যিলহজ্জ মাসের গুরুত্ব ও করনীয়-১

লিখেছেন লিখেছেন মিশু ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৯:৩৩:০৯ সকাল

আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

বিশেষ কিছু দিনে বিশেষ ভাবে আমল করার কথা রাসুল স.এর জীবনে দেখা যায়।

অমুসলিমরা ও ইসলামের শত্রুরা বিভিন্ন দিনকে বিশেষায়িত করে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছে সেগুলোকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে। বিশেষ করে তরুন ও তরুনীদের এবং নাবালক নাবালিকাদেরও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এখন থেকেই কুপরিকল্পিতভাবে তাদের মেধা ও নির্মল পবিত্রতাকে নষ্ট করে পরিবার-সমাজ তথা রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

এই অবস্থায় আমাদেরকে সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের সন্তানদের সহ মুসলিমদের আল্লাহ তা’আলার নির্ধারিত এবং রাসূলের স.দেখানো দিবসকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের শক্তি ও হিকমাহ দান করুন।

দয়াময় মেহেরবান আল্লাহতা’আলার নামে

وَالْفَجْرِ ﴿1﴾ وَلَيَالٍ عَشْرٍ ﴿2﴾

কসম ফজরের(ঊষার), কসম দশ রাতের

সূরা আল ফজর: ১-২

মহান আল্লাহ তায়ালা যখন কোন জিনিষের শপথ করেন তখন তার গুরুত্ব ও মর্যাদা বিশেষস্থান লাভ করে থাকে।

সূরা ফজরে উল্লেখিত দশ রাতের কথা বলতে যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ রাতের কথা উল্লেখ করে বর্ণনা দিয়েছেন বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস রা. ইবনে যুবাইর রহ. ও মুজাহিদ রহ. সহ আরো অনেক মুফাসসীর। ইবনে কাসীর রহ. এই মতটিকে সঠিক বলেছেন।

সাহাবী ইবনে আব্বাস রা.থেকে বর্ণিত, রাসূল স. বলেছেন, যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে নেক আমল করার মত প্রিয় আল্লাহর নিকট আর কোন আমল নেই। তারা প্রশ্ন করলেন,হে আল্লাহর রাসূল স. আল্লাহর পথে জিহাদ করা কি তার চেয়েও প্রিয় নয়?

রাসূল স. বললেন, না আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে ঐ ব্যক্তির কথা আলাদা যে প্রান ও সম্পদ নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বের হয়ে গেলো অতঃপর তার প্রান ও সম্পদের কিছুই ফিরে এলো না।

সহিহ আল বুখারী: ২/৪৫৭

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত এই দশ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট প্রিয় ও মহান কোন আমল নেই। তোমরা এই সময় তাহলীল(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) তাকবীর(আল্লাহু আকবার) ও তাহমীদ(আলহামদুলিল্লাহ বেশী করে পাঠ কর।

আহমাদ: ১৩২

তাহলে দেখা যাচ্ছে বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় যিলহজ্জের এই দশদিনের আমল উত্তম।এমনকি ইবনে কাসীর রহ. বর্ণনায় বলেছেন রামাদানের শেষ দশ দিনের চেয়েও উত্তম তবে রামাদানের শেষ দশ রাত অপেক্ষা নয় কেননা শেষ দশ রাতের মাঝে লাইলাতুল কদর রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।

তাহলে এই দশ দিনে উত্তম প্রতিফল পাওয়ার আশায় আমাদের সুন্নাহর আলোকে আমল করাটা বুদ্ধিমানের পরিচায়ক হবে।

এই দিনগুলোতে ফরয ওয়াজিব আমলগুলো আরো বেশী যত্ন ও গুরুত্বের সাথে আদায় করার জন্য সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে সালাত কায়েমের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া।

এই দিনগুলোতে অনুশোচনার সহিত তাওবা ইস্তেগফার করে ভালো কাজে শরীক থাকার চেষ্টা করা এবং মহান আল্লাহর জিকির বা স্মরন প্রতিটি কাজের সাথে করার সাথে সাথে আরো কিছু আমল করা যা নীচে উল্লেখ করা হলো।

১। সাওম রাখা-

ভালো আমলের মধ্যে অন্যতম হলো সওম এবং রাসূল স. উৎসাহিত করেছেন প্রথম দশ দিন ভালো কাজ করার জন্য, তাই প্রথম নয় দিন সওম রাখা সুন্নাত।

