কিভাবে সুশৃঙ্খল ভাবে কাজ করে, আসুন প্রথমে সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করি।



পুরুষ মৌমাছি:

পুরুষ মৌমাছি আকৃতিতে কর্মী ও রানীর মাঝামাঝি। এই মৌমাছিকে বাহিরে দেখলে নোংরা খাদক বাদামী রংয়ের সাধারণ মাছি বলে ভ্রম হতে পারে। পুরুষ মৌমাছি সহজে চাক থেকে বের হয় না। ভুলে যদি বের হয় পড়ে, তাহলে সে দ্বিতীয়বার চাকে ঢুকার সুযোগ খুব কমই পায়। চাকের বাহিরে বের হলে তার মৃত্যু অনিবার্য। পুরুষ মৌমাছি নিজে খেতে পারেনা, শ্রমিক মৌমাছিকে তাদের খাইয়ে দিতে হয়। পুরুষ মৌমাছি মধু সংগ্রহ করতে যায়না, সেটা তার কাজ নয়! শ্রমিক মৌমাছি কর্তৃক আনিত ও সংগৃহীত মধুর উপর তাকে নিভর করতে হয়। কদাচিৎ চাকে পুরুষ মৌমাছির সংখ্যা বেড়ে গেলে, কিছু সংখ্যক অবশিষ্ট রেখে বাকিদের চাক থেকে বহিষ্কার করা হয়! ফলে খানার অভাবে এসব পুরুষ মৌমাছি মারা যায়। পুরুষ মৌমাছি নিজে খেতে পারেনা, কাউকে হুল ফুটাতে পারে না, লড়াই করতে জানেনা, এমনকি নিজেদেরকে আক্রমণ থেকে রক্ষাও করতে পারেনা! তাই, মৌচাকে পুরুষ মৌমাছির মত হতভাগা ও অসহায় পতঙ্গ আর দ্বিতীয়টি নেই। পুরুষ মৌমাছির একটিই কাজ, তা হল; রানী মৌমাছির প্রয়োজনের সময় তার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া। পরিতাপের বিষয় হল, শত শত পুরুষ মৌমাছির মাঝ থেকে মাত্র কয়েক জনের সৌভাগ্য ঘটে রাণীর সাথে মিলিত হবার। তারপরও কথা থাকে, রানীর সাথে মিলিত হবার পরে তার লিঙ্গটি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং সেটি রানীর শরীরের একটি অংশ হয়ে যায়। পুরুষের এই বিচ্ছিন্ন অংশ থেকেই রানী আজীবন ক্রমাগত শুক্রাণু পেয়ে থাকে। যার ফলে তার দেওয়া প্রতিটি ডিম সহজে নিষিক্ত হতে পারে। স্বাভাবিক ভাবে একটি পুরুষ মৌমাছি প্রায় ২ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকে।



শ্রমিক মৌমাছি:

একটি শ্রমিক মৌমাছি প্রায় ৪২ দিন বেঁচে থাকে। তার এই বিয়াল্লিশ দিনের ঘটনাবহুল ক্ষুদ্র জীবনখানি খুবই চিত্তাকর্ষক ও শিক্ষণীয়। শ্রমিক মৌমাছি মূলত নারী মৌমাছি, রানী ডিম পারার পরে, ডিম থেকে বের হওয়া মুক-কীটকে খানা খাইয়ে অর্ধ নিষিক্ত করা হয়, সে সব মৌমাছি পরবর্তীতে শ্রমিক মৌমাছি হিসেবে পরিচিত হয়। অন্যকথায় এগুলোকে বন্ধ্যা মৌমাছি বলা যেতে পারে। কদাচিৎ শ্রমিক মৌমাছি ডিম দেয়, সে সব ডিম থেকে প্রচুর পরিমাণ পুরুষ মৌমাছির উৎপত্তি হয়। একটি চাকে রানীর অভাবে এই ঘটনা পরিলক্ষিত হয়।

সকল কর্মী মৌমাছি হুল ফুটাতে পারে, তাদের হুল গুলোর অগ্রভাগ বরশী বা ধান কাটার কাঁচির মত উল্টো কাঁটায় ভরা। ফলে কাউকে হুল ফোটালে সেটা আর দেহ থেকে বের হয়না। হুল এবং হুলের গোড়ায় অবস্থিত কিছুটা মাংসপেশি সহ ছিঁড়ে আক্রান্ত ব্যক্তির গায়ে সেটা বিঁধে থাকে। মাংস ছিঁড়ে যাবার কারণে মৌমাছি মারা যায়। এই হুল যতক্ষণ শরীরে বিধে থাকে ততক্ষণই বিষ ক্ষরণ হতে থাকে। খণ্ডিত মাংস পেশী জীবন্ত থেকে যায়, সেটা ছেঁড়া অবস্থায়ও পাম্প করতে পারে। পরীক্ষামূলক ভাবে, আমি একদা একটি হুল কতক্ষণ বিষ ছড়ায়, তা দেখতে গিয়ে একটি কর্তিত হুলকে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত মাংসে লাগিয়ে রেখেছিলাম। দেখেছিলাম ছয় ঘণ্টা পরও বিষের ভাব একটুও কমেনি, তাই সেটা নিজেই ফেলে দিয়েছিলাম। তাই মৌমাছির হুল লেগে থাকলে সেটা উৎপাটন করলেই বিষ জ্বালা সহসা কমে আসে।

শ্রমিক মৌমাছিই হল একটি মৌচাকের মুল কার্যকর শক্তি। একটি মৌচাকে প্রতিদিন তাদের জীবন ধারা বদলাতে থাকে। দিনে দিনে তাদের দায়িত্ব বদলাতে থাকে, ফলে তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা বাড়ে। পরিশেষে একটি শ্রমিক মৌমাছি অসম্ভব কর্মশক্তির অধিকারী হয়ে উঠতে পারে। এই ধাপগুলো খুবই বৈজ্ঞানিক ও চিত্তাকর্ষক!



তাই, আসুন একটি শ্রমিক মৌমাছির বয়স ভেদে আমরা তাদের জীবন পদ্ধতিটা আগে জেনে নেই।

ঝাড়ুদার শ্রমিক: (বয়স যখন ১ থেকে ৩ দিন)

এই বয়সের মৌমাছিরা মৌচাক পরিষ্কারে ব্যস্ত থাকবে। পুরানা সেল গুলো থেকে ময়লা পরিষ্কার, শিশু মৌমাছি জন্মের পরে খালি সেল গুলোকে নতুন ডিমের জন্য উপযোগী করা, সেলের মুখে আটকে থাকা পুরানা ঢাকনা বিচ্ছিন্ন করা, শ্যাওলা ও ছত্রাক বিনষ্ট করা, গুদাম থেকে অব্যবহৃত, খাবার অনুপযুক্ত ফুলের পরাগ রেণু খসিয়ে বের করে আনাই হল এই বয়সের মৌমাছিদের কাজ। তারা জন্ম নেওয়া মাত্রই কাজের দায়িত্ব বুঝে নেয় এবং অনতিবিলম্বে স্বীয় কাজ শুরু করে দেয়। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ডানাগুলো নেড়েচেড়ে পরীক্ষা করে দেখে, সেগুলো শরীরের ভার বহনের উপযোগী হয়েছে কিনা।

