গল্প_প্রবাসী_বড়_ছেলেঃ২১

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০১:১২:৫৩ দুপুর

গল্প_প্রবাসী_বড়_ছেলেঃ২১

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহেই দুলাল এক মাসের ছুটিতে দেশে গেছে, আলালেরও তাই কথা ছিল, কিন্তু তা আর হল না। জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে গেলে বিগত বছরের ছুটির বেতনটাও পাওয়া যাবে। কে জানে দেশে গেলে কোথায় কত টাকা খরচ হয় তাই যাওয়ার সময় ২০/২৫ হাজার টাকা বেশী নিয়ে যেতে পারলে ক্ষতি কি? দুলালতো এক মাস থাকবে তাই জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে গেলেও দুই ভাই মিলে কমছে কম ১৫দিন একত্রে কাটানো যাবে।

আলালের ছুটি পাশ হয়েছে ২/১ দিনের মধ্যেই টিকেট হবে। অফিসে বলে এসেছে যত দ্রুত টিকেট পাওয়া যায় ততই ভালো। গত বারের ছুটিতে যাওয়ার সময় বাড়ির কারো জন্য তেমন কিছু নিতে পারেনি। এবারো হয়ত তেমন কিছু নিতে পারবেনা তাই বলে বাবা, বোন-বোনায়া, ভাগ্নে-ভাগ্নী আর বৌ বাচ্চাদের জন্য কিছু নিবেনা তাতো হয়না?

বাবার জন্য কম্বল, পাঞ্জাবীর কাপড়, বোনদের জন্য কম্বল, বোনাইদের জন্য শার্ট-প্যান্ট পিচ, বোনদের জন্য শাড়ি, ভাগ্নে, ভাগ্নীদের জন্য শীতের কাপড়, ঘড়ি চুড়ি, দুলালের ছেলের জন্য স্যুট আর নিজের বৌ, দুলালের বৌ পরি আর মেয়ের জন্য এক সেট করে গহনা। সব মিলিয়ে আলাল লাখ টাকার বাজার করে ফেলেছে। এর মধ্যে কিছু টাকা নিজের আর কিছু করেছে ধার দেনা।

সকালে টিকিটের খবর নিতে অফিস গেলে আলালকে জানানো হল দুই দিন পরে তার ফ্লাইট, ইতিমধ্যেই টিকেট বুক হয়ে গেছে। বিকেলে টিকেট হাতে পাওয়া যাবে। খুশিতে আলালের পা আর মাটিতে পড়ছেনা। অনেকদিন পরে দেশে যাচ্ছে, জন্মের প্রায় দুই বছর পর মেয়েকে দেখতে পাবে, প্রায় ৭/৮ বছর পর ছোট্ট ভাই দুলালের সাথে দেখা হবে। দুলালের ছেলে ও ভাগ্নে-ভাগ্নীদের সাথেও খুব মাজা হবে।

দুপরের পর আলাল আবারও অফিসে গেল, টিকেট এসেছেকিনা জানতে। না টিকেট এখনও আসেনি তবে চিন্তার কিছুই নাই টিকেট আসবে। অফিস সেক্রেটারী ড্রয়ার থেকে একটা চিঠি বের করে আলালের হাতে দিল। চিঠিটা ২দিন আগেই এসেছে কিন্তু সেক্রেটারী সাহেব ভুলে গিয়েছিল বলে যথা সময় চিঠিটা আলালের হাতে দিতে পারেনি বলে দুঃখ প্রকাশ করল। চিঠি হাতে নিয়ে আলালের কপালে চিন্তার ভাঁজ পরল। কিন্তু পরক্ষনেই ভাবল দুলাল হয়ত তারাতারি বাড়িতে যাওয়ার তাড়া দিয়ে চিঠি লিখেছে। চিঠি খুলে যা পড়ল তার জন্য আলাল মোটেও প্রস্তুত ছিলনা। সংবাদটা যদিও অপ্রত্যাসিত ছিলনা কিন্তু তারপরেও এমন সংবাদ এই মূহুর্তে না আসলেই ভালো হত।

