পরিকল্পনা-রমজানের পূর্বে

লিখেছেন লিখেছেন মিশু ২৫ মে, ২০১৫, ০১:৪৫:৩৪ দুপুর

আসসালামু আ’লাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

সকল প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীনের যিনি আমাদেরকে অত্যন্ত সুন্দর ও ভারসাম্যপূর্ণ করে তৈরী করে আমাদের জীবনের জন্য সেইরকমই একটি পথ নির্দেশিকা আল কোর’আন দিয়ে আমাদের এই চলার পথকে সহজ সুন্দর ও সাবলীল করেছেন।

আর এই বাস্তব পথচলার অনুপ্রেরনা পাই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ থেকে,সাহাবা(রাঃ)দের জীবন চরিত থেকে।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন-

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন করে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল। সম্ভবত এর ফলে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে।

সূরা আল বাকারাঃ১৮৩

“তোমাদের কাছে উপস্থিত হয়েছে রামাদান,এক মুবারাক (বরকতময়)মাস।এ মাসে সীয়াম পালন করা আল্লাহতা’আলা তোমাদের উপর ফরয করেছেন।এ মাসে আসমানের দরজাসমুহ খুলে দেয়া হয়,এ মাসে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়,এ মাসে অবাধ্য শয়তানদের শেকলবদ্ধ করা হয়।আর এ মাসে রয়েছে আল্লাহর এক রাত যা হাজার মাস থেকে উত্তম,যে এ রাত থেকে বঞ্চিত হল,সে প্রকৃতপক্ষে বঞ্চিত হল”।

আবু নাসা’ঈঃ২১০৬

ইবনে হিব্বান হাদীস নং ৪০৯ এর শিক্ষার তিনটির মধ্যেএকটি হলো রাসূল(সঃ) মিম্বরে আরোহনের সময় প্রথম সিঁড়িতে পা রেখে আমীন বলেছিলেন,কারন জীবরাঈল(আ) বলেছিলেন, সে ব্যক্তি আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হোক যে রামাদান পাওয়া স্বত্বেও তাঁর গুনাহ মাফ হয়নি।

তাই আমাদের এই রামাদান মাসকে শুধু কিছু আনুষ্ঠানিকতা দিয়ে নয় সাওমের মূল চেতনাকে নিয়ে নিজেদের পরিশুদ্ধির মাধ্যমে মহান আল্লাহতা’আলার ক্ষমা লাভের জন্য পরিশ্রমী হয়ে ইবাদাতে মনোনিবেশ করতে হবে।

রামাদান মাসের পূর্বে কিছু প্রস্তুতি

রমজান মাসকে সামনে রেখে আপনাদের সামনে কিছু পরিকল্পনা তুলে ধরলাম। এর সাথে আপনারাও আরো কিছু করনীয় যোগ করে নিতে পারেন। আল্লাহ আমাদের হিকমাত বাড়িয়ে দিন ও আমল করার তৌফিক দিন।

আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামাদান এলে কি করতেন হাদীস থেকে আমরা জানার চেষ্টা করি।

গোটা মানব জাতির মধ্যে নবী(সঃ) সবচেয়ে দানশীল ছিলেন। রমজান মাসে জিবরাঈল(আঃ) যে সময় তাঁর সাথে সাক্ষাত করতেন সে সময় তিনি সবচেয়ে বেশী দানশীল হয়ে উঠতেন। জিবরাঈল রমজান মাসে প্রতি রাতেই তাঁর সাথে সাক্ষাত করতেন। এভাবেই রমজান মাস অতিবাহিত হত। নবী(সঃ) তার সামনে কুর’আন শরীফ পড়ে শুনাতেন। যখন জিবরাঈল তাঁর সাথে সাক্ষাত করতেন তখন তিনি গতিবান বায়ুর চাইতেও বেশী দানশীল হয়ে উঠতেন।

সহীহ বুখারীঃ ১৭৬৭

তাহলে এই হাদিস থেকে জানা যায় নবী(সঃ) রমযান মাসে কি করতেন –

বেশী বেশী দান করা

কোর’আন পাঠ করা

পরিকল্পনা-রমজানের পূর্বে

১। পরিবারের সব সদস্যদের নিয়ে একটি ঘরোয়া আলোচনায় বসে রমযান মাসের গুরুত্ব ও করনীয় তুলে ধরে কিছু দিক নির্দেশনা দিন যেমনঃ-

