রাসূলুল্লাহ সা: ওই সব পুরুষকে লা’নত করেছেন যারা নারীর বেশ ধারণ করে এবং ওই সব নারীকে লা’নত করেছেন যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে।

লিখেছেন লিখেছেন একটি সকাল ৩০ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:৫৫:২৯ দুপুর

লেখাটি শুধুমাত্র নিজের দায়বদ্ধ থেকে, যদিও আর বেশি জানেন আপনারা শুধু মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য, গাড়ি গতি নিয়ন্ত্রণ বা কন্ট্রোল করার জন্য স্ট্রিট ব্রেকার থাকে, কিন্তু সমাজে তরুণ তরুণীর আধঃপতনের গতি নিয়ন্ত্রণের কোন স্ট্রিট ব্রেকার নাই, বরং মিডিয়া, ফ্যাশন ডিজাইনারদের প্ররোচনা ও সকলের হাততালি যেন দিন দিন গতি বেড়ে চলেছে। এই লেখাটি নারীবাদীদের সমালোচনা ও মুসলিম মা বোন দের আপমান করার জন্য নয় বরং ইসলামী অনুশাসন মেনে জান্নাতের দিকে এগিয়ে যাওয়ায় যেন আনুপ্রেরন হয়।

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ আদর্শ। জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের দিক-নির্দেশনা রয়েছে। পোশাক-পরিচ্ছদের বিষয়েও ইসলামের মৌলিক দিক নির্দেশনা রয়েছে। এ নিবন্ধে পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা করতে চাই।

এ সম্পর্কে সমাজে যেসব ভুলভ্রান্তি ও শিথিলতা লক্ষ করা যায় তার পিছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে।

১. অজ্ঞতা ও অবহেলা

এ বিষয়ে শরীয়তের কী কী মূলনীতি ও বিধান রয়েছে সে সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জানাশোনা নেই। উপরন্তু অনেকের এই ধারণাই নেই যে, পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কেও শরীয়তের বিধিবিধান থাকতে পারে। একে তারা পুরোপুরিই ইচ্ছা-স্বাধীনতার বিষয় মনে করে। এই ধারণা ঠিক নয়। শরীয়ত এ বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। কুরআন কারীম এবং হাদীস শরীফে এ সম্পর্কিত উসূল ও আহকাম তথা নীতি ও বিধান রয়েছে। একই সঙ্গে মানুষের রুচি ও স্বভাবের প্রতিও একটা পর্যায় পর্যন্ত শরীয়ত অনুমোদন দিয়েছে। সুতরাং এ বিষয়ে একেবারে উদাসীন থাকা, মনমতো চলা ভুল।

২. বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ ও ফ্যাশন-আসক্তি

পোশাক-আশাক ও সাজসজ্জার বিষয়ে সমাজে বিজাতীয় সংস্কৃতি ও ফ্যাশনের বড় প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। যখন যে ফ্যাশন বের হচ্ছে তখন নির্বিচারে অনুকরণকেই ‘আধুনিকতা’ মনে করা হচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে অমুসলিম বা ফাসেক লোকদের রীতি-নীতিই অধিক অনুকরণীয় হতে দেখা যায়। এসবই ভুল। বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ শরীয়তের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃণিত। হাদীস শরীফে এসেছে-‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখে সে তাদের দলভুক্ত।’ (সুনানে আবু দাউদ ২/৫৫৯)

৩. দ্বীনদার শ্রেণীর পোশাককে ‘সম্প্রদায়িক’ পোশাক মনে করা

অনেকে ইসলামী পোশাককে সৌদী, পাকিস্তানী বা হুজুরদের ইউনিফর্ম মনে করে থাকে। ফলে নামায-রোযা ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগী করলেও তারা এই পোশাক গ্রহণ করতে পারেন না। তাদের এ ধারণা ভুল। সামান্য চিন্তা করলেই দেখা যাবে যে, ইসলামসম্মত পোশাক মানে কোনো সাম্প্রদায়িক বা আঞ্চলিক পোশাক নয়। হ্যাঁ, তা মুসলমানের পোশাক বটে।

৪। মন ভালো হওয়াই যথেষ্ট মনে করা।

যারা পোশাক ও সাজসজ্জার বিষয়ে মনমতো চলতে চায় কিংবা বিজাতীয়দের অনুকরণ করতে পছন্দ করে তারা তাদের দুর্বলতা ঢাকতে গিয়ে বলে থাকেন, ‘মন ভালো হওয়াই যথেষ্ট। বাইরের লেবাস-পোশাকে কী আসে যায়?’ এভাবে তারা ইসলামের শিক্ষাকে খাটো করতে চায়।

