বিকার নাই, এই জনতার কোন বিকার নাই..................

লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ০১ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১১:০১:৩৭ সকাল

অনেকদিন আগে একটা গল্প শুনেছিলাম। একদিন গ্রামের এক অশিক্ষিত কৃষক পোষ্ট অফিসে আসলেন। তিনি শুনেছেন, টেলিগ্রাফের তারের সাহায্যে নাকি দুই এক মিনিটের মধ্যেই কথা পাঠানো যায়! কৃষক ভাবলেন যদি কথা পাঠানো যায় তাহলে হয়তো অন্যান্য জিনিসও পাঠানো যাবে। কৃষকের ছেলে শহরে থেকে পড়াশুনা করে। ছেলে মিষ্টি খেতে খুব পছন্দ করে। তাই অশিক্ষিত কৃষক ভাবলেন, দু’এক মিনিটেই যদি পাঠানো যায় তাহলে কষ্ট করে আর শহরে যাওয়ার দরকার কি! কৃষক পোষ্ট অফিসের এক কর্মকর্তাকে গিয়ে বললেন, আমি শুনেছি কিসের মাধ্যমে যেন আপনারা এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় কথা পাঠিয়ে দেন! তো আমার একটা জিনিস আছে একটু পাঠিয়ে দেন না! পোষ্ট অফিসের শিক্ষিত কর্মকর্তা বললনে, কি সেই জিনিষ? তখন কৃষক তার হারে মিষ্টি ভর্তি হাড়িটি দেখিয়ে বলল, এক হাড়ি মিষ্টি আছে! এটা একটু আমার ছেলেকে পাঠিয়ে দিতে হবে! সেই শিক্ষিত পোষ্ট কর্মকর্তা তার পূর্বের অর্জিত শিক্ষার গুনে কৃষকের বোকামো বুঝতে পারলেন। আর সেই শিক্ষা লবদ্ধ জ্ঞান দিয়েই কর্মকর্তা বললেন, ঠিক আছে হাড়িটি দিন! আমি দুই মিনিটের মধ্যেই আপনার ছেলের কাছে মিষ্টি পৌছে দিচ্ছি! কৃষক চলে গেলে পোষ্ট অফিসের শিক্ষিত কর্মকর্তারা সবাই হৈহৈ করে মিষ্টি গুলো খেয়ে ফেলল!

কয়েকদিন পর কৃষক জানতে পারলেন, মিষ্টিগুলো তার ছেলের হাতে পৌঁছে নি। কেন পৌঁছালো না তার কারণ জানতে কৃষক পোষ্ট অফিসে গেলেন। তখন পোষ্ট অফিসের সেই শিক্ষিক কর্মকর্তা তার শিক্ষার গুনে অর্জিত জ্ঞান দিয়ে একটা কাহিনী তৈরী করলেন! কৃষককে বললেন, তোমাদের পোষ্ট মাষ্টারের ছেলে বিলেতে থাকে। সেই একই সময় তারের মধ্য দিয়ে তার বাবার কাছে বেল পাঠিয়ে দিয়েছে! আর এই বেল এবং তোমার মিষ্টির মধ্যকার মুখোমুখি সংঘর্ষে হাড়ি ভেঙ্গে গেছে। আর এই কারণে তোমার ছেলের কাছে মিষ্টি পৌছে নি।

গল্প থেকে এবার বাস্তবে। বেশ কিছুদিন আগের ঘটনা। আসরের নামায শেষে মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকজন গল্প করতেছিলাম। আমাদের এলাকার সবচেয়ে পুরোনো পত্রিকার হকার গোলাপ চাচা তখন নামায শেষ করে বের হচ্ছিলেন। তাকে দেখে এগিয়ে গেলাম। কারণ উনি বেশ কিছুদিন থেকে খুবই অসুস্থ। আর তার ভালো চিকিৎসা করানোর মত টাকা নেই। তাই তিনি সকলের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন আর আমি আমার কয়েকজন পরিচিত জনের সঙ্গে কথা বলে তাকে মোটামুটি সহযোগিতার কথা ভাবতেছিলাম। কাছে গিয়ে তার কুশলাদি জানতে চাইলাম এবং চিকিৎসার বন্দ্যোবস্ত কতদূর হল তা জানতে চাইলাম। তিনি বললনে, বাবা! আল্লাহ পাক একটা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ইনশা আল্লাহ এবার আমি চিকিৎসা শুরু করে দিতে পারবো। আমি বললাম পুরো ঘটনা খুলে বলেন তো! উনি বললেন, গতকাল আসরের নামাযের সময় উযু খানায় আমি একটা ছোট্ট ব্যাগ কুড়িয়ে পেয়েছিলাম। ব্যগটা খুলে দেখি অনেকগুলো টাকা। আমি সঙ্গে সঙ্গে মুয়াজ্জিন কে সংবাদটা জানাই। আর তিনিও মসজিদের মাইকে ঘোষনা দিয়ে দেন। এর কিছুক্ষণ পরেই কোর্ট স্যুট পরা এক ভদ্রলোক প্রায় কাঁদতে কাঁদতে মসজিদে আসলেন। তিনি মুয়াজ্জিনের কাছে প্রমাণ দিয়ে টাকা গুলো নিলেন। সেখানে লাখের বেশি টাকা ছিল। মুয়াজ্জিনের কাছে আমার সার্বিক অবস্থা জানতে চাইলেন। যাবার সময় উনি আমাকে চিকিৎসার জন্য জোর করে ১০ হাজার টাকা দিয়ে গেছেন।