রাসূল স. প্রথম নয় দিন যিলহজ্জের সওম রেখেছেন। হুনাইদাহ ইবনে খালিদ তার স্ত্রী থেকে বর্ণনা করেছেন যে,রাসূল স. এর একজন স্ত্রী বলেছেন, রাসুল স. সাধারনত সওম রাখতেন যিলহজ্জের প্রথম নয় দিন, আশুরার দিন, প্রতি মাসের তিন দিন, মাসের প্রথম সোমবার এবং ২টি বৃহস্পতিবার।

আল নাসায়ী৪/২০৫,আবু দাউদ২/৪৬২ সহীহ আল আলবানী

হাদীসে কুদসীতে এসেছে,আদম সন্তানের প্রতিটি আমলই নিজের জন্য কিন্তু সওম শুধুমাত্র আমার জন্য এবং আমিই এটার পুরস্কার দিবো।

সহিহ আল বুখারী: ১৮০৫

সাহাবী আবু উমামা রা.থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,আমি বললাম,হে রাসূ্লুল্লাহ স.আমাকে এমন একটি আমল করার নির্দেশ দিন যা শুধু আমি আপনার নিকট থেকে পাওয়ার অধিকারী হব। রাসূল স.বলেন, তুমি সওম পালন করবে। আর এর কোন নজির নেই।

সহিহ সূনানে নাসায়ী: ২১০০

সওম যে একটি অতি মর্যাদাপূর্ণ ও আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় আমল তা এই হাদীস থেকে অনুধাবন করা যায়।

অনেকে শুধু মাত্র যিলহজ্জের ৭,৮,৯ তারিখ নির্দিষ্ট করে নেন সওম রাখার জন্য। এই ধরনের কোন নির্দেশনা আসে নাই। ১-৯ দিনই সওম রাখতে পারেন অথবা এর মাঝে যে কোন দিন সওম রাখতে পারেন। তবে আরাফার দিনের সওমের ব্যপারে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে হাদীসে।

রাসূল স. বলেছেন, আরাফার দিনের সওম আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিগত ও আগত বছরের গুনাহের কাফফারা হিসেবে গ্রহন করে থাকেন।

সহিহ মুসলিম:১১৬৩

তবে যারা হজ্জে আরাফার ময়দানে উপস্থিত হাজীগন আছেন তাদের জন্য সওম রাখার কথা আসে নি।

যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ হলো আরাফার দিন।

ইমাম আহমদ ইকরামা থেকে বর্ণিত। আমি আবু হুরাইরা রা.এর সাথে তার বাড়িতে সাক্ষাৎ করে আরাফার দিনে (৯ইযিলহজ্জ) আরাফার ময়দানে অবস্থানরত(হাজ্জ পালনে রত)ব্যক্তির সাওম পালনের বিধান কী?

তিনি বলেন,রাসূল স.আরাফার দিনে আরাফার ময়দানে অবস্থানকারীকে সওম পালনে নিষেধ করেছেন।

মুসনাদে আহমাদ: ২০৪/২

রাসূলে করীম স.আরাফাতের ময়দানে অবস্থানকালে পানাহার করেছেন। তার সাথে অবস্থানরত লোকজন তা দেখেছে।

সহিহ মুসলিম: ১১২৩,১১২৪

বিষয়: বিবিধ

১০২৯ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

339146
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:২১
নাবিক লিখেছেন : খুব কাজের পোস্ট, অনেক ধন্যবাদ।
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:১৯
280719
মিশু লিখেছেন : জাযাকাল্লাহী খাইরান।
339155
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:৩৪
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আস-সালামওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু হে প্রিয় বোন! খুবই উপকারী পোস্ট লিখার জন্য আপনাকে জাযাকিল্লাহ!
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:২০
280721
মিশু লিখেছেন : জাযাকাল্লাহী খাইরান বিল আখিরাতে ওয়া ফিদদুনিয়া।
339159
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৪৮
ফরিদুল ইসলাম তুষার লিখেছেন : খুবই ভাল লাগলো। আশা করি কুরবানি সম্পর্কে কিছু লিখলে উপকৃত হব।
339190
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:২৩
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

স্মরণ করিয়ে দিলেন, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকুমুল্লাহ . . "
339384
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:২০
মিশু লিখেছেন : জাযাকাল্লাহী খাইরান।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File