• মুরুব্বী (যেমন মা,বাবা,দাদা-দাদী,নানা-নানী বা অন্য) যিনি পরিবারে থাকেন,উনার জন্য একটি পরিকল্পনা করে দিন।

• অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ের জন্য একটি পরিকল্পনা করে দিন।

• প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়েকে বলুন পরিকল্পনা করে আপনাকে দেখাতে যেন পরামর্শ দিতে পারেন।

• গৃহপরিচারিকা , ড্রাইভার,দারোয়ান সবার জন্য রমজানে করনীয় দিকের পরামর্শ এখনই দিন।

• সংযমের মাস তাই ইফতার এর মেন্যু সহজ,পুষ্টিকর,সময়বিনষ্টকারী নয়,ইফতারের আগের মুহূর্ত ধীর হয়ে দোয়ায় ব্যস্ত যেন থাকা যায় সেই রকম ভাবে পরিবারের সবার মন-মানসিকতা গঠন করে নিন এখনই।

২। আত্মীয়-সব্জন,প্রতিবেশীদের মাঝে এখনি রামাদান ও ইসলামের মূল বিষয় সংক্রান্ত বই/ওয়েব লিঙ্ক দিন ও উৎসাহ প্রদান করুন।

৩। গরীব আত্মীয়-স্বজন,মিসকীন ভাই-বোনদের জন্য এখনই রামাদানে সহযোগীতায় শুকনো খাবার (চাল, খেজুর,চিনি,চিড়া,মুড়ি,সেমাই বা টাকা ) ও রোযা সংক্রান্ত বই পৌঁছে দিতে পারেন।

৪। ঘরের ভারী কাজগুলো (পরিচ্ছন্নতার) এখনই সেরে ফেলুন। গৃহপরিচারিকার জন্য সাওম রাখা একটু সহজ হবে।

৫। ঈদের মূল কেনা-কাটা করে ফেলুন।

৬। যারা চাকরিজীবী –রাস্তায় যাওয়া আসার সময়কে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা এখনই করে নিন যেমন- লেপটপ বা মোবাইলে কোর’আন অর্থসহ তেলাওয়াত/তাফসীর/দোয়া—ইত্যাদি সেট করে নিন।

৭। যারা চাকরিজীবী-সম্ভব হলে শেষ দশদিন বা বেজোড় দিনগুলো ছুটি নেয়ার পরিকল্পনা করতে পারেন। বছরেতো একবারই শবে-কদর আসে তাই না!!!

৮। রামাদান সংক্রান্ত মাসলা-মাসায়েল এখন থেকে আরো গুরুত্ব দিয়ে পড়ুন। কোন কোন দোয়া পড়বেন তা তালিকাভুক্ত করে নিন।

৯। ঈদের বাজেটে এই মাসে পরিবারের পাঠাগারে নতুন কিছু বই (তাফসীর,সহীহ হাদীস গ্রন্থ বা জীবনী)যোগ করুন।

১০। ঈদের বাজেট থেকে কিছু টাকা গরীবদের কেনা কাটার জন্য সন্তানদের শিক্ষা দিন।

মহান আল্লাহতা’আলা বলেছেন-

যে কেউ আশু লাভের আকাঙ্ক্ষা করে, তাকে আমি এখানেই যা কিছু দিতে চাই দিয়ে দেই, তারপর তার ভাগে জাহান্নাম লিখে দেই, যার উত্তাপ সে ভুগবে নিন্দিত ও ধিকৃত হয়ে। আর যে ব্যক্তি আখেরাতের প্রত্যাশী হয় এবং সেজন্য প্রচেষ্টা চালায়, যেমন সেজন্য প্রচেষ্টা চালানো উচিত এবং সে হয় মুমিন, এক্ষেত্রে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির প্রচেষ্টার যথোচিত মর্যাদা দেয়া হবে।এদেরকেও এবং ওদেরকেও, দু’দলকেই আমি (দুনিয়ায়) জীবন উপকরণ দিয়ে যাচ্ছি, এ হচ্ছে তোমার রবের দান এবং তোমার রবের দান রুখে দেবার কেউ নেই। কিন্তু দেখো, দুনিয়াতেই আমি একটি দলকে অন্য একটির ওপর কেমন শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে রেখেছি এবং আখেরাতে তার মর্যাদা আরো অনেক বেশী হবে এবং তার শ্রেষ্ঠত্বও আরো অধিক হবে।