মোটকথা, ইসলামে লেবাস-পোশাকের গুরুত্ব কম নয়। পোশাক-পরিচ্ছদ যদিও বাহ্যিক বিষয়, মানুষের সকল ভালো-মন্দের দলীল এটা নয়, কিন্তু একথাও তো অনস্বীকার্য যে, লেবাস-পোশাকেরও একটি বড় প্রভাব মানুষের স্বভাব ও আচরণের উপর পড়ে থাকে। এটা কি অস্বীকার করা যাবে যে, কিছু পোশাক অন্তরে অহংকার ও আত্মগরিমা সৃষ্টি করে, অন্যদিকে কিছু পোশাক বিনয় ও নম্রতা জাগ্রত করে? কিছু পোশাক ভালো কাজে ও ভালো ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে, অন্যদিকে কিছু পোশাক মন্দ ও অকল্যাণের দিকে আকর্ষণ করে?

পোশাক সম্পর্কে ইসলামী ৮ টি নীতিমালা রয়েছে।

এই জ্ঞানের অভাবে অনেকে সঠিক পোশাক অবলম্বন করতে পারেন না। এ প্রসঙ্গে কিছু নীতি ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা নারী-পুরুষ সকলের জন্য প্রযোজ্য। আবার কিছু স্বতন্ত্র বিষয়ও রয়েছে। প্রথমে সাধারণ কিছু নীতি উল্লেখ করছি।

১. পোশাক-পরিচ্ছদ টাইট বা আঁটসাঁট হওয়া চলবে না। অর্থাৎ পোশাক হতে হবে ঢিলে ঢালা। এমন পোশাক পরিধান করা যাবে না, যে পোশাক পরিধান করার পরও লজ্জাস্থানের অবয়ব বোঝা যায়। রাসূলুল্লাহ সা: ওই সব লোকদের অভিসম্পাত করেছেন যারা পোশাক পরার পরও উলঙ্গ থাকে।

২ এমন পাতলা বা ফিনফিনে কাপড় পড়া যাবে না যে কাপড় পরারপরও লজ্জাস্থান দেখা যায়। সূনান আবু দাউদ ৪০৫৯. ইয়াকূব ইবন কাআব (রহঃ) . . . আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আসমা বিনত আবূ বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট পাতলা কাপড় পরে হাযির হলে, তিনি তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন এবং বলেনঃ হে আসমা ! যখন মেয়েরা সাবালিকা হয়, তখন তাদের এমন পাতলা কাপড় পরা উচিত নয়, যাতে তাদের শরীর দেখা যায়। তবে তিনি ইশারা করে মুখমন্ডল ও দু’হাতের কব্জা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশ দেন।

৩. নারী-পুরুষের এবং পুরুষ-নারীর পোশাক পরিধান করা যাবে না। এখন অ ছেলেদের দেখা যায় যারা হাতে বিভিন্ন রকমের বালা পরিধান করে,কানে দুল দেয়,গলায় মালা বা চেইন পরে, পাঞ্জাবির সাথে ওড়না পরে ইত্যাদি। অন্য দিকে মেয়েরা তাদের নিজস্ব পোশাক পরিধানের পরিবর্তে জিন্সের প্যান্ট, টিশার্ট, স্কিন টাইট গেঞ্জি, পাঞ্জাবি ইত্যাদি পরিধান করছে। রাসূলুল্লাহ সা: ওই সব পুরুষকে লা’নত করেছেন যারা নারীর বেশ ধারণ করে এবং ওই সব নারীকে লা’নত করেছেন যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে।

৪. পুরুষের স্বর্ণের অলঙ্কার পরা যাবে না। স্বর্ণ পুরুষের জন্য হারাম। অনেক ছেলেদের দেখা যায় গলায় স্বর্ণের চেইন ব্যবহার করে। হাতে স্বর্ণের আংটি পরে। বিশেষ করে বিয়েতে মেয়ে পক্ষ ছেলেকে স্বর্ণের আংটি ও গলার চেইন দেয়। হজরত আবু হুরাইয়া রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সা: পুরুষকে স্বর্ণের আংটি পরতে নিষেধ করেছেন। শুধু আংটি নয়, পুরুষের জন্য স্বর্ণের যেকোনো অলঙ্কার হারাম।

