আওয়ামী লীগে যুদ্ধাপরাধী -১ --আ্যাডভোকেট নয়ন খান

লিখেছেন লিখেছেন নয়ন খান ১১ জুন, ২০১৬, ১০:১৫:৩৭ রাত





২০১০-২০১১ সালে ধারাবাহিকভাবে এই শিরোনামে আমার লেখা বিভিন্ন পত্রিকা, সোনার বাংলাদেশ ও সামওয়্যারইন ব্লগে প্রকাশিত হয়। পাঠকদের অনুরোধে আবারো দেয়া হল। দলদাস মিডিয়ার হুক্কাহুয়ায় আওয়ামী কুকীর্তি তরুন প্রজন্ম ভুলতে বসেছে। তাদের জানা দরকার '৭১-এও কি চরিত্রের ছিল এই জাহেল লীগ।

..................................

আওয়ামী বাম বুদ্ধিজীবিরা একাত্তরের ‘স্বাধীনতার ইতিহাস’কে খুব সচুরতার সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বহুল প্রচলিত টার্ম- ‘ইহুদী গণহত্যা’ - ‘হলোকাস্ট’র সাথে এক করে ফেলছে। এই ‘হলোকাস্ট’ বর্তমানে এমনই একটা শব্দযা নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করলেই তার বারোটা বাজিয়ে দেয়া হয়। সারা বিশ্বের মিডিয়া একযোগে ইরানী নেতা আহমাদিনেজাদকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিল ‘হলোকাস্ট ডিনাইল’ এর অভিযোগ এনে। তিনি দুই বছর আগে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ও ছাত্রদের লক্ষ্য করে এই ব্যাপারে পরিষ্কার করে বলেছিলেন, “অস্বীকার নয়, আমি বলেছি এ নিয়ে রিসার্চ হোক। কেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই শব্দটা নিয়ে রিসার্চের অনুমোদন নাই, কি করে সভ্য জগত হলোকাস্টের ইতিহাস নিয়ে ছাত্রদের চর্চা করতে নিষেধ করে দিল?”

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস এতদিনে ঠিক ওই পর্যায়ে নিয়ে আসছে ইহুদী ঘরানার আওয়ামী বুদ্ধিজীবিরা। তারা যা বলবে তার বাইরে কোন কিছুই বলা যাবেনা। আওয়ামী ভন্ডামী উন্মোচনের যেকোন গবেষণাকে তারা হলোকাস্টের স্টাইলে ‘স্বাধীনতা বিরোধী’ বলে আখ্যায়িত করে। সত্যি বলতে কি এটিই তাদের একমাত্র ‘ফোর্স’ যা দিয়ে তাদের কর্মীবাহিনীকে সর্বদাই উজ্জীবিত করে রাখে। তারা মনে করে বাংলাদেশটা তাদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে। অন্যরা হবে তাদের দ্বারা চালিত, ঠিক যেমন আমেরিকানরা মনে করে তারাই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতি!

মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই দলের নেতাদের চরিত্র কেমন ‘ফুলের মতন পবিত্র’ তা জানতে হলে আজকেই তাদের নিয়ে স্টাডি করুন। আপনার আশপাশেই নজর দিলেই তাদের সম্মন্ধে একটা ধারণা পেয়ে যাবেন। ২০১৬ এ এসে আওয়ামী লীগ যেমন ‘ধর্ষন লীগ’, টেন্ডার লীগ’, ‘বাজিকর’, আর ‘চাপাতি লীগ’ বলে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে, ‘৭১ এবং তার আগেও তাদের পরিচিতি এই রকমই ছিল অথবা তার চেয়ে বেশীই ছিল। শেখ মুজিব ছাত্রজীবনে টেন্ডার ছিনতাই করেছেন। তাই দেখে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ধমকও দিয়েছেন। পার্লামেন্টে নিজ হাতে স্পীকারকে চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছেন, সিরাজ সিকদারকে হত্যা করে মুজিব বলেছেন, “কোথায় আজ সিরাজ সিকদার”, চল্লিশ হাজার জাসদ কর্মীকে খুন করে বলেছেন “লাল ঘোড়া দাবড়িয়ে দিমু”। এরকম অসংখ্য কুকীর্তির উদাহরণ একমাত্র এই দলেই রয়েছে। অথচ এগুলো নিয়ে জাতীয়তাবাদী বা ইসলামিস্ট কেউই বাংলাদেশীদের শিক্ষিত করতে পারেনি। তারমানে মিডিয়া বানাতে পারেনি বা প্রচারণা চালানোর কৌশলও তাদের নেই।