সুরা বনী-ইসরাইল (১৮-২১)

আশু লাভের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, যে জিনিস দ্রুত পাওয়া যায়। কুরআন মজীদে একে পারিভাষিক অর্থে দুনিয়ার জন্য ব্যবহার করেছে, অর্থাৎ যার লাভ ও ফলাফল এ দুনিয়ার জীবনেই পাওয়া যায়। আমাদের আখেরাতের প্রত্যাশী অর্থাৎ মৃত্যুর পরবর্তী স্থায়ী জীবনের সফলতাকেই মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগুতে হবে।

আল্লাহ সুবহান আরো বলেছেন-

প্রত্যেক মানুষের ভাল-মন্দ কাজের নিদর্শন আমি তার গলায় ঝুলিয়ে রেখেছি এবং কিয়ামতের দিন তার জন্য বের করবো একটি লিখন, যাকে সে খোলা কিতাবের আকারে পাবে। পড়ো, নিজের আমলনামা, আজ নিজের হিসেব করার জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ট।

যে ব্যক্তিই সৎপথ অবলম্বন করে, তার সৎপথ অবলম্বন তার নিজের জন্যই কল্যাণকর হয় । আর যে ব্যক্তি পথভ্রষ্ট হয়, তার পথভ্রষ্টতার ধ্বংসকারিতা তার ওপরই বর্তায় । কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।

সুরা বনী-ইসরাইলঃ১৩-১৫

সময়ের সাথে সাথে আল্লাহ সুবহানের সহায়তায় সহীহ দ্বীনের জ্ঞান অর্জন হাতের নাগালে চলে এসেছে। এখন শুধু প্রয়োজন একটু সদিচ্ছা ও ইচ্ছার বাস্তবমুখী উদ্যোগ।

অন্তর থেকে কেউ যদি নিজেকে মহান আল্লাহতা’আলার কাছে সমর্পণ করতে চান ,আমাদের রব অবশ্যই সেই পথে চলার সহজ উপায় ও শক্তি দান করবেন ইনশাআল্লাহ।

মনে রাখতে হবে মহান আল্লাহতাআলা বলেছেন—

যে ব্যক্তিই আল্লাহকে ভয় করে চলবে আল্লাহ তার জন্য কঠিন অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সৃষ্টি করে দেবেন। এবং এমন পন্থায় তাকে রিযিক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর কাজ সম্পূর্ণ করে থাকেন। আল্লাহ প্রতিটি জিনিসের জন্য একটা মাত্রা ঠিক করে রেখেছেন।

সূরা আত তালাকঃ২-৩

আল্লাহ তোমাদের জন্য জীবনকে সংকীর্ণ করে দিতে চান না কিন্তু তিনি চান তোমাদেরকে পাক-পবিত্র করতে এবং তাঁর নিয়ামত তোমাদের ওপর সম্পূর্ণ করে দিতে,হয়তো তোমরা শোকর গুজার হবে। আল্লাহ তোমাদের যে নিয়ামত দান করেছেন তার কথা মনে রাখো এবং তিনি তোমাদের কাছ থেকে যে পাকাপোক্ত অঙ্গীকার নিয়েছেন তা ভুলে যেয়ো না। অর্থাৎ তোমাদের একথা-আমরা শুনেছি ও আনুগত্য করেছি। আর আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ মনের কথা জানেন।

সূরা মায়েদাঃ ৬-৭

আসলে তোমাদের প্রচেষ্টা নানা ধরনের। কাজেই যে (আল্লাহর পথে) ধন সম্পদ দান করেছে,(আল্লাহর নাফরমানি থেকে) দূরে থেকেছে এবং সৎবৃত্তিকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে, তাকে আমি সহজ পথের সুযোগ- সুবিধা দেবো।

সূরা আল লাইলঃ ৪-৭

আর নিজের অন্তরকে তাদের সঙ্গলাভে নিশ্চিন্ত করো যারা নিজেদের রবের সন্তুষ্টির সন্ধানে সকাল-সাঁঝে তাঁকে ডাকে এবং কখনো তাদের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরাবে না। তুমি কি পার্থিব সৌন্দর্য পছন্দ করো? এমন কোন লোকের আনুগত্য করো না যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার অনুসরণ করেছে এবং যার কর্মপদ্ধতি কখনো উগ্র, কখনো উদাসীন।

