পয়গাম

লিখেছেন লিখেছেন আরাফাত আমিন ৩০ মার্চ, ২০১৭, ০৬:১০:২০ সন্ধ্যা

আজ হঠাত করেই নানুবাড়ি যাচ্ছি।কারণ এখনো পরিস্কার না।

দু'পাশে ধানের খেত।তার মাঝের রাস্তা ধরে হাটছি ফরাজিকান্দি মাদ্রাসার দিকে।মাদ্রাসার পেছনে আমার নানুবাড়ি।

সময় আনুমানিক রাত আটটা।অজপাড়াগা বলে হয়ত এপথে সময়টা মধ্যরাতের নিস্তব্ধতা।সাগর ভাইয়া সামনে হাটছেন আমি তার পেছনে। বৈশাখ মাসের রাতের আকাশ।আকাশে মেঘের ঘনঘন ঝিলকানি। যেকোন সময় কালবৈশাখি শুরু হয়ে যাবে।বিদ্যুৎ চমকানোকে এখানকার মানুষ ঝিলকানি বলে!

খানিক বিরতি দিয়ে আসা দমকা হাওয়া পথের ধুলি নাকে মুখে নিয়ে আসে।তাই কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে সাগর ভাইয়ার সাথে।এসময় কথা বলার চেষ্টা না করে নাকে-মুখে হাত দিয়ে রাখাই উচিত হবে।

কেন যাচ্ছি কারণটা ভাইয়া এখনো বলেন নি।সাগর ভাইয়া দুপুর থেকে শুধু শুনেই যাচ্ছেন।আমি এখানে একমাত্র বক্তা।রাতের পথে দুজন হনহন করে হেটে চলেছি।আমি দুপুরে জিজ্ঞেস করেছিলাম আমার মামাত ভাইয়ের বিয়ে নাকি!তিনি হ্যা না কিছু বলেন নি।যা সন্দেহ উদ্রেককারী।

সাগর ভাই আমার আত্মীয় না।মামাতো ভাইয়ের বন্ধু।ওনার আরেকটা পরিচয় উনি আমার প্রতিবেশি।জাতীয় ভার্সিটিতে ডিগ্রী পড়েন।আজ দুপুরে জুম্মার সালাত পড়তে গিয়ে ওনার সাথে হঠাত স্কুল মসজিদে দেখা হল।বহুদিন বাদে দেখা।একপর্যায় জানালেন আমাকে বাড়ি নিতে এসেছেন।সেদিক বিবেচনায় প্রথমে বাড়ি যাবার কথা থাকলেও এখন আমরা নানুবাড়ির দিকে হাটছি।আমাদের বাড়ির কাছাকাছি আসার পর যাত্রাপথ ঘুরে গিয়েছে।কেন ঘুরেছে তা বুঝা যাচ্ছেনা।

বাড়ির কাছাকাছি এসে ভাইয়া বললেন, বাসায় যাবেন না।আমার নানু বাড়ির দিকে যাবেন।এবার সন্দেহ ঘনীভূত হল।বিয়ে তাহলে সেখানেই হচ্ছে!আমি আম্মুকে সাথে নেওয়ার আগ্রহ দেখালাম।ভাইয়া জানালেন তারা সবাই সকালেই চলে গিয়েছে।

.

আমার এখন ঈদ ঈদ লাগছে।

আমি জিলা স্কুলে ক্লাস নাইনে পড়ি।হোস্টেলে থাকি।আমার নিজ জেলা শহর ছেড়ে পাশের জেলা কুমিল্লায় পড়তে এসেছি বাবার ইচ্ছার কারণে।যারা বাড়ি ছেড়ে হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করে তাদের কাছে ঈদের আনন্দ বছরে কয়েকবার আসে।বাড়ির পরিচিত কারো সাথে হঠাত দেখা হয়ে যাওয়া মানে একটা ঈদ।ছোটখাট ঈদ।

দুপুরে অযুখানায় সাগর ভাইয়াকে দেখে চমকে উঠেছিলাম।নিজ জেলা শহরের বাইরে একটা অচেনা অজানা পরিবেশে পরিচিত কাউকে পেয়ে গেলে মানুষ আপন ভাবে।একটা মনের টান অনুভব করা যায়।

জুম্মার সালাত শুরু হতে তখনো খানিকটা সময় বাকি।সালাত শেষে দুজন একসাথে বেরুলাম।মনে মনে ভাবছি আজকে দুপুরে ভাল খানাপিনা হবে।হোস্টেলে রোজ একই খাবার বিরক্তি আনে।বাড়ি থেকে আসা অতিথি মানে আজ ভাল কোন রেস্টুরেন্টে খাওয়া যাবে।ভাবতে অন্যরকম এক আনন্দ লাগে।

হোটেল ডায়না কুমিল্লা শহরে নামী হোটেল।খাবার শেষ করে সাগর ভাই জানালেন এখনি বাড়ি যেতে হবে।আমি তখন ঈদের চাঁদ দেখলাম।দিনেদুপুরে ঈদের চাঁদ!