সবচেয়ে নির্মম সত্য হলো আওয়ামী বিরোধীরা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলেও আওয়ামী জাহেলিয়াতের সর্বসাকুল্য খতিয়ান তৈরি করতে মনযোগী হয়নি। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে তাদের ভন্ডামী নিয়ে কোন রিসার্চও তারা সরকারীভাবে নথিভুক্ত করেনি। মেজর জলিল, বদরুদ্দীন উমর, আহমদ সফাদের একাডেমিক গবেষনাগুলোকে তারা প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়নি যার ফল এখন তারা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের বিস্তারিত তালিকা করলেই বোঝা যেত কতজন আওয়ামী লীগের লোক ছিল। এমনকি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাও করা হয়নি। আওয়ামী নেতারা যে জান বাঁচাতে পগাড় পার হয়ে ভারতে ছিল সে কথাগুলো মানুষজন ছেচল্লিশ বছর পরে এসে ভুলতে বসেছে। আজকের সবচেয়ে মুখরা মন্ত্রী ও নেতারা যে তখনকার পরিচিত রাজাকার বা পাকিদের পদলেহী ছিল তা এখন কে বিশ্বাস করবে?

মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের ৯৯ ভাগ চেয়ারম্যান ছিল আওয়ামী লীগের লোক। পুলিশের এসপি ও চেয়ারম্যানরা মিলে রাজাকার, শান্তিবাহিনী নিয়োগ দিয়েছে। তারা ছিল পাক আনসার এবং পুলিশ বাহিনীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত একটা বাহিনী। এরা আর্মিদের দেখিয়ে দিত কারা মুক্তিযোদ্ধা। সে অনুযায়ীই বর্বর পাক সেনারা বাংলাদেশীদের উপর অত্যাচার করত। পাকিস্তান আর্মি অ্যাক্টে আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনীকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী বাহিনী হিসেবে ঘোষণা করা আছে।

সেসময় ইসলামপন্থী দলগুলোর রাজনৈতিক মাঠে অবস্থান ছিল ‘ছাগলের তিন নম্বরবাচ্চা’র মত। আওয়ামী লীগের ধারে কাছেও ছিল না জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী, মুসলিম লীগ। সংগতকারনেই সংখ্যানুপাতে তাদের ভাগে খুব বেশি পড়েনি। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় দল ছিল মুসলিম লীগ। এরপর জামাত। সেই জামাতই বলছে, ‘৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে জামায়াতের ৫৫৬ জন রুকন আর মাত্র তিন হাজার কর্মী ছিল।’

১৯৭২ সালের দালাল আইনের অধীনে প্রায় ১ লাখ লোককে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে অভিযোগ আনা হয় ৩৭ হাজার ৪৭১ জনের বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে ৩৪ হাজার ৬২৩ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে কোনো মামলা দায়ের করাই সম্ভব হয়নি। ২ হাজার ৮৪৮ জনকে বিচারের জন্য সোপর্দ করা হয়। বিচারে ৭৫২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং ২ হাজার ৯৬ জন বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। যে ৭৫২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাদের মধ্যে ইসলামপন্থী নেতারা কেউ ছিলেন না। এদের ফাঁসাতে না পেরে ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর শেখ মুজিবুর রহমান শেষমেষ সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করতে বাধ্য হন।

আসুন, এবার আমরা দেখি আওয়ামী লীগের প্রথম সারিতে কারা যুদ্ধাপরাধী।

পুতুলের দাদা শশুর নুরু মিয়া:

প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই মন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের পিতা নুরু মিয়া একাত্তরে শান্তি কমিটির স্থানীয় চেয়ারম্যান ছিলেন। ফরিদপুর জেলায় শান্তি কমিটির সদস্যদের তালিকায় এখন চারটি মাত্র নাম বিদ্যমান- ডা: কাজী ইমদাদুল হক, আজিরুদ্দীন খান, আনিস কাজী ও আদিল উদ্দীন হাওলাদার। বেয়াইর পিতার নামটি মৃত রাজাকারের নাম থেকেও উধাও হয়ে গেছে।

ওদিকে প্রধানমন্ত্রি হাসিনা বলেছেন, পুতুলের দাদাশ্বশুর রাজাকার হলেও যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না। ফরিদপুর আ’লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যেতিনি আরো বলেছেন, দেশে কোনো রাজাকার নেই (আমারদেশ, ২২ এপ্রিল, ২০১০)