পরিষ্কার বলে দাও, এ হচ্ছে সত্য তোমাদের রবের পক্ষ থেকে, এখন যে চায় মেনে নিক এবং যে চায় অস্বীকার করুক। আমি (অস্বীকারকারী) জালেমদের জন্য একটি আগুন তৈরি করে রেখেছি যার শিখাগুলো তাদেরকে ঘেরাও করে ফেলেছে। সেখানে তারা পানি চাইলে এমন পানি দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করা হবে, যা হবে তেলের তলানির মতো। এবং যা তাদের চেহারা দগ্ধ করে দেবে। কত নিকৃষ্ট পানীয় এবং কি জঘন্য আবাস! তবে যারা মেনে নেবে এবং সৎকাজ করবে, সেসব সৎকর্মশীলদের প্রতিদান আমি কখনো নষ্ট করি না।

সূরা কাহফঃ২৮-৩০

আমি রামাদানে করনীয় পরিকল্পনাটা তিনটি গ্রুপে ভাগ করেছি।

১। বাড়ীর মুরুব্বীদের জন্য (পিতা-মাতা,দাদা-দাদী,নানা-নানী,শশুর-শাশুড়ী,অন্যান্য বয়োবৃদ্ধদের জন্য)

২। অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের জন্য।

৩। পূর্ণ বয়স্ক সন্তানের জন্য।

পরিকল্পনা (বাড়ীর মুরুব্বীদের জন্য)

• যারা কোর’আন পড়তে জানেন উনাদের অর্থসহ পুরু কোর’আন একবার পড়ার জন্য ব্যবস্থা ও সুযোগ করে দিন। যারা কর’আন পড়তে পারেন না উনাদের জন্য অর্থসহ পুরু কোর’আন শুনার জন্য মোবাইল/ কম্পিউটার/লেপটপ ইত্যাদিতে সেট করে দিন বা আপনার সন্তানকে দিয়ে করিয়ে নিন।

• কিছু ইসলামিক আলোচনা সেট করে রাখুন শুনার জন্য।

• সহীহ দোয়া দরুদ পড়ার পরিকল্পনা দিন।

•নামাজের নিয়ম, সূরাগুলো সহীহ হচ্ছে কি না তা যাচাই করার গুরুত্ব তুলে ধরুন–প্রয়োজনে একজন মুরুব্বী (যিনি সহীহ নিয়ম জানেন) উনাকে কিছুদিন বাসায় আনার ব্যবস্থা করতে পারেন।

•উনাদের দায়িত্ব দিন বাসার ছোট ছেলে-মেয়েদের নবী জীবনী / দুয়া শুনাতে।

•রোযা রাখতে সামর্থ্য না থাকলে এখনি ফিদিয়া আদায়ের ব্যবস্থা করে ফেলুন।

• নির্দিষ্ট রোগী হলে (ডায়াবেটিক) সেই অনুযায়ী ইফতার ও সেহরীর মেন্যু ঠিক করে বাজার করিয়ে ফেলুন।

• সময় নষ্টকারী অনুষ্ঠান দেখা/ বেহুদা গল্প করা (গীবত) থেকে বিরত রাখুন।

* দান করার জন্য উনাদের সাথে পরামর্শ করে (কোর’আনের আলোকে)দানের খাত বের করুন।

পরিকল্পনা (অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের জন্য)

১। কোর’আন প্রতিদিন শেখানোর জন্য একজন শিক্ষক নিযুক্ত করুন।

২। কোর’আনের গল্প প্রতিদিন একটি করে শুনাতে বলুন/নিজে বলুন।

৩। ছেলে শিশুকে মসজিদে ও মেয়ে সন্তানকে সাথে নিয়ে নামাজ আদায় করুন।

৪। নামাজে পড়া যায় এমন ছোট সূরা অর্থসহ নির্দিষ্ট করে শেখান।৫-৬টি

৫। আখলাক জাতীয় হাদীস ১টি করে শুনান –প্রয়োজনে মুখস্ত করিয়ে দিন ও বাস্তবে আমল করান।

