বল চুরির মুজিবীয় কৌশল

লিখেছেন লিখেছেন নয়ন খান ০১ অক্টোবর, ২০১৬, ০৯:৪৩:১৭ রাত

দারুন ঘটনা!

শাহবাগীরা দ্রুত এ বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু করতে পারে। একাত্তর টিভি মুজিবীয় অনবদ্য ভংগিমায় পাইপ টানার মত এ বিষয় নিয়েও বন্দনা গাইতে পারে। জাতির পিতার কিশোর অবস্থায়ই বল গুমের অভিনব এবং দৃঢ কৌশল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন ও পুরাতন বন্ধুদের সাক্ষাৎকারও প্রকাশ করতে পারে।

সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন সাহেব হাইস্কুলে মুজিবের সাথে একই টিমে ফুটবল খেলতেন। ১৯৯১ অথবা ৯২ সালে হজ্জ্ব করতে এসে ‘মুজিব যে কি জিনিস’ তা রোমন্থন করতে গিয়ে এই ঘটনাটাটা বলেন।

হারাম শরীফে বসে, কা’বা শরীফকে সামনে রেখে তিনি এর বর্ণনা দেন। সৌদিতে কর্মরত যে প্রফেসরের কাছে মোয়াজ্জেম সাহেব বলেছিলেন তিনি এখন আমেরিকায়। উনার কাছ থেকে ঘটনাটা শুনে আমি তো তাজ্জুব হয়ে গেলাম! মোয়াজ্জেম সাহেবের ছেলে ড: আবেদীনও এই ঘটনা জানেন। শাহবাগীরা সহজেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালীর এই দূর্লভ রেকর্ড সংগ্রহ করে ৩২ নং এর যাদুঘরে স্থানান্তরিত করতে পারে। আর সেই সাথে উদ্ধার কার্যে সহযোগিতার জন্য এই ক্ষুদ্র আ্যডভোকেটের নামটাও যেন জুড়ে দেয়া হয়।

মুজিব তখন ক্লাশ টেনের ছাত্র। একদিন টীমের বল খোয়া খেল। সবাই খোঁজাখুঁজি করছে।

ক্যাপ্টেন নির্বাক। নির্দ্বিধায় বলছে, “আর কেউ নেয় নাই, বল মজিব চুরি করছে।“

মজিব খেপে অস্থির! হাক-ঢাক করে বলল, “আ্যঁ! এত বড় স্পর্ধা, বল আমি চুরি করছি? তুই আমার বিরুদ্ধে বল চুরির অপবাদ দিচ্ছিস?”

প্রিন্সিপ্যাল স্যার আসলেন। মজিব আগ বাড়িয়েই বলতে থাকল, “স্যার, আমার বিরুদ্ধে ও বল চুরির অভিযোগ দিচ্ছে, ওর এত্ত বড় সাহস?”

ঘটনার বর্ণনাকারী মোয়াজ্জেম সাহেব বলেন, মজিব চেঁচামেঁচি করে একাধারে বলে যাচ্ছে, “ওর এত্ত বড় সাহস আমাকে চোর বলে” আর আমাদের ক্যাপ্টেনও ধীর-স্থিরভাবে প্রতি উত্তরে বলেই যাচ্ছে, “স্যার বল ওই-ই চুরি করছে।“

প্রিন্সিপ্যাল স্যার কিংকর্তব্যবিমুঢ! তিনি আমাদের সবার উদ্দেশ্যে বললেন, “যেই বল নিয়েছো, ফিরিয়ে দাও। নইলে পরে বল যার কাছে পাওয়া যাবে তাকে আমি রাস্টিকেশন করব।“ রাস্টিকেশন (Rustication) হল ব্রিটিশ ইংলিশ। স্কুল থেকে বের করে দেয়ার সেই সময়ের টার্ম এটা। বাঙালী ছাত্ররা বিদ্রুপ করে এর আবার নামকরণ করেছিলেন, রাজটিকেট!

প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে উদ্দেশ্য করে মজিব বলছে, “স্যার, বল যদি আমার কাছে না পাওয়া যায় তাহলে ওকে কিন্তু রাস্টিকেশন করতে হবে।“ আর ক্যাপ্টেন একইভাবে বলছে, “স্যার, বল ওই ই নিয়েছে, শুধু তাই না, বল ও যে কোথায় রাখছে সেটাও আমি বলে দিতে পারি। ওর রুমের চৌকির নীচে টীনের বাক্সের ভিতর!”