লাশ সৎকারকারী শ্রমিক: (বয়স যখন ৩ থেকে ১৬ দিন)

এই বয়সের শ্রমিক মৌমাছিরা সেলের মধ্যে মৃত অপূর্ণ মৌমাছির দেহ গুলো তুলে আনবে। ইতিপূর্বে তারা সেল পরিষ্কার করার সময় এসব লাশ তুলে আনার মত শারীরিক শক্তি গায়ে ছিলনা। সেলের নিচে পতিত মৌমাছির মৃত দেহ গুলো কুড়িয়ে সংগ্রহ করবে এবং মৌচাকের বাহিরে যতটুকু সম্ভব দূরত্বে ফেলে আসবে। লাশ নিচে পড়ে থাকলে, পিপড়ার নজরে আসবে এবং পিপড়া ভাবার সুযোগ পাবে যে, এই স্থানে কদাচিৎ মরা পতঙ্গ পাওয়া যায়। আহত ও অসুস্থ মৌমাছি গুলোকেও সন্ধান করে, দ্রুততার সহিত বাহিরে, বহু দূরে ফেলে দিয়ে আসে। যাতে করে পতঙ্গ ভুক পাখি কিংবা টিকটিকি আহত মৌমাছিকে গর্তের মুখে নড়াচড়া করতে দেখে আকৃষ্ট হয়ে না পড়ে। পাখি যাতে বুঝতে না পারে যে, ঐ গর্তের মুখে যুতসই কায়দায় বসে থাকলে পতঙ্গ খাওয়া যাবে। নিজেদের অধঃস্থন বংশের নিরাপত্তায় এই বয়সের শ্রমিক মৌমাছি নিপুণতার সাথে এই কাজ করে থাকে! অগ্রাধিকার ভিত্তিক সকাল বেলার এই কাজ সহসা শেষ হয়ে গেলে তারা অলস ভাবে বসে থাকেনা। তখন তার নিচে বর্ণিত অন্য কাজে মনোনিবেশ করে।

নার্স শ্রমিক: (বয়স যখন ৪ থেকে ১২ দিন)

এই বয়সের মৌ-শ্রমিকেরা তাদের শিশু বোনদের পরিচর্যা করে। সেল বা কোষে আবদ্ধ শূককীট গুলোকে খানা খাওয়ায় এবং তাদের সহসা বেড়ে উঠতে তদারকি করে। শূককীট গুলোকে যথাযথ পরিচর্যা করে, সর্বোচ্চ যত্নের প্রতি মনোনিবেশ করে। একজন নার্স মৌমাছি প্রতিদিন গড়ে একটি শূককীটকে তদারকি করতে প্রায় ১৩০০ বার সেল পরিদর্শনে যায়!

মহারানীর পাচক শ্রমিক: (বয়স যখন ৭ থেকে ১২ দিন)

মহারানীর জন্য বিশেষ ধরনের খাদ্য প্রস্তুত করতে ও তাকে খাইয়ে দিতে; এই বয়সের একটি স্পেশাল দল ব্যস্ত থাকে। এই বয়স হলে সব মৌ-শ্রমিক মহারানীর জন্য খাদ্য প্রস্তুতে সুযোগ পাবে ব্যাপারটি এমন নয়! আগের তিনদিনে বোনদেরকে খানা খাইয়ে যে শ্রমিক যোগ্যতা, দক্ষতা, আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততায় অগ্রগামী ছিল, তাদের মধ্য থেকে কিছু বাছাই করা পাচক শ্রমিক, মহারানীর খাদ্য প্রস্তুতকারী দলে সুযোগ পায়। বাকীরা বোনাদের পরিচর্যায় মনোনিবেশ করে।

খাদ্য গুদামজাত কারী শ্রমিক: (বয়স যখন ১২ থেকে ১৮ দিন)

যে সব দক্ষ শ্রমিক মৌমাছি, বাহিরে গিয়ে তন্ন তন্ন করে ফল-ফুলের রস ও ফুলের পরাগ নিয়ে ফিরে আসে। তাদের নিকট থেকে সেগুলো সংগ্রহ করে আগে থেকেই নির্দিষ্ট করা সেলে মিষ্ট রস ও ফুলের পরাগ রেণু যথাযথ গুদামজাত করে রাখে। এসব গুদামজাত মধু থেকেই নার্স ও পাচক মৌমাছিরা প্রয়োজন মত মধু সংগ্রহ করে শিশু বোনদের খাইয়ে থাকে। উল্লেখ্য রস থেকে সুনির্দিষ্ট একটি পদ্ধতির মাধ্যমে পানি শুকালে সেটা মধুতে পরিণত হয়। পরিপক্ব মৌমাছিরা মূলত রস অথবা মধুর সাথে ফুলের পরাগ রেণু মিশ্রিত খাবারই খেয়ে থাকে। পারত পক্ষে মৌমাছি জমানো মধুতে হাত দেয় না; তাছাড়া জমানো মধু চুরি হবার ভয়ে, সে সব কলোনিতে থাকে সর্বোচ্চ প্রহরার ব্যবস্থা। প্রাত্যহিক জীবনে মৌ-শ্রমিক কাঁচা রস ও তাজা পরাগ রেণুই খেয়েই দিনাতীপাত করে।

তাপ ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ কারি শ্রমিক: (বয়স যখন ১২ থেকে ১৮ দিন)

একই বয়সের শ্রমিক মৌমাছিরা মৌচাকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তারা পুরো কলোনির তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে। তাপ বেড়ে গেলে সারি বদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে একসাথে মিলে পাখা দিয়ে চাকের আভ্যন্তরীণ বাতাসের গতি সৃষ্টি করে; ফলে বাহিরের নির্মল বাতাস মৌচাকে ঢুকে পড়ে এবং তাপমাত্রা কমে যায়। শীতকালে তাপমাত্রা কমে গেলে, গোলাকার হয়ে ঘিরে পাখায় ভিন্ন ধরনের ঢেউ সৃষ্টি করে মৌচাকে উত্তাপ সৃষ্টি করে নেয়। চাকে আর্দ্রতা বেড়ে গেলে, মধু পচে যাবে, শূককীট অসুস্থ হবে, ছত্রাক জন্মাবে তাই এই ধরনের শুষ্ক বাতাসের গতি দ্বারা মৌচাককে আর্দ্রতা মুক্ত ও ঝরঝরে করে রাখাও এই বয়সী মৌমাছির কাজ! মৌমাছির পাখায় প্রচণ্ড কম্পন শক্তি বিদ্যমান, তাদের পাখা প্রতি সেকেন্টে প্রায় ২০০ বারের মত কম্পন সৃষ্টি করতে পারে!