৫. পুরুষের রেশমি কাপড় পরিধান করা যাবে না। এটা পুরুষের জন্য হারাম। রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রেশমি কাপড় পরিধান করবে আখেরাতে তার জন্য কোনো অংশ নেই। অন্য একটি হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রেশমি কাপড় দুনিয়াতে কাফেরদের জন্য আর মুমিনদেরজন্য পরকালে।

৬. বিজাতীয় পোশাক পরিধান করা যাবে না। অন্য ধর্মাবলম্বীদের নির্ধারিত ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহার করে এমন পোশাক পরিধান করা জায়েজ নেই। যেমন খ্রিষ্টানদের ক্রুশ অঙ্কিত পোশাক, হিন্দুদের মতো উল্কি আঁকা, সিঁদুর পরা ইত্যাদি। রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি অন্য কোনো জাতির অনুসরণ করবে সে সেই জাতির উম্মত হিসেবে গণ্য হবে। রাসূলুল্লাহ সা: আর বলেন “লা’নত বর্ষিত হোক সেই সব নারীর ওপর যারা উল্কি এঁকে নেয় এবং যারা উল্কি আঁকায়, যারা চুল উঠিয়ে ফেলে, ভ্র প্লাক করে, সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য দাঁত কেটে চিকন করে, দাঁতের মধ্যে ফাঁক সৃষ্টি করে যা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন এনে দেয়।

৭. বেশি চাকচিক্য পোশাক পরিধান করা যাবে না, যাতে বিপরীত লিঙ্গকে আকৃষ্ট করে। নারী-পুরুষ উভয়ই পর নারী বা পর পুরুষকে আকৃষ্ট করার জন্য বেশি চাকচিক্য পোশাক পরিধান করা যাবে না। বিশেষ করে নারীরা এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘তারা যেন (নারীরা) যা সাধারণত প্রকাশমান এমন সৌন্দর্য ছাড়া অতিরিক্ত সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে বেড়ায়।’ সূনান আবু দাউদ ৩৯৮৭. মুহাম্মাদ ইবন ঈসা (রহঃ) ………… ইবন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত ,তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গর্ব ও অহংকার প্রকাশের জন্য পোশাক পরিধান করে , কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে ঐ ধরনের পোশাক পরাবেন, এরপর তাতে দোযখের আগুন লাগিয়ে দেবেন।

৮. পুরুষের টাকনুর নিচে পোশাক পরিধান করা যাবে না। আজকাল অধিকাংশ পুরুষকে দেখা যায় তারা তাদের প্যান্ট পায়ের পাতা পর্যন্ত ঝুল দেয়। এর মধ্যে যারা নামাজি তারা নামাজের সময় তাদের প্যান্ট টাকনু পর্যন্ত গুছিয়ে নেয়। আসলে টাকনু পর্যন্ত কাপড় পরা পুরুষদের সব সময়ের জন্য আবশ্যক, শুধু নামাজের সময় নয়। রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘যেসব পুরুষ অহঙ্কারের (ফ্যাশনের) জন্য টাকনুর নিচে কাপড় পরে মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না।’

পূর্বোক্ত পোশাকের নীতিমালা মেনে চললে বর্তমানে দেশে বিরাজমান অস্থিরতা অনেকাংশে কমবে। টিনেজার ও যুব সমাজকে তাদের সঠিক পথে চালনা করা সহজ হবে। তাদেরকে চারিত্রিক অবক্ষয়, ঝরে পড়া সর্বোপরি নেশা থেকে বাঁচানোর সম্ভব হবে। তা ছাড়া আমরা আমাদের জাতি সত্তা ও ধর্মীয় সংস্কৃতি রক্ষা করতে পারব।নচেৎ আমাদের ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণুর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। অধিক অস্থিরতার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

মহান আল্লাহ সূরা আ’রাফের ২৬ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেছেন, ‘হে বনি-আদম! আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জা স্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি সাজ সজ্জার বস্ত্র এবং পরহেজগারির পোশাক, এটি সর্বোত্তম।’ অন্য দিকে বেহায়াপনা, বেল্লাপনা ও উলঙ্গপনাকে হারাম করা হয়েছে। একই সূরার ৩৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আপনি বলে দিন, আমার পালনকর্তা প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীল বিষয়গুলো হারাম করেছেন। এটি আল্লাহর কুদরতের অন্যতম নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা ভাবনা করে।

