কবিতা-৩ : আমার মা

লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ১০ মে, ২০১৫, ০২:২৬:২৭ দুপুর

আমি এক দু:খিনী মায়ের অযোগ্য-অবাধ্য সন্তান!

তাঁর মনে যে কত দু:খ, কত কষ্ট সন্তানদের জন্য,

কোন সন্তান যেন আমার মত না হয়, সেজন্য কিছু কথা খুলে বলছি।

মায়েরা তাদের সন্তানকে ভালো মানুষ করতে কী ধরনের ত্যাগ স্বীকার করেন

আমি তা কাছে থেকে দেখেছি।

শৈশব কৈশোর ছিল আমাদের জন্য স্বপ্নের মত,

মা-বাবা সংসারের ঘানি টেনে টেনে সংসার নামক জীবন বিশাল তরীকে নিয়ে

তরঙ্গ-বিক্ষুব্ধ সাগরের মুখোমুখি। শক্ত হাতে হাল ধরে

সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে আজ বার্ধক্যে উপনীত।

কড়া শাসনে থেকে বড় হওয়া সন্তানরা আজ সবাই তাঁর অবাধ্য

মায়ের কথা কেউ শোনে না,

ভাবি, কেন সন্তানেরা মায়েদের অবাধ্য হয়?

আজীবন কি চোখের পানি আঁচলে মোছার তরে?

কী নিষ্ঠুর! কী পাষন্ড! কী অমানবিক?

প্রতিদিন সকাল বেলা যখন নাস্তা সেরে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বের হই

মা তাঁর রুমের মধ্যে থাকলেও কান থাকে আমার দরজায়,

আমি কখন বের হই সেজন্য।

দরজা খোলার শব্দ হয়, এগিয়ে আসে মা,

দরজা বন্ধ করে বেলকনির পাশে এসে দাঁড়ায়,

রাস্তার দিকে চেয়ে চেয়ে থাকে যতক্ষণ না চোখের আড়াল হই।

সারাদিনের কর্মব্যস্ততা সেরে বাসায় যখন ঢুকি

মা যেখানে থাক না কেন দৌড়ে আসে। তাঁর পাশে যাই,

মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়,

কী যেন বুঝতে চায়?

হাসিমুখ দেখলে কিছু শুধায় না, যেন মা বুঝতে পারে

দিনটা ছেলের ভালয় ভালয় কেটেছে, মন স্বস্তি পায়।

যদি চেহারার মাঝে মলিনতা দেখতে পায়

দরদমাখা কন্ঠে জানতে চায়।

আমি সচরাচর কিছু বলি না।

বাহির থেকে সন্তানেরা আসলে মায়েরা সন্তানের হাতের দিতে তাকায় না,

মুখের দিখে তাকায়, বুঝতে চায় তাঁর বত্রিশটি নাড়ি ছেঁড়া ধনের

কোন অশুভ কিছু হয়েছে কি না?

মায়ের মন তো সব বুঝতে পারে

কোন অশুভ কিছু হলে মায়ের যেন আগেই জানা হয়ে যায়।

আচ্ছা, প্রতিটি মা কি এমনই হয়?

আমি আমার রুমে ফিরে আসি, ফ্‌্রশে হই

মা আমার কখন যে দরজায় এসে টোকা মারে, টক্‌ টক্‌

দরজা খুলে দিই, জিজ্ঞেস করলে বলে, না এমনি এসেছি,

তোর কিছু লাগতে পারে?

ইদানীং আমার মায়ের মুখটা মলিন দেখি

কাউকে কিছু বলে না

যত দু:খ-কষ্ট, ক্ষোভ-যন্ত্রণা মনের মধ্যে পুষে রাখে। সন্তানকে বলে না,

বলে টেনশন বাড়িয়ে দেয় না।

আহারে মা!

মা আমাকে সেদিন বলল, আমি কি তোর সুখটা দেখে যেতে পারব না?

মাকে আমার কষ্টের কথা বলতে পারি না।

মা তো, বুঝতে পারে

মাগো, আমি বড়ই হতভাগা! বড়ই হতভাগা!

আমি তোমার এমন সন্তান-সবাইকে কষ্ট দেয়া ছাড়া

আর কিছুই দিতে পারছি না।

আমি জানি না, এ কোন পাপের প্রায়শ্চিত্ত?

মাগো, তুমি তো পাঞ্জেগানা নামাজী-আল্লাহর বান্দী

নামাজে তুমি তো আল্লাহর কাছে সন্তানদের সুখ-ই কামনা করো

রিজিক মাঙ্গো, আসমানী-জমিনী বালা মুছিবত থেকে পরিবারের নিরাপত্তা চাও

তারপরওএকন এত কষ্ট তোমার!

মা, আমি তোমার এমন এক অবাধ্য সন্তান

তোমার মনে হাজারো কষ্টের কারণ,

তুমি বলে দাও, আমি কী করব?

প্লীজ বন্ধুরা, আমার মত হয়ো না

কেউ আমার মত হয়ো না।

====

বিষয়: সাহিত্য

১৩২৩ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

319261
১০ মে ২০১৫ বিকাল ০৫:৫৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : Rose Rose Rose ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
319265
১০ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:০৪
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : রিদওয়ান কবির সবুজ, অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও।
319272
১০ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:২৬
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : লেখাটি হৃদয় স্পর্শ করল । আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।
কোন সময় দেখবেন লেখায় কোন মন্তব্য নেই, তাই বলে হতাশ হবেননা । লিখেই যাবেন আর অন্যের লেখা পড়ে মন্তব্য করতে চেষ্টা করবেন । আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ । Thumbs Up
১০ মে ২০১৫ রাত ০৯:১১
260404
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : বাহার ভাই, ব্লগ দুনিয়ায় পদার্পণে আপনার ভুমিকা স্মরণীয় থাকবে।
১১ মে ২০১৫ সকাল ১১:১৪
260488
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদGood Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File