কারিগর শ্রমিক: (বয়স যখন ১২ থেকে ৩৫ দিন)

১২ দিন বয়স হলেই মৌমাছি পরিপক্ব হয়। এই বয়সী শ্রমিক মৌমাছির মুখ থেকে মোম বের হওয়া শুরু হয়। সেই মোম দিয়ে প্রয়োজনানুসারে নতুন চাক তৈরি, পুরানো চাক মেরামত, দুর্বল চাকে আরো মোম যোগে মজবুত করন, পরিপক্ব মধুর ঘর গুলো মোম দ্বারা সিল গালা করা হয়। মোমের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লে মৌমাছির অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়, মধু সংগ্রহের গতিতে বিরাট ভাটা পড়ে, কেননা এই বয়সটি মধু আহরণ করারও বয়স। এক কাজে ব্যস্ত হলে অন্য কাজে ভাটা পড়বেই। এই চাককে গরম পানিতে সিদ্ধ করলে কিছুক্ষণের মধ্যেই সোনালী রঙ্গের মোম পানিতে ভেসে উঠে, উচ্ছিষ্ট নিচে তলানি হিসেবে পড়ে যায়। ফার্নিসারের কাজে এই মোম বহু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মৌমাছির সময় বাঁচাতে ও মধুর উৎপাদন বাড়াতে বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম চাক বানানো শিখেছে। বাজারে এসব কৃত্রিম চাক পাওয়া যায়। এই কৃত্রিম চাক মৌমাছির বাসায় দিলে, মৌ-শ্রমিক যৌবনের পুরো সময় মধু আহরণে ব্যস্ত থাকতে পারে।

নিরাপত্তা শ্রমিক: (বয়স যখন ১৮ থেকে ২১ দিন)

এই বয়সের শ্রমিক মৌমাছি বাসার গেটে নিরাপত্তা তল্লাশি ও প্রহরার কাজে ব্যস্ত থাকে। এই বয়সটি হল মৌমাছির ঘরোয়া জীবনের শেষ কাল। এরপর থেকে তারা বাহিরের কাজ করার মত দৈহিক শক্তি ও মানসিক হিম্মত পায়। মূলত এদের কঠোর নজরদারির কারণে এক বাসার মৌমাছি অন্য বাসায় ঢুকতে পারে না। এরাই বাসাকে আক্রান্ত হওয়া থেকে নিরাপদ রাখে। সবাইকে রক্ষা করতে মরণপণ লড়াই করে, সুইসাইড করতেও কাল-বিলম্ব করেনা। তবুও কদাচিৎ এখানে ঘুষের কারবার দেখা যায়। ঘুষ খেয়ে প্রহরী মৌমাছি কদাচিৎ বাহিরের অন্য মৌচাকের মৌমাছিকে ভিতরে ঢুকতে দেয়। ফলে সে কিছু মধু অথবা পরাগ চুরি করে পালায়। লক্ষণীয়! ঘুষ হিসেবে তাজা রসের একটি চুমুকই যথেষ্ট। বোলতা, ভিমরুল কখনও মৌচাকে দস্যুতার জন্য হামলে পড়ে। মৌচাকের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল ও ধ্বংস করেই ওরা ভিতরে প্রবেশ করার সুযোগ পায়। দস্যু কাউকে একা বাগে পেলে মৌমাছি গোল হয়ে ঘিরে ধরে এবং মাইক্রো ওয়েভ তৈরি করতে বাতাস করতে থাকে, এতে দস্যু ভীষণ কৃত্রিম গরমে মারা যায়। সে জন্য দস্যুরাও খুব হুশিয়ার থাকে যাতে করে তাকে ঘিরে কুণ্ডলী বানাতে না পারে। কিছু দক্ষ, কৌশলী ও লড়াকু ভিমরুল হল মৌচাকের ভয়ানক যমদূত! ভিমরুল হয়ত এক চুমুক মধু চুরি করতে পারবে। কিন্তু মৌ-শ্রমিক এই সাধারণ দস্যুতাও মানতে পারেনা, ফলে শত শত লড়াকু শ্রমিক ভয়ানক লড়াইয়ে পাণ হারায়।



দক্ষ শ্রমিক: (বয়স যখন ২২ থেকে ৪২ দিন)

জীবনে অর্ধেক সময় বাসায় বিভিন্ন ধরনের ঘরোয়া প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পরে, এই বয়সী শ্রমিক মৌমাছি বাহিরের জীবনের আরো কষ্টকর কাজের মুখোমুখি হয়। তারা হয়ে উঠে কর্মদক্ষ, চৌকশ ও সাহসী। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি ফল-ফুলের রস ও ফুলের পরাগ রেণুর সন্ধানে ব্যস্ত থাকে। কর্মী মৌমাছি একসাথে তিনটি কাজ করতে থাকে। জিহ্বা দিয়ে রস চুষে নেওয়া ও দুই পা দিয়ে পরাগ সংগ্রহ করা। কর্মী মৌমাছির পিছনের দুই পায়ের উপরের অংশে জালি আকৃতির ঝাড়ু আছে। জিহ্বা দিয়ে মিষ্টি রস চুষে নেবার সময়, একই সাথে পিছনের দুই পা দিয়ে ফুলের বৃন্ত গুলোকেও ঝাড়ু দিতে থাকে। ফলে ফুলের পরাগ রেণু মৌমাছির পায়ের ঝুড়িতে ঢুকে পড়ে। সে যখন বাসায় ফিরে আসে, তখন পেট ও মুখে থাকে মধু এবং দুই পায়ে থাকে দুই বস্তা পরাগ রেণু!



রানী মৌমাছি:

রানী হল মৌচাকের সবারই মা। একটি মৌচাকে কয়েক হাজার থেকে কয়েক লক্ষ মৌমাছি থাকতে পারে। মৌমাছির সংখ্যা যতই হোক না কেন, রানী থাকবে একজন! এই রানীকে কেন্দ্র করেই মৌচাকের জীবন। রানীর শরীরের আকৃতি পুরুষ ও শ্রমিক মৌমাছির চেয়ে বড়। আকৃতি দেখতে অনেকটা ভিমরুলের কাছাকাছি, তবে ভিমরুলের মত ক্ষতিকর ও হিংসাত্মক নয়। আমরা আগেই জেনেছি যে, চাকে ডিমের অবস্থান যখন শূককীটের পর্যায়ে থাকে, তখন নার্স শ্রমিক মৌমাছিরা খাদ্য বানিয়ে তাদের খাইয়ে দেয়। সেই খাদ্য আবার দুই প্রকার! একটি হল সাধারণ খাদ্য যা সবার জন্য প্রযোজ্য, আরেকটি হল স্পেশাল খাবার যা রানীর জন্য প্রযোজ্য। শ্রমিক মৌমাছি যদি রানীর এই খাবার ইচ্ছায় কিংবা ভুলে কোন শূককীটকে খাইয়ে ফেলে তাহলে সেই শূককীট পরবর্তীতে রানী হয় জন্ম নিবে! অর্থাৎ শূককীট অবস্থায় যে বাচ্চা রয়েল জেলি খেতে পারে সে পরিণত বয়সে রানী হয়ে জন্ম নেয়। রাণীর আকৃতি যেহেতু আকারে বড়, তাই তারা সাধারণ শ্রমিক শ্রেণীর প্রকোষ্ঠে জন্ম নিতে পারেনা। তাদের জন্ম হয়, বিশেষ ধরনের একটি বড় কোষে। যে কোষটি চাকের নিচে ঝুলন্ত অবস্থায়, বিশেষ তদারকিতে বানানো হয়। ইংরেজিতে রানীর খাবারটি রয়েল জেলি বা রাজকীয় খাবার নামে প্রসিদ্ধ। বাজারে যে রয়েল জেলি পাওয়া যায়, সেটা পুরাটাই কৃত্রিম ভাবে তৈরি। কেননা মৌ-শ্রমিকের বানানো রয়েল জেলিতে নিজেদের শরীরের এনজাইম ও হরমোন যুক্ত থাকে, যা কৃত্রিম ভাবে বানানো সম্ভব নয়।