মোয়াজ্জেম সাহেব বলেন, আমরা সবাই থ’ বনে গেলাম! ওদিকে মজিব অগ্নিশর্মা, চোখের লাটিম এদিক ওদিক ঘুরায়ে বলতে লাগল, “এত্ত বড় সাহস! স্যার, স্যার, ও আমাকে চোর বলছে। ওকে কিন্তু রাস্টিকশন করতে হবে। আমি আপনাকে আমার রুমের ভিতর নিয়ে যাব। বল যদি না পাওয়া যায় ওকে কিন্তু স্কুল থেকে বের করে দিতে হবে।“

ক্যাপ্টেন নাছোড়বান্দা। ওর ওই একই কথা। “স্যার, আমাকে রাস্টিকেশন করেন আর যাই করেন, বল ওর বাক্সের ভিতরেই আছে।“

এদিকে প্রিন্সিপ্যাল স্যার চান না ক্যাপ্টেনকে বহিষ্কার করতে। মুজিবের গগনবিদারী বাগাড়াম্বড়ে প্রিন্সিপ্যাল ধরেই নিয়েছেন বল ওর কাছে নাই। তাই বললেন, “ঠিক আছে বলের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি, তোমরা এসব বাদ দাও।“

কিন্তু ক্যাপ্টেন আর মুজিব দু’জনই নাছোড়বান্দা। ক্যাপ্টেন বলছে, বল ওর শোয়ার চৌকীর নীচে টীনের বাক্সের ভিতর, আর মুজিব বলছে, বল আমার কাছে নাই, স্যার ওকে কিন্তু রাস্টিকেশন করতেই হবে।

স্যার উপায়ান্তর না দেখে টীম নিয়ে রওনা দিলেন মুজিবের রুমের দিকে। মুজিব সামনে। বলে যাচ্ছে, আমাকে ও চোর বলে, আ্যঁ, এত্ত বড় সাহস। আমার কাছে কিন্তু বল নাই!

মোয়াজ্জেম সাহেব বলেন, আমরা ওর ঘরে গেলাম। খাটের নীচ থেকে মুজিবই টীনের বাক্সটা বের করে আনল। স্যারসহ আমরা সবাই চারদিকে দাঁড়িয়ে আছি। মুজিব বাক্স খোলার আগে আবারো একই কথা হম্বিতম্বি করে বলল, “আমার কাছে কিন্তু বল নাই। বল না পাওয়া গেলে তোকে কিন্তু রাস্টিকেশন করা হবে। তুই এখনো বোঝ!” কাজ হল না, ক্যাপ্টেন বলতে থাকল, “বাক্স খোল, বল ওই বাক্সের ভিতরেই তুই রাখছিস।“

মুজিব স্বদম্ভে বাক্স খুলল। বাক্স খোলামাত্রই সবার চোখ ছানাবড়া। হ্যাঁ, বল মজিব ওখানে রেখেই শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত জোরের সাথে অস্বীকার করে আসছিল। মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করা ওরা ছোটবেলার স্বভাব। মোয়াজ্জেম সাহেব কা’বা শরীফকে সামনে নিয়ে শেষে আক্ষেপ করে বললেন, এই লোকটাকেই আজ তোমরা জাতির পিতা বানিয়েছো। দেখবা দেশটা কোথায় যায়!”

বিষয়: রাজনীতি

১৬৮১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

378170
০১ অক্টোবর ২০১৬ রাত ১০:১৪
আকবার১ লিখেছেন :
378188
০২ অক্টোবর ২০১৬ সকাল ১১:৪৬
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : হাহাহা। কোলকাতার ইসলামিয়া কলেজ এ থাকাকালীন কিছু ঘটনাও শুনেছিলাম। সংগত কারণে এখন বলা যাবে না।
378194
০২ অক্টোবর ২০১৬ দুপুর ০৩:২৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কত বড় রাজনিতিবিদ এবার বুঝলেন!!!
378217
০৩ অক্টোবর ২০১৬ দুপুর ১২:৪৯
হতভাগা লিখেছেন : ৯১/৯২ তে বঙ্গবন্ধু মারা গিয়েছেন ১৬/১৭ বছর পার হয় ।

কৈশর / যৌবন কালে মানুষ যেরকম থাকে পরবর্তীতে সেরকম নাও থাকতে পারে । কেউ কেউ বিখ্যাত হয়ে যায় । সাথে যারা থাকে তাদেরকে ছাড়িয়ে অনেক উপরে উঠে যায় ।

পেছনে পড়ে থাকা বন্ধুরা তখন এক একজন
স্ট্রাগলার । হিংসেয় জ্বলে যায় বন্ধুটির এরকম আকাশচুম্বী সফলতায় ।

কোন আসরে সুযোগ পেলে সেই বিখ্যাত বন্ধুটির ছোটকালের ঘটনা রসিয়ে রসিয়ে বলে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটায় ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File