পুরুষের পোশাকের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য

ক) নারীর পোশাক বা নারীর পোশকের মতো পোশাক না হওয়া। যুহায়র ইবন হারব (রহঃ)... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্ত্রীলোকদের পোশাক পরিধানকারী পুরুষদের এবং পুরুষদের পোশাক পরিধানকারিণী স্ত্রীলোকদের উপর লা’নত করেছেন। সূনান আবু দাউদ- ৪০৫৪। সুতরাং পুরুষের জন্য মেয়েদের পোশাক পরিধান করা হারাম।

খ) রেশমের কাপড় পরিধান না করা। কেননা রেশমের কাপড় পুরুষের জন্য হারাম।

গ) জাফরানী রংয়ের কাপড় না হওয়া। এটা পুরুষের জন্য নাজায়েয।

ঘ) কুসুম রং কিংবা গাঢ় লাল রং না হওয়া। কেননা কুসুম রং মাকরূহ তাহরীমী। আর লাল রং মাকরূহ।

ঙ) প্যান্ট টাখনুর নিচে পরা হারাম।

নারীর পোশাকের কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য

ক) পুরুষের পোশাক বা পুরুষের সদৃশ পোশাক না হওয়া। পুরুষদের শার্ট, গেঞ্জি, ফতুয়া, প্যান্ট – এইগুলো পড়া সম্পূর্ণ হারাম। ঘরে বাইরে সব জায়গাতেই হারাম। এমনকি স্বামী যদি শুধু তার জন্য পড়তে বলে তবুও হারাম, স্বামীর এই কথাটা মানা যাবেনা। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না। একজন ঐ মহিলা, যে পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে।

নারীর জন্য পুরুষের মতো পোশাক পরিধান করা হারাম। কিন্তু আজকাল এটি ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হচ্ছে। মেয়েরাও প্যান্ট-শার্ট পরছে!

খ) পুরো শরীর ঢাকা পোশাক হওয়া।

গ) পুরুষদের শার্ট, গেঞ্জি, ফতুয়া, প্যান্ট – এইগুলো পড়া সম্পূর্ণ হারাম। ঘরে বাইরে সব জায়গাতেই হারাম। এমনকি স্বামী যদি শুধু তার জন্য পড়তে বলে তবুও হারাম, স্বামীর এই কথাটা মানা যাবেনা।

মহিলাদের পোশাক এমন হওয়া চাই যাতে গোটা দেহ আবৃত থাকে। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততই এমন এমন স্টাইলের পোশাক বের হচ্ছে যাতে শরীরের বিভিন্ন অংশ খোলা থাকে। অর্থাৎ সতর আবৃত করার পরিবর্তে তা আরো প্রকাশিত করে তোলাই যেন পোশাকের উদ্দেশ্য। যেমন শাড়ি, নারীর জন্য ওড়না ছাড়া দুই পোশাক প্যান্ট-শার্ট বা প্যান্ট-গেঞ্জি। এগুলো ফ্যাশনের নামে নোংরামি। এ ধরনের ফ্যাশনে গা ভাসিয়ে দেওয়া স্বকীয়তা ও আত্মমর্যাদা বোধ না থাকারই দলীল। অনেক বিধর্মীও এমন রয়েছে যারা শালীন পোশাক পরিধান করে। ফ্যাশনের নামে যেসব কুরুচিপূর্ণ পোশাক তৈরি করা হয় তা তারা পরিহার করে চলে। অথচ আমাদের ধর্মে এত সুন্দর দিক-নির্দেশনা থাকার পরও ওইসব অশালীন ফ্যাশনের অনুগামী হয়ে যাওয়া কি দুঃখজনক নয়?

গুরুত্বঃ

রাসূল (সঃ) পুরুষদের মধ্যে নারীর বেশ ধারণকারীদের এবং নারীদের মধ্যে পুরুষের বেশ ধারণকারিণীদের অভিশাপ দিয়েছেন’।[1] ইবনু আববাস (রাঃ) হতে আরও বর্ণিত আছে,

لَعَنَ النَّبِىُّ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُخَنَّثِينَ مِنَ الرِّجَالِ ، وَالْمُتَرَجِّلاَتِ مِنَ النِّسَاِ

‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নারীবেশী পুরুষদেরকে এবং পুরুষবেশী নারীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন’।[2]

পোশাক ও অলংকার পরিধানেও অনুকরণ রয়েছে। সুতরাং পুরুষের জন্য গলার হার, হাতের চুড়ি, পায়ের মল, কানের দুল পরা চলবে না। অনুরূপভাবে মহিলারাও পুরুষদের জামা, পাজামা, প্যান্ট, শার্ট, পাঞ্জাবী পরতে পারবে না। নারীদের পোশাকের ডিজাইন পুরুষদের থেকে ভিন্নতর হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ- ‘আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত সেই পুরুষের উপর যে মেয়েলী পোশাক পরিধান করে এবং সেই নারীর উপর, যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে’।