শত্রুকে ঘায়েল করতে রানীর কাছেও একটি হুল আছে, তবে সেটা সহজে ব্যবহার হয় না। চরম বিপদের সময়ও রানী এটা ব্যবহার না করে ধৈর্য ধরতে পারে! দেখা গেছে শত্রুর হাতে মারা যাবার আগেও সেটি ব্যবহার করেনি কিন্তু যদি সে জানতে পারে যে, মৌচাকে তার একটা প্রতিদ্বন্ধি বা সতিন মৌ-রানীর জন্ম হয়েছে। তাহলে সে বেজায় হিংস্র হয়ে উঠে! সতীনের অস্তিত্ব সে সহ্যই করতে পারেনা। পরিণামে সতীনের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয় এবং একজনের মৃত্যু কিংবা পলায়নের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান হয়! রানীর জন্ম যেহেতু শ্রমিক মৌমাছি হাতে সৃষ্টি হয়, সেজন্য বর্তমান রানী সদা সতর্ক থাকে, সর্বদা সেল তল্লাশি করে বেড়ায়, ফাঁকতালে অজ্ঞাতে কোন নতুন রানীর জন্ম হচ্ছে কিনা সেই ভয়ে!

রানী মৌমাছি পুরো জীবনে একবারই পুরুষ মৌমাছিদের সাথে মিলিত হয়। পুরুষ মৌমাছি ও রানী আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় মিলিত হয়। ফলে তার নিরাপত্তার জন্য পুরো চাকের বিশাল একটা অংশ রানীর সাথে বিরাট দল বেঁধে অবিরাম শূন্যে উড়তে হয়। এই দল অনবরত একদিনের বেশী উড়তে পারে এবং এই ধরনের এক যাত্রায় রানী ১ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ টি পুরুষ মৌমাছির সাথে মিলিত হতে পারে! কাজ শেষে একই উড়ায় কোথাও না থেমে অবশেষে শেষে বাসায় ফিরে আসে। রানী মৌমাছির শরীর থেকে একটা ঘ্রাণ বের হয়, সেই ঘ্রাণ পেয়ে সবাই তাকে অনুসরণ করতে পারে এবং সর্বাবস্থায় তা অবস্থায় নির্ণয়ে সামান্যতম ভুল করেনা। বিজ্ঞানীরা রানীর সেই অজ্ঞাত ঘ্রাণকে জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে! কৃত্রিম ভাবে তৈরি এই ঘ্রাণ ছড়িয়ে মৌমাছিকে বিভ্রান্ত করা ও দখলে রাখা সহজ হয়েছে!

রানী মৌমাছি খেতে পারেনা, তাকে খাইয়ে দিতে হয়। নিজের নিরাপত্তায় অক্ষম, তাই তাকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা পরিবেষ্টিত থাকতে হয়। তার কাজ হল, খাওয়া আর চাহিদা-নুযায়ী ডিম পারা। রানী মৌমাছি তার ইচ্ছার উপর নির্ভর করেই ডিমের সংখ্যা বাড়াতে কমাতে পারে। একটি জরীপ কারী দল চাকে খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুদ ও বাহিরে খাদ্য পাওয়ার সম্ভাবনার চিত্র রানীকে সরবরাহ করে! সেই অনুপাতে ডিম উৎপাদনের মাত্রা ঠিক করা হয় রানী সেটা অনুসরণ করেই ডিম পারে। রানী দৈনিক গড়ে দেড় হাজারের অধিক সংখ্যক ডিম পারতে পারে। যত ডিমই লাগুক না কেন রানী ইচ্ছা করলেই তা দিতে পারে। একদিনে পাড়া ডিমের ওজন রানীর পুরো শরীরের চেয়েও বেশী হয়! একটি রানী প্রায় দুই বছরের অধিক সময় পর্যন্ত বাঁচতে পারে।

পুরাতন রানী যেহেতু নতুন রানীকে হত্যা করে ফেলে, তাই বাসা থেকে নতুন রানীর সৃষ্টি করা কঠিন। তাই বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম ভাবে নতুন রানীর সৃষ্টি করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। সেই নব্য রানীর শরীরে ঘ্রাণ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তার শরীরে পুরুষ মৌমাছির শুক্রাণু প্রতিস্থাপন করা হয়। ফলে এটি একটি পরিপূর্ণ সক্ষম রানী মৌমাছিতে পরিণত হয়। কোন কৃত্রিম বাসাতে, কৃত্রিম চাক ঢুকিয়ে, কিছু শ্রমিক মৌমাছি সহ একটি কৃত্রিম রাণীকে ঢুকিয়ে দিলে, শ্রমিকেরা এটাকে নিজেদের মা মনে করে সহসা কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দেশলাইয়ের মত একটি বাক্সে রানী কয়েকদিনের জন্য আবদ্ধ থাকে অথবা চাকের গেট এত ছোট করে দেওয়া হয় যে, যাতে করে শ্রমিকেরা আসা যাওয়া করতে পারলেও রানী সেটা দিয়ে বের হয়ে পালাতে পারেনা, তাই শ্রমিক মৌমাছি রানীকে একাকী ফেলে চাক ত্যাগ করেনা। কয়েকদিন পরে শ্রমিকেরা ভাবতে থাকে যে, কৃত্রিম বাসাটিতে রানীকে নিয়ে অবস্থান করাটাই উত্তম এটাই আমাদের তকদির। ফলে এভাবে একটি নতুন বাসার জন্ম লাভ করে।

মৌমাছির জীবনের একটি ব্যবচ্ছেদ:

উপরে যে বর্ণনা করা হয়েছে, মূলত তার বাহির আরো অনেক কাজের জোগান দেয় মৌমাছি। তাদের একটি জরিপকারী দল সে অঞ্চলের বিরাট এলাকা ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করে। মধু আহরণের জন্য যদি আরো নির্ভরযোগ্য স্থান থাকে তাহলে দলবল সহ সেখানে চলে যায়। বর্ষার প্রারম্ভে বাগানে ফুলের স্বল্পতা দেখা দেয়, ফলে আরেকটি তথ্য সংগ্রহ কারী দল রানীকে জানিয়ে দেয় যাতে করে ডিমের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। নিজেদের মজুত কৃত খাদ্যে কতদিন চলতে পারে সে সম্পর্কে রানীকে অবহিত করে আরেক দল।

