সরকারের বিলম্বিত উপলদ্ধি ?

লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ২১ এপ্রিল, ২০১৬, ০৯:১১:০৯ রাত

সারাদেশে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে নানাবিধ অনিয়মসহ ভোট ডাকাতি ও ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি অর্ধশতাধিক প্রাণহানির ঘটনাও দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে রীতিমত কলঙ্কিত করেছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে বরাবরই দাবি করা হয়েছে যে, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, অতিউৎসাহী কিছু আওয়ামী লীগ নেতা দাবি করেছেন যে, বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে এমন অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে আর কখনো দেখা যায়নি। নির্বাচন কমিশনকেও সরকারের সাথে রীতিমত কোরাস গাইতে শোনা গেছে। নির্বাচনে অনিয়ম ও প্রাণহানীর ঘটনাকে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দাবি করা হয়েছে। বিষয়টি জনমনে নানাবিধ প্রশ্নের সৃষ্টি করলেও এর কোন সঠিক জবাব কারো কাছে পাওয়া যাচ্ছে না। এটা আমাদের দুর্ভাগ্যই বলতে হবে বৈকি।

প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ব্যাপক ভোট জালিয়াতি, সহিংসতা ও প্রাণহানির পর নির্বাচনের তৃতীয় পর্যায় শুরু হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের মাঠ পর্যায় থেকে যেসব খোঁজ-খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে অবস্থার তো কোন উন্নতি হয়ই নি বরং ক্ষেত্র বিশেষে মারাত্মক অবণতি হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। বিরোধী দলীয় প্রার্থীরা নির্বিঘেœ তাদের নির্বাচনী প্রচরণা চালাচ্ছে পারছেন না। ঘরোয়া গণসংযোগেও বাধা দানের খবরও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। এনমনি বিরোধী দলীয় প্রার্থীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং জোর-জবরদস্তি করে প্রার্থীতা প্রত্যাহারে বাধ্য করার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। মূলত কথিত নির্বাচনের নামে একদলীয় মহড়া চলছে বলেই মনে করছেন দেশের আত্মসচেতন মানুষ।

সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর যে অভিযোগ করা হচ্ছে সরকার বা নির্বাচন কমিশন তা কখনোই আমলে নেয়নি বরং সব অভিযোগ বিনা তদন্তে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। সকল অভিযোগকেই ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু হালে বোধহয় সে অবস্থার কিছুটা হলেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচেছ। চলমান নির্বাচনে অনিয়মের বিষয় নিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আত্মস্বীকৃতিও মিলেছে।

প্রাপ্ত তথ্যে জনা গেছে, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ‘বাড়াবাড়ি’ বন্ধ করতে বলেছে নির্বাচন কমিশন। ফলে নির্বাচন কমিশন প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়েছে যে, অতীত নির্বাচনগুলোতে সরকার পক্ষ বাড়াবাড়ি করেছে। প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল ২১ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে ‘অনিয়ম, ত্রুটি ও বিচ্যুতিমুক্ত’ ভোট করতে প্রধানমন্ত্রীর ‘নির্দেশনা’ পৌঁছে দিয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনার মাধ্যমে সরকার পক্ষ নির্বাচনী ত্রুতি-বিচ্যুতির কথা অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ভোটে কোনো অনিয়ম দেখতে চান না। প্রধানমন্ত্রীর এ বার্তাকে স্বাগত জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে ইসি ‘আইনানুগ ব্যবস্থা নিলে’ তাতে আওয়ামী লীগেরও সহযোগিতা থাকলে ইসির জন্য ভালো হয়। এমন হলে গত দুই ধাপের চেয়ে সামনের নির্বাচনগুলো আমরা অনেক বেশি সুষ্ঠু করতে পারবো।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের অনুরোধ থাকবে স্থানীয় নেতারা যেন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনকে সাহায্য করে।’

সরকার ও নির্বাচন কমিশনের এই বিলম্বিত উপলব্দির মাধ্যমে প্রমান হয় যে, নির্বাচন নিয়ে বিগত দিনে যেসব অভিযোগ করা হয়েছিল, সে সব অভিযোগ্যের সত্যতা আছে। সম্প্রতি সরকার নির্বাচন কমিশনকে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, অতীতের নির্বাচনগুলোতে সরকার নির্বাচন কমিশনকে যথাযথভাবে সহযোগিতা করেনি। ফলে সরকারের সাম্প্রতিক ঘোষণা নিয়ে সরকার কতখানি আন্তরিক তা নিয়েও জনমনে সন্দেহ-সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আসলে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিলম্বিত উপলদ্ধি না নতুন কৌশল তা নিয়েও বেশ প্রশ্ন রয়েছে।

বিষয়: বিবিধ

৮৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File