ফারাজ কারেজ আওয়ার্ড ও শেয়ালশা পীরের দরগা ...........................................................................

লিখেছেন লিখেছেন আরাফাত আমিন ১৩ অক্টোবর, ২০১৬, ১০:১০:০০ রাত



১.

নায়ক তার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গিয়েছে নামী রেস্টুরেন্টে।সবাই আড্ডা দিচ্ছে হঠাত সেখানে সন্ত্রাসীদের হামলা।সবাইকে জিম্মি করেছে সন্ত্রাসীরা।সবাইকে মেরে ফেলার পর নায়ককে দেখে সন্ত্রাসীদের মায়া হল! সন্ত্রাসীদের একজন এগিয়ে এসে নায়কের পরিচয় জানতে চাইল।জাতীয়তা শুনে সন্ত্রাসীরা বলল,'আপনি চলে যান,আপনাকে মারা হবেনা!আপনি নিরাপদ।'

নায়ক তখন তার দুই বন্ধুকে ছেড়ে যাবেনা সাফ জানিয়ে দিল!

অত:পর বন্ধুদের জন্য নায়কের আত্বাহুতি। রচিত হল এক অমর বন্ধু কাব্য!

অবাক হলেন কোন তামিল সিনেমার চিত্রনাট্য বলছি কিনা? জ্বী না,ইহা সত্য ঘটনা! যার নায়ক ফারাজ!প্রথম আলো-ডেইলি স্টার গ্রুপের মালিক লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ সম্পর্কে এই গল্প প্রকাশের পর এর চিত্রনাট্যকার আনিসুল হকের চেতনামিশ্রিত শেষ লাইন ছিল,'দেখো পৃথিবী অবাক হয়ে,ফারাজ-ই বাংলাদেশ!’

২.

পল্লীকবি জসিম উদ্দিনের বাংগালির হাসির গল্প গ্রন্থের 'শেয়ালশা পীরের দরগা' অনেকেই ছোটবেলায় পড়েছেন।সেই যে রহিম শেখ সুপারি মাথায় গঞ্জের হাটে যাচ্ছিলেন। পথে শেয়ালের পায়খানায় আছাড় খেয়ে পড়ে গিয়ে কিছু সুপারি যেগুলো পায়খানার উপর পড়েছিল সেগুলো বাদে বাকিগুলো তুলে নিয়ে গঞ্জে গেলেন।

কিছুক্ষণ পরে সেপথে যাচ্ছিল এক পানের বেপারি।বেচারা ভাবল নিশ্চয় কোন পীর দরবেশ আছেন এখানে যার জন্য এই সুপারি মানত করা! তাই তিনিও কিছু পান রেখে গেলেন।এভাবে একে একে সেপথে যাওয়া হলুদের বেপারি,মরিচের বেপারি,সব্জির বেপারি সবাই কিছু না কিছু দিয়ে গেল।দিনশেষে ফেরার পথে রহিম শেখ দেখেন একহাত পরিমাণ তরিতরকারি আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস।সব নিয়ে বাড়ি গেল রহিম শেখ।ঘটনা বুঝতে পেরে বউর লাল শাড়ি নিয়ে সেখানে চতুর্পাশে বেধে,নৌকার পাল নিয়ে লগির মাথায় উড়িয়ে দিলেন।হাতে তসবি আর মাথায় টুপি নিয়ে বসে হয়ে গেলেন শেয়ালশা পীরের দরগার খাদেম!

ভালই কামাই রোজগার।সুযোগের উৎকৃষ্ঠ ব্যবহার করে রহিম শেখের দিন ফিরল!

৩.

ফারাজের সাহসিকতায় তার নানাজান নতুন এক আওয়ার্ড নিয়ে হাজির হয়েছেন।নাম 'ফারাজ কারেজ এওয়ার্ড'।দশ হাজার ডলার ক্যাশ সহ সার্টিফিকেট দেওয়া হবে সাহসিকতায় এগিয়ে থাকা বাংগালিদের!খুবই ভাল উদ্যোগ!

কে ছিল এই ফারাজ?আসুন কিছু হিসেব মিলাই-

ক.সকল জিম্মিদের রাত ১২ টার দিকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে অভিযানকারী দলের সংবাদ সম্মেলনে। এদিকে ফারাজের কথিত বান্ধবী ভারতীয় তারাশি জৈন ভোর ৫টার দিকে তার বাবাকে ফোন করেছিল।তাহলে ধরে নেওয়া যায় এদের তিনজন ই সকাল পর্যন্ত বেচে ছিলেন!

খ.মি.ডিকে হোয়াং এর ধারন করা ভিডিও তে সকাল বেলা ফারাজ কে দেখা গেছে হাটাহাটি করতে,যেখানে আনিসুল হকের চিত্রনাট্যে রাত ১২ টায় ফারাজ খুন হন বলা হয়েছে!

গ.জংগি ছয়জন বলা হলেও লাশ মিলেছে পাচ জনের যার মধ্যে একজন ছিল হোটেল শেফ! তারমানে দাঁড়ায় চারজন চিহ্নিত।বাকি দুইজন কি তবে তাহমিদ আর ফারাজ?

ঘ.মজার ব্যাপার হল আনিসুল হকের চিত্রনাট্যে সন্ত্রাসীরা ফারাজকে মুক্ত করে দেওয়ার পিছনে লজিক হল সে বাংলাদেশী! আর সন্ত্রাসীদের টার্গেট কোন বাংলাদেশি ছিলেন না! ইশরাত আখন্দ কে কেন হত্যা করা হয়েছিল এর ব্যাখ্যা অবশ্য চিত্রনাট্যে নেই!

ঙ.সকল জিম্মি নিহত হন গলা কেটে বা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আর জংগিরা মারা যান গুলিবিদ্ধ হয়ে।ফারাজ কিভাবে মারা গিয়েছিলেন বলুন দেখি? :p

আরো আছে।ভিডিওটা বিশ্লেষন করলে আর আনিসুল দের চিত্রনাট্য পড়লেই ক্লিয়ার হয়ে যাবেন কে খাদেম হয়ে সুবিধা নিচ্ছে এওয়ার্ডের নাম করে!

বিষয়: বিবিধ

৯৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File