মৌমাছি খুবই পরিশ্রমী পতঙ্গ। ফুলের রস মুখে নিয়ে, সেটা থেকে জলীয় অংশ দূর করে শতভাগ ভেজাল মুক্ত এক ফোটা মধু তৈরি করতে যে শ্রম ও সময় ব্যয় করে সেটা জানলে আশ্চর্য হতে হয়! এক পাউন্ড মধু বানাতে, ৫৫০ টি মৌমাছিকে, প্রায় বিশ লক্ষ ফুলে ভ্রমণ করতে হয়! আবার এক পাউন্ড মধু সংগ্রহ করতে একটি শ্রমিক মৌমাছিকে প্রায় ১৪.৫ লক্ষ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়! যা দিয়ে পৃথিবীকে তিনবার প্রদক্ষিণ করা যায়! প্রাচুর্য থাকলে প্রতি মিনিটে দশটি ফুলে তল্লাশি চালাতে পারে। ৫০ থেকে ১০০ ফুলে ভ্রমণ করে মৌমাছি তার পেট ফুলের রসে ভরাতে পারে! এভাবে ছয়শত ফুলে তল্লাশি চালালে পরে, তাদের পায়ে রক্ষিত বস্তাটি ফুলের পরাগ রেণু দ্বারা পূর্ণ হয়। ফুলের সন্ধানে প্রতিটি মৌমাছি, মৌচাকের পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসের পুরো এলাকা তারা তন্ন তন্ন করে ঘুরে বেড়ায়! তাদের উড়ার গতি প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ২৪ কিলোমিটার। একটি সক্ষম মৌমাছি দৈনিক ১০ কিলোমিটারের মত পথ পাড়ি দিতে পারে। মানব সন্তান যখন চামচে ভরে মধু পান করে তৃপ্ত-বোধ হয়, তখন সে ভুলেও ভাবে না যে, এই এক চামচ মধু সৃষ্টিতে কত শত মৌমাছির কত বিরাট অবদান এর মাঝেই লুকিয়ে ছিল!

মৌচাকে কেউ হানা দিলে, মৌমাছি প্রথমে চেষ্টা করে প্রতিহত করতে। সেটা না পারলে নিজেদের পুরো দলের ক্ষতি করতে চায়না। তাই রানীর নেতৃত্বে দলবল সহ মুহূর্তে বের হয়ে পালিয়ে যায় এবং নিকটস্থ কোথাও গিয়ে গাছের ডালে কিংবা ঘরের কার্নিশে স্তূপাকারে লটকে থাকে। উদ্দেশ্য, বিপদ কেটে গেলে আবারো বাসায় ফিরে যাওয়া। বাসার কিছু অংশও যদি অক্ষত থাকে তাহলে ফিরে যায় এবং নতুন করে জীবন শুরু করে নতুবা সেই স্থান ত্যাগ করে। ভালুক সহ পাহাড়ি প্রাণীরা সেটা জানে বলে চাকের সবটাই নষ্ট করেনা, তাই বার বার হানা দেবার সুযোগ পায়। মানুষ পুরোটাই নষ্ট করে বলে সেখানে তারা দ্বিতীয়বার কমই আসে। তাই মনে রাখতে হবে তারা যদি নিরাপত্তা হীনতা কিংবা বিরক্ত হলে স্থান ত্যাগে বাধ্য হয়।

মৌচাকে যদি মৌমাছির সংখ্যা বেড়ে যায়, তাহলে পৃথক হবার নিমিত্তে শ্রমিক নার্স মৌমাছিরা নতুন আরেকটি রানীর জন্ম দেয়। জন্ম নেওয়া রানীকে পুরাতন রানীর আক্রমণ থেকে নিরাপত্তা দেয়। ফলে মৌচাকে দুটো দলের সৃষ্টি হয়। তখন একটি দল চাক থেকে বিতাড়িত হয়। বিতাড়িত দলও আগের মত গাছের ডালে কোথাও স্তূপাকারে লটকে থাকে। স্তূপের মধ্য খানে থাকে রানী। স্তূপাকার দলটিকে পাকড়াও করা অধিকতর সহজ, আমিও এই পদ্ধতি ব্যবহার করে মন্দির থেকে মৌমাছির বিরাট দলকে পাকড়াও করেছিলাম।

বরশীতে আটকানো মাছকে, পানি থেকে তোলার জন্য, লোহার হাতল যুক্ত এক ধরনের গোলাকার জাল থাকে। ছোট ছিদ্রযুক্ত একই ধরনের একটি জাল নিয়ে, লটকে থাকা মৌমাছির পাশে যুতসই করে ধরতে হয়। অতঃপর দলটির গায়ে সুবিধা-মত সময়ে ধাক্কা দিলে, বুঝে উঠার আগেই পুরো মৌমাছির দল জালের ভিতরে পড়ে যায়। কিছু মৌমাছি হয়ত বাহিরে থেকে যাবে, তবে তারাও ধরা দিবে! জালের মুখ বন্ধ করলেই সকল মৌ আটকা পড়ে যায়। রানী ঢুকেছে কিনা চোখে না দেখলেও, নব্বই ভাগ নিশ্চিত হওয়া যায় যে, রানীও একই সাথে জালে ঢুকে পড়েছে।



পরে এসব মৌমাছিকে নিজের বানানো বাক্সে কায়দা করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। যদি রানী বাক্সের ভিতরে বন্ধী হয়, তাহলে দেখা যাবে যে সকল মৌমাছি বাহিরে ছিল, তারা বাক্সটির চারিদিকে ঘিরে ধরবে। সুতরাং শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায় যে, রানী ঠিকই বন্ধী হয়েছে। বাক্স থেকে রানী বের না হবার জন্য উপর বর্ণিত পদ্ধতিতে গেট লাগানো হয় ও মৌমাছি এসই বাক্সে স্থায়ী হয়। মৌমাছি বসে খাবার পতঙ্গ নয়, তাই বয়স অনুপাতে নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং মানুষের দেওয়া বাসাটিকে নিজের চাক মনে করে থেকে যায় আর মানুষ সে মধু ছিনতাই করে খায়!

সাত সকালে একটি জরিপ কারী দল ফুলের সন্ধানে বের হয়। তারা সহসা ফিরে এসে মৌচাকের দিকে মুখ করে নিজের পাছা উঁচু করে, পাখা ঘুরিয়ে নাচতে থাকে। মধুর সন্ধানে ব্যস্ত মৌমাছি তার ইঙ্গিত বুঝতে পারে। সে মুহূর্তে ঐ দিকে, তত ডিগ্রী বরাবর এবং পাখায় দেওয়া নির্দেশনা অনুসারী গতি দিয়ে, মুহূর্তে জানিয়ে দেওয়া স্থানে পৌঁছে যেতে পারে।

ফুলের বর্ণ ভেদে মধুর রঙ্গের পরিবর্তন হয়। পেয়ারা, ধুতুরা, খেজুর ফুলের মধুর বর্ণ সাদা হয়। সরিষা ফুলের মধুর বর্ণ সরিষা তেলের মত হয়। বাজারে যে মধু পাওয়া যায় সেটা হল মিশ্র ফুলের মধু, পাহাড়ে নানা বর্ণের ফুল থাকে বলে সেই মধুর বর্ণও একই। কোন নির্দিষ্ট ফুলের একক মধুও সংগ্রহ করা যায়। যেমন, শুধুমাত্র ধুতুরা ফুলের সংগৃহীত মধু খেলে মানুষের মাঝে উন্মাদনা ভাব আসবে। কেননা ধুতুরার রস মানুষকে উন্মাদ করে। এটা ব্যয়বহুল পদ্ধতি, অতীতে ব্যবহার হত। বর্তমানে রাসায়নিক উপাদানের মাধ্যমে সব কিছুর একটা বিকল্প আছে বলে এখন কেউ এই পদ্ধতিতে মধু উৎপাদন করেনা।