এই গোলাপ চাচা প্রতিদিন যাদের খবর বিক্রি করে বেড়ান, সেই সব শিক্ষিত ডিগ্রীধারীরা প্রতিদিন যে কত লাখ টাকা চুরি করতেছেন তার হিসাব হয়তো সেই শিক্ষিত চোর নিজেও জানেন না। গোলাপ চাচার হাতের পত্রিকা গুলোর যারা শিরোনাম হন, তারা যে প্রতিদিন কত মানুষের পেটে লাত্থি মারেন সে কথা হয়তো সেই শিক্ষিত ডিগ্রী ধারী নামক অমানুষগুলো নিজেও জানে না। তারা বড় বড় ডিগ্রী নিয়েছে ঠিকই কিন্তু সেই সব ডিগ্রী লবদ্ধ শিক্ষা আজ চুরির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাদের মনুষত্য কিংবা নৈতিকতাবোধ আজ পত্রিকার একজন হকারের নৈতিকাতবোধ অপেক্ষা হাজার গুন নিম্নে অবস্থান করছে।

আমাদের দেশের ইতিহাসটা লজ্জাজনক হলেও বহিঃবিশ্বের ইতিহাসটা কিন্তু কিছুটা হলেও ব্যতিক্রম। ২০০৯ সাল এক ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য কয়েক বছর ধরে তার দুই পুত্রকে সংসদীয় সহকারী হিসেবে দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে বেতন দিয়েছেন। অথচ সে সময় তার ছেলেরা দূরবর্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্নকালীন ছাত্র ছিলেন। ঐ সংসদ সদস্য শেষ পর্যন্ত অপরাধ স্বীকার করেছেন এভং বলেছেন, আগামী নির্বাচনে তিনি আর প্রার্থী হবেন না।

আপনাদের হয়তো অনেকেরই জানা আছে, ইসরাঈলের প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল শ্যারনের ছেলে দুর্নীতির দায়ে আজও জেল খাটতেছেন।

আমাদের পাশ্ববর্তি রাষ্ট্র ভারতেও কিন্তু একটি অনন্য উদাহারণ রয়েছে। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কনিষ্ঠ পুত্র সঞ্জয় কে নিয়ে তার সমস্যার অন্ত ছিল না। সে তার মায়ের প্রভাব এবং ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে যত্রতত্র করে বেড়াত। তার দুষ্কর্মে আমলাতন্ত্র অতিষ্ঠ ছিল। সঞ্জয় তার শখনুযায়ী হালকা উড়োজাহাজ চালাতে গিয়ে দূর্ঘটনায় পতিত হয়ে মারা যায়। কিন্তু ভারতের অনেক ইন্টিলিজেন্স সদস্য পরবর্তিতে দাবি করেছিলেন, ইন্দিরা গান্ধি ছেলের দুর্নীতি এবং কৃতকর্মে অতিষ্ট হয়ে তাকে বিমান দূর্ঘটনা নাটক সাজিয়ে হত্যা করেছে। যার ফলাফল স্বরূপ দেখা যায়, প্রয়াত সঞ্জয় এর স্ত্রী মানেকা গান্ধী এবং তার সন্তানদের নিয়ে বর্তমানে বিজেপিতে সক্রীয় ভূমিকা রাখছেন।

এসব ঘটনা কি আমাদের দেশের নেতৃস্থানীয়রা জানেন না? এক হাওয়া ভবনের খপ্পরে পড়ে দেশ অর্ধেক দেউলিয়া হয়ে গেছে! এবার দেশ প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা, বিশিষ্ঠ বিজ্ঞানী এবং গুগলের আগেও যিনি সার্চ ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছেন সেই মহান ব্যক্তির খপ্পরে পড়েছে। যার লকারে নাকি কোটি কোটি মার্কিন ডলারের সন্ধান পাওয়া গেছে!

একজন প্রয়াত স্বামীর পূর্ব কথা শুনিয়ে দেশের তলা ফুটো করছেন। আর একজন বাপের নাম ভাঙ্গিয়ে দেশের পুরো তলাটাই বিক্রি করে দিচ্ছেন। আর এসব দেখে কবির ভাষায় বলতে হয়,

বিকার নাই এই জনতার কোন বিকার নাই

বিষয়: বিবিধ

১১৬৬ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

352267
০১ ডিসেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:৫১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো সুন্দর পোষ্টটি।
০১ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:৩০
292517
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ
352273
০১ ডিসেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৩৯
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

যথার্থ বলেছেন
জাযাকাল্লাহ
০১ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:৩০
292518
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম। শুকরিয়া।
352276
০১ ডিসেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:৫২
জেদ্দাবাসী লিখেছেন : নৈতিকতাবোধ গুনসম্পর্ন মানুষ গ্রামে প্রচুর আছে। তাহারা যে দিন এক হতে পারবে সে দিন দেশ সঠিক মনযিলে পোঁছতে পারবে।
জাযাকাল্লাহ খায়ের
০১ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:৩০
292519
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : ঠিক বলেছেন। প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ হওয়া
352308
০১ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:১৬
শেখের পোলা লিখেছেন :
'বিকার নাই এই জনতার কোন বিকার নাই'
সহজে হবে বলেও মনে হয়না৷ ধন্যবাদ৷
০১ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:৩১
292520
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : আল্লাহু আ’লাম
352320
০১ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ১০:৩১
সালাহউদ্দিন নাসিম লিখেছেন : খুব ভাল হয়েছে ভাইয়া
352321
০১ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ১০:৩৫
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..সঠিক

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File