আলালদের বাড়ির যে অংশটুকু তার চাচার এবং ফুফুদের সে অংশ টুকু বিক্রি হবে। দাম ২ লাখ টাকা। জমিটা রাখতে পারলে পুর বাড়িটাই আলালদের হবে। তখন তিন ভাইর ঘরের জায়গার পরে সুন্দর করে একটা পুকুরও কাটা যাবে। কোন ভাবেই জমিটা হাত ছাড়া করা ঠিক হবেনা। বাবার পরামর্শে দুলালের কাছে যে টাকা ছিল তা দিয়ে ৫০ হাজার টাকা বায়নাও দিয়েছে। বাকী এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা এ মাসের মধ্যেই দিয়ে জমির রেজিষ্ট্রেশান নিতে হবে। দুলালের হাতে আর কোন টাকা নেই তাই যা করার তা যেন আলালই করে।

চিঠি পড়ে আলাল মাথায় হাত দিয়ে বসে পরল। সে কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। অগত্যা অফিসে গিয়ে ছুটি বাতিল করতে হল। অবশ্য ছুটি বাতিলের জন্য ৫০০০ টাকা জরিমানা গুনতে হল। অতি কষ্টে যে ঋণ শোধ করে ছুটিতে দেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল তা বরবাদ হয়ে গেল। জমিটা রাখা আলালেরও কাম্য ছিল কিন্তু এমন একটা মুহুর্তে রাখতে হচ্ছে যার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলনা।

দেড় লাখ টাকা জোগাড় করতে আলালকে অফিস থেকে লোন, বন্ধুবান্ধদের কাছ থেকে ধার এমনকি ক্রয়কৃত গহনা গুলোও জরিমানা দিয়ে ফেরত দিতে হল। রেজিস্ট্রেশান সহ মোট খরচ হল দুই লক্ষ তিরশ হাজার টাকা যার মধ্যে দুলাল দিয়েছে ৫০ হাজার আর আলাল পাঠিয়েছে এক লাখ পঞ্চাশ হাজার। আলালের বাবা ৩০ হাজার টাকা ধার দেনা করে ছেলেদের মাতামতের ভিত্তিতে নিজের নামে রেজিস্ট্রেশান করেছে। রেজিস্ট্রেশানের ত্রিশ হাজার টাকাও পরে আলালকেই পরিশোধ করতে হয়েছে।

আরো একটা বছর পার করে আলাল লাখ খানেক নগদ টাকা আর সকলের জন্য আগের মত বাজার সদায় করে গহনা পাতি নিয়ে তিন বছরের মাথায় দেশে এসেছে। আলাকে পেয়ে যার পরনায় সবাই খুশি। ইতি মধ্যে দুলালের আরো একটা ছেলে হয়েছে। দুলালের ছেলের বয়স প্রায় দুই মাস কিন্তু এখনও আক্বীকা দেয়া হয়নি।

ধর্মীয় দিকটার প্রতি আলাল যতটা গুরুত্ব দেয় দুলাল অতটা দেয়না, এমনকি ঠিকমত নামাযও পড়েনা। আলাল অবশ্য বার বার তাগাদা দেয় নিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়না। ছোট ছেলের আকিকার ব্যাপারে পরি একদিন আক্ষেপ করলে আলাল দুইটি খাসী কিনে প্রায় ২০/২৫ হাজার টাকা খরচ করে ছোট ভাতিজার আকিকা করে ফেলে।

আলালের দুই মাসের ছুটি প্রায় শেষের দিকে তাই ঢাকায় এসেছে ফিরতি ফ্লাইট ওকে করার জন্য। ঢাকায় আসলে আলাল, জয়নালের বাসায়ই ওঠে। এবারও তাই করল।

বিষয়: সাহিত্য

৬৯৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384826
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ রাত ০৮:৩৯
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
কঠিন বাস্তবতা! আর কিছু লিখতে পারছিনা। পরের পর্বগুলোর অপেক্ষায়..............।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ দুপুর ০৩:১৪
317390
আবু জারীর লিখেছেন : ওয়ালাইকুম'আসসালাম।
ধন্যবাদ আপু।
384828
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সকাল ১১:৫২
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : প্রবাসের কঠিন বাস্তবতা ফুটেছে লেখনিতে।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ দুপুর ০৩:১৪
317391
আবু জারীর লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাই।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File