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কড়া ভাষায় বলেছেন, দেশে রাজাকার বলে কোনো শব্দ নেই। দেশে কোনো রাজাকার নেই। তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের দাদাশ্বশুর ফরিদপুর সদর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রয়াত খন্দকার নূরুল হোসেন নূরু মিয়া ফরিদপুরে রাজাকারদের তালিকার ১৪ নম্বর রাজাকার হলেও তিনি যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না বলে শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি ফরিদপুরের নেতাদের কাছে প্রশ্ন করেছেন, তার ভাই শেখ সেলিম ফরিদপুরের রাজাকার মুসা বিন শমসের ওরফে নূইলা মুসার সঙ্গে ছেলে বিয়ে দিয়ে আত্মীয়তা করেছেন—এটা কেন তারা কখনও বলেন না; অথচ শেখ হাসিনার মেয়ের দাদাশ্বশুর নূরু মিয়ার নামে সবাই অভিযোগ করেন যে, তিনি রাজাকার ছিলেন। নূরু মিয়া পিস কমিটির সদস্য থাকলেও যুদ্ধের সময় তিনি কোনো অপরাধমূলক কাজকর্ম করেননি বলে শেখ হাসিনা গর্বের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের মনে করিয়ে দেন।

এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুল হক ভোলা মাস্টার প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, মন্ত্রীর বাবা নূরু মিয়া একজন রাজাকার ছিলেন। ফরিদপুরের রাজাকারদের তালিকায় তার অবস্থান ১৪ নম্বরে। ছেলে মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে রাজাকার বাবা নূরু মিয়ার নামে ফরিদপুরের বিভিন্ন রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। রাজাকারের নামকরণ করা রাস্তা ভেঙে ফেলার জন্য ভোলা মাস্টার দাবি জানান। বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতা নূর মোঃ বাবুল বলেন, আমি আপনার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে রাজনীতি করেছি। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হয়েছি। সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। অথচ আজ ৭৭ বছর বয়সে আমাকে কুপিয়ে আহত করা হলো। আমার শরীর থেকে রক্ত ঝরানো হলো। এই সন্ত্রাসী হামলার জন্য তিনি তৎকালীন শ্রমমন্ত্রী ও তার ভাই বাবরকে দায়ী করেন। শ্রমমন্ত্রীর গ্রুপের সন্ত্রাসীদের হাতে আহত জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ আহ্বায়ক শওকত আলী জাহিদের ভাই আবদুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য তাদের পরিবার সারা জীবন যে ত্যাগ স্বীকার করেছে, তার প্রতিদান হিসেবে আজ তার ভাইকে একটি পা হারাতে হলো। প্রধানমন্ত্রী সবার বক্তব্য ধৈর্যসহকারে শোনেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে ফরিদপুর জেলা নেতাদের বিদায় করেন।

(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

২৬১৩৫ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

371741
১১ জুন ২০১৬ রাত ১১:৫৩
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : পুরানা কাসুন্দি আবার নতুন করে। রাজনীতির মাঠে হেরে এখন অন্যের তল্পি খুঁজে বেড়ানো।
১৩ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫১
308616
নয়ন খান লিখেছেন : সেটা আপনার ব্যাখ্যা। রাজনীতির প্লেয়াররাই নির্ধারন করবে কে হারছে বা কি জিতছে। কথা হল আপনার আমার কাজ কি? চেতনাদাস হয়ে যাওয়া না কি মিথ্যুকদের মুখোশ উন্মোচন করা?
371744
১২ জুন ২০১৬ রাত ১২:২৩
শেখের পোলা লিখেছেন : এ সব বলে র কি হবে? যতদিন তাদের হাতে শাসন ব্যবস্থার সকল ক্ষমতা আছে ততদিন তারা হল গঙ্গাজল। এর অবসান একদিন হবেই। তখন এরা দেশে থাকলে হয়। ধন্যবাদ । চলুক।
১৩ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫১
308617
নয়ন খান লিখেছেন : এর অবসান হবেই ইনশাল্লাহ!
371751
১২ জুন ২০১৬ রাত ০২:২৩
আকবার১ লিখেছেন : এটা সব জায়গায় প্রকাশ করা হোক। ধন্যবাদ।
১৩ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫১
308618
নয়ন খান লিখেছেন : ধন্যবাদ
371752
১২ জুন ২০১৬ রাত ০২:২৫
ইরফান ভাই লিখেছেন : পিলাচ
১৩ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫২
308619
নয়ন খান লিখেছেন : Happy
371757
১২ জুন ২০১৬ সকাল ০৮:০১
হতভাগা লিখেছেন : এখন ব্যারিস্টাররাও রিমান্ড খায় , হোক সে মহিলা কিংবা পুরুষ । সো , খুব খেয়াল কইরা - ম্যান ।
১৩ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫২
308620
নয়ন খান লিখেছেন : হতভাগা হয়ে গেলাম তো!
371804
১২ জুন ২০১৬ রাত ০৯:১৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সত্য এখন চেতনা দাস!!
১৩ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫২
308621
নয়ন খান লিখেছেন : সহমত

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File