৬। প্রতিটি কাজের আগে নির্ধারিত যিকির বা দুয়া শেখান ও বাস্তবে পড়ার অভ্যাস করান।

৭। সবাইকে সালাম সুন্দর করে দেয়ার অভ্যাস করান।

৮। টেবিলে ইফতার গুছানোর কাজ দিন।

৯। সেহরীতে জাগিয়ে দিন, সেহরী খেতে উৎসাহিত করুন এবং ফযর নামাজ সাথে নিয়ে পড়ুন।

১০। মাঝে মাঝে রোজা রাখতে উৎসাহিত করুন।

শিশুদের রোযা – আমাদের শিশুদেরও রোযা রাখাতাম। তাদেরকে আমরা তুলা বা পশমের খেলনা তৈরী করে দিতাম। তারা কেউ খাওয়ার জন্য কাঁদলে আমরা তাদেরকে ঐ খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম। আর এইভাবেই ইফতারের সময় হয়ে যেত।

সহীহ বুখারীঃ১৮২১

১১। ওদের হাত দিয়ে দান করান। অন্যদের ইফতার খাওয়াতে কাজ দিন।

১২। টিভিতে কার্টুন বা অন্য কোন বেহুদা অনুষ্ঠান না দেখতে দিয়ে কম্পিউটারে কিছু ইসলামিক প্রামান্য, ইতিহাস,ছোট শিশুদের কোর’আন তেলাওয়াত দেখান।

১৩। ইসলামিক ইতিহাস জানার জন্য কিছু কুইজ প্রস্তুত করে শেখাতে পারেন-উপহার দিতে পারেন উৎসাহিত করার জন্য।

এই রোযার মাসটা পরিকল্পিতভাবে পরিবার গঠনের কাজে সময় দিন।

অনেক পিতা এমনকি মায়েরাও বিভিন্ন ব্লগ বা সামাজিক সাইটগুলোতে যেয়ে অনেক সময় দেন- অনেকে হয়তো বলবেন ইসলাম প্রচার ও জানার জন্য যাই।

কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো –আপনার পরিবারে কি আপনি দিনের এতো সময় ধরে ইসলাম প্রচারের কাজ করছেন? অথবা

নিজের স্বামী বা স্ত্রীর সাথে বসে একটু মতবিনিময় করে ইসলামকে বুঝানোর দায়িত্ব পালন করছেন?

তাই আপনার সময়,চিন্তা,অন্তরকে প্রশ্ন রাখুন –আপনি কি করছেন? সজাগ হোন, শয়তান ভালো কাজের নাম ভাঙ্গিয়ে যেনার কাছে নিয়ে যাচ্ছে কি না ?

পরিকল্পনা( পূর্ণ বয়স্কদের জন্য )

১। কোর’আন

• অর্থসহ একবার পড়ার জন্য সুযোগ করে নিন।

দিনে ৩০-৩৫ পৃষ্ঠা বা প্রতি ওয়াক্তে ৭ পৃষ্ঠা করে পড়ে নিলে এক মাসে পুরুটা পড়া যাবে। আপনারা অন্যভাবেও নিজেদের সুবিধামতো করে পরিকল্পনা করে নিন।

• হায়েজ/ নিফাস অবস্থায়ও তেলাওয়াত শুনা ও অর্থ পড়ার কাজ চালু রাখুন।

• এই সূরা গুলো সহ আপনি যে আয়াতগুলো নামাজে পড়েন অন্তত সেগুলো এই রোযায় শব্দভিত্তিক অর্থ শেখার পরিকল্পনা নিতে পারেন।

সূরা নং-৯৭,৯৯,১০১-১১৪ (সহীহ ভাবে তেলাওয়াত সহ)

• কয়েকটি সূরা অধ্যয়নের (তাফসীর সহ)পরিকল্পনা নিতে পারেন

সূরা নং-৩৬,৫৫,৫৬,৫৭,৫৯,৬৩,৬৪,৮৭,৯০,৯২

• দোয়া মুখস্থের তালিকা করে নিন। বেশী করে দরুদ পড়ুন।

২। প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় হাদিস জানুন ও মানুন-প্রতিদিন ১টি করে।

সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরিফ

৩। তওবা ও ইস্তেগফার বেশী করে করুন। এটা খুবই জরুরী।

অনুশোচনা ও আত্মুউপলব্ধি নিয়ে বিগত গুনাহের জন্য ক্ষমা ও আগামী দিনের জন্য হেদায়েতের পথে টিকে থাকার জন্য সাহায্য কামনা মহান আল্লাহর কাছে চাইতে হবে।

