আমরা কি দিনে দিনে সভ্যতা থেকে দুরে সরে যাচ্ছি?

লিখেছেন লিখেছেন সিয়াম রিজভী ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৭:৫২:১৯ সন্ধ্যা

গত ১৫-ই আগস্ট সরকারী ছুটি ছিল।সাধারনত ছুটির দিন ব্যাতিত হাতে সময়ই থাকে না।সেদিন সময় পাওয়ায় কয়েকজন বন্ধু নিয়ে একটু অবসর কাটাতে বাইরে গিয়েছিলাম।তাছাড়া সাথে সাথে কয়েকটা বড় বড় স্থানে শোক দিবস পালনের বৈশিষ্ট্যগুলো দেখবো বলেই বেরিয়েছিলাম।

সকাল ৯টার দিকে আমি আমার একজন বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম। বললাম তৈরি হয়ে নিতে।সে বললো:-"দোস্ত সারারাত ঘুমাতে পারিনাই একটুও"।আমি বললাম:-"কেন রে?কি সমস্যা ছিল?গায়ে জ্বর নেই তো?"।সে বলল :-"না রে দোস্ত জ্বর না।রাস্তার ওপাশে জোরে জোরে গান বাজাইছে সারারাত সেইজন্যেই গানের শব্দে ঘুম হয়নাই"।আমি বললাম:-"কারো বিয়ে-টিয়ে নাকি?"।ও বলল:-"না।শুনলাম আজকে নাকি বঙবন্ধুর মৃত্যু দিবস?সেইজন্যেই গান বাজাইছে"।

শুনে খানিকটা অবাক হলাম।ভাবলাম বঙবন্ধুর মৃত্যু দিবস এখানে সারারাত গান বাজানোর কি আছে?বন্ধুকে জিজ্ঞেস করছিলাম:-"কি গান বাজাইছে?দেশের গানগুলা?"।"শোন বন্ধু এসব দেশের গানে বিরক্ত হয়াটা বোকামি ছাড়া আর কিছুনা"।ও বলল:-"আরে!!দেশের গান বাজাইলে তো ভালই লাগত।গান বাজাইছে Baby Doll"।আমি বললাম:-"কি বলিস এসব উল্টা-পাল্টা?"।উত্তর দিল:-"দেখ বন্ধু! আমি সবার চোখে খারাপ হতে পারি কিন্তু দেশের জন্য মায়া আমারো আছে।এবারে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দে।তোর যুক্তি কি বলে?এসব গান বাজানো কি আজকের এই দিনে মানায়?"।আমি এককথায় উত্তর দিলাম:-"না।মানায় না"

ও যখন বলেছিল সারারাত জোরে জোরে গান বাজানোর জন্য ও ঘুমাতে পারেনাই।তখন বুঝেছিলাম যে হয়ত দেশের গান শুনেই হবে ।নিজের দেশের মানুষগুলোর সম্পর্কে এতটাও খারাপ মনোভাব ছিল না যে তারা শোক দিবসের মত একটা বিশেষ দিনে দেশের গান বাজানোর বিপরীতে হিন্দি গান বাজাবে।

এসব চিন্তা করেই সকালে আর যাইনি।ওকে একটু বিশ্রামের সুযোগ দেয়া উচিত।

অবশেষে বিকেলে প্রস্তুতি নিলাম সবাই মিলে যাবো বলে।বেরিয়েও সেই পরিস্তিতির স্বীকার হলাম।সেই নতুন কোন বিষয়ের উপর ধারনা হলো।সেই বন্ধুটা বলল:-"সকালে তো আমার কথা বিশ্বাস করলি না এবার নিজেই দেখে নে"।ওর কথার উত্তর দিবার মত কোন কথা আমার মধ্যে ছিল না।নিজের দেশের মানুষগুলো প্রতি প্রথমবারের মত একটু হলেও খারাপ মনোভাবের সৃস্টি হয়ে গেছে।

আমরা কি এসবের জন্যই এতটা পিছনে পড়ে আছি?শোক দিবসের দিনে যেখানে বঙবন্ধুর স্বরনে কিছু দেশপ্রেমিক কাজ করার কথা,দেশের গান গাবার কথা সেখানে আমরা সবাই হিন্দি গান বাজাচ্ছি।অনেক জায়গায় দেখলাম গানের পাশাপাশি,গানের সাথে তাল মিলিয়ে তারা নাচতেছে।এটা কি শোকদিবস? নাকি বিয়ে?ভেবে ভেবে অবাক হয়া ছাডা কোনই উপায় ছিল না।

যে দেশের মানুষেরা এভাবে দিন দিন এত নিচে নামতে পারে তারা কিভাবে ডিজিটাল দেশ গড়ে তুলবে?ডিজিটাল দেশ মানেই কি হিন্দি গানের সাথে তাল মিলিয়ে শোক দিবসে নাচা!!এটা কি আমাদের সভ্যতা?কি করে এতটা নিচে নামতে পারি আমরা?

এভাবে যখন ১৫-ই আগস্ট শোক দিবসে হয়েছে।কি গ্যারান্টি ২১শে ফ্রেব্রুয়ারি হবে না?১৬ই ডিসেম্বর হবেনা?২৬শে মার্চ হবেনা?যখন শোক দিবসেই হয়েছে তখন অবশ্যই অন্যান্য বিশেষ দিনগুলোতেও আমাদের দেশের মানুষগুলো এসব করবে।আমরা কেন দিনে দিনে এতটা নিচে নেমে যাচ্ছি?এতে করে অনান্য দেশের কাছে আমাদের সন্মানটা অনেক কমে গেছে।আর ভবিষ্যতে আরো যাবে।এগুলো বন্ধ না করলে একটা সময় বাংলাদেশ নামের এই দেশটাকে সবাই ঘৃনা করবে।নিজেদের দেশের সন্মান হানি হয় এমন কিছু আমাদের করাটা ঠিক শোভা পায় কি?

আমার মতে ৩১শে ডিসেম্বরের আয়োজন,নাচ,গান ৩১শে ডিসেম্বরের হ্যাপি নিউ ইয়ারকে বরন করার মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। এসব নাচ,গান ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২৬শে মার্চ,১৫ই আগস্ট আর ১৬ই ডিসেম্বরে করাটা আমাদের বাঙালীদের ঠিকভাবে শোভা পায়না।

লেখা:-- সিয়াম রিজভী

বিষয়: বিবিধ

১০৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File