নাগরিককে রাষ্ট্রহীন করা রাষ্ট্রের কাজ নয়

লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ০৮ মে, ২০১৬, ০২:০৪:৩৫ দুপুর



মূলত গণমানুষের কল্যাণ চিন্তা থেকেই আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার ব্যুৎপত্তি। যখন রাষ্ট্র ছিল না তখন মানুষ অনেকটা স্বেচছাচারি ছিল। ফলে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতিতেই সবকিছুই চলতো। এক সময় মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশ ঘটলো। মানুষও হয়ে উঠলো অধিকার সচেতন। ফলে মানবজীবনের সকল কিছুই সংবিধিবদ্ধ করা হলো। সূচনা হলো আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার। যার যতটুকু অধিকার তা নিশ্চয়তা বিধানের দায়িত্ব অর্পিত হলো রাষ্ট্রের উপর। যার বিনিময়ে নাগরিকরা রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যশীল হয়ে উঠলো এবং রাষ্ট্রের অনুসঙ্গ মেটাতে নাগরিকের উপর করারোপ করা হলো। এই হলো রাষ্ট্রচিন্তার ক্রমধারা।

আগেই উল্øেখ করা হয়েছে যে, মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার ধারণা থেকেই রাষ্ট্রচিন্তার শুভসূচনা। গণমানুষের কল্যাণকামীতায় রাষ্ট্রের কাজ। আর আবহমান কাল থেকে রাষ্ট্র সে দায়িত্বই পালন করে আসছে। ক্ষেত্র বিশেষে রাষ্ট্রের যে ব্যর্থতা নেই একথা বলার সুযোগ নেই। যেহেতু রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব মানুষের হাতেই, তাই সফলতা-ব্যর্থতা থাকাটা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। তবে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রের আন্তরিকতায় মূল প্রতিপাদ্য। আর এজন্য কল্যাণরাষ্ট্রের ধারণাটাও অনস্বীকার্য।

মূলত কল্যাণ রাষ্ট্রের অনুপস্থিতিই গণদুর্ভোগের প্রধান কারণ। ক্ষমতাসীনরা যখন জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা না করে নিজেদের ক্ষমতা রক্ষায় তৎপর গয়ে পড়েন, তখনই গণদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। আর আমাদের দেশের ক্ষমতাসীনদের এমন নেতিবাচক চিন্তা থেকেই দেশে নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব আইনটি পাশ হলে বেশ কিছু সংখ্যায় মানুষ রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ। যা জাতিস্বত্ত্বায় নতুন সংকট তৈরি করবে। ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন পাওয়া এই বিলটির বেশকিছু বিষয় তুলে ধরা হয় অভিবাসন বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরু আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে। সেখানে বলা হয়, এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই বাবা-মায়ের কৃতকর্মের ফলাফল চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের পরবর্তী প্রজন্মের ওপর। তারা বলছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের এই আইনটির অপব্যবহার হতে পারে।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিলটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হয়। রামরুর পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবরার চৌধুরী বলেন, এর ফলে অনেকের নাগরিকত্ব হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যা অনেককে রাষ্ট্রবিহীন অবস্থায় ফেলতে পারে। এই প্রস্তাব অনুসারে রোহিঙ্গা নাগরিকের সাথে কোনও বাংলাদেশির বিয়ের পর জন্ম নেয়া সন্তান নাগরিকত্ব পাবে না।

অভিজ্ঞমহল বলছেন, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার ক্ষেত্রে এর অপব্যবহার করার সুযোগ আছে। মূলত এই আইনের দুর্বলতার জায়গাটি হচেছ অনেকের রাষ্ট্রবিহীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রধানত উর্দুভাষী জনগোষ্ঠী, দ্বিতীয়ত রোহিঙ্গা যারা আছেন তারা বাংলাদেশীদের বিয়ে করার পর তাদের সন্তানরা, তাদের রাষ্ট্রবিহীন হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে’।

খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়, যারা প্রবাসী নাগরিকের মর্যাদা পাবেন তারা বেশকিছু অধিকার হারাবেন। যেমন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে পারবেন না, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, স্থানীয় সরকারসহ কোনও পদে নির্বাচন করতে পারবেন না। কোনও রাজনৈতিক সংগঠন করতে পারবেন না । বংশসূত্রে নাগরিক, দ্বৈত নাগরিক, সম্মানসূচক নাগরিক, বৈবাহিক সূত্রে নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে তারাও এইসব সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।

সচেতন মহল এই আইনটিকে নিপীড়নমূলক ও উদ্দেশ্যমূলক বলে অভিহিত করেছেন। আইনটি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আলাপ আলোচনা করার উদ্যোগ নেই বলেও অভিযোগ করেন মানবাধিকার কর্মীরা।

আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, এইসব মানুষেরা রাষ্ট্রবিহীন হয়ে পড়লে কি করা হবে তার কোনও নির্দেশনা নেই প্রস্তাবে । বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে আলাপ-আলোচনা করে এই আইনটির ‘ত্রুটিপূর্ণ ধারাগুলো’ বাদ দেয়ার দাবি করেন আলোচকরা। তবে মন্ত্রীপরিষদ সচিব শফিউল আলম বিবিসিকে বলেছেন, এটি প্রাথমিক অনুমোদন দেয়া হয়েছে মাত্র এবং সব পক্ষের সাথে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে এতে ভবিষ্যতে পরিবর্তন আসতে পারে।

মূলত সরকার এই আইনের মাধ্যমে বিশেষ এক শ্রেণির মানুষকে রাষ্ট্রহীন করার পরিকল্পনা করছেন বলে মনে করছেন অভিজ্ঞমহল। কিন্তু মানুষকে অধিকার বঞ্চিত বা রাষ্ট্রহীন করা রাষ্ট্রের কাজ নয় বরং নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করায় রাষ্ট্রের কাজ। কেউ অপরাধ করলে দন্ডবিধির আওয়তায় শাস্তি বিধান করারও দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তাই কোন বিষয়েই রাষ্ট্রের সংকীর্ণতা কাম্য নয়।

বিষয়: বিবিধ

১১৩০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

368425
০৮ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:২৮
কুয়েত থেকে লিখেছেন : গণমানুষের কল্যাণকামীতায় রাষ্ট্রের কাজ। আর বহুকাল থেকেই রাষ্ট্র সে দায়িত্বই পালন করে আসছে। বর্তমান অবৈধ সরকার যা করছে তা কোন সৎ লোক চিন্তাও করতে পারেনা। ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে
368447
০৮ মে ২০১৬ রাত ০৯:১৫
সৈয়দ মাসুদ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File