বাড়ি যাওয়া মানে আরেকটা ঈদ।তার উপর যখন স্কুলে চলছে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা।পরদিন উচ্চতর গণিত! প্রস্তুতি ভয়াবহ রকমের খারাপ বলা চলে।বাড়ি যেতে পারলে পরীক্ষা দেয়া লাগবেনা -ঈদের খুশি তাই দ্বিগুন!আবার ভাবছি এখনি কেন? আগে হোস্টেলে যাব।জামাকাপড় নিব।তারপর বাড়ি যাব।মনে একটা সংশয় দানা বাধছিল।

না,এখনি যেতে হবে।এবং এই অবস্থায়।

আমি আগুড় হাসি দিয়ে বললাম, রতন ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে বুঝি? আজকেই বিয়ে? জবাবে সাগর ভাইয়া মুচকি হাসলেন।এ হাসির অর্থ উদ্ধার করা কঠিন।তবে সে হাসি আমাকে প্রশ্রয় দিল।

সংশয় এবার কৌতুহলে রুপ নিয়েছে।সুখবরীয় কৌতুহল হবার সম্ভাবনা বেশি।যদিও মুচকি হাসি পরবর্তী নিরবতা সেই কৌতুহলে খানিক সন্দেহের যোগান দিয়েছে।আমি বাড়ি যাচ্ছি এই খুশির চেয়ে সন্দেহ,সংশয় বড় আনন্দের না।বরং কৌতুহল মিশে বাড়ি যাওয়ার কারন এখন রোমাঞ্চকর।অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ।

রতন আমার মামাতো ভাই।আমি বাড়ি থেকে আসার সময় তার বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছিল।নিশ্চয় তা এতদিনে চূড়ান্ত রুপ পেতে যাচ্ছে।এটা ভেবেই আনন্দ পাচ্ছি।

সাগর ভাই আর আমি বাসে চাঁদপুর পৌছতে সন্ধ্যা নেমে এল।বাসে রতন ভাইয়ার বিয়ে নিয়ে অনেক মজা আর রসিকতা করলাম।প্রেমের বিয়ে বলে কথা! যদিও তার পছন্দের মেয়েকে আমরা কেউই সহ্য করতাম না।তারপরো কি আর করা! বিয়ে যখন হচ্ছেই এখন পছন্দ না করে উপায় কি?

ফরাজিকান্দি মাদ্রাসা পার হয়ে আমরা নানুবাড়ির কাছাকাছি পৌছে গেছি।বাতাসের বেগ কমে এসেছে।গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে।আকাশে বিদ্যুৎ চমকানো কমে এসেছে।অন্ধকার পথ তাই সাবধানে এগুতে হবে।সাগর ভাই এসময় আমার হাতটা ধরলেন।

গলা খাঁকারি দিয়ে পরিস্কার করে নিচ্ছেন।প্রথমবারের মত আমি বুঝতে পারছি তিনি কিছু বলতে যাচ্ছেন।এইপথে আমি আগেও গিয়েছি।কিন্তু আজ বড় অচেনা লাগছে।অন্ধকারে ঠাওর করতে পারছিনা।কয়েকবার পায়ের সাথে পা ধাক্কা খেল।

সাগর ভাই শক্ত হাতে আমাকে ধরে আছেন।বৃষ্টি বেড়ে চলেছে।হঠাত পথে দাঁড়িয়ে গেলেন।ধীর গলায় শান্তভাবে জিজ্ঞেস করলেন,তপু তুমি কি জান বৃষ্টিকে কখন ভাল লক্ষন হিসেবে ধরা হয়? আমি বললাম হ্যা।মরা বাড়িতে।ধারনা করা হয় মুর্দা নেককার ছিলেন-তাই প্রকৃতিও শোকে সামিল হয়েছে।

সাগর ভাই বললেন,তোমার নানাজান ক্বারী ছিলেন?

আমি বললাম -হ্যা।কিন্তু হঠাত এই প্রশ্ন কেন?

দেখো বৃষ্টি বেড়ে চলেছে। আর দাঁড়ানো যাবেনা।চল।

সাগর ভাই কথা শেষ করলেন না।আবার হাটতে শুরু করলাম।

বাড়ির প্রবেশপথে আতর-আগরবাতির ঘ্রাণ পেলাম।এককোনে থাকা বকুলতলা থেকে ঘ্রাণটা ভেসে আসছে।আগরবাতির এই ঘ্রানটা আমি চিনি।

...................

আরাফাত আমিন

টংগী,৩০/৩/১৭

বিষয়: সাহিত্য

১১১৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

382469
৩০ মার্চ ২০১৭ রাত ০৮:০৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
৩০ মার্চ ২০১৭ রাত ১১:৫৯
316096
আরাফাত আমিন লিখেছেন : ধন্যবাদ
382475
৩০ মার্চ ২০১৭ রাত ০৯:৩৯
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ!‍ অনেক অনেক ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
৩০ মার্চ ২০১৭ রাত ১১:৫৯
316097
আরাফাত আমিন লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আস সালাম।ধন্যবাদ আপনাকেও।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File