মধু মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। মূলত মধু মানুষের দেহ কোষকে সতেজ ও সবল করে। অসুস্থ, ক্ষত ও পচন ধরা দেহ কোষগুলোকে জীবন্ত করে। দেহ কোষ জীবন্ত হলেই মানব দেহ ফুরফুরে হয়ে উঠে। মৌমাছি যেহেতু প্রত্যেক গাছের ফুল থেকেই মধু সংগ্রহ করে, সেজন্য সকল গাছের ভেষজ গুণাবলী মধুর মধ্যে লুকিয়ে থাকে।

মানুষ মনে করে থাকে, মধু খেলে যৌন শক্তি প্রবল হয়! সে জন্য বয়স্কদের মধূ পান করতে দেখলে যুবকেরা মুছকি হাঁসে। কথাটি মোটেও ঠিক নয়। তবে মধু খাওয়ার পরে সকল কোষের সাথে যৌন অনুভূতির কোষ গুলোও সতেজ হয়। তাই মানব দেহে এর পরিবর্তন সহজে ধরা পড়ে। সবল কোষের পীড়নে চিত্ত উত্তেজিত হয়, প্রবৃত্তি গরম হয় এবং এর ফলাফল যৌন জীবনে তারতম্য আনে! রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত মধু পান করবে, তার মৃত্যু রোগ ব্যতীত কোন রোগ হবেনা।

তবে মৌমাছি পালন করতে গিয়ে, সমালোচকদের দ্বারা আমি ততবেশী আক্রান্ত হয়নি, যতবেশী আক্রান্ত হয়েছি, যখন তারা দেখল যে আমি গরু পালন শুরু করেছি তথা গরু ব্যাপারী হয়ে গেছি।

এই পর্বটি 'এক পিকুলিয়ার মানুষ' সিরিজের পর্ব-৩১ হিসেবে গন্য হবে।

বিষয়: বিবিধ

১০০৯৮ বার পঠিত, ৪৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

277473
২৩ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৭
মামুন লিখেছেন : " একটি শ্রমিক মৌমাছির ৪২ দিনের ক্ষণিকের ছোট্ট জীবনে নিজেদের সঞ্চিত মধু পান করার সৌভাগ্য খুব কমই জোটে! ভাগ্য বিড়ম্বিত এসব পতঙ্গের মজুত করা মধু বিভিন্ন প্রাণী চুরি করে খায়। আর মানবজাতি লুণ্ঠিত মধু উপভোগ করে, চির যৌবনের লাভের আশায় "- জেনে খুবই কষ্ট হল মৌমাছির জন্য।

" মৌচাকে পুরুষ মৌমাছির মত হতভাগা ও অসহায় পতঙ্গ আর দ্বিতীয়টি নেই। পুরুষ মৌমাছির একটিই কাজ, তা হল; রানী মৌমাছির প্রয়োজনের সময় তার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া। পরিতাপের বিষয় হল, শত শত পুরুষ মৌমাছির মাঝ থেকে মাত্র কয়েক জনের সৌভাগ্য ঘটে রাণীর সাথে মিলিত হবার। তারপরও কথা থাকে, রানীর সাথে মিলিত হবার পরে তার লিঙ্গটি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং সেটি রানীর শরীরের একটি অংশ হয়ে যায়। পুরুষের এই বিচ্ছিন্ন অংশ থেকেই রানী আজীবন ক্রমাগত শুক্রাণু পেয়ে থাকে। যার ফলে তার দেওয়া প্রতিটি ডিম সহজে নিষিক্ত হতে পারে। স্বাভাবিক ভাবে একটি পুরুষ মৌমাছি প্রায় ২ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকে। "

এ তথ্যটি জেনেও পুরুষ মৌমাছির জন্য করুণা হচ্ছে।
এদের প্রকারভেদ এবং প্রতিটি স্তরের ওদের কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে আপনার লিখার দ্বারা জানলাম।

" তবে মৌমাছি পালন করতে গিয়ে, সমালোচকদের দ্বারা আমি ততবেশী আক্রান্ত হয়নি, যতবেশী আক্রান্ত হয়েছি, যখন তারা দেখল যে আমি গরু পালন শুরু করেছি তথা গরু ব্যাপারী হয়ে গেছি।"- লিখার শেষের এই অংশটুকুও অনেক ভালো লাগল।

মোট কথা একটা দুর্দান্ত লিখনি উপহার দিলেন টিপু ভাই।
জাজাকাল্লাহু খাইর। Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up Rose Rose Rose Good Luck Good Luck Good Luck



২৩ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:০৩
221386
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনাকে প্রথম মন্তব্যকারী হিসেবে মোবারকবাদ। আপনি পাঠক হিসেবেও সেরা। আল্লাহ আপনাকে রহম করুন। মুলত দীর্ঘ লিখাটিতে তথ্য যোগ করা ও ছবির ক্যাপশন তৈরি করতে সময় লেগেছ। আমার অভিজ্ঞতা লব্দ দক্ষতার সাথে বিজ্ঞানের তথ্যগুলোর সাখে কয়েকবার যাচাই বাছাই করতে হয়েছে। সে জন্য কয়েকদিন কোন মন্তব্য কিংবা পোষ্ট দিতে পারিনি। আপনাকে আবারো ধন্যবাদ ও ভাল থাকুন।
২৩ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:০৯
221388
মামুন লিখেছেন : আপনাকেও অনেক শুভেচ্ছা।
আসলে আপনার লিখা দেখলেই আর লোভ সম্বরণ করতে পারি না। তবে বৃহস্পতি ও শুক্রবার বাদে অন্য দিনগুলোতে রাতে মোবাইলে নেট ব্যবহার করাতে আপনার বা অন্য প্রিয় ব্লগারদের লিখা পড়লেও কোনো মন্তব্য করতে পারি না। ইংরেজীতে করতে পারি, কিন্তু বাংলা ব্লগে ওভাবে করতে কেমন যেন লাগে।

আপনাকে আল্লাহপাক পরিবারের সকলকে সহ সব সময় ভালো রাখুন-আমীন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
২৩ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:১৬
221390
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার আমার হাতে অনেক কাজ থাকে, বলতে গেলে ব্লগ ম্যাগাজিনে বসার সুযোগ পাইনা। যদিও সুযোগ পাই মোবাইলে দেখতে হয়। সেখানে আমিও আপনার মত সমস্যায় পড়ি। আবারো ধন্যবাদ।
277475
২৩ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:২১
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৩ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:২৩
221391
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
277477
২৩ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:২৫
সান বাংলা লিখেছেন : অস্বাধারন!অনেক কিছু জানলাম তবে অনেকাংশে আগের দিনের রাজা রানীর রুপ কথার মতো মনে হচ্ছে!
অনেক ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে!
২৩ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:৩০
221395
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। এটাই সত্য এটাই বাস্তবতা। আল্লাহর সকল সৃষ্টির মাঝেই বহু রহস্য লুকিয়ে আছে, শুধু জানার আগ্রহ ও গভীর অধ্যবসায় দরকার।

আল্লাহ নিজেই বলেছেন, আমার সৃষ্টি নৈপূন্যের দিকে তাকিয়ে দেখ, কোথাও ভুল দেখ কিনা।

হাদিস শরীফে আছে, কিছু সময় আল্লাহর সৃষ্টি নৈপূন্য নিয়ে ভাবা, সারা বছর নফল এবাদতের চেয়েও উত্তম। আবারো ধন্যবাদ।
277486
২৩ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৯
বেআক্কেল লিখেছেন : মানুষ মনে করে থাকে, মধু খেলে যৌন শক্তি প্রবল হয়! সে জন্য বয়স্কদের মধূ পান করতে দেখলে যুবকেরা মুছকি হাঁসে।