সাইয়্যেদুল এস্তেগফার পড়া প্রয়োজন।

৪। নামাজ ওয়াক্ত অনুযায়ী ও খুশু সহকারে সহীহভাবে আদায় করুন।

৫। তারাবীহ ও জুমার নামাজ মসজিদে পড়ায় পরিবারের সবাইকে সহযোগীতা করুন।

৬। তাহাজ্জুদ নামাজে অভ্যস্ত হোন যদিও ২ রাক’আত হয়।মহান আল্লাহর সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরী করুন। বেশী করে আল্লাহ তা’আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন, চেয়ে নিন আপনার প্রয়োজনীয় জিনিষ।চোখের অশ্রু ফেলুন জাহান্নামের ভয়ে,নিজের গুনাহের অনুশোচনায়। পরিবারের সদস্য সহ সকল মু’মিন বান্দাহদের (জীবিত ও মৃত)জন্য দোয়া করুন।

৭। সালাতুত দোহা নামাজে অভ্যস্ত হোন।

৮। নিজের আচার-আচরন সুন্দর করুন যেন পরিবারে উত্তম মানুষ হিসেবে সাক্ষী পেতে পারেন যা আখেরাতে মুক্তির জন্য সহায়ক।

৯। শিরক-বিদ’আত,হারাম কাজ থেকে পরিচ্ছন্ন হোন।

১০। মিথ্যা কথা(কৌতুক করে হলেও) বলা, গীবত করা, অন্যকে কষ্ট দেয়া ও লোক দেখানো কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।

১১। এই রমজান মাসে নিজের ব্যক্তিগত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার তাগিদেই টিভি,কম্পিউটারে সময় কমিয়ে আনুন বা বাদ রাখুন (যদিও ভাল অনুষ্ঠান হয়)

১২। কোন ফরয/ওয়াজিব কাজ আমলে না এনে থাকলে তা এই মাসেই অভ্যাস করে ফেলুন।

১৩। রমজান মাস জিহাদের মাস, এই মাসেই বেশির ভাগ যুদ্ধ হয়েছিল যা ইসলাম কায়েমের জন্য।এই খাতে দানের উত্তম উদাহরন আমরা সাহাবা(রা) ও মুমিনা নারীদের জীবনে দেখতে পাই। তাই এই মাসে এই খাতে( ইসলাম প্রচার,প্রসার প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোন কাজে) আপনারাও শরীক হোন।

১৪। যাকাত ও ফিতরার পরিকল্পনা করে ফেলুন।

১৫। প্রতিদিন অল্প কিছু দিয়ে হলেও কাউকে ইফতার করান।

১৬। প্রতিদিন ১টি আয়াত বা হাদীস অন্যকে শুনান।

১৭। এতেকাফে বসার পরিকল্পনা রাখুন।

১৮। শেষ দশ রোজা বিশেষ করে বেজোড় রাতগুলোতে সারা রাত ইবাদতে মশগুল থেকে পবিত্র মহিমান্বিত রাতের যে সকল ফায়দা রয়েছে তা হাসিল করার চেষ্টার পরিকল্পনা করুন।

১৯।যাদের বিভিন্ন জিনিষ (তামাক পাতা ,জর্দা,সিগারেট,) খেতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন এবং একধরনের নেশা হয়ে গিয়েছে—এই রমজান মাসটাকে আপনারা কাজে লাগাতে পারেন। মহান আল্লাহতা’আলার সাহায্যে ইনশা’আল্লাহ এই সমস্ত কুঅভ্যাস থেকে নিজেদের ফিরিয়ে আনতে পারবেন। তবে নিজেদের মনকে সিদ্ধান্ত নেয়াতে হবে প্রথমে। “জীবন” এই দুনিয়াতে একবারই-সময় চলে যাচ্ছে!!!!