হাদীস শরীফে এসেছে-দুই শ্রেণীর লোক জাহান্নামী। ১. ঐ সকল নারী, যারা কাপড় পরিধান করা সত্ত্বেও বিবস্ত্র থাকে ... তারা জান্নাতে যেতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।-সহীহ মুসলিম হাদীস ২১২৮

সতর্কতাঃ

১. যারা চায় মু’মিনদের সমাজে অশ্লীলতার প্রসার ঘটুক তারা দুনিয়ায় ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে। আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জানো না। সুরা নুর-আয়াত -১৯

২. দুশ্চরিত্রা মহিলারা দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং দুশ্চরিত্র পুরুষরা দুশ্চরিত্রা মহিলাদের জন্য। সচ্চরিত্রা মহিলারা সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষরা সচ্চরিত্রা মহিলাদের জন্য। লোকে যা বলে তা থেকে তারা পূত-পবিত্র। তাদের জন্য রয়েছে মাগফিরাত ও মর্যাদাপূর্ণ জীবিকা। সুরা নুর- আয়াত-২৬

৩. আর হে নবী! মু’মিন মহিলাদের বলে দাও তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে রাখ। এবং তাদের লজ্জাস্থানগুলোর হেফাজত করে আর তাদের সাজসজ্জা না দেখায়, যা নিজে নিজে প্রকাশ হয়ে যায় তা ছাড়া। আর তারা যেন তাদের ওড়নার আঁচল দিয়ে তাদের বুক ঢেকে রাখে। তারা যেন তাদের সাজসজ্জা প্রকাশ না করে, তবে নিম্নোক্তদের সামনে ছাড়া স্বামী, বাপ, স্বামীর বাপ, নিজের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, নিজের মেলামেশার মেয়েদের, নিজের মালিকানাধীনদের, অধীনস্থ পুরুষদের যাদের অন্য কোন রকম উদ্দেশ্য নেই এবং এমন শিশুদের সামনে ছাড়া যারা মেয়েদের গোপন বিষয় সম্পর্কে এখনো অজ্ঞ।তারা যেন নিজেদের যে সৌন্দর্য তারা লুকিয়ে রেখেছে তা লোকদের সামনে প্রকাশ করে দেবার উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। হে মু’মিনগণ! তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর কাছে তাওবা করো, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে। সুরা নুর- আয়াত-৩১

৪. রাসুল (সাঃ) বলেছেন-অর্থঃ “যে মহিলা গায়ে সুগন্ধি মেখে বের হয় এ জন্য যে, তার শরীরের সুবাস বা ঘ্রাণ পাওয়া যাবে, তাহলে তার নামায ততক্ষণ পর্যন্ত গৃহীত হবে না যতক্ষণ না সে নাপাকী দূর করার জন্য ফরয গোসলের ন্যায় গোসল না করবে” (আহমাদ ২/৪৪৪, ছহীহুল জামে হাদীছ নং ২৭্

পড়ার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।

তথ্য সূত্রঃ

১। সংস্কার ও পরিমার্জিত

২. সূরা আ’রাফের তাফসির

৩. সূরা নুরের তাফসির

৪. সূনান আবু দাউদ

৫। ইবনে মাঝাহ

৬। মুসলিম শরিফ

৭. http://www.alkawsar.com/article/695

৮. http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/03/blog-post_4263.html

৯.http://www.ahlehadeethbd.org/online_books/je_shokol_haramke_manush_halka_mone_kore/58.html

বিষয়: বিবিধ

৪৬০৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

358060
৩০ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:০৬
শেখের পোলা লিখেছেন : ভাল লাগলো৷ এমন আরও লিখুন৷ ধন্যবাদ৷
360194
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:৪৯
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : দরকারী অনেক কিছু একটা লেখাতেই মনে করিয়ে দিয়েছেন| ধন্যবাদ| খুবই ভালো হয়েছে এই লেখাটা | আরো লিখুন এই ধরনের লেখা |
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০১:৩৭
298561
একটি সকাল লিখেছেন : সত্যই আপনি অনেক বড় মাপের মানুষ, গতকাল আপনার দু একটি লেখা পড়ার চেষ্টা করেছি, অনেক তথ্য বহুল লেখা , আর পড়ার জন্য প্রিয়তে রেখেছি। ধন্যবাদ আপনাকে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File