মাস্টার্সের ফার্স্ট সেমিস্টারের তাফসির ক্লাশ ও পরীক্ষা

লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ নূরুল্লাহ তারীফ ০৬ জানুয়ারি, ২০১৫, ০১:০২:৫৫ রাত

ছাত্র জীবনের প্রায় শুরু থেকে তাফসির পড়ে আসছি। জালালাইন, বায়যাভী, কাশশাফ, ইবনে কাছীর, ফাতহুল কাদির ইত্যাদি তাফসিরের কোনটির বেশিরভাগ অংশ, কোনটির সিলেবাসভুক্ত অংশ পড়া হয়েছে। দেশে বা মদিনাতে এ কিতাবগুলো যাদের কাছে পড়েছি বলা যায় সবার পড়ানোর পদ্ধতি প্রায় অভিন্ন ছিল। শব্দের অর্থ, বাক্যের ব্যাখ্যা, শানে নুযুল, সংশ্লিষ্ট ঘটনা, ক্বিরাত বা পঠনপদ্ধতির ভিন্নতার কারণে অর্থগত পার্থক্য ইত্যাদি মুখস্ত করা বা বুঝা- এটাই ছিল পাঠদান পদ্ধতি। মাস্টার্সের এ সেমিস্টারে তাফসির পড়লাম তাফসির শাস্ত্রের উজ্জল নক্ষত্র শাইখ মুসায়েদ আল-তাইয়্যার এর কাছে। তাঁর পাঠদান পদ্ধতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং পাঠ আয়ত্ব করাও কিছুটা জটিল। সেমিস্টারের শুরুতে তিনি প্রস্তাব করেছেন- আস, আমরা তাফসির করার কিছু মানহাজ (পদ্ধতি) শিখি। কারণ এ মানহাজ তোমাদের সাথে থাকবে। আর তথ্য বা মুখস্তবিদ্যা অধিকাংশ তোমরা ভুলে যাবে। পুনরায় পড়লে কিছু মনে করতে পারবে। কিন্তু মানহাজ যদি তোমার সাথে থাকে আজীবন তুমি সঠিক তাফসির করতে পারবে। সঠিক তাফসির নির্ণয় করতে পারবে। সলফে সালেহিন আল্লাহর কালাম যেভাবে বুঝেছেন সেভাবে বুঝতে পারবে। সে মোতাবেক প্রতি ক্লাশে একই বিষয়ক কুরআনের ৩/৪ স্থান থেকে ৫/৬ আয়াত নির্ধারণ করা থাকত। তাফসিরে তাবারী, ইবনে আতিয়্যা, ছালাবি, ইবনে কাছীর, আত-তাহরির ওয়াত তানভীর, আদওয়াউল বায়ান ইত্যাদি গ্রন্থ থেকে প্রত্যেক সহপাঠী একেক তাফসির পড়ে প্রস্তুতি নিয়ে আসত এবং ক্লাশে বিশ্লেষণ চলত। কোন মুফাসসির তাফসির করার ক্ষেত্রে কোন মানহাজ অবলম্বন করেছেন। সেটি কতটুকু যথাযথ। সঠিক পদ্ধতি কোনটি। নির্বাচিত বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল- শানে নুযুল। সব শানে নুযুল আসলে কি শানে নুযুল!! অর্থের উপর যে শানেনুযুলের প্রভাব নেই সেটা কি তাফসির? সংশ্লিষ্ট ঘটনা কি শানেনুযুল!! ক্বিরাতের পার্থক্যের কারণে অর্থের পার্থক্য। ক্বিরাত কি ইজতিহাদি বিষয়? তাফসিরের উপর ক্বিরাতের ভিন্নতার প্রভাব। ওহি সংক্রান্ত মাসয়ালা। তাফসির সংক্রান্ত রেওয়ায়েতগুলোর উপর হাদিসের মত হুকুম লাগানো কতটুকু যথাযথ! ইবনে আবু হাতিম এর মত হাদিস বিশ্লেষকগণ কেন তাফসিরের ক্ষেত্রে দুর্বল রেওয়ায়েতগুলো গ্রহণ করেছেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তাফসির হুজ্জাহ। কিন্তু কোন মুফাসসির হাদিস দিয়ে দলিল দিলেই কি সে তাফসির হুজ্জাহ? বিপরীত তাফসির করার অবকাশ আছে কি? ইসমতে আম্বিয়া এর ক্ষেত্রে সলফে সালেহিনদের মানহাজ কি! সলফে সালেহিন ইউসুফ (আঃ) ও জোলেখা এর ঘটনা সংক্রান্ত আয়াত তাফসির করার ক্ষেত্রে কোন মানহাজ অনুসরণ করেছেন! পরবর্তী তাফসিরকারগণ অন্য মানহাজ গ্রহণ করলেন কেন? ইত্যাদি। গতকাল পরীক্ষা দিলাম। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কোন বই বা তাফসির নির্ধারিত ছিল না। ক্লাশে যে মানহাজগুলো শিখানো হয়েছে সেগুলোর আলোকে অন্য আয়াত থেকে শাইখ প্রশ্ন করেছেন। বিভিন্ন তাফসির গ্রন্থ থেকে কোটেশন তুলে দিয়েছেন। এরপর কিছু প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। সবগুলো বিশ্লেষণাত্মক ও তাত্ত্বিক। খুব ভয়ে ছিলাম- উত্তর কতটুকু ভাল লিখতে পেরেছি। আজ শাইখের সাথে দেখা হলো বললেন: তোমাদের পেপার কাটছি। তুমি ভাল লিখেছ। শুনে কিছুটা স্বস্তি পেলাম।

বিষয়: বিবিধ

১৪৯১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

299408
০৬ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০২:০৩
শেখের পোলা লিখেছেন : আলহামদু লিল্লাহ
১০ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৯:৩৫
242837
মুহাম্মদ নূরুল্লাহ তারীফ লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ।
299423
০৬ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৫:৫১
সালাম আজাদী লিখেছেন : জ্ঞানের দরোযা পেরিয়ে এবার প্রশস্ত আঙিনায়। আল্লাহ অনেক বড় স্কলার বানিয়ে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনুন। ধন্যবাদ তারিফ কে। দুয়া ও।
১০ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৯:৩৫
242836
মুহাম্মদ নূরুল্লাহ তারীফ লিখেছেন : আমীন। শাইখ, আল্লাহ আপনাকে হায়াতে তাইয়্যেবা দান করুন। আপনার ইলম ও আমলে বরকত দান করুন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File