আরেকটি দিক --- অনেক ভাই - বোনেরা বিভিন্ন সময় হারাম কাজে লিপ্ত থাকেন যেমন-মিউজিক দিয়ে গান শুনা, অশ্লীল সিনেমা নাটক দেখে সময় পার করে,মোবাইল-ফেসবুক দিয়ে অপোজিট সেক্স এর সাথে সময় কাটানো। এই রমজান হোক পবিত্র একটি মন তৈরীর সময়। যে দিন চলে যাচ্ছে- যা করে যাচ্ছেন তা সবই কালের সাক্ষী হয়ে আমল নামায় লিখে যাচ্ছেন পরিদর্শকরা। তওবা করে এখনি আল্লাহতা’আলার খাস আনুগত্যকারী হওয়ার সময়।

মা-বাবার জন্য বলছি----আপনার ছেলে বা মেয়েটি কোচিং বা প্রাইভেট পড়তে গিয়েছে কি পোশাকে? অপোজিট সেক্স এর সাথে সময় কাটাচ্ছেনাতো?? এই রমযান মাসেই তাদের পর্দার শিক্ষা দিন। হাসরের মাঠে প্রত্যেককেই তার অধীনস্তদের ব্যপারে জবাবদিহী করতে হবে।

অনেক বয়স্ক মা বাবা আছেন যারা বুঝতে পারেন না কিভাবে ভালো আমল করে সময় পার করবেন। দয়া করে তাদের একটু যত্নের সহিত কিছু টিপস দেবার ব্যপারে উদ্যোগী হোন।

মহান আল্লাহতা’আলা আমাদের পরহেজগারী দান করুন-আমীন।

আমাদের জীবনের যে কোন সময় – সেই সময় অর্থাৎ মৃত্যুর ফেরেশতা চলে আসবেন এবং একটুও সময় এদিক সেদিক হবে না।

মহান আল্লাহ বলেছেন-

কিন্তু তিনি সকলকেই একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে থাকেন। পরে যখন সেই সময় এসে উপস্থিত হয় তখন তার একমুহুর্ত আগে পরে হতে পারে না।

সূরা আন নাহলঃ৬১

তাই খুব দ্রুত আমাদের আত্মশুদ্ধির প্রয়োজন। অবকাশকে আমরা যেন হেলা করে নষ্ট না করে ফেলি, এই সুযোগ আমাদের আমল সুন্দর করার জন্য। অনেকে আগামী দিন করবো, আস্তে আস্তে আল্লাহর দিকে এগুবো ইত্যাদি অনেক কথা বলি যা নিজের জন্য খুব সংকটপূর্ণ, আগামী দিন বা পরে এই সময়টুকু নাও পেতে পারি!!!

তোমার আল্লাহকে ডাকো – কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে, চুপে চুপে। নিশ্চিতই তিনি সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না। যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না, যখন তার সংশোধন ও সুস্থতা বিধান করা হয়েছে। এবং আল্লাহকে ডাকো ভয় সহকারে এবং আশাণ্বিত হয়ে। নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত নেক চরিত্রের লোকদের অতি নিকটে।

সূরা আরাফঃ ৫৫-৫৬

মহান আল্লাহ বলেছেন:

হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর অগ্নি হতে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম-হৃদয়, কঠোর-স্বভাব ফিরিশতাগন, যারা অমান্য করে না আল্লাহ যা তাঁদের আদেশ করেন এবং তাঁরা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই করে।

সূরা আত-তাহরীমঃ৬

সৌজন্যেঃ আদর্শ নারী

Page Link: http://www.facebook.com/adorshonaree

বিষয়: বিবিধ

১২৭১ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

322392
২৫ মে ২০১৫ দুপুর ০২:০৫
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
২৬ মে ২০১৫ সকাল ০৯:১৭
263718
মিশু লিখেছেন : আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
জাযাকাল্লাহী খাইরান।
322415
২৫ মে ২০১৫ বিকাল ০৫:৫৮
ছালসাবিল লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম।
ভাইয়া রমজান মাসে একটা আলোচনার জন্য সবাইকে আহব্বান করুন। Love Struck

আমার নাম দিতে ভুল করবেন কিন্তু Day Dreaming Tongue
২৬ মে ২০১৫ সকাল ০৯:১৮
263719
মিশু লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহ
জাযাকাল্লাহী খাইরান।
322556
২৬ মে ২০১৫ রাত ০২:৫৫
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহামাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
322588
২৬ মে ২০১৫ সকাল ০৯:১৮
মিশু লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহ ওয়া মাগফিরাতুহ
জাযাকাল্লাহী খাইরান।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File