এই কথাডা তো বুঝলাম না! বুঝাইয়া কইয়েন। লিখাটি পড়িয়া অনেক আনন্দ পাইছি। ভাল লেখা। ষ্টিকি হইবার কুন চান্স নাই তবে নির্ঘাত নির্বাচিত না হইয়া পারে না। হে হে হে
২৩ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:৫০
221404
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ, ভাল থাকেন।
277487
২৩ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৪
আবু ফারিহা লিখেছেন : অসাধারন সাধনা ভাই অাপনার। একটানেই পড়লাম। খুব মজা পেলাম। ধন্যবাদ অাপনাকে।
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১০:৫৭
222055
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ, ভাল থাকুন।
277499
২৩ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৫
বুড়া মিয়া লিখেছেন : বিশাল পোষ্ট, কিন্তু অত্যন্ত শিক্ষনীয় জিনিস, খুবই ভালো লাগলো
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১০:৫৯
222057
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : পোষ্টের প্রতিটি প্যারায় তথ্য ছিল, আবার পোষ্টটিকে অর্ধেক করল বিষটি পরিষ্কার হবেনা, তাই এভাবে করতে হল। অনেক ধন্যবাদ।
277515
২৩ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৯
স্বপন২ লিখেছেন : যদিও লেখাটা বড়, তবুও একটানে পড়ে ফেললাম। ভালো লাগলো।
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১০:৫৯
222058
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : পোষ্টের প্রতিটি প্যারায় তথ্য ছিল, আবার পোষ্টটিকে অর্ধেক করল বিষটি পরিষ্কার হবেনা, তাই এভাবে করতে হল। অনেক ধন্যবাদ।
277524
২৩ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৫
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ। মন্তব্য নেই। শুধু আপনার জন্য দোয়া করি। আল্লাহ আপনাকে আরো শক্তি দান করুন। আগামী পর্বে গরু নিয়ে কিছু আসবে নাকি?
মধুর উপকারীতা নিয়ে আরেকটা পর্ব লিখা যায় কি না?
এটা প্রস্তাব।
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৭
222175
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আল্লাহ আপনাকেও রহম করুন, আমীন।
277533
২৩ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫২
আফরা লিখেছেন : মৌমাছি সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম যা জানা ছিল না শুধু এটুকু জানতাম মধু অনেক উপকারী । অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৮
222177
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ
১০
277537
২৩ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৬
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম!

সুবহানাল্লাহ! অসাধারন লিখনী! পড়ছিলাম আর আল্লাহর সৃষ্টি মহিমার অপার কুদরতের কথাই মনে হচ্ছিলো! আসলেই আল্লাহ আল হাকিম!

শিক্ষনীয়, তথ্যভিত্তিক বং তাৎপর্যমূলক পোস্ট টি সবাইকে পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য মডারশেন টীমকে অনুরোধ করব লিখাটি স্টিকি করার জন্য!

জাযাকাল্লাহু খাইর! Good Luck
৬ ঘন্টা হুলের ব্যথা সহ্য করেছেন! চক্ষু চড়ক(?) গাছে গেল কিন্তু Tongue
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৯
222178
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনার সুন্দর অনুভুতি রেখে যাবার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
১১
277559
২৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৮:২৪
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ। মন্তব্য নেই। শুধু আপনার জন্য দোয়া করি। আল্লাহ আপনাকে আরো শক্তি দান করুন। আগামী পর্বে গরু নিয়ে কিছু আসবে নাকি?
মধুর উপকারীতা নিয়ে আরেকটা পর্ব লিখা যায় কি না?
এটা প্রস্তাব। Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৯
222180
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আল্লাহ আপনাকেও রহম করুন, ভাল থাকুন। আমীন।
১২
277560
২৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৮:২৫
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : আমি বছরজুড়েই খাঁটি মধু পান করি। শরীরে কোনো অসুখ বিসুখ নেই। মধু আল্লাহর একটা নিয়ামত। খেলে সবাই উপকার পাবে। চমৎকার পোষ্টের জন্য সাধুবাদ
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫০
222181
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনার সুন্দর অভিমত দেবার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
১৩
277574
২৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৯:৩১
শেখের পোলা লিখেছেন : অনেক কিছু জানার ছিল তার অনেকটাই আজকের লেখায় এসেছে৷ যদি বাক্স বানানোর কৌশল বা বাজারে পাওয়া যায় জানতে পারতাম তবে কয়েকজন বেকারকে এতে জুড়ে দেবার চেষ্টা করতাম৷ আমার কিছু অভিজ্ঞতা আছে৷ কায়দা করে নয় তবে দেওয়ালে একটা ঘঘর বানিয়ে ছোট বেলায় চাক থেকে মধু সংগ্রহ করতাম৷ মৌমাছি নিজেরাই সেখানে চাক বানাত৷ বানিজ্যিক ভাবে তখনও এর চলন হয়নি৷ যদি কোন পোষ্টে দেন তো পাব৷ আর যদি অনুগ্রহকরে আমার ইমেইলে দেন তবে আরও ভাল৷ ইমেইল; বড়ই উপকৃত হব৷ ধন্যবাদ৷
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫১
222183
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আমি আপনাকে ই-মেইল করব, বাক্স বানানোর দুর্ভোগের কথা আগের পর্বে লিখেছিলাম। আপনার আন্তরিক ইচ্ছার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
১৪
277612
২৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১০:৪৩
অয়ন খান লিখেছেন : সত্যি কথা বলতে কি, মনে হল এরা মানুষের চেয়ে অনেক বেশি শৃংখলা জানে। মানুষ যদি এভাবে নিয়ম মেনে চলত, আর যে যার অবস্থানে কাজ করে যেত, তাহলে সমাজে কোন সমস্যাই থাকত না। কি বলেন?
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫২
222184
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
১৫
277613
২৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১০:৪৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : মেীমাছিকে পরিশ্রমি প্রানির উদাহরন হিসেবে পড়ে আসছি ছোট বেলা থেকেই। কিন্তু তার সম্পর্কে এত বিস্তারিত এখনই জানতে পারলাম। মেীচাষ মাঝখানে বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু এখন তা কমে গেছে। মধুতে এখন চিনির ভেজাল দেওয়া হয়! তথাকথিত হাইব্রিড ফসল এর চাষ বৃদ্ধিও নাকি এর কারন। তবে এই বিষয়ে বিশেষ জানিনা।
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫২
222185
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : মৌমাছির জীবন আসলেই চিত্তাকর্ষক অনেক ধন্যবাদ
১৬
277790
২৪ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ১২:২০
ফকীহে মুজতাহিদ লিখেছেন : We should learn disclipine from Bee.
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৩
222187
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
১৭
278229
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১০:০০
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : এই প্রথম মৌমাছি সম্পর্কে এত বিস্তারিত জানতে পারলাম। চমৎকার শিক্ষণীয় পোস্টের জন্য ধন্যবাদ Rose Rose Rose
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৪
222189
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনার সুন্দর অনুভুতি রেখে যাবার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
১৮
285432
১৮ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৫৬
মোস্তাফিজুর রহমান লিখেছেন : খুবই ভাল লাগল। তথ্য সমৃদ্ধ লিখা। মৌমাছির জীবনে সত্যিই চিন্তার খোরাক আছে কিন্তু আমাদের চিন্তা করার সময় কই?? মধু আমার প্রিয় একটি খাদ্য/পানীয়। কিন্তু খাটি মধু পাওয়া কষ্টকর। বাজারে (সৌদি আরবে)কিলো ১০রিয়াল থেকে শুরু করে ৭০রিয়াল পর্যন্ত পাওয়া যায়। তাই চিন্তায় পড়ে যাই কোনটা খাটি। সবাই ন্যাচারলাই বলে। তবে মজার/ বাস্তব বিষয়
তবে মৌমাছি পালন করতে গিয়ে, সমালোচকদের দ্বারা আমি ততবেশী আক্রান্ত হয়নি, যতবেশী আক্রান্ত হয়েছি, যখন তারা দেখল যে আমি গরু পালন শুরু করেছি তথা গরু ব্যাপারী হয়ে গেছি। কারণ আমাদের দেশে কিছু পেশাকে ছোট মনে করা হয়।
১৮ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:০৪
228795
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনার সুন্দর ও মূল্যবান মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকুন আর মধু খান নিয়মিত। আরব দেশের সকল মধুই উন্নত। আরব দেশের দোকান গুলোতে বোতলে পরিষ্কার উল্লেক থাকে কোনটি কোন ধরনের মধু। কিছু বোতলে ছোট্ট অক্ষরে লিখা থাকে 'নেকটর'। এগুলোর স্বাদ ও বর্ণ একই হলেও এগুলো কিন্তু আসল মধু নয়। তাই সাবধান হওয়া ও জরুরী।
১৯
285438
১৮ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:১১
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি এ মৌমাছির জীবনচক্র হতে আমাদের অনেক শিখার বিষয় আছে।

