সন্তান যখন গুমে

লিখেছেন লিখেছেন আরাফাত আমিন ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ০৭:৪৩:১২ সন্ধ্যা

আরাফাত,শীতের জামাকাপড় দাও।যা আছে দিয়া দাও।

( দরজার বাহিরের দিকে দাঁড়িয়ে জোরেশোরে বলছেন মাসুম ভাই।)

-ভাই,আমারি তো নাই! আপনার বস্তা থেকে আমাকে একটা দিয়া যান না! Winking হাসি দিয়ে বললাম আমি।

নারে ভাই,এইগুলা মানুষের বাড়িবাড়ি গিয়া তুলছি।গরীব মানুষগোরে দিমু।তোমগো মেসে পুরান জামাকাপড় যা আছে দিয়া দাও।দাও না তাড়াতাড়ি।রয় কই? অই রয় শীতের জামা যা আছে দিয়া দেও।(মাসুম ভাই আমার বন্ধু রয়কে ডাকছেন,তাড়াহুড়ো করছেন,সাথে ঘামছেন তিনি)

মাসুম ভাই।এলাকার বড় ভাই আমার।নাখালপাড়ার যে বাসাটায় আমরা মেস করে থাকি,তার পাশের বাসাটা উনাদের।নিজেদের বাড়ি।স্থানীয় হলেও মানুষ একজন অমায়িক তিনি।জোর করে ধরে নিয়ে চা খাওয়ায় দেয়া টাইপ অমায়িক!

আমরা তখন বেসরকারি ভার্সিটির সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি।মাসুম ভাই থার্ড ইয়ারে পড়েন সরকারি কলেজে।প্রথম প্রথম পথেঘাটে দেখা হলে সালাম বিনিময় আর হালকা কথা হত।এভাবে ঘনিষ্ঠতা বেড়ে উঠে।আস্তে আস্তে আমাদের মেসে আসতে শুরু করলেন।আড্ডাবাজি,খেলা দেখা সব হত একসাথে।

শীত এলেই প্রতিবছর আমাদের মেসে আসতেন মাসুম ভাই শীতবস্ত্র নেওয়ার জন্য।জোর করে আমাদের গুলা নিয়া গরীবদের দিয়া দিতেন মাসুম ভাই।শেষবার এসেছিলেন ২০১৩ র নভেম্বরে।সেবার নাখালপাড়ার মেসে এসেই চিতকার করে বললেন,এই আরাফাত,ভাই তুমি তোমার ঐ জাম্পারটা দিয়া দাও!

ভাই,কি কন? আমি কি গায়ে দিমু!

-আরে তোমগো মেসে কি শীত লাগে নাকি।তোমরা তো মিয়া এখনো ফ্যান চালায় ঘুমাও! দেওনা ভাই।

দেশজুরে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের উত্তাপ।উনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না।ছাত্রদলের কমিটির নেতাদের সাথে ছিল ওনার ভাল সম্পর্ক। ২২ শে ডিসেম্বর ২০১৩ থেকে আরো তিনজন সহপাঠীসহ নিখোঁজ আমাদের মাসুম ভাই।ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায়।ওনার পরিবার র‍্যাব,পুলিশ থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় পর্যন্ত ধরনা দিয়েছেন।কেউ কোন সাড়া দেয় নি।

এখনো নভেম্বরে দেশে শীত আসে।কেউ আর শীতবস্ত্র নিতে আসেনা।মাসুম ভাইরা মানুষকে ভালবাসে তাই এদেশে তাদের ঠাই হয়না,কবর মেলেনা।তাদের মায়ের চোখের জল কোনদিন ই শেষ হয়না।

অভাগা মা! এমন সন্তান জন্মদিয়ে অভাগাই তো হবেন! তাই না?

বিষয়: বিবিধ

৮৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File