অনেক তথ্যবহুল এ পোস্টে আপনি অনেক জানার খোরাক দিলেন। অনেক অনেক ধন্যবাদ জানবেন।

শিক্ষণীয় পোস্টটি স্টিকি করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
১৮ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:০৪
228796
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, ভাল থাকুন।
২০
285475
১৮ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:৩৩
এ কিউ এম ইব্রাহীম লিখেছেন : বিশাল পোষ্ট, কিন্তু অত্যন্ত শিক্ষনীয় জিনিস, খুবই ভালো লাগলো
১৮ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:০৬
228808
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : পোষ্টটি ছোট করতে গেলে গুরত্বপূর্ন কথা বাহিরে চলে যাবে। দুটি করলে পাঠক ধারাবাহিকতা পাবেনা। দশম শ্রেনীর ছাত্রদের রচনার মত আকার হয়েছে, ছবি দেওয়াতে দেখতে আরো বড় দেখাচ্ছে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
২১
285503
১৮ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:০৭
ফখরুল লিখেছেন : নাহল সূরাটির অবস্থান কোরআনের ১৬ নাম্বার স্থানে।আর বিজ্ঞান জানিয়েছে, পুরুষ মৌমাছির ক্রোমোসোম(CHROMOSOME) সংখ্যা ১৬।
আবার সুরাটিতে আয়াত আছে ১২৮ টা। যা ১৬ এবং৩২ এ দুটি সংখ্যা দ্বারাই বিভাজ্য।
১২৮/ ১৬ = ৮
১২৮/ ৩২= ৪
সুরা নহলের শেষ আয়াতটিতে আছে ৩২ টি অক্ষর যা স্ত্রী মৌমাছির CHROMOSOME সংখ্যার সমান।
সুরা নাহলের ৬৮ নং আয়াতে সর্বপ্রথম"নাহল" বা মৌমাছি শব্দটি এসেছে, আর খুবই আস্চর্যজনক ভাবে এই সুরার ১ নং আয়াত থেকে শুরু করে ৬৮ নং আয়াত পর্যন্ত "আল্লাহ" নামটি ৩২ বার এসেছে যা স্ত্রী মৌমাছির CHROMOSOME সংখ্যার সমানসূরাটির অবস্থান কোরআনের ১৬ নাম্বার স্থানে।আর বিজ্ঞান জানিয়েছে, পুরুষ মৌমাছির ক্রোমোসোম(CHROMOSOME) সংখ্যা ১৬।
আবার সুরাটিতে আয়াত আছে ১২৮ টা। যা ১৬ এবং৩২ এ দুটি সংখ্যা দ্বারাই বিভাজ্য।
১২৮/ ১৬ = ৮
১২৮/ ৩২= ৪
সুরা নহলের শেষ আয়াতটিতে আছে ৩২ টি অক্ষর যা স্ত্রী মৌমাছির CHROMOSOME সংখ্যার সমান।
সুরা নাহলের ৬৮ নং আয়াতে সর্বপ্রথম"নাহল" বা মৌমাছি শব্দটি এসেছে, আর খুবই আস্চর্যজনক ভাবে এই সুরার ১ নং আয়াত থেকে শুরু করে ৬৮ নং আয়াত পর্যন্ত "আল্লাহ" নামটি ৩২ বার এসেছে যা স্ত্রী মৌমাছির CHROMOSOME সংখ্যার সমান।

অনেক তথ্য সমৃদ্ধ পোস্ট। আপনাদের অনেক মিস করি নজরুল ভাই। আপনারা কেন নিয়মিত সময় দেন না? আজকে অনলাইন লিস্ট দেখে অনেক আনন্দিত। কারনে গুনি ব্লগার গন আজকে ব্লগে আছেন। Love StruckLove StruckLove StruckLove Struck
১৮ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:২৭
228824
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : ফখরুল ভাই, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

এখন দায়িত্ব বেড়েছে, কাজ বেড়েছে, চাপ বেড়েছে, পড়তে হচ্ছে বেশী। তাই লিখার সময় পাই কম। একটি লিখা লিখতে গেলে পড়তে হয় বেশী, তাছাড়া লিখাতে তো সময় লাগেই।

তারপর যখন একটি লিখা ব্লগে প্রকাশ করি, তখন দেখি হয়ত কয়েকজন পাঠক মাত্র পড়েছে, তখন চিন্তা করি যদি লেখায় ব্যস্ত না হয়ে অন্য কাজ করতাম তাহলে হয়ত আরো বেশী উপকৃত হতাম। কেননা এমনিতেই বহুবিধ গুরুত্বপূর্ন কাজ তো অপূর্নই থাকেই। তাই কখনও গ্যাপ হয়ে যায়।

আপনাকে অাবারো অনেক ধন্যবাদ, ভাল থাকুন।
২২
290387
০২ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০১:১১
মাটিরলাঠি লিখেছেন :
আল্লাহর অসাধারণ সৃষ্টি মৌমাছি। সুবহান-আল্লাহ।
২৩
302265
৩১ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০২:৪৭
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : মনযোগ দিয়ে পুরাটাই পড়লাম, অনেক কিছুই শিখতে পারলাম, অনেক ভাল লাগলো। আল্লাহ আপনাকে আরোও ভাল লিখার তৌফিক দান করুক।
২৪
320152
১৫ মে ২০১৫ রাত ০২:০১
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ভালো লাগলো, অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File